আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিঙ্কা সামাজিক অনুষ্ঠান-

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
ডিঙ্কা ছেলেদের বয়স চৌদ্দ থেকে আঠারো হলে একটা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সাবালক ঘোষণা করা হয়। দিন পাল্টে যাচ্ছে তাই এসব নিয়ম কানুনও একটু একটু করে বদলাচ্ছে।

এখন এলাকার ছেলেদেরকে এক করে তাদের হাতে লাঠি ও একটা ঢাল দেয়া হয়। একটু বড় ছেলেরা তাদেরকে অতর্কিতে লাঠি সোটা নিয়ে আক্রমন করে, তাদেরকে এই আক্রমন ঠেকাতে হয়, এরপর সবাই মিলে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে আঘাত করতে হয়। এই অনুষ্ঠানে বেশ কিছু আঘাত ও হতাহতের সম্ভবনা থাকে। এলাকার ছেলেরা সাবালক হবার জন্য এই অনুষ্ঠানে যোগদান করে। যারা এই চ্যালেঞ্জ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদেরকে কাপুরুষ ভাবা হয়।

সব ছেলেরাই গর্বের সাথে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। আগে এই ধরনের অনুষ্ঠানে ছুরি দিয়ে কপালে দাগ কাটতে হত এবং সবশেষে সামনের নিচের মাড়ির দুটো দাঁত শক্ত কিছু দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে সাবালকত্ব অর্জন করতে হত। এখন তাই এটা অনেক শিথিল নিয়ম। ডিডিঙগা গোত্র সাউথ সুদানের অনেক গোত্রের মধ্যে ডিডিঙগারা একটা গোত্র। এরা ইস্টার্ন ইকুয়েটরিয়ার কাপোএতা জেলার ডিডিঙগা পাহাড় এলাকায় বাস করে।

বুদি কাউন্টিতে ও এখন ডিডিঙগা ও বোয়া সম্প্রদায় বসবাস করে। প্রায় ষাট হাজার ডিডিঙগা রয়েছে এই দেশে। ডিডিঙগাদের এলাকা পাহাড়ি এবং এটা প্রায় দু হাজার ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়ে পরে সমতল মালভূমি অঞ্চলে পরিনত হয়েছে। এই এলাকাতে বেশ বৃষ্টিপাত হয় তাই অনেক ফসল ফলে এখানে। গম, মাইল,ভুট্টা, বিন, তামাক এসব এখানে উৎপন্ন হয়।

এরা মূলত পসুপালন কারী তবে প্রয়োজনের তাগিদে এরা এখন কৃষি জীবী। এই অঞ্চলে বছরে দুবার ফসল ফলে। জমি বেশ উর্বর এবং এখানে আলু, তামাক, ভুট্টা, বার্লি গম ইত্যাদি বেশ ভালভাবে চাষ করা যাবে। এসব কৃষি কাজের পাশাপাশি ডিডিঙগারা মাটির জিনিষপত্র এবং হস্তশিল্পে ও বেশ দক্ষ। এই এলাকার মাটিতে মার্বেল, সিমেন্ট বানানোর চুনা পাথর, সোনা ও নানা ধরনের মূল্যবান পাথর আছে।

ইতিহাস বলে ষোল শতকের দিকে ডিডিঙগারা লেক তুরকানা থেকে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। কারো কারো মতে এদের আদিনিবাস ইথিওপিয়াতে। ডিডিঙগাদের ভাষা বোয়া মুরলে ও টিনেটদের ভাষার কাছাকাছি। প্রতি তিন বছর পর পর নামিতো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ডিডিঙগা বালকদের বয়প্রাপ্তির স্বীকৃতি দেয়া হয়। ডিডিঙগারা অন্যান্য গোত্রের মত বাল্য বিবাহ কিংবা পরিবার থেকে আয়োজন করা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ করে না।

কপোত কপোতীরা তাদের নিজেদের আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে নিজেদের সঙ্গী নির্বাচন করে। তারা এই ব্যাপারে একমত হলে পাত্র পাত্রীর পিতামাতার কাছে প্রপোজাল পাঠায় এবং বিয়ের সবকিছু ঠিক করে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর ছেলে বা মেয়ে শিশুর জন্মের উপর ভিত্তি করে মাকে তিন থেকে চার দিন আলাদা করে রাখা হয়। এই সময় একমাত্র নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ যেতে পারে না। এই সময় প্রসুতি কোন রান্না বান্না করতে পারে না।

জমজ কিংবা তিনটা বাচ্চা একসাথে হলে এটাকে সৌভাগ্য মনে করা হয়। তিন বাচ্চার জন্মদাতা পিতা বাচ্চাদের বড় হওয়ার আজ পর্যন্ত অন্যদের সাথে খেতে পারে না, এমনকি তাকে যুদ্ধে কিংবা শিকারেও নেয়া হয় না। বাচ্চাদের নাম তাদের দাদার নামে রাখা হয়। কয়েকটা বাচ্চা মারা যাওয়ার পর যে শিশু বেঁচে থাকে তার নাম ছেলে হলে লকুরা আর মেয়ে হলে ইকুরি রাখা হয়। কেউ মারা গেলে তাঁকে গ্রামের বাহিরে একটা গভীর কবরে পূর্ব দিকে মুখ করে দাফন করা হয়।

ডিডিঙগারা দুটো ভাগে বিভক্ত, পূর্ব ভাগে আছে বোকোরোরা, লাউডু এবং মারুকইয়ান। পশ্চিম ভাগে আছে পাতালাডু, থুগুরু, কাদিমাকুচ লাকরিছকি এবং লমঙ্গলি। ডিডিঙগাদের একজন প্রধান আছে। তার অবর্তমানে তার ছেলে কিংবা ভাই সেই পদে বসে। ডিডিঙগারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে পছন্দ করে।

তারা প্রার্থনা ও দানের মাধ্যমে তাদের প্রভুর কাছে সাহায্য চায়। বোয়া সম্প্রদায়ের সাথে এদের বিয়েশাদি হয়। আশেপাশের গোত্রগুলোর সাথে এরা ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকে। - কিছু ছবি ইন্টারনেট বংগো গোত্র বংগো গোত্রের লোকজন নিজেদেরকে ‘গে বংগ’ বলে, এর অর্থ আমরা বংগ। এটা মানুষ অর্থেও ব্যাবহার হয়।

বাহার আল গাযাল প্রদেশের ওয়াও তে বেশিরভাগ এই গোত্রের মানুষ দেখা যায়। ১৯ শতকের দিকে দাসপ্রথা এবং আযান্দেদের আক্রমনে এই সম্প্রদায় প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। বাহার আল গাযাল প্রদেশের দক্ষিণের লোহার খনি অঞ্চলে এদের অবস্থান। তারা মূলত কৃষি কাজ ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা মাঝে মাঝে মাছ ধরে ও শিকার করে থাকে।

এদের সমাজে একজন মানুষ তিনটা পর্যন্ত স্ত্রী রাখতে পারে। একটা বিবাহযোগ্যা মেয়ের জন্য দুই পাউন্ড ওজনের দশটা লোহার পাত যৌতূক হিসেবে দিতে হয়। তালাকের সময় এর কিছু অংশ ফেরত দিতে হয়। মেয়েটা অন্য কাউকে পরে বিয়ে করতে পারে। বাচ্চারা যদি ছেলের কাছে থাকে তবে যৌতূকের পুরোটা ছেলেকে ফেরত দিতে হয়।

কেউ তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করলে স্বামী সেই লোকটাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এবং স্ত্রীকে বেত মারা হয়। খৎনা করা মানুষ ভাল বউ পায়না। মৃত দেহকে বসা অবস্থায় দাফন করা হয় ও তার দেহ পাতা ও লতা দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। বংগদের দেশ সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। গ্রাম প্রধানরাই এদের সব কিছুর অভিভাবক।

সম্পদ, ক্ষমতা গ্রামপ্রধান হওয়ার প্রথম শর্ত, এর সাথে জাদুবিদ্যা জানা থাকলে তা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হয়। এরা ভুতপ্রেতে বিশ্বাসী এবং জাদু টোনা করে থাকে। এই সম্প্রদায় কাঠের কাজে পারদর্শী, এছাড়া ও তারা মাছ ধরার নানা জিনিষ বানিয়ে থাকে। আরব দাস ব্যবসায়ীরা এদের প্রায় শেষ করে ফেলেছে। এখন কয়েকশত মানুষ আছে এই গোত্রের।

রেল যোগাযোগ ও পাইপ লাইন প্রায় বিশ বছর পর কেনিয়ার মোম্বাসা পোর্ট থেকে মালবাহী ট্রেনে করে উগান্ডার গুলু শহরে সাউথ সুদানের জন্য ষ্টীল এসেছে। এতগুলো বছর এই ট্রেন লাইনটি ব্যাবহার হয়নি। গুলু শহরটা সাউথ সুদান ও উগান্ডা বর্ডার থেকে ১২০ কিলো মিটার দূরে। এই লাইনটি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং সাউথ সুদানের রপ্তানি বাড়াতে অনেক ভুমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার এই ট্রেন লাইনটি দুই মিলিওন ইউ এস ডলার খরচ করে মেরামত করা হয়েছে।

রিফট ভ্যালি রেলওয়ে নামে একটা প্রাইভেট অপারেটর কোম্পানি এটা চালু করেছে। এখন সাউথ সুদান ও কঙ্গো এই দুটো দেশ বাণিজ্য থেকে লাভবান হতে পারবে বলে সবাই আশা করছে। এই ট্রেন লাইনের সাথে সড়ক নেটওয়ার্ক মিলে বেশ ভাল একটা কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। ২০০৭ সাল থেকে উগান্ডা সাউথ সুদানের অন্যতম ব্যবসায়ীক পার্টনার। উগান্ডা এবং সাউথ সুদান উভয় দেশ এই রেল লাইনটি থেকে উপকার পাবে।

জিবুতি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের একটা প্রজেক্ট শুরু করেছে। এই প্রজেক্ট জিবুতির সাথে ইথিওপিয়ার দিরে দাওয়া এলাকার মধ্যে দিয়ে সাউথ সুদানকে রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করবে। ইথিওপিয়ার সাথে জিবুতির রেল যোগাযোগ বিষয়ে আগেই একটা সমঝোতা হয়েছে। নতুন এই যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে পূর্ব আফ্রিকা বাণিজ্যের দিকদিয়ে অনেক সমৃদ্ধশালী হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ হবে।

এগুলো সব বাস্তবায়িত হলে সাউথ সুদানকে আর পোর্ট সুদানের উপর নির্ভর করতে হবে না। জিবুতি বন্দর ও কেনিয়ার মোম্বাসা কিংবা লামু বন্দর ব্যাবহার করতে পারবে। এতে জিবুতি, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, কঙ্গো ও উগান্ডা লাভবান হবে। সাউথ সুদান থেকে তেল সুদানের ভিতর দিয়ে পোর্ট সুদানে যায় রপ্তানির জন্য। বেশ বড় অঙ্কের টাকা এতে সুদানকে দিতে হয় পাইপ লাইনের ভাড়া হিসেবে।

সাউথ সুদান এখন বিকল্প পথ খুজছে। একটা জাপানী ফার্ম প্রায় ২০০০ কিলো মিটার পাইপ লাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এটা সাউথ সুদান থেকে উগান্ডার ভিতর দিয়ে কেনিয়ার লামু বন্দরে যাবে। প্রায় ১৬ বিলিয়ন ইউ এস ডলার খরচ করে লামু বন্দর উন্নয়ন এবং এই পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। উগান্ডা ও সাউথ সুদানের মত ভূমি বেষ্টিত একটা দেশ, এই দেশটাও এখান থেকে বেশ লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.