সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল। এ বিদ্যুৎ দিয়ে গভীর নলকূপ চালিয়ে সেচ কার্যক্রম ও অজোপাড়া গাঁয়ের জনপদে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত, বায়োগ্যাস প্লান্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে আধুনিক জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। ঠাঠা বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের আশরন্দ বাজারের পাশে গ্রামীণ শক্তি সোলার ইরিগ্রেশন প্রকল্পের আওতায় গত বছর স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে চালিত সেচ প্রকল্প। প্রকল্পে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে গত বছর ২৫ বিঘা বোরো ধানের জমিতে সেচ প্রদান করে চাষাবাদ করা হয়। চলতি বছর এ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে গম, সরিষা, আলু ও পিয়াজসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করা হয়।
বর্তমানে আমন মৌসুমে প্রায় সমপরিমাণ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক হোসেন জানান, বর্তমানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩১১টি বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। এ ছাড়া এক ফসলি জমির পরিমাণ ৩৯৭০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৯০০৫ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি ৬৯১৫ হেক্টর। এখানে নিট ফসলি জমির পরিমাণ ১৯,৮৯০ হেক্টর। শুধু সেচব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রায় ৪৫০০ হেক্টর জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে।
সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এসব এলাকায় যদি সোলারচালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় তাহলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পতিত জমিতে প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হবে। এতে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ঠাঠা বরেন্দ্র এলাকার কঠিন মাটির বুকে গড়ে উঠবে সবুজের সমারোহ। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র সরকার জানান, সোলারচালিত পাম্প দিয়ে ধানের চেয়ে রবিশস্য উৎপাদন করা সহজ।
কারণ যে সময় বোরো জমি ভেজানো হয় তখন আকাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে, সূর্য দেখা যায় না। রোদ না থাকলে সোলারে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় না। এ বিষয়ে গ্রামীণ শক্তির রিজিওনাল ম্যানেজার আবদুল ওয়াহাব জানান, গ্রামীণ পরিবারভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হলো গ্রামীণ শক্তি। এখানে সৌরবিদ্যুতের মোট ৬৪টি প্যানেল বসানো হয়েছে। যার প্রতিটি প্যানেল থেকে ১৭৫ ওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এখানে উৎপাদিত মোট ১১ হাজার ২০০ ওয়াট বিদ্যুৎ দ্বারা মোট ৬৫ বিঘা ধানের জমিতে সেচ কার্যক্রম সম্পাদন করা সম্ভব। সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা (সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম) বিক্রি ও স্থাপন করে মানুষের মাঝে বিদ্যুতের বিকল্প সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী চালানো যায়। উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে সুবিধা পাচ্ছেন। এ ছাড়া পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা ও মহাদেবপুরেও কার্যক্রম চলছে।
এ সিস্টেমে লোডশেডিং নেই, মাসিক বিল ও জ্বালানি খরচ নেই। এ ছাড়া গ্রামীণ শক্তির বায়োগ্যাস প্রযুক্তি প্রশংসিত হয়েছে। মাছের খাবার হিসেবে স্নরি ব্যবহার করে মৎস্য চাষিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। বায়োগ্যাসের স্নরি দ্বারা উৎপাদিত জৈবসার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। এ সার ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার শতকরা ৩০-৪০ ভাগ কৃষকরা কমিয়েছে।
দেশের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ পরিবার রান্না ও অন্যান্য কাজে প্রচলিত চুলা ব্যবহার করে। এ চুলায় জ্বালানি পুড়িয়ে যতটুকু তাপশক্তি পাওয়া যায় তার প্রায় শতকরা ৫-১৫ ভাগ কাজে লাগে এবং বাকি ৮৫-৯৫ ভাগ অহেতুক অপচয় হয়। এ চুলায় শতকরা ৫০-৬০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব।
বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অঙ্াইডের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট কমাতে সাহায্য করে।
সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, এ সেচ প্রকল্পটি কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়তা করছে। ইতিপূর্বে বছরে একটি করে ফসল হতো। এখন এ জমিতে ২-৩ বার ধান, গম ও অন্যান্য শাকসবজি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। সোলার পাম্পের আশপাশে প্রায় ১২০ বিঘা জমির মালিককে নিয়ে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কৃষক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন, মজিবর, শফিউদ্দিন, খলিল ও মোশারফ হোসেন বিদ্যুৎসহ এলাকার অন্য কৃষকরা সোলার ডিপ থেকে পানি নিয়ে প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে রোপা আমন, আউশ, বোরো ধানসহ গম, সরিষা, আলু, পিয়াজ ও শাকসবজি চাষ করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছেন।
উপজেলার অবহেলিত জনপদের হাজার হাজার মানুষ উন্নত ও আধুনিক জীবন-যাপনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।