আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরাচারে দুরাচারে অসুর না হয়ে যায়!

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
১৯৭১ সালের যুদ্ধটা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। এত্ত ছোট ছিলাম যে, যুদ্ধ বোঝার মতো বোধ, বুদ্ধি, চেতনা কোনটাই ছিল। কিন্তু যে পারিবারিক পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা তাতে কখনও মনে হয়নি আমি যুদ্ধ দেখিনি। আমি বেড়ে উঠতে উঠতে পরিষ্কার চিনে নিয়েছি কারা যুদ্ধের পক্ষে ছিল আর কারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থেকে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, জোর করে ধর্মান্তর, মানুষকে এলাকা ছাড়া, দেশ ছাড়া করা ইত্যাদি বর্বর, অমানবিক কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে, এসব কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে অথবা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা নই আমি, অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধ করার বা এই মহান যুদ্ধে সামান্য খড়কুটো দিয়ে সাহায্য বা সহযোগিতা করার বয়স ছিল না আমার। অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু মনে মনে আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত এইসব দেশদ্রোহী রাজাকারদের কোন ক্ষমা নেই এবং তাদের বিচার করে শাস্তি দেয়া একান্তই কর্তব্য। আর এই বিচারের দাবি কোন রাজনৈতিক দলের একক দাবি নয়, এই দাবি ছিল স্বাধীনতার সপক্ষের সাধারণ বাঙালীদের।

দীর্ঘ ৪২ বছর পরে এই রাজাকার আল বদরদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হচ্ছে, বিচারে এই নরঘাতকদের কারও ফাঁসির রায় হচ্ছে, কারও বা যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বিচার করতে দীর্ঘ চার দশক প্রতীক্ষা করার কারণ কি ছিল? মোটা দাগের কিছু কারণ বুঝতে পারলেও সূক্ষ্ম এমন কিছু কারণ ছিল যার ফলে চার দশক ধরে এই সব রাজাকারের বিচার না করে তাদের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আরও সংগঠিত হয়ে বিষাক্ত রক্তঝাড়ের চাষ করতে। কারা করেছে তা আজ বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানকে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া একটি দেশ। কে বিক্রি করেছে? শেখ মুজিব আর তাঁর দল আওয়ামী লীগ।

যে কোন সময় ভারত আমাদের নিয়ে নিতে পারে। সুতরাং দেশ বাঁচাও। আওয়ামী লীগ হটাও। দীর্ঘ সময়, দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ওদিকে বুনোবনে চাষ হয়েছে নব্য রাজাকারদের।

প্রশাসন, অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজাকারের চাষের ফসলরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আজ কোথায় নেই এরা? আজ ওরা আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন তুলছে, সাধারণ ক্ষমা করে আবার কিসের বিচার? ভারতের কাছে আবার দেশ বিক্রি করার ফন্দি তাই না! ‘ভারতের কাছে দেশ বিক্রি’ কথাটি এক শ্রেণীর শিক্ষিত-অশিক্ষিত, এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী এবং ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ গভীর বিশ্বাস থেকে উচ্চারণ করে। এদের মগজের উর্বর ভূমিতে এক এবং অদ্বিতীয় একজনই শত্রু বহাল। তা হচ্ছে ভারত। এই যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার শত্রুদের বিচার করছে তাও নাকি ভারতের ইচ্ছায়ই হচ্ছে।

কেন যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে তার উত্তর, আওয়ামী লীগ তো ভারতের চামচা তাই। ওরাই তো পাকিস্তানকে ভাগ করেছে। হিন্দুরা কি কখনও মুসলমানদের ভালবাসে! ভাল চায়! এদের কাছে এ প্রশ্ন করা নিরর্থক যে, ভারত কি হিন্দু রাষ্ট্র? বাংলাদেশ কি মুসলিম রাষ্ট্র? এদের বিশ্বাসের ঘরে দ্বিজাতি তত্ত্ব ছাড়া আর কোন ধারণা নেই। এরা কেবলই মুসলিম। তাই আজ যখন চট্টগ্রাম, পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রাম, বরিশালের চরকাউয়ার কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জান মাল লুট তরাজ, ভাংচুর করা হচ্ছে, তখন অম্নান বদনে এরা উচ্চারণ করে, ওরা ইন্ডিয়া চলে যায় না কেন? ওদের জন্য তো ইন্ডিয়া আছে।

আমাদের দেশে ওদের থাকার কি দরকার। এই উচ্চারণ একজন মহিলা জাতীয়তাবাদী সমর্থকের। তাঁর মুখে পাকিস্তানী পতাকার ঘৃণ্য উদ্ভাস। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শিক্ষার আলোকদাত্রী এই সব ব্যক্তির মুখে এরকম সাম্প্রদায়িক উচ্চারণ কি শেখাবে নতুন প্রজন্মকে? ইন্ডিয়া শুধু হিন্দুদের দেশ। বাংলাদেশ কেবল মাত্র মুস্লিমদের।

এই শিক্ষা নিয়ে যে শিশুটি বড় হচ্ছে কি করে সম্ভব তার পক্ষে অসাম্প্রদায়িক মনের একজন ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক হওয়া! মানুষ হওয়া তো দূরের কথা। হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে কেন যাবে? এই দেশ কি হিন্দুদের নয়? পিতা, পিতামহ, পুর্বপুরুষদের ভিটে মাটি , জন্ম জন্মান্তরের দেশ ছেড়ে কেন যাবে হিন্দুরা? ইসলামের কোথায়, কোন গ্রন্থে লেখা আছে কেবল মুসলমানের জন্য নিজস্ব দেশ থাকবে? সে দেশে অন্যধর্মের কোন মানুষ থাকতে পারবে না? বিশ্বে এরকম কোন রাষ্ট্র থাকলে এই সব মুসলমানরা কেন চলে যায় না সে দেশে। কে আটকাচ্ছে? কই আমাদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না হিন্দুদের সাথে সহ অবস্থানে! আতিথেয়তায়, জলগ্রহণে, অনগ্রহণে, দুঃখে, সুখে, আনন্দ, বেদনায়, সেøাগানে, দাবি আদায়ে, রক্তদানে! বেশ তো আমরা না হয় খাঁটি মুসলমান নই। আধা মুসলিম। কিন্তু যারা খাঁটি মুসলিম তারা তো খুঁজে নিতে পারে একটি খাঁটি মুসলিম দেশ! ইসলামে যে উত্তম মানুষ হওয়ার শিক্ষা আছে, ইসলাম কথাটার মানে যে শান্তি, প্রতিবেশীর প্রতি ভাল ব্যবহার করা আমরা সে শিক্ষা ভাল করেই জানি।

কিন্তু এই সব ধর্মরুগীদের দেখে কি বিশ্বাস করা যায় যে ইসলাম শান্তির ধর্ম? কোন রাজনৈতিক দলেরই অধিকার নেই ক্ষমতায় এসে জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করার। কেননা এই দিনই দিন নয় আরও দিন আছে। আর সেই দিনটি সমাগত প্রায়। সরকারী এবং বিরোধী দুটি দলেরই আজ জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান বিরোধী দলগুলোর জোট সমগ্র বাংলাদেশে যে সহিংস কার্যকলাপ করছে তা বাংলাদেশকে এক ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

স্পষ্ট করে দিয়েছে দুটি পথ। এবার বাংলাদেশকে এই দুটি পথের যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। নইলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে সেই চেনাপরিচিত জলপাই শক্তি। বাংলাদেশের বিকশিত গণতন্ত্রের মুখে পড়বে চপেটাআঘাত। লৌহবুটের নিচে খাবি খাবে জনতা জনার্দনের অধিকার।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আর সংবিধানের বুকের ওপর নেমে আসবে অস্ত্রের কালো হিম ছায়া। তা হলে কি চাই আমরা? আমরা কি খালেদা জিয়া গংকে মেনে নেব? রাজনৈতিক সংস্কৃতির শিষ্টাচারবর্জিত একটি ধর্মান্ধ দলকে আমরা আমাদের রায় দেব? কোন আশ্বাসে? জনতার কি মূল্য আছে এই গংয়ের কাছে? একমাত্র লাশে পরিণত হওয়া ছাড়া। কি ঈমান আছে এই গংয়ের যারা মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যার উদ্বাহু উল্লাসে! ক্ষমতার লোভে ন্যূনতম ভদ্রতার লেবাসটুকু ছিঁড়ে ফেলে উলঙ্গ রাজা হয়ে ঘুরছে! হরতালে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, সংখ্যালঘুদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে, হত্যা, খুন, ধর্ষণ করে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তাতে খালেদা গংকে কোন মতেই আর ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী নরপশুদের সঙ্গে পার্থক্য করা যায় না। এই গংয়ের কি আর কোন মানবিক চেহারা আছে আমাদের মনে? সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বলে কি কোন স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আছে বাংলাদেশে? বিএনপি কি কখনও আয়নায় নিজেদের চেহারা যাচাই করে দেখেছে? দেখলে দেখতে পেত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কবেই জামায়াতের পকেটে ঢুকে তার নিজস্ব অস্তিত্ব খুইয়ে বসে আছে। আর আওয়ামী লীগ কি ভুলে গেছে ৭৫-এ জাতির জনকের দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে? কি অপরাধ ছিল এই নিরহঙ্কার, সৎ, আত্মত্যাগী, মহান মানুষটির? সংসার কি কোনদিন এই মানুষটিকে টেনেছে লোভের হাতছানিতে? জীবনের অধিকাংশ সময় যে মানুষটি জেলে কাটিয়ে দিয়েছে দেশ ও জনগণের কথা ভেবে তাকে কেন রাতের অন্ধকারে তারই গড়া স্নেহধন্যদের হাতে প্রাণ দিতে হলো সপরিবারে? সেদিন সে মৃত্যুতে দুঃখ পেলেও কেন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে ভেঙ্গে পড়েনি সমস্ত বাংলাদেশ? বঙ্গবন্ধুর প্রিয় স্বদেশ, জননী জন্মভূমি? এরা তো সেই বাঙালী জনগণ যারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে ৭১-এ অকাতরে জীবনদানে বদ্ধপরিকর ছিল? লোভের মুখে পদাঘাত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তারই দলের ‘চাটার দলের’ উদ্বাহু লোভের শাস্তি হিসেবে।

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা না হয় বাদই দিলাম। আওয়ামী লীগ কি কখনও আত্মসমালোচনার উন্মুক্ত সভা আহ্বান করেছে? কোন রাজনৈতিক পাঠচক্র গড়ে তুলতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, যেখানে দলের নেতা, কর্মী ও সদস্যরা মাসান্তে অথবা ত্রৈমাসিক মিলিত হয়ে দলের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে খোলামেলা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করবে? বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে আমরা কি খুশি? মোটেই না। এ কথা সত্য দেশের অর্থনীতি ভালর দিকে। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কর্মের পরিসর বেড়েছে, শিক্ষিতের হার বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।

না খেয়ে মৃত্যু হওয়ার মতো অবস্থা এখন আর বাংলাদেশের নেই। এই গর্ব একান্তই এই সরকারের। বাংলাদেশকে চূড়ান্ত উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। অবশ্যই হাত খোলা ধন্যবাদ প্রাপ্য এই সরকারের। কিন্তু এই সাফল্যে কি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে? তাছাড়া দেশে কোটিপতির সংখ্যা যত বেড়েছে নিম্নবিত্তের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি বাড়ছে ।

অর্থাৎ ধন সম্পদের বণ্টন বৈষম্য দ্রষ্টিকটু হয়ে উঠছে ক্রমাগত। ধনী আরও ধনী এবং গরিব আরও গরিব হয়ে পড়ছে। আমি মানছি আওয়ামী লীগ কখনই শ্রেণী বৈষম্যের নিপাত হোক এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতি করেনি, করবেও না। কারণ দলটি প্রথম থেকেই আগাগোড়া একটি মধ্যবিত্ত মানসিকতার দল ছিল, এখনও আছে। সুতরাং শ্রেণী বৈষম্য, ধন বৈষম্য, সম্পদের সুষম বণ্টন হবে এই সরকারের সময় এটা খুব একটা আশা করা ঠিক নয়।

মধ্যবিত্ত মানসিকতার নেতা-নেত্রিরা কখন ও ভাবে না রাজনীতি করে দেশ, জনগণকে কি দিলাম বরং সারাক্ষণ একটা ভাবনায়ই তারা আচ্ছন্ন থাকে রাজনীতি করে কি পেলাম। নির্বাচিত এক দুজন সাংসদ বাদে আর কেউ কি বলতে পারবে এলাকায় কবে গিয়েছেন এই পাঁচ বছরে! কোন উপকারটা তারা করেছেন যাতে এলাকার জনগণ দ্বিতীয়বার তাকে নির্বাচিত করবে! পত্রিকায় প্রকাশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব ঘাঁটিগুলোতে এবার অসন্তোষ ফুঁসে উঠেছে আওয়ামী লীগের স্বঘরানায়। খুব কি অন্যায় এই অসন্তোষ! কোন যুক্তিই কি হালাল করে না এই অসন্তোষকে? আসলে রাজনীতি এক ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয় এই সব রাজনীতিবিদদের কাছে। দেশপ্রেম, জনগণ, আদর্শ, আন্দোলন এই সব কিছুই রাজনৈতিক ব্যবসার উৎপাদনের উপাদন ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য দেশের অধিকাংশ মানুষের অপত্য স্নেহ, নাড়ির টান, সমর্থন, দাবি রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি।

আপন সন্তানের মতো জনগণ চায় দুর্নীতির দমন করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাক প্রগতির পথে। পার্টি অফিসের মেনুফেস্টো, বক্তৃতা, সেøাগান, ভোট ভিক্ষার কৌশল হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির রাজনৈতিক স্তম্ভগুলো বাস্তবায়নের দৃঢ় লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে বর্তমান আওয়ামী লীগের সফলতার সুফল আওয়ামী লীগের ঘরে আসতে বাধ্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিক শিক্ষা, তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনৈতিক শিক্ষার পাঠক্রম, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সর্বোপরি ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশসেবার শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে না তুলতে পারলে ভবিষ্যতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য বলে কিছুই থাকবে না। সুতরাং সময় দাবি করছে এই মুহূর্তে সুস্থ রাজনীতির ধারায় রাজনৈতিক দলগুলোর শুদ্ধিযাত্রা শুরু করা দরকার। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজন এই পদক্ষেপ নিতেই হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুখপাত্র হিসেবে, ধর্মনিরপেক্ষতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়ে, দুর্নীতির কুষ্ঠরোগকে নির্মূল করে বাংলাদেশে ভবিষ্যত রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন রূপে আসতে হবে। নইলে দুরাচারে দুরাচারে অসুর হয়ে হয়েই থাকতে হবে। অন্যতম হতে পারবে না কোনদিনই। আর তখন জনগণ আকাক্সক্ষা করবে তৃতীয় শক্তির উত্থান হোক। বর্তমান রাজনীতিতে অতিষ্ঠ জনগণ কিন্তু প্রত্যাখ্যান শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে।

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তা বুঝতে পারছে? ১৯৭১ সালের যুদ্ধটা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। এত্ত ছোট ছিলাম যে, যুদ্ধ বোঝার মতো বোধ, বুদ্ধি, চেতনা কোনটাই ছিল। কিন্তু যে পারিবারিক পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা তাতে কখনও মনে হয়নি আমি যুদ্ধ দেখিনি। আমি বেড়ে উঠতে উঠতে পরিষ্কার চিনে নিয়েছি কারা যুদ্ধের পক্ষে ছিল আর কারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থেকে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, জোর করে ধর্মান্তর, মানুষকে এলাকা ছাড়া, দেশ ছাড়া করা ইত্যাদি বর্বর, অমানবিক কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে, এসব কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে অথবা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা নই আমি, অস্ত্র হাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে সম্মুখ যুদ্ধ করার বা এই মহান যুদ্ধে সামান্য খড়কুটো দিয়ে সাহায্য বা সহযোগিতা করার বয়স ছিল না আমার।

অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু মনে মনে আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বিশ্বাস করি যুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত এইসব দেশদ্রোহী রাজাকারদের কোন ক্ষমা নেই এবং তাদের বিচার করে শাস্তি দেয়া একান্তই কর্তব্য। আর এই বিচারের দাবি কোন রাজনৈতিক দলের একক দাবি নয়, এই দাবি ছিল স্বাধীনতার সপক্ষের সাধারণ বাঙালীদের। দীর্ঘ ৪২ বছর পরে এই রাজাকার আল বদরদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হচ্ছে, বিচারে এই নরঘাতকদের কারও ফাঁসির রায় হচ্ছে, কারও বা যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু এই বিচার করতে দীর্ঘ চার দশক প্রতীক্ষা করার কারণ কি ছিল? মোটা দাগের কিছু কারণ বুঝতে পারলেও সূক্ষ্ম এমন কিছু কারণ ছিল যার ফলে চার দশক ধরে এই সব রাজাকারের বিচার না করে তাদের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আরও সংগঠিত হয়ে বিষাক্ত রক্তঝাড়ের চাষ করতে। কারা করেছে তা আজ বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানকে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া একটি দেশ। কে বিক্রি করেছে? শেখ মুজিব আর তাঁর দল আওয়ামী লীগ। যে কোন সময় ভারত আমাদের নিয়ে নিতে পারে।

সুতরাং দেশ বাঁচাও। আওয়ামী লীগ হটাও। দীর্ঘ সময়, দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ওদিকে বুনোবনে চাষ হয়েছে নব্য রাজাকারদের। প্রশাসন, অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজাকারের চাষের ফসলরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

আজ কোথায় নেই এরা? আজ ওরা আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন তুলছে, সাধারণ ক্ষমা করে আবার কিসের বিচার? ভারতের কাছে আবার দেশ বিক্রি করার ফন্দি তাই না! ‘ভারতের কাছে দেশ বিক্রি’ কথাটি এক শ্রেণীর শিক্ষিত-অশিক্ষিত, এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী এবং ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ গভীর বিশ্বাস থেকে উচ্চারণ করে। এদের মগজের উর্বর ভূমিতে এক এবং অদ্বিতীয় একজনই শত্রু বহাল। তা হচ্ছে ভারত। এই যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার শত্রুদের বিচার করছে তাও নাকি ভারতের ইচ্ছায়ই হচ্ছে। কেন যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে তার উত্তর, আওয়ামী লীগ তো ভারতের চামচা তাই।

ওরাই তো পাকিস্তানকে ভাগ করেছে। হিন্দুরা কি কখনও মুসলমানদের ভালবাসে! ভাল চায়! এদের কাছে এ প্রশ্ন করা নিরর্থক যে, ভারত কি হিন্দু রাষ্ট্র? বাংলাদেশ কি মুসলিম রাষ্ট্র? এদের বিশ্বাসের ঘরে দ্বিজাতি তত্ত্ব ছাড়া আর কোন ধারণা নেই। এরা কেবলই মুসলিম। তাই আজ যখন চট্টগ্রাম, পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রাম, বরিশালের চরকাউয়ার কালিখোলা গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জান মাল লুট তরাজ, ভাংচুর করা হচ্ছে, তখন অম্নান বদনে এরা উচ্চারণ করে, ওরা ইন্ডিয়া চলে যায় না কেন? ওদের জন্য তো ইন্ডিয়া আছে। আমাদের দেশে ওদের থাকার কি দরকার।

এই উচ্চারণ একজন মহিলা জাতীয়তাবাদী সমর্থকের। তাঁর মুখে পাকিস্তানী পতাকার ঘৃণ্য উদ্ভাস। সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, শিক্ষার আলোকদাত্রী এই সব ব্যক্তির মুখে এরকম সাম্প্রদায়িক উচ্চারণ কি শেখাবে নতুন প্রজন্মকে? ইন্ডিয়া শুধু হিন্দুদের দেশ। বাংলাদেশ কেবল মাত্র মুস্লিমদের। এই শিক্ষা নিয়ে যে শিশুটি বড় হচ্ছে কি করে সম্ভব তার পক্ষে অসাম্প্রদায়িক মনের একজন ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক হওয়া! মানুষ হওয়া তো দূরের কথা।

হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে কেন যাবে? এই দেশ কি হিন্দুদের নয়? পিতা, পিতামহ, পুর্বপুরুষদের ভিটে মাটি , জন্ম জন্মান্তরের দেশ ছেড়ে কেন যাবে হিন্দুরা? ইসলামের কোথায়, কোন গ্রন্থে লেখা আছে কেবল মুসলমানের জন্য নিজস্ব দেশ থাকবে? সে দেশে অন্যধর্মের কোন মানুষ থাকতে পারবে না? বিশ্বে এরকম কোন রাষ্ট্র থাকলে এই সব মুসলমানরা কেন চলে যায় না সে দেশে। কে আটকাচ্ছে? কই আমাদের তো কোন অসুবিধা হচ্ছে না হিন্দুদের সাথে সহ অবস্থানে! আতিথেয়তায়, জলগ্রহণে, অনগ্রহণে, দুঃখে, সুখে, আনন্দ, বেদনায়, সেøাগানে, দাবি আদায়ে, রক্তদানে! বেশ তো আমরা না হয় খাঁটি মুসলমান নই। আধা মুসলিম। কিন্তু যারা খাঁটি মুসলিম তারা তো খুঁজে নিতে পারে একটি খাঁটি মুসলিম দেশ! ইসলামে যে উত্তম মানুষ হওয়ার শিক্ষা আছে, ইসলাম কথাটার মানে যে শান্তি, প্রতিবেশীর প্রতি ভাল ব্যবহার করা আমরা সে শিক্ষা ভাল করেই জানি। কিন্তু এই সব ধর্মরুগীদের দেখে কি বিশ্বাস করা যায় যে ইসলাম শান্তির ধর্ম? কোন রাজনৈতিক দলেরই অধিকার নেই ক্ষমতায় এসে জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করার।

কেননা এই দিনই দিন নয় আরও দিন আছে। আর সেই দিনটি সমাগত প্রায়। সরকারী এবং বিরোধী দুটি দলেরই আজ জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান বিরোধী দলগুলোর জোট সমগ্র বাংলাদেশে যে সহিংস কার্যকলাপ করছে তা বাংলাদেশকে এক ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। স্পষ্ট করে দিয়েছে দুটি পথ।

এবার বাংলাদেশকে এই দুটি পথের যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে। নইলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে সেই চেনাপরিচিত জলপাই শক্তি। বাংলাদেশের বিকশিত গণতন্ত্রের মুখে পড়বে চপেটাআঘাত। লৌহবুটের নিচে খাবি খাবে জনতা জনার্দনের অধিকার। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আর সংবিধানের বুকের ওপর নেমে আসবে অস্ত্রের কালো হিম ছায়া।

তা হলে কি চাই আমরা? আমরা কি খালেদা জিয়া গংকে মেনে নেব? রাজনৈতিক সংস্কৃতির শিষ্টাচারবর্জিত একটি ধর্মান্ধ দলকে আমরা আমাদের রায় দেব? কোন আশ্বাসে? জনতার কি মূল্য আছে এই গংয়ের কাছে? একমাত্র লাশে পরিণত হওয়া ছাড়া। কি ঈমান আছে এই গংয়ের যারা মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যার উদ্বাহু উল্লাসে! ক্ষমতার লোভে ন্যূনতম ভদ্রতার লেবাসটুকু ছিঁড়ে ফেলে উলঙ্গ রাজা হয়ে ঘুরছে! হরতালে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, সংখ্যালঘুদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে, হত্যা, খুন, ধর্ষণ করে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তাতে খালেদা গংকে কোন মতেই আর ১৯৭১ সালের পাকিস্তানী নরপশুদের সঙ্গে পার্থক্য করা যায় না। এই গংয়ের কি আর কোন মানবিক চেহারা আছে আমাদের মনে? সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বলে কি কোন স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আছে বাংলাদেশে? বিএনপি কি কখনও আয়নায় নিজেদের চেহারা যাচাই করে দেখেছে? দেখলে দেখতে পেত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কবেই জামায়াতের পকেটে ঢুকে তার নিজস্ব অস্তিত্ব খুইয়ে বসে আছে। আর আওয়ামী লীগ কি ভুলে গেছে ৭৫-এ জাতির জনকের দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে? কি অপরাধ ছিল এই নিরহঙ্কার, সৎ, আত্মত্যাগী, মহান মানুষটির? সংসার কি কোনদিন এই মানুষটিকে টেনেছে লোভের হাতছানিতে? জীবনের অধিকাংশ সময় যে মানুষটি জেলে কাটিয়ে দিয়েছে দেশ ও জনগণের কথা ভেবে তাকে কেন রাতের অন্ধকারে তারই গড়া স্নেহধন্যদের হাতে প্রাণ দিতে হলো সপরিবারে? সেদিন সে মৃত্যুতে দুঃখ পেলেও কেন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে ভেঙ্গে পড়েনি সমস্ত বাংলাদেশ? বঙ্গবন্ধুর প্রিয় স্বদেশ, জননী জন্মভূমি? এরা তো সেই বাঙালী জনগণ যারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে ৭১-এ অকাতরে জীবনদানে বদ্ধপরিকর ছিল? লোভের মুখে পদাঘাত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তারই দলের ‘চাটার দলের’ উদ্বাহু লোভের শাস্তি হিসেবে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা না হয় বাদই দিলাম।

আওয়ামী লীগ কি কখনও আত্মসমালোচনার উন্মুক্ত সভা আহ্বান করেছে? কোন রাজনৈতিক পাঠচক্র গড়ে তুলতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, যেখানে দলের নেতা, কর্মী ও সদস্যরা মাসান্তে অথবা ত্রৈমাসিক মিলিত হয়ে দলের আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে খোলামেলা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করবে? বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে আমরা কি খুশি? মোটেই না। এ কথা সত্য দেশের অর্থনীতি ভালর দিকে। ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কর্মের পরিসর বেড়েছে, শিক্ষিতের হার বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। না খেয়ে মৃত্যু হওয়ার মতো অবস্থা এখন আর বাংলাদেশের নেই।

এই গর্ব একান্তই এই সরকারের। বাংলাদেশকে চূড়ান্ত উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। অবশ্যই হাত খোলা ধন্যবাদ প্রাপ্য এই সরকারের। কিন্তু এই সাফল্যে কি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে? তাছাড়া দেশে কোটিপতির সংখ্যা যত বেড়েছে নিম্নবিত্তের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি বাড়ছে । অর্থাৎ ধন সম্পদের বণ্টন বৈষম্য দ্রষ্টিকটু হয়ে উঠছে ক্রমাগত।

ধনী আরও ধনী এবং গরিব আরও গরিব হয়ে পড়ছে। আমি মানছি আওয়ামী লীগ কখনই শ্রেণী বৈষম্যের নিপাত হোক এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতি করেনি, করবেও না। কারণ দলটি প্রথম থেকেই আগাগোড়া একটি মধ্যবিত্ত মানসিকতার দল ছিল, এখনও আছে। সুতরাং শ্রেণী বৈষম্য, ধন বৈষম্য, সম্পদের সুষম বণ্টন হবে এই সরকারের সময় এটা খুব একটা আশা করা ঠিক নয়। মধ্যবিত্ত মানসিকতার নেতা-নেত্রিরা কখন ও ভাবে না রাজনীতি করে দেশ, জনগণকে কি দিলাম বরং সারাক্ষণ একটা ভাবনায়ই তারা আচ্ছন্ন থাকে রাজনীতি করে কি পেলাম।

নির্বাচিত এক দুজন সাংসদ বাদে আর কেউ কি বলতে পারবে এলাকায় কবে গিয়েছেন এই পাঁচ বছরে! কোন উপকারটা তারা করেছেন যাতে এলাকার জনগণ দ্বিতীয়বার তাকে নির্বাচিত করবে! পত্রিকায় প্রকাশ আওয়ামী লীগের নিজস্ব ঘাঁটিগুলোতে এবার অসন্তোষ ফুঁসে উঠেছে আওয়ামী লীগের স্বঘরানায়। খুব কি অন্যায় এই অসন্তোষ! কোন যুক্তিই কি হালাল করে না এই অসন্তোষকে? আসলে রাজনীতি এক ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয় এই সব রাজনীতিবিদদের কাছে। দেশপ্রেম, জনগণ, আদর্শ, আন্দোলন এই সব কিছুই রাজনৈতিক ব্যবসার উৎপাদনের উপাদন ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য দেশের অধিকাংশ মানুষের অপত্য স্নেহ, নাড়ির টান, সমর্থন, দাবি রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি। আপন সন্তানের মতো জনগণ চায় দুর্নীতির দমন করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাক প্রগতির পথে।

পার্টি অফিসের মেনুফেস্টো, বক্তৃতা, সেøাগান, ভোট ভিক্ষার কৌশল হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির রাজনৈতিক স্তম্ভগুলো বাস্তবায়নের দৃঢ় লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে বর্তমান আওয়ামী লীগের সফলতার সুফল আওয়ামী লীগের ঘরে আসতে বাধ্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিক শিক্ষা, তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনৈতিক শিক্ষার পাঠক্রম, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সর্বোপরি ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশসেবার শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে না তুলতে পারলে ভবিষ্যতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য বলে কিছুই থাকবে না। সুতরাং সময় দাবি করছে এই মুহূর্তে সুস্থ রাজনীতির ধারায় রাজনৈতিক দলগুলোর শুদ্ধিযাত্রা শুরু করা দরকার। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজন এই পদক্ষেপ নিতেই হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুখপাত্র হিসেবে, ধর্মনিরপেক্ষতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়ে, দুর্নীতির কুষ্ঠরোগকে নির্মূল করে বাংলাদেশে ভবিষ্যত রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন রূপে আসতে হবে।

নইলে দুরাচারে দুরাচারে অসুর হয়ে হয়েই থাকতে হবে। অন্যতম হতে পারবে না কোনদিনই। আর তখন জনগণ আকাক্সক্ষা করবে তৃতীয় শক্তির উত্থান হোক। বর্তমান রাজনীতিতে অতিষ্ঠ জনগণ কিন্তু প্রত্যাখ্যান শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তা বুঝতে পারছে? সুত্র
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.