রহস্যময় এক রোগের চিকিৎসার জন্য ফ্রান্সে যাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ পর মারা যান তিনি।
আরাফাতের শয়নকক্ষটির সঙ্গে কারাকক্ষের অনেক মিল। দেয়াল ঘেষে একটি ছোট্ট বিছানা, একটি ছোট ফ্রিজ যেখানে দীর্ঘদিন আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া তার কিছু ওষুধ এবং একটি ওয়্যারড্রবে তার পুরনো খাঁকি ইউনিফর্ম যেখানে ব্যাজগুলো এখনো জ্বলজ্বল করছে।
ফিলিস্তিনের পতাকায় মোড়ানো আরাফাতের মৃতদেহ নয় বছর আগে কবর দেয়া হলেও ষড়যন্ত্র করে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার বিষয়টি কখনো চাপা পড়েনি। অভিযোগের তীর সবপক্ষের দিকেই রয়েছে।
এমন প্রমাণ কি বেরিয়ে আসতে পারে যে ইসরাইলই ফিলিস্তিনের এই নেতাকে হত্যা করেছে। পুরনো এই বিদ্বেষ দুই দেশের চলমান শান্তি আলাচনাকে একেবারে ভেস্তে দিতে পারে।
অন্যান্য ফিলিস্তিনির মতো আরাফাতের কাছের দেহরক্ষী ইমাদ আবু জাকিও নিশ্চিত যে আরাফাতকে কে বা কারা বিষ প্রয়োগ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জাকি বলেন, “আমি মনে করতে পারি একদিন ভীষণ অসুস্থ প্রেসিডেন্ট বললেন: ‘তারা আমাকে ধরে ফেলেছে। ‘ তিনি ইসরাইল সম্পর্কে কথাটা বলেছিলেন।
“
তবে অনেকেই এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের মধ্যে একজন আরাফাতের বিধবা স্ত্রী সুহা। তিনি মনে করেন তার স্বামীকে ভেতরের কেউই হত্যা করেছে। তার বক্তব্য, “আমি নিশ্চিত তার কাছের কেউই এটা করেছে। “
তিনি আরাফাতের মৃত্যুকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করেন।
চলতি মাসে সুইজারল্যান্ডের একটি রাসায়নিক পরীক্ষাগার জানিয়েছে, আরাফাতের দেহাবশেষে অস্বাভাবিক উচ্চমাত্রায় তেজক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম পাওয়া গেছে।
মৃত্যুর আগে রামাল্লাতে ৪১ মাস ইসরাইলের সেনাবাহিনীর হাতে আটক ছিলেন আরাফাত। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ওই সময়ে ইসরাইলের প্রেসিডেন্টে এরিয়েল শ্যারন একটি পত্রিকাকে রহস্যময়ভাবে বলেন, তিনি আরাফাতের কাছ থেকে পরিত্রাণ পেতে চান।
শ্যারনের ওই মন্তব্যের মাত্র এক মাস পর আরাফাত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এরপর অক্টোবরের ১৪ তারিখে আরাফাতের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই সময়ে ফিলিস্তিনের কৃষিমন্ত্রী ইব্রাহিম আবু আল-নাজা।
নাজা বলেন, “আমি যখন তাকে (আরাফাত) দেখেছিলাম তখন মনে হয়নি খারাপ কিছু হয়েছে। তার স্বাস্থ্যও ভালো মনে হয়েছিলো। “
“তার সামনে এক বাটি স্যুপ ছিলো। তিনি এক চামচ স্যুপ চুমুক দিলেন এবং তাকে অন্যরকম দেখালো। তিনি তার দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেন এবং বমি করেন।
এর পর তিনি আর সুস্থ হননি। “
যদিও কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ১২ অক্টোবর থেকে আরাফাত অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকের দাবি অক্টোবরের শুরুতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিলো আরাফাত ফ্লুতে ভুগছেন। প্রথমে তাকে মিশরের একদল চিকিৎসক পরীক্ষা করেন।
পরে তিউনিসিয়া থেকে চিকিৎসক দল আসেন।
২৯ অক্টোবর আরাফাতকে প্যারিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ১১ নভেম্বর তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। ফ্রান্সের চিকিৎসকরা বলেন, তারা আরাফাতের মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারেননি।
দুই সপ্তাহ পর ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে।
যদিও তারা এ ব্যাপারে কোন সমাধানে পৌঁছতে পারেনি।
গত বছর আল জাজিরা নিউজ চ্যানেল আরাফাতের হাসপাতালের কিছু কাপড়চোপর পায় এবং সেগুলো পরীক্ষার জন্য সুইজারল্যান্ডে পাঠায়। সেখানে তার কাপড়ে উচ্চমাত্রার পোলোনিয়াম-২১০ পাওয়া যায়।
এরপর ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ একটি হত্যা তদন্ত শুরু করে। গত বছর আরাফাতের দেহাবশেষ কবর থেকে তোলা হয় এবং নমুনা সংগ্রহ করে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় পাঠানো হয়।
সুইজারল্যান্ড জানায় তারা উচ্চ মাত্রার পোলোনিয়াম পেয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে তারা এখনো চূড়ান্ত কিছু পায়নি। আর ফ্রান্স এখনো কোনো প্রতিবেদন পাঠায়নি।
আরাফাতের মৃত্যুর সময় ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আহমেদ কিউরি বলেন, “আরাফাতকে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি সবসময়ই নিশ্চিত ছিলাম। এটা আমি শুরু থেকে বলে আসছি।
কিন্তু আমাদের প্রমাণের প্রয়োজন ছিলো। সুইজারল্যান্ডের এই প্রতিবেদন শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রমাণ দিয়েছে। “
“কেউই বিশ্বাস করবে না ইসরাইল ছাড়া অন্য কেউ এটা করেছে,“ বলেন কিউরি।
যদিও ইসরাইল কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।