আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহীসূত বিশ্ব বিধাত্রীর
আমার এক প্রতিবেশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাংঘাতিক রকম ভক্ত। তাকে না দেখলে আপনি বিশ্বাস করবেন না। একটা মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় সেটা তাকে না দেখলে বোঝা যাবে না। তার শোবার ঘরে ঢুকলে আপনি রীতিমতো অবাক হবেন। ঘরের চতুর্দিকে শেখ মুজিবের কতো যে ছবি! শেখমুজিবের এই দুর্লভ ছবিগুলি আমি অন্য কোথাও দেখি না।
শেখ মুজিবের জীবনীর ওপর যতো বই লেখা হয়েছে সমস্তটাই তার সংগ্রহে আছে। শেখ মুজিবের শৈশব, কৈশর, যৌবন এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল প্রকাশিত এবং অনেক অপ্রকাশিত ঘটনাও যেন তার জানা। সে শেখ মুজিবকে এতটাই ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে যে, শেখ মুজিবের পছন্দের খাবার তার পছন্দ না হলেও অতি উৎসাহের সাথে খায়, শেখ মুজিব যে ধরনের পোষাক পরিধান কোরতেন সেও একই ধরণের পোষাক পরতে ভালোবাসে এমনকি চুল, গোফ, চশমা ইত্যাদির স্টাইল পর্যন্তও সে হুবহু অনুকরণ করে। তার ব্যক্তিগত অতি ক্ষুদ্র অভ্যাসগুলিও সে অক্ষরে অক্ষরে অনুকরণের চেষ্টা করে। শেখ মুজিবের জীবনের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ দিনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন দিবস হিসাবে পালন করে।
আমার মনে হয় শেখ মুজিবের কণ্যাও তাকে এত ভালোবাসে না। আমার জীবনে আমি কাওকে এমনভাবে অনুকরণ করা দেখি নি। আমার মনে হয়, আপনারাও দেখেন নি। শেখ বংশের ছেলে না হলেও সে নিজের নাম নিজেই রেখেছে শেখ রাসেল। এই গল্পে আমি তাকে রাসেল বলেই সম্মোধন কোরব।
গত কয়েকদিন আগে আমি একটা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখে আমি খুব অবাক হই। স্বপ্নটি আপনাদেরকে একটু বলি- আমি দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাঝে এসেছেন। তিনি আমাকে বললেন, “রাসেল কোথায়? তাকে একটু আমার কাছে আনতে পারবে?” আমি সাথে সাথে বললাম, “সে তো আমার প্রতিবেশি, আমি তাকে ডেকে আনছি। ” এর পর আমি রাসেলকে গিয়ে বলার সাথে সাথে রাসেল তো অত্যন্ত আনন্দের সাথে তার প্রিয় পোষাক পোরে সুগন্ধি লাগিয়ে (যেগুলি বঙ্গবন্ধুরও পছন্দ বলে সে জানত) অতি দ্রুত আমার সাথে আসলো তার স্বপ্ন, তার আদর্শ, তার অতি সম্মানের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে।
বঙ্গবন্ধু কোনো কথা না বলে তাকে নিয়ে একটা রুমে প্রবেশ কোরলেন। কিছুক্ষণ পর আমি অতি কৌতুহলী হয়ে একটি ছিদ্র দিয়ে রুমের ভেতরে দেখার চেষ্টা কোরলাম। একটু খেয়াল কোরে দেখি, বঙ্গবন্ধু তাকে রশি দিয়ে বেঁধে পেটাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর সমস্ত শরীর ঘেমে ভিজে গেছে। পেটাতে পেটাতে রাসেল আজ্ঞান হবার পর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বাহিরে এলেন। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, “আপনি কেন তাকে পেটাচ্ছেন? আপনি হয়তো জানেন না যে সে আপনাকে কতো ভালোবাসে।
তার বাসায় গেলে অথবা তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই বুঝতে পারতেন যে সে আপনাকে কতো ভালবাসে এবং আপনাকে কিভাবে অনুস্মরণ করে। তার গায়ের পোষাকটি দেখেও আপনি বুঝতে পারলেন না? তার চুল, গোফ, কথা বলার ভঙ্গি ইত্যাদি দেখেও তো বোঝা উচিত ছিল আপনার। এতক্ষণ বলার পর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “চলো বলছি, অন্যদেরকেও ডাকো। ” (অনেক মানুষ জড়ো হোলাম তার সামনে) রাসেলকে দেখিয়ে তিনি বললেন, “তোমরা কি এই রাসেলকে চেন? সে আমার চরম শত্রু, সে ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে অক্ষরে অক্ষরে অনুকরণ করে কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমার আদর্শ শুধু বাদই দেয়নি সে তার চরম বিরোধিতা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছেড়ে সে যোগ দিয়েছে রাজাকারি চেতনায়।
সে রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মনিরোপেক্ষতার চরম বিরোধী। সে আমার দ্বারা স্বীকৃত সংবিধানের অধিকাংশ নীতিরই বিরোধিতা করে। সে শুধু তার সুবিধা মতো আমার ব্যক্তিগত কিছু অভ্যাস-অনভ্যাসের অনুকরণ করে ফায়দা হাসিলের জন্য, যা আমার জন্য চরম অপমাণজনক ও অবমাননাকর। সে আমার চরম শত্র“। তোমরা সবাই জান যে আমি ছিলাম প্রচণ্ড সাহসী ও যোদ্ধা, আমার বলিষ্ঠ বক্তব্যে বাংলার মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, প্রাণ দিয়েছিল এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন কোরেছিল।
কিন্তু এই ছেলে অত্যন্ত ভিতু ও পলায়নপর, আমার চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য অর্জন না কোরে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাজনক কিছু অভ্যাস অনুকরণ কোরে আমাকে মানুষের সামনে বিকৃতভাবে তুলে ধরেছে, এজন্যই একে আমি শাস্তি দিলাম। এখন তোমরাই বল- তার শাস্তি দেয়া কি আমার ভুল হোয়েছে? আমরা সকলে উত্তর দিলাম, না, আপনি ঠিকই কোরেছেন। তার আরও শাস্তি হওয়া উচিৎ, সে আপনার শত্র“, আমাদেরও শত্র“। আজ থেকে আমরাও তাকে ঘৃণা করা শুরু করলাম।
আজ যারা ইসলাম ধর্মের কথা বলে, মোহাম্মদ (সা এর কথা বলে, আল্লাহর কথা বলে, তাদের বেশিরভাগই দেখি শুধু রসুলাল্লাহর ব্যক্তিজীবনের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে মেতে থাকেন কিন্তু তাঁর জাতীয় জীবন, সামরিক জীবন, কণ্টকাকীর্ণ সংগ্রামী জীবনের কথা বলেন না, অনুসরণ তো দূরের কথা।
শুধু সুবিধাজনক কিছু ব্যক্তিগত বিষয় উপস্থাপন করে স্বার্থ হাসিল করতে চান। দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, ঢেলা-কুলুখ ইত্যাদি নিয়ে তারা মহাব্যস্ত অথচ তার সামনেই ঘটে চলেছে নানা অন্যায়, অবিচার, সে নির্বাক। কার দাড়ি কতটুকু, মাথায় টুপি আছে কি না, পাগড়ির লেঞ্জা ধরে কতজন টানতে পারবে ইত্যাদি নিয়ে কূটতর্কে তারা মহাব্যস্ত কিন্তু আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি আইন দিয়ে সমাজ পরিচালিত হচ্ছে, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে যে মুসলিমই থাকা যায় না এটা তারা বোঝেন না। রসুলাল্লাহর আগমন হয়েছিল যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এটা তারা বেমালুম ভুলে গেছেন। যে অনুকরণ তারা করছেন তা নিতান্তই ভণ্ডামী!
রসুল্লাহ যদি পৃথিবীতে আসতেন তবে তাদের অবস্থাও আমার স্বপ্নের 'রাসেল' চরিত্রের মতোই হত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।