যাত্রীদের মতো এবার স্থল, বিমান ও সমুদ্রবন্দরে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পণ্য আনা-নেওয়া করা হবে। এ জন্য পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না শুল্ক কর্মকর্তারা। জাহাজ থেকে পণ্য নেমে সরাসরি বন্দর থেকে বের হয়ে আসবে। এতে সময় ও ব্যয় কমবে। তবে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদধারী প্রতিষ্ঠানই এ সুবিধা পাবে।
৩-৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রীপর্যায়ের নবম বৈঠকে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট) চূড়ান্ত হবে। এতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করবে। আর এ চুক্তি স্বাক্ষর করলে বিশ্ব শুল্ক সংস্থার (ডব্লিউসিও) বেশ কিছু বিধিবিধান পরিপালনের বাধ্যবাধ্যকতা থাকবে। ২০০৫ সালে পণ্যের নির্বিঘ্ন চলাচলে নিরাপদ রূপরেখা (সেইফ ফ্রেমওয়ার্ক) চালু করে ডব্লিউসিও। এর আওতায় অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর বা এইও ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এইও হলো একধরনের মান সনদ, যার জন্য কিছু শর্ত পরিপালন করতে হয়। আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন করে এমন প্রতিষ্ঠানকেই সাধারণত এ সনদ দেয় ডব্লিউসিও। সনদ পাওয়ার মানে হলো ডব্লিউসিও ওই প্রতিষ্ঠানের স্বয়ংক্রিয় হিসাব ও পণ্য পরিবহনসহ সব ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আর সনদ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানটিকে যেকোনো দেশের শুল্ক কর্তৃপক্ষ গ্রিন চ্যানেলে পণ্য আসা-যাওয়া করতে দিতে বাধ্য।
তবে এইও সনদ পেতে বাংলাদেশের কোনো আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আবেদন করতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানটি এ সনদ পেতে যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে স্বচ্ছ আর্থিক লেনদেন, পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা, স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম চালাতে পারঙ্গম ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত দলিলাদি দিতে হবে। এরপর এনবিআর এইও সনদ দিতে সুপারিশ করে প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্রটি ডব্লিউসিওর কাছে পাঠিয়ে দেবে। ডব্লিউসিও সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই প্রতিষ্ঠানকে এইও সনদ দেবে।
এ সনদ দেওয়ার অর্থ হলো ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ডব্লিউসিওর স্বীকৃতি পাওয়া। আর ডব্লিউসিওর সদস্য দেশগুলোতে গ্রিন চ্যানেলে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে।
তবে সদস্যগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার চুক্তি থাকতে হবে।
এইও সনদ থাকলে আমদানি কিংবা রপ্তানির যেকোনো একটি স্থানেই পণ্যের বিবরণী ঘোষণা দিলেই হবে। যেমন, বাংলাদেশের এইও সনদপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির সময় শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যের বিবরণী ঘোষণা দিলেই হবে। এ চালান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে নতুন করে পণ্যের বিবরণীর ঘোষণা দিতে হবে না। শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরাসরি গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বের হয়ে যাবে পণ্যের চালান।
বাংলাদেশের বন্দরে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে জাহাজে উঠবে পণ্য।
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এইও সনদধারী প্রতিষ্ঠান ৬ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য খালাস করে নিয়ে যেতে পারবেন। আর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় বিল অব এন্ট্রি ও শুল্ক পরিশোধ করতে পারবেন। জাহাজ থেকে সরাসরি গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বের হয়ে ট্রাক বা পরিবহনে উঠবে।
এনবিআরের সদস্য ফরিদউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যবস্থাটি চালু করা গেলে পণ্যের যাতায়াত সহজ ও নির্বিঘ্ন হবে।
এতে ব্যবসায়ীদের খরচ ও সময় বাড়বে। বাজারে আরও প্রতিযোগীসক্ষম হবেন আমদানি-রপ্তানিকারকেরা।
বর্তমানে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ ২৮টি দেশ এইও ব্যবস্থা চালু করেছে। এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ ব্যবস্থা চালু করেছে। এলজিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান ভারতে এইও সনদ পেয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এইও সনদ থাকলে মাত্র ছয় ঘণ্টায় পণ্য খালাস করা হয়।
শিল্প উৎপাদক, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক. ওয়্যারহাউস, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস, সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর—এ এইও সনদ নিতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন বিমানবন্দর এইও সনদ নিয়েছে।
এদিকে এইও ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সঙ্গে গতকাল ফেডারেশন ভবনে বৈঠক করেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে এনবিআরের সদস্য ফরিদ উদ্দিন, প্রথম সচিব ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী, কমিশনার (পানগাঁও শুল্ক ভবন) মাসুদ কবিরসহ এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।