আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্যালপিটিশন : ভীতিকর অনুভূতি

বুকের মাঝখানে বা বামপাশে হাতুড়ি পেটার মতো অনুভূতি বা কাঁপুনিকে প্যালপিটিশন বা বুক ধড়ফড় করা বলা হয়ে থাকে। কেউ হঠাৎ চমকে উঠলে, ভয় পেলে, হঠাৎ কোনো শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে এ ধরনের অনুভূতির সঞ্চার হয়। এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। প্যালপিটিশনের সঙ্গে শরীরে অস্বাভাবিক অনুভূতি, শরীর ঘেমে যাওয়া, হাত, পা, মুখ কাঁপতে থাকা, কথা জড়িয়ে আসা, পানির পিপাসা লাগা, মাথা হালকা বোধ করা এবং মাথা ঘুরতে থাকা, বুকে ব্যথা অনুভব করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাও ঘটতে পারে। উল্লেখিত উপসর্গের জন্য এড্রিনালিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থকে (হরমোন) দায়ী করা হয়।

স্নায়ুবিক উত্তেজনার ফলে, হঠাৎ অতিমাত্রায় হরমোন রক্তে নিঃসরণের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন স্বাভাবিক ভাবেই হার্ট দ্রুত চলতে থাকে এবং নাড়ির গতির বৃদ্ধি ঘটে। প্যালপিটিশন সুস্থ শরীরে ঘটতে পারে, তবে অনেক ধরনের অসুস্থতার ফলেও তা হয়ে থাকে যা প্রায় সময়ই মারাত্দক অসুস্থতার উপসর্গ হিসেবে বিবেচিত হয়। হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতাকে প্যালপিটিশনের প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। তা ছাড়া থাইরয়েড হরমোন জনিত অসুস্থতা, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রতিক্রিয়া নিউমোনিয়া, ভাইরাল ইনফেকশন এবং শারীরিক দুর্বলতার মতো কারণেও প্যালপিটিশন হয়ে থাকে।

হার্টের অসুস্থতার মধ্যে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলুর, হার্টের ভাল্বের সমস্যা, কার্ডিওমাইয়োপ্যাথি, মাইওকার্ডাইটিস, প্যারিকার্ডাইটিসকে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। উল্লেখিত সব রোগই মারাত্দক ধরনের অসুস্থতা যার ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সুতরাং এ ধরনের উপসর্গ প্রায় সব সময়ই মারাত্দক উপসর্গ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বুক ধড়ফড় বা প্যালপিটিশন দুই ধরনের হতে পারে, যেমন_ সাময়িক বা ক্ষণিকের জন্য প্যালপিটিশন হওয়া যা হঠাৎ শুরু হয়ে কিছুক্ষণ বিদ্যমান থাকার পর তা আপনা আপনিই দূরীভূত হয়ে যায় এবং অন্য এক ধরনের প্যালপিটিশনকে স্থায়ী প্যালপিটিশন বলা হয়, এ ক্ষেত্রে রোগী সারাক্ষণ বুক ধড়ফড় অনুভব করে থাকে। দুই ধরনের প্যালপিটিশনকেই মারাত্দক বলে ধরে নেওয়া হয় তবে স্থায়ী প্যালপিটিশন জটিল রোগের বহিঃপ্রকাশ।

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বা হৃৎপিণ্ডের রক্ত প্রবাহের স্বল্পতাজনিত হৃদরোগ বর্তমান সময়ে প্রধান প্রাণসংহারী হৃদরোগ হিসেবে বিবেচিত। এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে পরিশ্রমকালীন সময়ে রোগী বুকের ব্যথা, প্যালপিটিশন, শ্বাসকষ্ট অনুভব করে থাকে। রোগী কি মাত্রায় পরিশ্রম করলে এসব উপসর্গ দেখা দেয় তা দ্বারা রোগের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়। এ পর্যায়ে রোগী পরিশ্রম বন্ধ করলে বা বিশ্রাম গ্রহণ করলে খুব দ্রুত এসব উপসর্গের নিরাময় ঘটে। তবে আবার পরিশ্রম শুরু করলে তা আবারও দেখা দিয়ে থাকে।

রোগের তীব্রতা দিন দিন বৃদ্ধি ঘটতে থাকলে এক সময় বিশ্রামকালীন সময়েও বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও প্যালপিটিশন দেখা দিয়ে থাকে। হার্ট ফেইলুর অবস্থায় রোগীর হাত-পা-মুখ ফুলে যাওয়া, বুক ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ী প্যালপিটিশন অনুভূত হয়ে থাকে। থাইরয়েড হরমোনজনিত হৃদরোগে অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক অথবা স্থায়ী দুই ধরনের প্যালপিটিশন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বাতজ্বরের জটিলতা হিসেবে আমাদের দেশে হার্টের ভাল্বের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বাতজ্বরের প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ভাল্বের অকার্যকারিতা দুই পর্যায়েই প্যালপিটিশন পরিলক্ষিত হয়।

যে কারণেই প্যালপিটিশন হউক না কেন এ উপসর্গকে সব সময়ই গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে আরোগ্য হওয়া সম্ভব, তবে জটিল আকার ধারণ করলে পুরোপুরি আরোগ্য না হলেও রোগীকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসার মাধ্যমে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

ডা. এম. শমশের আলী

সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.