আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃআইনস্টাইনের পিতার নাম কেয়ামত

ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা।
শিক্ষক মহোদয় ক্লাশে ছাত্রদের পাঠ দিচ্ছেন। পরীক্ষার খাতায় অযথা কোনো কিছু লিখবিনা। যা লিখবি তাও যেন প্রমাণসিদ্ধ হয়। আর যা বলবি গুছিয়ে বলবি, বিস্তারীত বলবি।

উত্তরের মাঝে যেন কোনো চিপা চাপা না থাকে। সবকিছু ঝকঝকে পরিস্কার করে লিখবি। কোনো কিছু বাকি রাখবিনা। ও আরেকটা কথা। অবুঝের মতো কিছু লিখবিনা।

জেনে শুনে বুঝে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খাটিয়ে নিজের মতো করে লিখবি। কোনো কিছু তোতাপাখীর মতো মুখস্থ করে উগলে দিবিনা। উগলাতে মন চাইলে বাথরুমে গলা খুলে দিবি। পরীক্ষার খাতায় না। পরীক্ষায় খাতায় বমনের গন্ধ সহ্য করা হবেনা।

এতটুকু বলার পর , স্যার বললেন, কিছু বুঝেছিস গর্দভের দল? আমরা নিরীহ গর্দভের দল চিল্লিয়ে বললাম,বুঝেছি স্যার। পরদিন ক্লাসে স্যার সাপ্তাহিক পরীক্ষা নিচ্ছেন। ক্লাসের সবচেয়ে বিপদজনক কিন্তু মেধাবী ছেলে জ্বিন সোলেমান পরপর প্রশ্নের জবাব খাতায় লিখে যাচ্ছে । আর টুকলি বেগম মনের মতো করে নিজের খাতায় টুকলি মেরে যাচ্ছে। টুকলি শুরু করলে তার আর কোনো ঠিক ঠিকানা থাকেনা।

যা সামনে পাবে তাই বসিয়ে দেবে। পরের প্রশ্নঃ- আইনস্টাইনের পিতার নাম কি? জ্বিন সোলেমান লিখা শুরু করলো- প্রশ্নের উত্তর বিস্তারীত নীচে প্রদত্ত হলো গ্রামের সব যুবতি মেয়েদের পার্বতী বানিয়ে অবশেষে রুপকুমার কেরামত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। বিবাহের এক বছরের মাথায় তার পরিবারে এক সুন্দরী কইন্যা যেন আসমানের পরী মর্ত্যে এসে হাজির হলো। এমন রুপবতি কন্যা দিনে দিনে প্রকৃতির নিয়মে বড় হতে লাগলো। গ্রামের লোকদের মেজবান খাইয়ে কন্যার পিতা কন্যার নাম রাখলেন জিনিয়া।

এই স্কুলের সবচেয়ে রুপসি মেয়ে জিনিয়া। কিন্তু মারাত্মক বোকা কিসিমের। বোকামিরও একটা সীমা আছে, কিন্তু জিনিয়া বোকামিতে এ ডাবল প্লাস। যিনি এখন পিছনে থেকে উঁকি ঝুকি মেরে আমার খাতা টুকলিফাই করার সাধনা করছেন। কারণ টুকলি করাই হলো উনার পরীক্ষা পাশের শেষ ভরসা।

এই ব্যাপারে একটু বলতে হয়। কারণ শপথ করেছি । যা লিখবো বিস্তারিত লিখবো। কোনো কানাগলি, চিপা চাপা রাখবোনা। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই জিনিয়াকে দেখা যায়, চোখ চালাচালি করতে বড় ক্লাসের গান্জু আয়াসের সাথে।

গান্জু আয়াস বাপের পকেট মেরে যে দশ বিশ টাকা'র বন্দোবস্ত করেন তার সিংহভাগই চলে যায় বিড়ির পু ..(বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে বুঝে নেন) ফুকতে আর জিনিয়ার জন্য বাদাম কিনে দিতে। এইখানে বলে রাখা ভালো, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে পিছন থেকে টুকুস টুকুস যে শব্দ আসে তা কোনো কাঠবিড়ালি'র না, এটা হলো জিনিয়ার দাঁত দিয়ে বাদাম কর্তনের শব্দ। আফসুস, জিনিয়ার দাম গান্জুর বাদামেই বিক্রি হয়ে গেছে। আমাদের বিদ্যালয়ের পিছনে একটা মেহগনি গাছের বাগান আছে। দুপুরের টিফিন ব্রাকে আমরা সেখান হৈ হুল্লুড় করি।

একদিন সেখানে গিয়ে দেখি, সব বৃক্ষের বাকল উপড়ে জ্যামিতির সম্পাদ্য আর উপপাদ্য প্রমাণিত হয়েছে। যার বেশীরভাগই হলো একটা লাভ চিহ্ন যার ভিতরে লক্ষণের তীর শোঁ শোঁ করে ছুটছে। আর লাভু চিহ্নের ভিতরে জিনিয়া+ আয়াস, জিনিয়া+ আয়াস লিখে নানা কিসিমের ভালোবাসার নঁকশা আঁকা হয়েছে। নববর্ষের প্রথমদিন এই স্কুলের ঐতিহ্য বুলন্দ করনের তাগিদে ক্লাসের সবার খেতাব জুটে। এইবার সব খেতাব ছাপাইয়া দুটি খেতাব এক হয়ে গেলো আর তা হলো "জিনিয়াস ।

রুপসী জিনিয়া'র নব খেতাব হলো "জিনিয়াস। " কারণ প্রেমের জলে হাবুডুবু খেয়েও সে টুকলি করেই পাশ করছে। আর বিশেষ কারণ টা হলো- জিনিয়া + আয়াস= জিনিয়াস। কী সৌভাগ্য প্রেমের ফল কখন যে কি হয়, তা বলা মুশকিল। না হলে বোকা মেয়ের নাম হবে জিনিয়াস।

একদিন জিনিয়া ক্লাসে নাই। উপরের ক্লাসের গান্জু আয়াসও লাপাত্তা। কে যেন খবর দিলো জিনিয়াস পার্কের গাছে যথারীতি প্রেমের পদ্য লিখছে। ইতোপূর্বে জিনিয়া'র পিতার নাম জেনেছি কেরামত। এখানে বলে রাখা ভালো ক্লাসের দুষ্টু ছেলের দল জেনেছে গান্জু আয়াসের বাপের নাম হলো রহমত।

রহমতের ঘরে রহমত পয়দা না হয়ে বিড়ি খোর কেমনে নাজিল হলো সে বিষয়ে বলতে গেলে বিষয়বস্তুর বাইরে চলে যাবে বলে তা আলোচনা করা শ্রেয় মনে করছিনা। বিগত পরীক্ষায় ব্যাকরণের ক্লাসে আমরা দশজন আন্ডা পেয়েছি। যার ফলে,টেবিলের নীচে মাথা ঢুকিয়ে পিঠের উপর ঝাউ গাছের বেত দিয়ে ব্যাকরণ স্যার সন্ধি, সমাস পিঠিয়ে যাচ্ছেন। আর মনে মনে শপথ নিলাম। ব্যাকরণে পন্ডিত হবোই হবো।

প্রেমের সন্ধিতে না পারি, ব্যাকরণের সন্দিতে হেডমাস্টার হবো। এখন যা দেখি তাকেই জোড়া লাগিয়ে দেই। জিনিয়ার পিতার নাম কেরামত আর আয়াসের পিতার নাম হলো রহমত। দুই পিতার সন্ধি ঘটিয়ে হলো কেয়ামত। অতি পন্ডিতরা হয়তোবা ভুল ধরতে পারেন।

তবে কেরামত আর রহমতকে সামনে আনলেই বুঝতেন "র" লুপ্ত হয়ে "য়" হয়ে কেন তা কেয়ামত হলো। পরদিন ব্ল্যাকবোর্ডে লিখা হলো- " পড়ালিখার হলো শ্রাদ্ধ, কেয়ামতের জিনিয়াস পার্কে লিখে ভালোবাসার পদ্য। এতোক্ষণে বিস্তারীত আলোচনার উপসংহার টানছি। যেহেতু আইনস্টাইনকে আমরা একজন জিনিয়াস হিসাবেই জানি। আর উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেলো জিনিয়াসের পিতার নাম কেয়ামত।

তাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জবাব দিতে পারি আইনস্টাইনের পিতার নাম হলো কেয়ামত। একেবারে প্রমাণসিদ্ধ। পরদিন ক্লাসে স্যার সবাইকে ডেকে ডেকে খাতা বুঝিয়ে দিলেন। জ্বিন সোলেমানও পরীক্ষার খাতায় ভালো নাম্বার পেয়েছে। শুধু টুকলিবেগম জিনিয়াকে স্যার কাছে ডেকে নিয়ে গেলেন।

তারপর বললেন- টুকুস টুকুস করে বাদাম খেলে,আর পার্কে ঘুরাঘুরি করলে পরীক্ষার খাতায় নিজের প্রেমকাহিনীই বমন করবি। এর চেয়ে ভালো কিছু লিখতে পারবিনা। আর টুকলিই যখন করবি তখন একটু বুঝে শুনে করবিনা। অক্ষরের পর অক্ষর টুকলিই করে গেলি, বাক্য কী দাঁড়ালো তাও একবার পড়ে দেখলিনা মিস টুকলিবেগম। আইনস্টাইনের বাপের নাম কেয়ামত-একেবারে প্রমাণ সিদ্ধ , হ্যাঁ।

স্যারের কথা শুনে আমরা এ ওর দিকে তাকাই। জ্বিন সোলেমানকে বললাম ঘটনা কি? বললো- প্রেম করবে গান্জুর সাথে আর টুকলি করবে আমার খাতা থেকে । এ কথা বলে সোলায়মান পরীক্ষার আসল খাতার কাগজে লিখাটি বের করে আমার সামনে রাখলো । তারপর টুকলির দিকে চেয়ে ত্যাড়া একটা হাসি দিয়ে বললো, একটা মিষ্টি প্রতিশোধ নিলাম। আমি বললাম,তুই আসলেই একটা জ্বিন সোলায়মান।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.