আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুদলের বৈঠকই তারানকোর ‘সাফল্য’

সংকট সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করে ঢাকা সফরের ইতি টেনেছেন জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তাঁর উপস্থিতিতে প্রধান দুই দলের দুই দফা বৈঠক ছাড়া সমাধানের কার্যকর কোনো উপায় বের হওয়ার খবর মেলেনি।
তবে, রাজনৈতিক সংকট কাটাতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বৈঠকে বসাতে পারাটাকে সাফল্য হিসেবে দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের এই দূত। তিনি মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে সংকট কাটাতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা এখন দুই দলের। বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে, এমন একটা সমাধানের উপায় এ দেশের রাজনীতিবিদদেরই খুঁজে বের করতে হবে।


ছয় দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি গত রাতেই নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ফিরে গিয়ে বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে অবহিত করবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে দুই দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারানকোর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো পক্ষই তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। আগামী শুক্রবার আবার বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান গত রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে। অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আগামীতে বিবেচনা করা হবে। তাই ফলাফল এখনই ধারণা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তিনি জানান, কাল শুক্রবার আবার দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
শুক্রবারের পরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আগে শুক্রবারের আলোচনাটা হোক।

পরবর্তীতে বলা যাবে, আলোচনা আরও বর্ধিত হবে কি না। ’ তিনি আরও বলেন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা। তারানকোর উপস্থিতিতে দুই দলের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ‘বরফ গলতে’ শুরু করেছে। পরবর্তী সময়ে  আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।
এদিকে বর্তমান তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এই তফসিলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারানকোর উপস্থিতিতে দুই দলের দুই দফা বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল পরিবর্তনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হলে তারানকো কিছু বলেননি।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান তফসিলে নির্বাচন করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার অনড় রয়েছে। আর বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান ব্যবস্থায় তাঁদের নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

গতকাল বিএনপির সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই তফসিল স্থগিত করার দাবি জানান।

বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সব পক্ষকে সংলাপে উৎসাহ জোগাতে ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। জাতিসংঘের মহাসচিবের দূত হিসেবে তারানকো গত এক বছরে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করেন। তিনি এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব, নাগরিক সমাজ ও ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের সঙ্গে ২৫টি বৈঠকে অংশ নেন।

সফরের শেষ দিনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তারানকোর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সময় দেননি। অবশ্য তারানকো সাংবাদিকদের বলেন, সফরসূচির ব্যস্ততার কারণে শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল তাঁর দ্বিতীয় দফা বৈঠকটি হয়নি।

গতকাল বিকেলে তারানকো ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আবার মতবিনিময় করেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ মতবিনিময় সভায় তারানকো বলেছেন, অনেক চেষ্টার পর দুই দলকে সংলাপে বসানো গেলেও আলোচনার ফলাফল নিয়ে তাঁর সংশয় রয়েছে।

তারানকোর সংবাদ সম্মেলন: সফরের লক্ষ্য ও অর্জনের বিষয়ে গতকাল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তারানকো বলেন, জাতিসংঘের প্রধান অগ্রাধিকার অহেতুক হত্যা ও সহিংসতা বন্ধ করা এবং উত্তেজনা কমিয়ে সংলাপে বসার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো।

তিনি বলেন, ‘এ সফরের ফলাফল নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার উপস্থিতিতে দুই দলের নেতারা দুই দফা আলোচনায় বসেছেন। তাঁরা তৃতীয় দফা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। সংলাপের ব্যাপারে আমার বক্তব্য ছিল উত্তেজনা কমানো, সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং দুই পক্ষের উদ্বেগের বিষয়গুলো দূর করা। ’

তারানকো আরও বলেন, তিনি মনে করেন, ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণের ধারণা রয়েছে।

তাই আগামী নির্বাচনটা বাংলাদেশের জনগণের ‘হূদয়ে ও চোখে’ গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের নেতাদের অবশ্যই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তাই দুই পক্ষকে সদিচ্ছা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছি। ’

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রেখে তাঁর ক্ষমতা কাটছাঁটের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী আলোচনা হয়েছে, সেটি এখানে বিস্তারিত তুলে ধরতে চাই না।

বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে তারা (দুই পক্ষ) একমত হয়েছে। ’

নির্বাচনে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ কিংবা তত্ত্বাবধানের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কি না, এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব। তবে তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কিংবা নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংলাপ ভেস্তে গেলে তার ফল কী হবে, এ প্রশ্নের জবাবে তারানকো বলেন, ‘সংলাপ ব্যর্থ হলে এর ফল কী হতে পারে, এখানে উপস্থিত সবারই তা জানা আছে। প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তৃতা পড়ে শোনান তারানকো। তাতে বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। এতে উত্তেজনা বাড়ছে এবং বাংলাদেশের কষ্টার্জিত আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। যাঁদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁদের সবার কাছেই ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিবের গভীর উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁদের প্রত্যেককেই সংযত হওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনুরোধ করেছি।

জাতিসংঘ অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের পক্ষে। ’

দুই দলের দ্বিতীয় দফা বৈঠক: গতকাল দুপুরে গুলশানে জাতিসংঘের একটি দপ্তরে তারানকোর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও গওহর রিজভী। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান ও শমসের মবিন চৌধুরী।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের নেতারা গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবং বিএনপির নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আলোচিত বিষয় অবহিত করেন।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।