আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তীরন্দাজে প্রকাশিতব্য সাহিত্য আড্ডার জন্য পোষ্ট

s
বিষয়ঃ উত্তরাধুনিকতা এবং বাংলা কবিতা ভুমিকাঃ সাহিত্যপত্র তীরন্দাজে সাহিত্য আড্ডা নিয়ে একটা বিভাগ স্থির হয়েছে। প্রতি সংখ্যায় সেই বিভাগে আলোচনা হবে সাহিত্য সম্পর্কিত একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে। তীরন্দাজ যেহেতু আমাদের সকলের পত্রিকা, আলোচনাটা আমরা করবো সবাইকে নিয়েই। আর সবার সাথে আলোচনার জন্যেই এই উন্মুক্ত মঞ্চে বিষয়টি পেশ করা। সবাই নিশ্চিন্তে মন্তব্য করুন।

বাছাই মন্তব্যগুলো ছাপা হবে আমাদের তীরন্দাজের সাহিত্য আড্ডা বিভাগে। ১ আজকাল বাংলা কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে বসলে সবার আগে যে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হয় সেটা হল উত্তরাধুনিকতা। বাংলা কবিতায় উত্তরাধুনিকতা আসলে কি? আধুনিক বাংলা কবিতা অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণূ দে, জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ আর বুদ্ধদেব প্রমুখের হাত ধরে শুরু হয়ে আজ কোথায়, কোন ফর্মে এসে দাঁড়িয়েছে? আজকের আলোচনার যে ফলাফল প্রত্যাশা করছি, ওখানেই তার একটা জবাব হয়তো আমরা খুঁজে পাবো। কিংবা জবাব খুজে বের করার একটা প্রয়াস সেখানে ফুটে উঠবে। সবার আগেই আমাদের বুঝতে হবে, আধুনিকতা বলতে কি বোঝায়? আজকে যা আধুনিক, দু-বছর পরেই তো সেটা প্রাচীন হবার আশংকায় ভোগে।

তাহলে ধরে নিতে হচ্ছে, আধুনিকতা স্থায়ী কোন ব্যাপার নয়। এটি সময়ের সাথে আবশ্যিক ভাবে পরিবর্তিত হবে। কবিতার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি কি একইভাবে প্রযোজ্য? প্রতি যুগেই সাহিত্য বলি, কবিতা বলি, তার দুটি ধারা দুই সহোদর ভ্রাতার মত পাশাপাশি চলে। সে দুটি হল আধুনিকতা এবং উত্তরাধুনিকতা। কবিতায় পোস্ট মর্ডানিজম ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়।

সম্ভবত উত্তরাধুনিক কবিতার মূল বস্তুটি হল দুর্বোধ্যতা। এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ ছিলনা কখনো। এপার কি ওপার বাংলায়। সে তর্ক এখন মীমাংসাহীন অথচ নিভু নিভু অবস্থায় থাকলেও, একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। উত্তরাধুনিক কবিদের একদল মনে করেন, কবিতায় কোন অর্থময়তা থাকা চলবেনা।

কবিতা হবে শব্দের ব্যঞ্জনায় ভরপুর একটি রুপকল্প। কয়েকটি স্তবকে সেটি ভাগ হয়ে যেতে পারে। আবার কেবল মাত্র একটি লাইনেও একটি কবিতা শেষ হয়ে যেতে পারে। এখানে তুমুল একটা প্রশ্ন থেকে যায়- দুর্বোধ্য ব্যাপার বলতে কি বোঝাচ্ছেন তারা? কবিতার উদ্দেশ্য তাহলে কোথায়? এখানেও তাদের জবাব তৈরি আছে। এই দলের মতে, পাঠক শব্দের ধুম্রজালে দিশা হারিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকবে, সেখানেই উত্তরাধুনিক কবিতার স্বার্থকতা! একদল আছেন, তাদের মতে কবিতা প্রতিটি যুগের বার্তা বহনকারী।

যুগের বার্তা এক যুগ থেকে অন্য যুগে যায় কবিতার বাহনে চড়ে। সুতরাং কবিতায় বার্তা থাকবে। সেই বার্তা পাঠক ধরতে পারবে, পাঠক আপ্লুত হবে। মজার ব্যাপার প্রথম দলই এই একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাভাষার কবিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছেন। তাহলে কি ওখানেই উত্তর? মনে হচ্ছে না।

দলে ভারি হলেই সেটি সঠিক হবে, এমনটি গণতন্ত্রে-ভোটাভুটির ক্ষেত্রে চলতে পারে। কবিতা বা সাহিত্যে নয়। “কবিতা তার গায়ে গণতন্ত্রের বস্ত্র চাপাতে পারে। কিন্তু গণতন্ত্র কবিতার মজ্জাগত ব্যাপার না। কবিতার আপন আলয় আছে।

সেটা সময় নির্ধারণ করে দেয়। “ উত্তরাধুনিক কবিতা ছন্দেও বিপ্লব এনে হাজির করেছে। সে বলছে- কবিতা গদ্যছন্দেই সর্বাধুনিক। এখানে আশার কথা, ছন্দকে পুরোপুরি বিসর্জন সে দিতে পারছেন না। গদ্যছন্দ চলে এসেছে।

গদ্যছন্দেরও একটা প্যাটার্ন আছে। অনেক পোস্ট মর্ডান কবি নিয়তই সেই প্যাটার্ন নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করছেন। ফলে কবিতার বিবর্তন হচ্ছে। এই বিবর্তন বাংলা কবিতাকে কোথায় নিয়ে যাবে? প্রসঙ্গত, আমাদের মনে রাখতে হবে, জীবনানন্দ জীবদ্দশায় কবিতাভঙ্গির জন্য দারুণ সমালোচিত হলেও তিনি কিন্তু রবীন্দ্রবলয়কে চুড়ান্তভাবেই ভেঙ্গে দিতে পেরেছিলেন। আর আজ জীবনানন্দের অবস্থান বাংলা কবিতা কতটা উচ্চে নির্দিষ্ট করেছে, এটা আমাদের সবার জানা।

ঠিক একইভাবে, এখন পোস্ট-মর্ডানিজমের যে ধারা, কবির মাঝে যে শব্দের ধুম্রজাল তৈরীর লিপ্সা, সেটিও কি সময় নির্দিষ্ট করে দেবে? সমালোচনা ব্যাপারটা বাংলা কবিতা থেকে উঠেই গিয়েছে। তিন-চার দল তিন চার রকম আঙ্গিকের কবিতা আমাদের সামনে হাজির করতে পারছেন না। পরপর দশজনের দশটা কবিতা আপনাকে যদি পড়তে দেয়া হয়, কবির নাম গোপন করে, আপনি আসলে আলাদা করতে পারবেননা কোনটি কার কবিতা! আর আরো আশ্চর্য্যের বিষয় সেটা নিয়ে মনে হয়না, কারো কোন চিন্তা বা দুঃশ্চিন্তামাত্রও আছে! চলতি ধারার উত্তরাধুনিক কবিতা আর কবিদের নিয়ে মূল আশংকাটি এখানেই। ২ এত কথা বলার মূল উদ্দেশ্য জবাব খুঁজে বের করা। আমার এই আলোচনা উত্তরাধুনিক কবিতা নিয়ে কোন স্বিদ্ধান্ত নয়।

উদ্দেশ্য হল এর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা লাভ করা। তবে অবস্থা দৃষ্টে বোঝা যায়, ধোঁয়া আরো ধোঁয়াই পাকাতে পারঙ্গম। তারপরেও ধোঁয়া দিয়েই আমাদের সেটি দূর করতে হবে। বিষে বিষক্ষয় যাকে বলে। পুরো লেখাটায় অজস্র প্রশ্ন আছে।

আমার নিজের। যারা পড়বেন, তাদের জন্যেও। সেসব জবাব খোঁজার প্রয়াসে আসুন আলোচনায় নামি। এই আলোচনা বাংলা কবিতার জন্য। মনখুলে সবাই মন্তব্য করুন।

এখানে তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও ধরা খাবার ভয় নেই, কিংবা এটি কঠিন চেহারার ইনভিজিলেটরের উপস্থিতিতে দিতে থাকা কোন পরীক্ষাও নয়। আবার বলি, আপনাদের মন্তব্যগুলো থেকে বাছাই করা সেরা মন্তব্য গুলো ছাপা হবে তীরন্দাজের সূচনা সংখ্যায়। তাই আড্ডা চলুক। শুভস্য শিঘ্রম..
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.