প্রথম তিন ওভারেই দিলেন ১৫ রান। ব্রিসবেনের গ্যালারিতে বার্মি-আর্মিরা তখন তাঁকে খেপানোর জন্য গান গাইছে গলা ছেড়ে। গান তো নয়, যেন
অপমানের তির।
ব্রিসবেনে নিজের সর্বশেষ টেস্টের স্মৃতিটা কি ফিরে এসেছিল মিচেল জনসনের মনে? বছর তিনেক আগের এক নভেম্বরে এ মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৪৩ ওভার বল করেও কোনো উইকেট পাননি, দিয়েছিলেন ১৭০ রান। ক্যাচ ফেলেছিলেন, একবার ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে! ওই টেস্টেও তাঁকে খেপিয়েছিল বার্মি-আর্মি।
অ্যাডিলেডে পরের টেস্টে দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন জনসন! কাল প্রথম তিন ওভারের পর কি সেই দুঃস্বপ্ন তাড়া করছিল অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসারকে?
নাহ্। যদি করেও থাকে, সেই দুঃস্বপ্নকে আর ডালপালা মেলতে দেননি জনসন। যে ইংল্যান্ড তাঁকে একবার দুঃসহ যন্ত্রণায় পুড়িয়েছিল, যে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে ১২৩ বছর পর টানা চারটি অ্যাশেজ হারের শঙ্কায় ফেলেছে, কাল গতির বিষাক্ত ছোবলে তিনি সেই একই যন্ত্রণা ফিরিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডকে। দিন শেষে জনসনের চার উইকেট, সঙ্গে রায়ান হ্যারিসের তিন আর নাথান লায়নের দুটি উইকেট যোগ হওয়ায় ইংল্যান্ড অলআউট মাত্র ১৩৬ রানে। ২ উইকেটে ৮২ রান করা ইংল্যান্ড জনসন-হ্যারিসের গতির ঝড় আর লায়নের ঘূর্ণিতে পরের ৬ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৯ রানে! অ্যাশেজ ইতিহাসে ইংলিশদের অন্যতম জঘন্য ব্যাটিং ধস।
ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে বাজে ব্যাটিং ধস আছে মাত্র একটি। ১৯৫৪ কিংসটন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ২৮২ রান করা ইংল্যান্ড পরের ৬ উইকেট হারিয়েছিল মাত্র ৪ রানে! সকালে ২৯৫ রানে অলআউট হওয়া অস্ট্রেলিয়া দিন শেষে আবার ব্যাটিংয়ে নেমে বিনা উইকেটে ৬৫। সব মিলিয়ে লিড ২২৪ রানের। অথচ প্রথম দিন শেষেই মনে হয়েছিল, টেস্টের লাগামটা উঠে গেছে ইংল্যান্ডের হাতে।
২৫ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার কোনো টেস্ট হারের সাক্ষী না হওয়া ব্রিসবেন দ্বিতীয় দিনেই এমন রোমাঞ্চ উপহার দেবে—সেটা কেইবা ভাবতে পেরেছিল? তথ্যসূত্র: স্টার স্পোর্টস ১
একজন হয়তো কিছুটা ধারণা করেছিলেন—সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড লয়েড।
প্রথম দিনের পরই স্পোর্টস মেইলে নিজের কলামে লিখেছিলেন, ‘জনসন যে ম্যাচে ব্যাট হাতে ভালো করে, সেখানে সে বল হাতেও জ্বলে ওঠে। ’ আগের দিন ব্যাট হাতে নিজে ৬৪ রান এবং ব্র্যাড হাডিনের সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ার ধস ঠেকানো জনসন লয়েডের কথাই সত্যি প্রমাণ করলেন বল হাতে। প্রায় আট মাস পর দলে ফেরা পেসার এদিন গড়ে ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে টানা বল করে গেছেন, লাইন-লেন্থ মিলিয়ে যেন হয়ে উঠেছিলেন পেস বোলিংয়ের ভয়ংকর সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি। আর সেই গতির ঝড়ে একে একে উড়ে গেছেন মাইকেল কারবেরি, জোনাথন ট্রট, জো রুট আর গ্রায়েম সোয়ানরা।
তবে এমন বোলিংয়ে আউট হয়েও যেন শান্তি।
দিন শেষে তাই জনসনের প্রশংসায় কার্পণ্য নেই ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান করা কারবেরির, ‘ও বিশ্বমানের বোলার। ও বলটকে এমন জায়গায় ফেলে, যেটা খেলা কঠিন হয়ে যায় যে কারও জন্য। আর গতিতে তো আমার দেখা দ্রুততমদের একজন। ’
শুধু আফসোস, জীবনের প্রথম অ্যাশেজ টেস্ট খেলতে নেমে এই জনসনের সামনেই পড়তে হলো কারবেরিকে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।