মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে বাতব্যথা মানে হাত-পায়ের গিরা ব্যথাসহ ফুলে যাওয়ার প্রবণতা, আমাদের সমাজে অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তার সঙ্গে অনেকের কোমর, ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা একটি সচরাচর অসুস্থতা হিসেবে বিরাজমান। কারও কারও এ ধরনের বাতব্যথা একবার শুরু হয়ে খুব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কারও কারও মাঝে মাঝে মাঝারি ধরনের ব্যথা থেকে তীব্র ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়ে কিছুদিন বিদ্যমান থেকে কয়েকদিন পর ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়ে যায়। তাদের অনেকের চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় হয়, অনেকের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে কিছু দিন সুস্থ থাকার পর আবার ব্যথা ফিরে আসে এবং কিছুদিন ভোগার পর আবার আরোগ্য হয়ে যায়। এ ধরনের সব অবস্থাকে আথর্্রাইটিস বলা হয়।
আথর্্রাইটিস অনেক ধরনের হতে পারে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আথর্্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা এবং সময়ের আবর্তে এর তীব্রতা এবং জটিলতা দিনদিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে বংশগতির ধারা হিসেবে আথর্্রাইটিস হয়ে থাকে। যাদের বংশগতির ধারা হিসাবে আথর্্রাইটিস হয়, তারা কম বয়সেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং তাদের এ রোগের তীব্রতা অনেক প্রকট আকার ধারণ করে। আর্থ্রাইটিস প্রধানত দু'ধরনের হয় -
প্রদাহজনিত আথর্্রাইটিস : যাতে শরীরে আক্রান্ত জয়েন্ট বা গিরা ফুলে যায়, লাল হয়ে যেতে পারে, গিরার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তার সঙ্গে শরীর ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও শরীরে অত্যধিক দুর্বলতা অনুভূত হতে থাকে।
এ ধরনের ব্যথা ঘুম থেকে ওঠার পর খুব বেশি অনুভূত হয় এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
ক্ষয়জনিত আথর্্রাইটিস : এ ধরনের অসুস্থতায় সাধারণত ভারবাহী গিরা বিশেষ করে হাঁটু, কোমর ও পায়ের অন্যান্য গিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়। গিরা ব্যথার সঙ্গে জ্বর, শরীর ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না। সাধারণভাবে এ জাতীয় আথর্্রাইটিস বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কখনো কখনো আক্রান্ত গিরা ফুলে যেতে পারে, তবে তাপমাত্রা খুব একটা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায় না।
এ ধরনের ব্যথা সকাল বেলায় খুব কম থাকে বা থাকে না, বিকাল এবং সন্ধ্যায় বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। বাতব্যথা থেকে হৃদরোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা প্রদাহজনিত আথর্্রাইটিসে দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগছেন। প্রদাহজনিত আথর্্রাইটিসের ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রধান রক্তনালিতে এওরটা (অড়ৎঃধ) প্রদাহ দেখা দেয় এবং এর থেকে হৃৎপিণ্ডের এওরটিক ভাল্ব আক্রান্ত হয়ে ভাল্বের সমস্যা দেখা দেয়। এর সঙ্গে অন্যান্য অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে অনেক ধরনের মারাত্দক হৃদরোগ সৃষ্টি করে।
যেমন ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, মাইওকার্র্ডাইটিস ও পেরিকার্ডাইটিস। এ ধরনের রোগীরা প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীরা বাতব্যথার তীব্রতায় ভুগতে থাকেন বলে হৃদরোগের উপসর্গগুলো ব্যথার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। ফলে হৃদরোগের জটিলতা না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তারা হৃদরোগে ভুগছেন।
হৃদরোগের প্রাথমিক অবস্থায় রোগী সহজেই হাঁপিয়ে যান। অনেকের শরীর অত্যধিক ঘামতে থাকে তারপর শরীর অবসন্ন হয়ে যায়, কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয় ও খুব বেশি অলসতা বোধ হয়। হৃদরোগ যখন জটিল আকার ধারণ করে তখন খুব বেশি শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তার সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, শরীর, হাত, পা, মুখ ফুলে যেতে পারে। শরীর ও পেটে পানি জমা হওয়ার জন্য পেট ফাঁপা, বদহজম, ক্ষুধা-মন্দা, খাদ্যগ্রহণে অরুচি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে।
ডা. এম শমশের আলী, সি. কনসাল্টেন্ট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
ফোন : ০১৯৭১৫৬৫৭৬১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।