আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই দিনেই অভিষেক ‘বাঘের ডেরা’র!

শেরেবাংলা! নামটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটা বাঘ! বাংলার বাঘ। বাংলার মহান নেতার নামে উত্সর্গ করা শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন সত্যি সত্যিই একটা বাঘের ডেরা! যে ডেরায় হানা দিয়ে এরই মধ্যে অনেক বড় বড় দল বাঘের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এই তো সেদিন নিউজিল্যান্ডের কিউই পাখিটাকে দিয়ে নৈশভোজ সারল বাঘেরা!

আশির দশকে শুরু এই স্টেডিয়ামের পথচলা। স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছিল কিন্তু কেবল ফুটবলের জন্য। আজ দেশের ক্রিকেট সাফল্যের অন্যতম ক্ষেত্রভূমি হলেও এই মাঠ কিন্তু দেশের ফুটবলেরও সাফল্যগাথার সাক্ষী হয়েছে।

এমনকি অ্যাথলেটিকসেও দেশকে এনে দিয়েছেন গর্ব করার উপলক্ষ।

১৯৮৮ সালে এই স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা শুরু হয়। তখনো অবশ্য অ্যাথলেটিকসের ট্র্যাক বসেনি। অষ্টম এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব দিয়ে এই মাঠে পদচারণা শুরু হয় বিদেশি দলগুলোর। শ্রীলঙ্কার স্যান্ডার্স ক্লাব ও ইরানের পিরুজি ক্লাবের সঙ্গে বাছাইপর্বের সঙ্গী ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।

সেবার ইরানের পিরুজি ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামকে আনন্দে ভাসিয়েছিল মোহামেডান।

নিয়মিতই এই মাঠে শুরু হয় ঘরোয়া ফুটবল। দেশের ফুটবলের দুই জনপ্রিয়তম ক্লাব আবাহনী-মোহামেডান একে অন্যের মুখোমুখি হয় এই মাঠে ওই ১৯৮৮ সালেই। ১৯৮৯ সালে এই স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট বসে। ফ্লাডলাইট বসিয়েই আয়োজন করা হয় ওই সময় বাংলাদেশের ফুটবলের নিয়মিত আন্তর্জাতিক আয়োজন প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের।

এই মাঠে প্রথম আয়োজনেই বাংলাদেশ লাল দল (জাতীয় দল) মিরপুরের মাঠে ইতিহাস গড়েছিল। ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে জিতেছিল শিরোপা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ওটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা।

লাল দল চ্যাম্পিয়ন হলেও বাংলাদেশের যুবাদের নিয়ে গড়া সবুজ দল এই মাঠে ওই প্রতিযোগিতাতেই চীনের লিয়াওলিং ক্লাব আর ভারতের জাতীয় ফুটবল দলকে হারিয়ে মিরপুরের মাঠকে পরিণত করেছিল এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পয়া ভূমিতে।

মিরপুর মাঠে অ্যাথলেটিকস শুরু হয় ১৯৯৩ সালে।

সেবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসের অন্যতম ভেন্যু ছিল এই মাঠ। সেবারই বিমল চন্দ্র তরফদার নামের এক তরুণ মিরপুরের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাককে গর্বিত করেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানবের খেতাব জিতে।

এই মাঠে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নিয়ে নব্বইয়ের দশকে দেশের ফুটবল ও ক্রিকেটের দড়ি টানাটানিতেই মূলত মিরপুরের ‘হোম অব ক্রিকেটে’ পরিণত হওয়া। সেও এক মজার ইতিহাস।

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রভাব বাড়ে ক্রিকেটের। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ওপর থেকে ক্রিকেট দাবি তুলে নিলে ওই সময় মিরপুর স্টেডিয়াম পেয়ে যায় ক্রিকেট। সংস্কার করে একে পরিণত করা হয় ক্রিকেট মাঠে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যালয়ও নিয়ে আসা হয় এখানে। আশির দশকের ২ নম্বর জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হয়ে ‘হোম অব ক্রিকেট’ হয়ে ওঠার গল্পটা সংক্ষেপে এমনই।

২০১১ সালে এই মাঠই আয়োজন করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী ম্যাচ। ক্রিকেট বিশ্ব সেদিন অপলক দৃষ্টিতে উপভোগ করেছিল নতুনভাবে সেজে ওঠা মিরপুর স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য।

২০০৬ সালে এই মাঠে ক্রিকেটের অভিষেক হয়। ডিসেম্বরের ৮ তারিখ। শুভ সূচনাই হয়েছিল বলতে হবে।

বাংলাদেশ সেদিন খুব সহজেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল ৮ উইকেটে।

এই মাঠে বাংলাদেশে রেকর্ডটাও খুব একটা মন্দ নয়। এখনো পর্যন্ত এই মাঠে ৫৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় ২৪টিতে। সব মিলিয়ে এই মাঠে ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা ৬৭টি। আছে ছয়টি বিশ্বকাপ ম্যাচও।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি ছাড়াও গত বিশ্বকাপের দুটি কোয়ার্টার ফাইনালের ভেন্যু ছিল এই মাঠ। ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিরপুরের। হয়েছে ১০টি টেস্ট। দুটি ড্র থাকলেও এই মাঠে এখনো টেস্টে জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও আনন্দ-বেদনার উঠোন হয়ে আছে মিরপুরের মাঠ।

এতে সর্বোচ্চ ৫১টি ওয়ানডে খেলেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সবচেয়ে বেশি ১৬৩৭ রান করেছেন বিশ্ব-সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সবচেয়ে বেশি ৭৪ উইকেট বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের। এ মাঠটি সাকিবের কেন এত প্রিয় সেটা টেস্ট পরিসংখ্যান দেখলেও বোঝা যাবে। ৪৭ দশমিক ৫৫   গড়ে এ মাঠে সর্বোচ্চ ৮৫৬ রানও সাকিবের।

সর্বোচ্চ ৩৩ উইকেটও তাঁর!

এ মাঠেই ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করেছেন আবদুর রাজ্জাক ও রুবেল হোসেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ মাঠ মনে রাখবেন শচীন টেন্ডুলকারও। তাঁর শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি যে এখানেই!

অনেক সাফল্যের মাঝে এই মাঠকে ঘিরে বাংলাদেশের আছে খুব বড় একটা দুঃখবোধ। এক দিনের ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোরটা যে এই মাঠেই করেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার ইতিহাসটি এই মাঠের সমৃদ্ধ ইতিহাসে যেন এক ফোটা অমোচনীয় কালিই।

এ মাঠেই মাত্র ২ রানের জন্য এশিয়া কাপ জিততে না পারার দুঃখে কেঁদেছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। কেঁদেছিল পুরো বাংলাদেশ।

মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এখন শুধু একটি স্টেডিয়াম নয়, পুরো বাংলার মানুষের হাসি-কান্নার উত্সভূমিও! 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।