তখনো সকালের নাশতা করা হয়নি কাজী সালাউদ্দিনের। হঠাৎ বাফুফে সভাপতির বাসায় এলেন দুই অতিথি। অপরিচিত কেউ নন। বেলা সাড়ে ১১টায় সহকারী রেনে কোস্টারকে নিয়ে সালাউদ্দিনের বাড়িতে ঢুকলেন জাতীয় দলের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। প্রায় ছয় মাস আগে ঢাকায় এলেও কালই প্রথম সালাউদ্দিনের বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন দুই ডাচ।
দুই বছরের চুক্তিতে লোডভিক ডি ক্রুইফ ও রেনে কোস্টার কাজ শুরু করেছেন গত জুনে। কিন্তু ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল, চুক্তির মাঝপথেই বাংলাদেশকে বিদায় জানাতে চান দুই কোচ। এসব নিয়েই জরুরি আলোচনা করতে চাইছিলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করার। কাল চলেই এলেন গুলশানের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কোচদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন সালাউদ্দিন।
বাফুফের সহসভাপতি তাবিথ আউয়ালও ছিলেন এ বৈঠকে।
কোচদের অতিথিকক্ষে বসিয়ে মাঝেমধ্যেই বাইরে আসছিলেন উদ্বিগ্ন সালাউদ্দিন। করিডরে দাঁড়িয়ে তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সলাপরামর্শও করছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে হাসিমুখেই দুই কোচকে বিদায় দিলেন সালাউদ্দিন। জানা গেছে, দুই কোচ অন্তত ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন না।
হঠাৎ করে কেন সভাপতির বাড়িতে আসা? কিছুটা কৌশলী উত্তর দিলেন লোডভিক ডি ক্রুইফ, ‘আসলে আজ আমরা এসেছিলাম সভাপতির কাছে কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য। ’
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ মুহূর্তে প্রচণ্ড অর্থসংকটে ফুটবল ফেডারেশন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অনিয়মিত। কোচদেরও বেতন, বাড়িভাড়া বাকি পড়েছে দুই মাসের।
তাঁদের বেতন, বাড়িভাড়া, যাতায়াত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে বাফুফেকে প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। তার মানে প্রতিদিন বাফুফের খরচ এক লাখ টাকার বেশি! কিন্তু কোচরা এ মুহূর্তে না পাচ্ছেন বেতন, না পাচ্ছেন কোনো কাজ। সেসব নিয়েই কথা বলতে এসেছিলেন ক্রুইফ।
অলস সময় কাটানো এবং বেতন অনিয়মিত হওয়ায় ভেতরে ভেতরে বেশ বিরক্ত দুই কোচ। প্রথমত সেটি চেপে যাওয়ারই চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু বেতনের কথা তুলে প্রশ্ন করতেই বেরিয়ে পড়ল লোডভিক ডি ক্রুইফের প্রকৃত মনোভাব, ‘সবাই দিন শেষে বেতন চায়। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমরা কোনো কাজ করছি না। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মাত্রই ফেডারেশন কাপ শুরু হলো। সেখানে ফুটবলার বাছাই করছি।
আমরা কিছু প্রীতিম্যাচ খেলার কথাও ভাবছি দেশে ও দেশের বাইরে। তবে সবকিছুর আগে দরকার টাকা। ’
অর্থসংকটের কথা স্বীকার করেছেন সালাউদ্দিনও, ‘বাফুফে এখন অর্থসংকটে আছে এটা অকপটে স্বীকার করছি। আমাদের যে কার্যক্রম তা বাস্তবায়ন করতে বিপুল অঙ্কের টাকার প্রয়োজন। যদি কার্যক্রম ছোট করে আনি, তবে খরচ কমবে।
তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুটবল জাতি হিসেবে থাকতে হবে আমাদের। আমরা সেটা চাই না। ’
অর্থসংকটে ফুটবলের কার্যক্রম যেমন কাটছাঁট করতে চান না সালাউদ্দিন, তেমনি চান না বিদেশি কোচদের বিদায় দিতেও, ‘আর্থিক এ সমস্যার জন্য আমরা দুই কোচের কাছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছি। আশা করি সমস্যাগুলো কাঠিয়ে উঠব। ’
কোচরা বসে আছেন বলে হতাশ, এ হতাশা কীভাবে দূর করবেন জানতে চাইলে বাফুফের সভাপতি বলেন, ‘এটা সত্যি, তাঁরা বসে আছেন।
এতে হতাশা আসে। কিন্তু এটা চাকরির একটা অংশ। যদি তাঁরা এটা না মানেন, তাহলে বুঝতে হবে এসব কাজের ব্যাপারে তাঁদের অভিজ্ঞতাই নেই। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।