আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থিউরী মতে মেয়েটি আমাকে ভালবাসে না!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

-হাই । -হাই । -কি ব্যাপার কদিন থেকে তোমার যে কোন খোজ খবর নাই যে । অদ্রি সরাসরি আমার সাথে খুব একটা কথা বলে না সাধারনত । ক্লাস রুমে দেখা হয় চোখাচোখি হয় এই পর্যন্তই ।

কথা হয় কম তাও মাঝে মধ্যে । ওর সাথে বন্ধুত্বটা ফেসবুকেই বেশি । স্টাটাস ফটোতে লাইক কমান্ট চালাচালি হয় নিয়মিত । ইনবক্সেও কথা হয় । আমি অদ্রির কথা শুনে মৃদু একটু হাসলাম ।

মনে মনে বললাম সুত্রমতে এখন খুব বেশি আগ্রহ দেখানো যাবে না । একটু খাপছাড়া ভাব দেখাতে হবে । আর অদ্রির আচরন পর্যবেক্ষন করতে হবে । সঠিক ফলাফল জানতে সঠিক ভাবে সুত্র পালন করতে হবে । -হ্যালো ? অদ্রির কথা শুনে আমি যেন আবার বাস্তবে ফিরে এলাম ।

-হ্যা । কি যেন বললা ? এমন একটা ভাব যেন অদ্রির কথা আমার কান দিয়ে যায়ই নাই । অদ্রি বলল -তুমি কি খুব বিজি ? -এই একটু বিজি আর কি ! -ও । ভার্সিটির কোন কাজে ? -উমম । না ভার্সিটির কোন কাজে না ।

-বাসার ? অদ্রির চোখে মুখে স্পষ্ট কৌতুহল দেখতে পাচ্ছি । এটা কি নতুন ? কি জানি ? অবশ্য আগে ক্লাসে প্রায়ই অদ্রির সাথে চোখাচোখি হত । প্রতিবারই আমার এমন মনে হয়েছে যেন অদ্রির আমার ব্যাপারে একটা কৌতুহল আছে । কিন্তু কি যেন একটা সংকোচের কারনে আমাকে বলতে পারছে না । আমার এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে ।

থিউরী অনুযায়ী অন্তত কটা দিন অদ্রির কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে । -আচ্ছা অদ্রি আমি এখন যাই । ক্লাস তো হবে না । না ? -নাহ । হবে না ।

-আচ্ছা যাই ? -অপু ! -হুম । -তুমি কি যেন বলবে বলছিলা ? এই তো মেয়ে লাইনে এসেছে । হে হে হে । মাহবুব ভাইয়ের সুত্র কাজে দিতেছে মনে হচ্ছে । -কি কথা ? এমন একটা ভাব যেন আমার কিছু মনেই নেই ।

অদ্রি বলল -না মানে ঐ দিন তোমার স্টাটাসে আমাকে মেনশন করে বললে না জরুরী কথা আছে । -ও । হ্যা । আমি মনে করলাম আবার কি জরুরী কথা । -ঘন্টা খানেক পরেই তোমাকে ইনবক্স করেছিলাম ।

তুমি আর কোন রিপ্লে দাও নি । -আসলে একটু বিজি আছি তো । অদ্রির মুখ দেখে মনে হল ও একটু হতাশ হল আমার কথা শুনে । -আচ্ছা ফ্রী হলে বল কেমন ? -আচ্ছা ! আমার যদিও আরও কিছুটা সময় থাকতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু থিউরি মতে এখন দুরুত্ব সৃষ্টি করতে হবে । দুরে দুরে থাকতে হবে ।

তবেই মনের কথা বোঝা যায় । আমি বিদায় নিয়ে চলে এলাম । অদ্রি পছন্দ করার মত একটা মেয়ে । আমিও করি । আগেই বলেছি ওর সাথে বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়ালিই বেশি কথা হয় ।

নিয়মিতই ওর সাথে কথাবার্তা হত । হঠাত্‍ই একদিন আবিস্কার করলাম আমি যতক্ষন অনলাইনে থাকি তার বেশির ভাগ সময়ই আমি কাটাই অদ্রির সাথে । কোন কারনে অদ্রি যদি অনলাইনে না আসে তাহলে আমার যেন কিছুই ভাল লাগে না । তারও কিছুদিন পরে বুঝতে পারলাম আসলে আমি অদ্রির প্রেমে পড়েছি । সমস্যা সেই টা না ।

হাটতে শেখার সময় পিচ্চি পোলাপাইন যেভাবে আছাড় খেয়ে পড়ে আমি তার চেয়েও বেশি প্রেমে পড়ি ! সমস্যা হচ্ছে অদ্রিও কি আমার প্রেমে পড়েছে ? কঠিন প্রশ্ন ! জ্ঞানী ব্যাক্তি বলেছেন মেয়েদের মন বোঝার চেয়ে আপেক্ষিকতার সুত্র বোঝা বেশি সহজ । আপেক্ষিকতার সুত্র আমার মাথায় ঢোকে নি । আমার এই আমি মেয়েদের মন বুঝবো ? তাহলে এখন উপায় ? অবশ্য অদ্রির অচরনে তো মনে হয় ও আমাকে অপছন্দ করে না । আমার স্টাটাসের সবার প্রথমে লাইক টা ও ই দেয় । ওর সাথে যখন চ্যাটিং তখন কোন দিন মনে হয় নি যে ও বিরক্ত হয়েছে ।

বরং আমার চেয়ে ওকেই বেশি আগ্রহী মনে হয়েছে । কিন্তু এই ভরশায় তো আর অদ্রিকে কিছু বলা যায় না । মেয়েটি আমাকে অপছন্দ করে না আর মেয়েটি আমাকে পছন্দ করে এই দুইটি কথার ভিতর বিস্তর পাথর্ক্য আছে । চিন্তায় পড়ে গেলাম । এখন কি করা যায় ? যদি অদ্রির মনভাবটা একটু বোঝা যেত, ভাল হত ! কিন্তু কিভাবে বুঝবো ? আমি যখন এমন হতাশার ভিতর দিন কাটাচ্ছি তখন আশার আলো দেখতে পেলাম এক বড় ভাইয়ের ফেসবুক স্টাটাসে ।

ভাইয়ের নাম মাহবুব হাসান । সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে । মজার মানুষ । মাহবুব ভাইয়ের বুদ্ধি অনুযায়ী ই আমি কাজ করেছি । প্রথম ধাপটা শেষ হয়েছে ভাল করেই ।

মানে অদ্রির নাম মেনশন করে একটা স্টাটাস দিয়েছি । ওখানে লিখেছি যে ওর সাথে আমার জরুরী কথা আছে । ও যেন ইনবক্সে যোগাযোগ করে । অদ্রি যোগাযোগ কয়লো ঘন্টাখানেক পরেই । কিন্তু আমি কোন রিপ্লে দিলাম না ।

তারপর থেকেই ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ । দুদিন ভার্সিটিতেও গেলাম না । এখন দ্বিতীয় ধাপ চলছে । থিউরী অনুসারে অদ্রীর সাথে এখন যোগাযোগ করা যাবে না । ওর মনে একটা কৌতুহল জাগাতে হবে ।

এই ভাবেই চলল দুতিন দিন । এই কয়দিন ফেসবুকে একদম আসি নি । যদিও খুব ইচ্ছা করছিল । ইচ্ছাটাকে দমন করলাম । কিছু পেতে হলে কিছুতো খোয়াতেই হবে ।

ঠিক সাত দিনের দিন আবার ফেসবুকে ঢুকলাম । ইনবক্স চেক করতে গিয়ে একটু হতাশই হতে হল । ঐ দিনের পর অদ্রি কেবল একটা মেসেজ পাঠিয়েছে । নাহ ! অদ্রি মনে হয় আমাকে ঐ লেভেলের পছন্দ করে না । আর বেশি এগুনো ঠিক হবে না ।

দেখা গেল শেষে আম ছালা সব যাবে । আমি গরিব পুলা আম না পাই ছালা নিয়েই সন্তষ্ট থাকি । আজকে আমিই আগেই নক করলাম । দ্বিতীয় ধাপ শেষ হয়েছে । এখন তৃতীয় ধাপ এবং সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ ধাপ ।

-কেমন আছ ? উত্তর এল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই । -কি ব্যাপার মি. বিজি ম্যান ! সময় হল তাহলে ! আমি একটা স্মাইলির ইমো দিলাম । -এই তো ব্যস্ততা শেষ । -হুম । আমার তো মনে হল তোমার ব্যস্ততা আর শেষ হবে না ।

-এই তো শেষ । -তোমাকে মিস করেছি । জানো ? লাইনটা দেখেই আমার একটা হার্টবীট মিস করলো । খুব ইচ্ছা হল চিত্‍কার করে বলি অদ্রি আমিও তোমাকে খুব মিস করেছি । আই লাভ ইউ ।

হাস্যকর শোনাচ্ছে না ? হাস্যকর কথা বললে তো হাস্যকর শোনাবেই । আমি লিখলাম -আমিও করেছি । তারপর আরও কিছু কথা হল । আমি বারবার অপেক্ষা করছি অদ্রি সেই আসল প্রশ্নটি কখন করবে ? নাকি ওরও মনে নেই । মনে নাই ? তাইলে কেমনে হইবে ? কেমনে ? অবশেষে অদ্রি সেই প্রশ্নটি করলো ।

-এই তুমি না বলেছিলে কি একটা জরুরী কথা আছে আমার সাথে ? কি কথা ? আহা ! অবশেষে সেই জরুরী কথা ! এখন হচ্ছে আসল কাজ । থিউরী অনুযায়ী এখন আমার এমন একটা ভাব করতে হবে যেন আমার কিছু মনে নেই । আমি বললাম -কি ? বলেছিলাম নাকি ? -হুম । স্টাটাসে বললা না ? -ও আসলে ঠিক মনে করতে পারছি না । কি যেন বলার ছিল !! -ও আচ্ছা ।

থাক না মনে পড়লে আর কি । তারপরই অদ্রি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল । না না না । এইটা হতে পারে না । ও কেন অন্য প্রসঙ্গে যাবে ।

ওর এখন ঐ জরুরী কথাটা শোনার জন্য কৌতুহলী হওয়ার কথা । তাহলে ? থিউরী কি বলে ? থিউরী মতে অদ্রি আমাকে ভালবাসে না ?? না না । এইটা হতে পারে না । এই থিউরীতে ভুল আছে । বিরাট ভুল ।

মন খারাপ নিয়ে পরদিন ক্লাসে গেলাম । শেষ বেঞ্চে বসে থাকলাম মাথা নিচু করে । আসলে মনটা একটু খারাপই হয়েছে বলতে । অন্তত অদ্রির আচরন দেখে মনে হয়েছিল যে ও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু এখন দেখছি করে না ।

অন্তত থিউরীতো তাই বলে । ক্লাস শেষ হয়ে যখন বের হতে যাবো ঠিক কে যেন আমার হাত ধরে টান দিল । পিছনে তাকিয়ে দেখি অদ্রি । হাসি মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । আমি একটু চমকালাম অদ্রির দিকে তাকিয়ে ।

অদ্রি আজকে বেশ সুন্দর করে সেজেছে । সাধারনত এতো সাজ গোজ করে ও ভার্সিটিতে আসে না । তাহলে ? -বাসায় যাবা এখন ? -হুম । -আর কোন কাজ আছে ? -উহু । আচ্ছা চল আমার সাথে ।

-কোথায় ? -চল গেলেই দেখতে পাবা । আমি একটু অবাক হলাম । আজকে হঠাত্‍ অদ্রি এমন ভাব কেন করছে । এই মেয়ে গুলা এমন রহস্য ময় কেন হয় ? এদের কে বোঝা আসলেই কার সাধ্য !! অনেকক্ষন ধরে বেইলী রোডের এই রেস্টুরেন্টাতে বসে আছি । আল বেইক নাম ।

কাচে ঘেরা দোকানটায় এক কোনে বসে আছি । এখনও ঠিক বুঝতে পারছি নি আজ হঠাত্‍ করে অদ্রি এমন আচরন কেন করছে । একটু আগে কাস্টার্ডে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল । অদ্রি এখন আরাম করে সেটা খাচ্ছে । আমার সামনের বাটিটা আমি এখনও ধরি নি ।

এই মেয়ের সমস্যা কি ? আজকে এতো আনন্দে আছে কেন ? আমি মন খারাপ করে বসে আছি আর ফালিজ মেয়ে আরাম করে কাস্টার্ড খাইতেছে । বদের বদ ! -এই কি বিড় বিড় করতেছো ? -কিছু না । -খাও না কেন ? -এমনি খিদা নাই । -আরে এটা কেউ ক্ষুদা মিটানোর জন্য খায় নাকি ? আরে খেয়ে দেখো । খাও খাও ।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক চামচ মুখে নিলাম । -তোমার মন খারাপ ? -কি ? আমি একদম সরাসরি অদ্রির চোখের দিকে তাকালাম । ফাজিল মাইয়া কয় কি ? এতোক্ষন আমার সাথে থাইক্যা এখন কয় মন খারাপ কি না । এর আগে বুঝুছ নাই ? থাপড়াইয়া দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত্‍ । আমি বললাম -না কিছু না ।

-তাই ? -সিওর ? হুম । সিওর । সিওর । একশ ভাগ সিওর । -না আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ ! আমি বিষন্ন মন নিয়ে বললাম -হুম ।

অদ্রি আবারও খাওয়ায় মন দিল । যেন আমার মন খারাপ এইটা কোন ব্যাপারই না । খাঁ বেশি কইরা খাঁ । হঠাত্‍ই দেখলাম অদ্রি হাসতে শুরু করলো । -কি হল ? অদ্রি হাসতে হাসতেই বলল -না কিছু না ।

-আরে এভাবে কেউ একা একা হেসে উঠে নাকি ? -না এমনি । অদ্রি হাসি চাপানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । হেসেই যাচ্ছে । -আরে কি হল ? অনেকক্ষন হাসার পর অদ্রি বলল -থিউরী কাজ করেছে ? -মানে ? -মানে থিউরির মতে তোমার মন খারাপ কেন ? -থিউরী ! তুমি কি বলতে চাও ? -বলতে চাই থিউরী কি বলে ? আমি তোমাকে পছন্দ করি না ? এই কথা বলে অদ্রি আবারও হাসতে লাগলো । আমি কিছু বুঝতে পারছি না ।

অদ্রি বলল -তুমি এতো গাধা জানতাম না তো ? -মানে ? -মানে হল মাহমুব ভাই যে আমারও ফ্রেন্ড লিষ্ট আছে এটা তুমি জানো না ? আরে তাই তো ! এটা তো মনেই ছিল না । মাহবুব ভাইয়ের স্টাটাস টা যে অদ্রির চোখেও পড়তে পারে এটা তো আমার মাথায়ই আসে নাই । -তুমি জানতা ? -না । আমি জানবো কেন ? কিছুক্ষন চুপচাপ দুজনেই । অদ্রি বলল -তুমি আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডলিষ্টে রয়েছ ।

তুমি কোথায় লাইক কমান্ট দাও আমার নিউজ ফিডে ঠিকই চলে আসে । -তাই নাকি ? যাক এটা একটা ভাল কথা । আমি ওর ক্লোজ লিষ্টে তো আছি । অদ্রি আবার বলল -আমার প্রথমে আসলেই কৌতুহল জন্মে ছিল । কিন্তু যখন মাহবুব ভাইয়ের স্টাটাসটা চোখে পড়ল এমন মেজাজ গরম হল ।

তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমার উপর থিউরী এপ্লাই কর ! আমার উপর ? অদ্রীতা হাসানের উপর ? খাইছে ! অদ্রী হঠাত্‍ রেগে গেল কেন ? -এই আর কারও উপর এই থিউরী এপ্লাই কর নি তো ? -না না আর কারও উপর করি নি । সত্যি বলছি । -করেছ তো খবর আছে ! এখন কিছু বলছি না । আগে বয়ফ্রেন্ড হও তারপর তোমাকে মজা বুঝাবো । থিউরী না ? আমি অবাক হয়ে অদ্রির দিকে তাকিয়ে আছি ।

এই মেয়ে কি বলে ! আমি কিছু বলব তার আগেই অদ্রি বলল -তুমি আসলেই একটা গাধা । একটা মেয়ে কি চায তা এতো দিনেও বুঝতে পারও নি । তার উপর আবার থিউরি এপ্লাই করতে গেছ ! আমি আর কি বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । তবে যা বোঝার আমি বুঝে গেছি । থিউরী ঠিক আছে তবে থিউরী কাজ করবে যদি এই থিউরী মেয়েটা না জানে তবেই ।

যাই হোক থিউরী কাজ করেছে তবে অন্য ভাবে । যাক এবার অদ্রিকে প্রোপোজ করতে হবে । থাক এটা অন্য গল্প । বলব অন্য দিন । এখন কাস্টার্ড খাই ।

বাহ বেশ মজা তো । (গল্পটি লিখতে অনুপ্রানিত মাহবুব হাসান ভাইয়ের স্টাটাস দেখে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।