Every moment is another chance

একটি পরিবেশবাদী ঈগলের পরিবেশনা, অনেক দিন পর লেখার জন্যই লেখলাম ছোট্ট একটি ব্যক্তিগত দায় থেকে আজকের লেখাটির অবতারণা। কাসিমপুর জেল থেকে মুক্তির দিন সকালেই ঘটলো ঘটনাটি। মুক্তি লাভের আশা আর জেল গেটে পুনরায় গ্রেফতার হবার আশংকার দোলা চলে ফটিকছড়ির নেয় বিধ্বস্ত পুটু দুলতে দুলতে আমি আমার মালপত্র গুছাচ্ছিলাম। এমন সময় লুঙ্গি পরা এক নাদুস নুদুস ব্যক্তি আমার রুমে ঢুকে সালাম দিলো এবং বললো- কসাই কাদের মোল্লা সাহেব আপনাকে একটি লাভ লেটার দিয়েছেন। মুহুর্তের মধ্যে আমি পুটু সমেত লজ্জায় লাল হয়ে পড়লাম।

সিদ্বান্ত নিতে পারছিলাম না, লাভ লেটারটি কি গ্রহণ করবো না ফেরত পাঠাবো। পুটুতে এখনো অনেক ব্যাথা যে ! এরই মধ্যে আগন্তক টেবিলের ওপর লাভ লেটারটি রেখে তড়িৎ গতিতে চলে গেলেন, যাওয়ার আগে কাছা ধরে একটা টান দিয়েও গেলেন। আমি কম্পিত হস্তে লুঙ্গি মেরে প্টু বাচানোর চেস্টা করলাম। এরপর লাভ লেটারটি খুললাম। একটি ছেড়া ছোট কাগজে ৩/৪টি বাক্য লিখেছেন কসাই কাদের মোল্লা।

কিন্তু বাক্যগুলোর তীর্যক অভিব্যক্তি আমার কোমল হৃদয় কে যারপরনাই আহত করলো। হায় ! সেই চিরকুটের ইতি কথা বলার পূর্বে আরো কিছু প্রসঙ্গ পাঠকগণকে জানাতে চাই- কাসিমপুর জেলে ঢোকার পর পরই আমার জেলমেটগণের নিকট কসাই কাদের মোল্লার সম্পর্কে বহু কথা শুনছিলাম হররোজ। বিশেষ করে, প্রতি রাতে ইশপিশাল খেদমত সেশনের আগে, খাবার টেবিলে তার সম্পর্কে আলোচনা হতো সব চেয়ে বেশি। বাকশালী ট্রাইব্যুনালের রায়ে দোষী সাবস্ত হবার পূর্বে ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দী হিসেবে চোখে সুরমা মেখে আর দাড়িতে গার্নিয়ার এর রঙ মেখে সুরমা সেলেই ছিলেন। ডায়াবেটিসের রুগি।

জেলে ষান্ডার তেল ও নেই। তাই ইশপিশাল খেদমত সেশনে বসে প্রথমেই বলতেন কিছুর খেদমত ই নিবেন না। তার পর একটার পর একটা কচি গেলমান এর দিকে দিকে তাকাতেন। লকলকে জিহ্বা টা বের করে, মুখের লোল টেনে, হাসি দিয়ে বলতেন- মামুনের কোমরের নিচের গোস্তের রংটা বোধ হয় ভালই হয়েছে। তার পর বাংলার জুলিয়ান এসাঞ্জ মহাচুদুরবুদুর সাহেবের দিকে তাকিয়ে, মুখটা কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলতেন, “আহ, লোমের ঘ্রানটাও তো চমৎকার।

“ খাঙ্কিরপুলা মীর কাসিম বা অন্য বন্দীদের দিকে তাকিয়ে এমন ভাব করতেন যেন কসাই কাদের মোল্লাকে খেদমত পুশ ইন করার জন্য জন্য একটু অনুরোধ করেন। এক সময়অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাহার ইমান খাড়াইয়া যাইত। গপ গপ করে ছবক দেয়া শুরু করতেন এবং হই-হল্লোড়, হাসি- তামাসা এবং ব্রেজার্স ও নটি আম্রিকা হইতে শিক্ষালাভ করা নানা রকম আংরেজি শব্দে চীৎকার করে, মামুনের চীৎকার চাপা দিয়ে পুরো কক্ষ কাপিয়ে রাখতেন। বিষন্ন নাদুস নুদুস গেলমান বন্দীরা তাই কসাই কাদের মোল্লার উপস্থিতিটাকে এক ধরনের আতংক হিসাবেই গণ্য করতো। বন্দী জীবনের নিরন্তর সময় যেনো আর কাটতে চাইতো না।

ফলে আমরা সময় টুকুকে যথাসম্ভব আনন্দ মূখর করার জন্য অগ্র ও পশ্চাদ উভয় দিকেই সর্বাত্মক চেষ্টা করতাম। যার যতো ইন্টারনেট ও গুপ্তস্যারের বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান বা প্রতিভা বা ইমান ছিলো- সবই উজার করে দিতাম সহযাত্রীদেরকে আনন্দ দেবার জন্য। একদিন বিকেলে বসেছিলাম সুরমা সেলের বারান্দায়। পাশাপাশি চেয়ার নিয়ে আমরা সবাই- গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, মাহামুদু রহমান, মীর কাসিম আলী আর এটিএম আজাহার। মিশনারি কেবল শেষ।

হঠাৎ নীরব হয়ে গেলাম । অর্থ্যাৎ গ্রহন করবার মতো কোন নতুন ইমান ছিলোনা কারো মূখে। হঠাৎ মামুনই বলে উঠলো- এই সময় কসাই মোল্লা থাকলে, এক মুহুর্তে ইমান খাড়ায়ে দিতেন। আমাদের সবাইকে গান শোনাতেন। ছি ছি ছিঃ জামাতের এত্ত গুলা পচ্চা কসাই সাব, আবার গান গায় নাকি !- মনে মনে টিটকারী কেটে জিজ্ঞাসা করলাম- কি গান গাইতেন? “মাইলি ছাইরাছ !- অসাধারণ তার গায়কী গলা, আর পুটুর ঢং, আর সে কি টোয়ার্কিং !!!” - মহাচুদুরবুদুর রহমান বললেন।

আমি নিজে টুকটাক নাচতে জানি। তাই প্রস্তাব করলাম কিছু একটা নাচার জন্য। তারা আগ্রহ দেখালে আমি একটি বেলি ড্যান্স নাচলাম, গাইলাম- ‘যৌবন আমার লাল টমেটো’। সবাই শুনলেন, হা করে পুটু গিললেন এবং প্রশংসা করলেন। তবে একথা বললেন যে, আমার চেয়েও কসাই কাদের মোল্লা সুন্দর করে পুটু নাচিয়ে গাইতে পারেন।

তার নাচ পরিবেশনের সময় তিনি উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে এমনভাবে চোখের ভাব বিনিময় করেন যে শ্রোতাগণ তার পুটুর ভাজের সাথে ইমান খাড়াইতে বাধ্য হন। ফলে পুরো অনুষ্ঠান হয়ে উঠে লোলবন্ত। অন্যদিকে আমি গান করি চোখ বুঝে। যখন আমার সঙ্গী-সাথীগণ যখন আমাকে কাছা তুলে আরেকটু পুটু দেখাতে অনুরোধ করে, তখন আমি ভারী লজ্বা পেয়ে গেলাম এবং আর এগুতো পারলাম না। ফলে তারা আবার পুনরায় কসাই কাদের মোল্লার তন্দরুস্ত পুটুর প্রশংসা করতে থাকলেন।

একদিন আমরা সকলে খাবার টেবিলে বসে দুপুরের খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেবকরা তখন রাতের খেদমতের জন্য এঞ্জাম করছিল। এমন সময় কসাই কাদের মোল্লার সেবক এসে খাম্বা মামুনের নিকট ছোট একটি নীল খামে ভরা লাভ লেটার ধরিয়ে দিল। লাভ লেটারটি পড়ার পর মামুনের মূখমন্ডল ক্ষোভ, লজ্বা আর রাগে লাল হয়ে গেল। এরপর সে লাভ লেটারটি মীর কাসেম আলীর হাতে দিল।

কাসেম সাহেব লাভ লেটারটি পড়ে কাদঁতে আরম্ভ করলেন। আমার হাতে যখন লাভ লেটারটি এলো তখন দেখলাম কসাই কাদের মোল্লা লিখেছেন- প্রিয় খাম্বা মামুন, ছালাম। নিতান্ত বাধ্য হয়েই তোমার সেবক মতিচুরার বিরুদ্ধে তোমার নিকট নালিশ জানালাম। ইদানিং কোনো জানি আমার গেলমানের পাশাপাশী বেশি বেশি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক শিফন শাড়ীতে মোড়ানো রমনী দেখতে ইচ্ছা করে। আমার নিজের আইএসআই ফান্ডের রুপি দিয়ে এসব ভোগ করা যে সম্ভব নয় তা তুমি জানো।

তুমি আমার জন্য এ যাবৎ অনেক কিছু খেদমত হজম করেছ- আর তাই তোমার পিছন দিকে অজানা এক অধিকার জন্ম নিয়েছে। সেই অধিকার বলে আমার সেবক মতিচুরাকে বলেছিলাম যখন পচাআলুতে ছাপানোর জন্য পুনম পান্ডে ভিনা মালিকের রসের হাড়ি ভাগাভাগি হয় তখন ছবির রেজুলেশন একটু বেশি হাই করে দিস আমার জন্য। কিন্তু তোমার সেবক মতিচুরা আমাকে এই সূযোগ দেয়নি। পুনম পান্ডের শুধুই ফেসের ছবি ছাপাইয়া, সব হাই রেজুলেশনের ছবি আমিষূলের ডেস্কটপে লুকায়ে রাখছে। জীবন-মৃত্যুর শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে এই অভাগা কসাই তার ছোট ভাইয়ের নিকট একটু রসের হাঁড়ি চেয়ে যদি অন্যায় করে থাকি তবে মাফ করে দিয়ো।

ইতি- লাভ লেটার পড়ে আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মহাচুদুরবুদুর বললেন- কাল থেকে মোল্লা সাহেবের জন্য আলাদা সবিতা ভাবী প্রিন্ট দেয়া হবে। সব বিল আমি দেব। মামুন ক্রোধে কাঁপছিল আর মতিচুরকে শাসাচ্ছিল। আর অন্যরা একধরনের বিষন্নতার নষ্টালজিয়ায় ভুগতে লাগলাম।

এবার আমি বলছি- আমার কাছে লিখা কসাই কাদের মোল্লার চিরকুট কাহিনী। তিনি লিখেছেন- প্রিয় রনি, যদি কখনো সময় পাও এবং তোমার ইচ্ছে হয় তবে আমার ফাঁসির পর একবার হলেও বলো বা লিখো-কসাই কাদের মোল্লা তোমার বাবা ছিল। তুমি আমার জারজ সন্তান হলেও উপরওয়ালা জানেন তুমিই আমার সন্তান। ইতি তোমার বাপ কাদের মোল্লা
।