আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫ জানুয়ারি নির্বাচন কোন পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না



আগামী ৫ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। গত ২৫ নবেম্বর প্রধান বিরোধীদলসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোন প্রকার আলোচনা ও সমঝোতা ছাড়াই আগামী ৫ জানুয়ারী ভোট গ্রহণ নির্ধারণ করে আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একপেশে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহম্মদ। একতরফা তফসিল ঘোষনার পরপরই রাজনৈতিক দলগুলো তা প্রত্যাখ্যান করে সারাদেশে বিক্ষোভ করলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। সরকারের সীমাহীন দমন নিপীড়ন উপেক্ষা করে নিজেদের ভোটারাধিকার রক্ষার আন্দোলনে রাজপথে নেমে এসেছে সাধারণ মানুষ।

প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলি ও হামলা নিহত হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। ঘোষিত ৫ জানুয়ারি এই নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় সকল রাজনৈতিক দল বয়কট করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেকোন উপায়ে আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রথমে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিতে পারলেও পরে এরশাদও নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না এবং পরিবেশ নেই বলে নির্বাচন থেকে সরে এসেছে। ফলে ৫জানুয়ারি নির্বাচন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

এরশাদ ঘোষনা করেছেন আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। ইতিমধ্যে তিনি ইতিমধ্যে দেশের সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও কোন পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানিয়েছে। বিদেশী উন্নয়ন সহযোগি রাষ্ট্রগুলোও অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মত প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে ইইউ, কমনওয়েলথ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও আগামী ৫জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘের সহকারি মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সংকট নিরসনে চেষ্টা করলেও সরকারের একগুমিয়ে সে চেষ্টা আপাপত বিফল হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৫ জানুয়ারি কথিত নির্বাচনে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারানকো আগামী ৫ জানুয়ারির কথিত নির্বাচনের তফশিল পেছানো যায় কিনা সেটা প্রধামন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করেছেন। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করে তফশিল পেছানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ুবাংলাদেশ সফররত ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ওয়ার্সি সবদলের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন চান বলে জানান। খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতারা একতরফা নির্বাচন চায় না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাবধীন ১৮দলীয় জোট এবং অন্যান্য রাজিৈনতক দলগুলো একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নিদর্লীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করছে। কিন্তু সরকার আদালতের রায়ের দোহায় দিয়ে নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের তফশিল ঘোষনা করার পর থেকে সারাদেশে ক্ষোভে ফুসে উঠছে জনগণ। ইতিমধ্যে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সারাদেশে গণঅভুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সব দলের অংশগ্রহণহীন নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। গত রোববার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবাসিক প্রতিনিধি উইলিয়াম হানা সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দেন।

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেবল সেই নির্বাচনেই পর্বেক্ষক পাঠাবে যে নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। তাছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থার ওপরেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্বেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করবে বলে জানান তিনি। ইইউের সিদ্ধান্তের পরপরই বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে একতরফা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা কমনওয়েলথও। গত সোমববার সকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানায় সংস্থাটি। তিন সদস্যের কমনওয়েলথ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মার্টিন কেইজার।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির স্বাভাবিকত্বের উপর নির্ভর করছে কমনওয়েলথ পবর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না। তার দল দেশের সাধারণ মানুষ ও প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সংস্থার মহাসচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন দেবেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না। তারা গভীর ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান। এদিকে গতকাল বিশিষ্ট আইনজীবি, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বিশ্ব।

চলমান সংকট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ। রাজধানী হোটেল সোনগাঁওয়ে জাতিসংঘ সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সাথে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, দেশের নির্বাচন নিয়ে আলাদা কোন ফর্মূলা নয়, সংকট নিরসনে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ সাক্ষাত। বিশেষ পরিস্থিতিতে তারানকো বিরোধ নিরসনের দায়িত্ব নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার বক্তব্যে তিনবার সমঝোতার কথা বলেছেন। দেশবাসী চায় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

একতরফা নির্বাচন থামানো দরকার। সংকট নিরসনে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী তারানকো। আইনজীবি শাহদিন মালিক বলেন, একতরফা নির্বাচন কেউ চায়না। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বিশ্ব বলে আমাদের অবহিত করেছেন তারানকো। তিনি বলেন, তারা কোন আলাদা ফর্মূলা নিয়ে আসেননি।

নির্বাচন ভালোভাবে করার একটা পদ্ধতির জন্য তারা এসেছেন। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী এ বৈঠেকে অংশ নেন। এদিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যাবে না। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।