মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।
বিম্পির আন্দোলন কেন ব্যর্থ বা কোথায় হোঁচট খেয়েছে? আজ খালেদা জিয়া সরকারকে নমনীয়ভাবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাতে হয়, শীর্ষ নেতারা বৈঠক করতে হয়, বিদেশিদের নিকট ধর্ণা দিতে হয়। কেন? এ নমনীয় অবস্থান তো আরো আগেই গ্রহণ করতে পারতেন।
২৬/১০/২০১৩-এ লিখেছিলাম,
বিএনপিকে হুশিয়ারি : হরতাল প্রত্যাহার করুন
“দু’দিন আগে ফোন করলে সার্বিক দিক থেকে নিশ্চয় আরো ভালো হতো। শেখ হাসিনাকেও আল্টিমেটামের কাছে মাথা নত করার লজ্জা পেতে হতো না, আশরাফ-হানিফ-ইনু-মখাদের মাথা এতটা হেট হতো না। যাহোক, দিনভর নাটক মঞ্চস্থ করে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ফোন করলেনই। তবে এটাও আওয়ামী লীগের চিরাচরিত রাজনৈতিক চাল থেকে মুক্ত নয়। সুতরাং এ চালটাও বিম্পি ধরতে পারবে এমনটাই আশা করেছিলাম।
কিন্তু তা হতে দেখা যাচ্ছে না।
আশরাফকে ফখরুলের চিঠি দেয়া, সংসদে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া, নয়া পল্টন থেকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ স্থানান্তর করা- প্রতিটি সিদ্ধান্তই ছিল দক্ষতায় পরিপূর্ণ। এর ফলে জনগণের মনে যে জায়গা করে নেওয়া, এটাই আজকের সংলাপ বা আলোচনায় আওয়ামী লীগকে বাধ্য করার সাফল্য নিয়ে এসেছে। আমি মনে মনে বলেছি, বিএনপির এই রাজনৈতিক দক্ষতাপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো থেকে হুজুরদেরও রাজনীতির অনেক কিছু শেখার আছে। এটাই ইতিবাচক রাজনীতি।
আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা সমস্যা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। তাদের নাম নিচ্ছি না, শুধু ইনুকে একটা অনুরোধ করবে, সে যেন নাক্যা কথা না বলে। ওর নাকটা সম্ভবত অপারেশন করা দরকার।
শেখ হাসিনার ফোনালাপের পর যদি বিম্পি হরতাল অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের রাজনৈতিক বড় ধরনের একটা পরাজয় ঘটতে পারে, এই রকম মুহূর্তে এসে অনেকেই হিতাহিত জ্ঞান হারান। এমনকি আমি নিজেও দলের ভেতরে থাকলে এমনটাই হতো।
যাহোক, অতিসত্তর হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া দরকার। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বিষয় জনসমর্থন। হরতালের পক্ষে পার্টির যত যুক্তিই থাকুক, কিন্তু এটা বুঝতে হবে শেষ মুহূর্তের ফোনালাপ রাজনৈতিক চাল ওলট-পালট করে দিয়েছে। রাজনীতিতে খেলাটা দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে যেতে হয় বিজয়ের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এক মুহূর্তের ব্যবধানে হিসেব ওলট-পালট হয়ে যায়।
জনসমর্থন একদিক থেকে অন্যদিকে কাত হয়ে যায়।
আবারো বলব, বিএনপি হরতাল প্রত্যাহার করুক। তারা যদি রাজনীতিই করতে চায়, নৌকাকে ভয় পাবার কিছু নেই। বিশাল টাইটানিকও ডুবে গিয়েছিল। আরেকটি কথা, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কিছু বলতে বিবেক বাধ্য করে।
নইলে আমি মূলত রাজনৈতিক কোনো কথাই বলতে চাই না, রাজনীতি, মিটিং-মিছিল করিও না। অনেকেই হেফাজত-বিএনপি-জামায়াত সমর্থন করি কি না জানতে চান। যেন এছাড়া আমার স্বতন্ত্র পরিচয় ও সত্ত্বা থাকতে পারে না। একজন আওয়ামী সমর্থক খুশি হয়ে বললেন, আমার লেখায় আওয়ামী লীগের ভোট আরও বাড়বে। তাহলে তিনি কি ভোটের হিসেব করেই কাউকে গ্রহণ বা বর্জন করেন? আরেকজন বললেন আমার হেফাজত-সমর্থন স্পষ্ট।
কিন্তু আমি জানি, আমি কারো ভোটের হিসেব করে কথা বলি না। সবসময় আম-পাবলিকের স্বার্থটা মাথায় রাখার চেষ্টা করি। এই মূল পয়েন্টটার সঙ্গে কোথাও বিরোধ ঘটলে ধরিয়ে দেবেন এটাই প্রত্যাশা। সবাইকে ধন্যবাদ। ”
এরপর ১২/১১/২০১৩-এ লিখলাম,
খালেদাকে লাস্ট ওয়ার্নিং : দ্রুত সংলাপে বসুন
“রাজনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মত আম পাবলিক যত কম কথা বলব ততই মঙ্গল।
উপরন্তু আমি মনে করি আমার ক্ষেত্রে এটা অনধিকারচর্চা। তাই এ নিয়ে সাধারণত কিছু বলি না। কিন্তু পরিস্থিতি বারবার টেনে নিয়ে আসলে আমি কী করব? ক’দিন আগে বলেছিলাম, সংলাপের আহ্বান ফিরিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া চরম ভুল করেছেন, এখনো সে কথাতেই আছি। যদিও সেটি বাহ্যত সংলাপের আহ্বান না হয়ে ছিল খাওয়ার দাওয়াত।
যাহোক, বাস্তবতা তার গতিতেই চলবে।
আমি বর্তমানে প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক দল এমনকি হেফাজতে ইসলামের কর্ম-প্রক্রিয়াকেও সমর্থন করি না। সুতরাং বিএনপি— প্রশ্নই আসে না। এখানে যে কথাটি বলব, সমর্থন বা মোকাবেলা থেকে নয়, জাস্ট দায়িত্ববোধ। আমি যদিও বলব বিএনপির লাভের জন্য নয়, জনসাধারণের সস্তি ও শান্তি জন্যে, কিন্তু খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক লাভালাভের হিসেব থেকেই বিষয়টি দেখতে পারেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরব থাকা একটা কৌশল।
আর কথা কম বলা উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সেক্ষেত্রে তারেকের অবস্থান ঠিক আছে। কিন্তু সংলাপে এগিয়ে যেতে বা পরবর্তীতে নিজ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে তার মাকে পরামর্শ দেয়ার একান্তই প্রয়োজন ছিল। কারণ তার মায়ের আশেপাশে আমি এমন কাউকে দেখছি না যিনি এ সময়টাতে সঠিক পরামর্শটি দিতে পারতেন। এদিকে তার মাও সংলাপ-কৌশলে কিছুটা দ্বিধান্বিত, কিছুটা আক্রোশের বশীভূত।
মেডাম, আপনাকে বলছি, আগামী ২৪ বা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সংলাপের ঘোষণা দিন, ১ সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর করুন। যদি মনে করেন, এটাকে অন্যরা দুর্বলতা ভাববে, তাহলে আন্দোলনও চালিয়ে যান, আপত্তি নেই। কিন্তু শর্তহীন সংলাপে আকস্মিক একটি উদ্যোগ নিয়ে জাতিকে চমকে দিন। আপনার বা আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো শর্ত দেবেন না। সফল হওয়া পরের প্রশ্ন, প্রথম প্রশ্ন- জাতি একটি সংলাপ অন্তত দেখতে চায়।
বিশ্বাস করুন, যদি আন্তরিক না হয়, শেখ হাসিনা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে, অথবা শর্ত দেবে। আর এখানেই আপনার জনসমর্থন বাড়বে। তবে আমি মনে করি ‘সংলাপ’, ‘ঘোষণা’ এসব না করেও যে-কোনো সময়ের যে-কোনো মুহূর্তে যে-কোনো জায়গায় রাজনৈতিক সংকট ও পরিস্থিতি নিয়ে দুজন বসতে পারেন। এতে আনুষ্ঠানিকতার কিছু নেই।
আন্দোলনে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ের তীব্র সমালোচনা করছি।
সংলাপ প্রশ্নে আপোষহীন? হতেই পারে না। আবারও বলছি- এটি খোলা চিঠি না হয়ে বরং একটি ওয়ার্নিং এবং লাস্ট- দ্রুত সংলাপে বসুন। কোনো শর্ত নয়, আপনিই এগিয়ে যান। সরকার পক্ষ বলছে, দাওয়াত এখনও বহাল আছে। এটা অবশ্যই প্লাস পয়েন্ট।
সুতরাং আর দেরি নয়। নইলে আমি কিছু করব না, আমার হয়তো সেই শক্তি নেই। কিন্তু জাতি ক্ষমা করবে না। যেমন এখনও করছে না, বারবার ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও। আমি এখানে শেখ হাসিনাকে বলব না যে, এখন থেকে যত বছর ক্ষমতায় থাকবে, তত বছরের পাঁচগুণ যুক্ত হয়ে ইতিহাস তাকে ক্ষমতা থেকে ছুঁড়ে ফেলবে।
সতর্ক করব না যে, তার দলের ভেতরেই সামান্য কিছু মানবতাবাদী আছেন, পরিস্থিতি বেশি জটিল হলে তারা তাকে সরিয়ে দেবে। সতর্ক করব না যে, যতই রদবদল হবে, সেনাবাহিনীর ভেতরে-বাইরের একটা অংশ ততই সচেতন হয়ে ওঠবে, যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় শক্তি আসতে পারে। আমি তার জন্য এখানে একটি শব্দও খরচ করব না।
অনেকে জানতে চান, আমার বিপ্লবের ফর্মূলা কী? তারা শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন চান, শাসনব্যবস্থা ও অন্যান্য অনেক বিষয়ের পরিবর্তন চান। মোটকথা সিস্টেমের পরিবর্তন চান।
বিষয়টি নিয়ে পরে বলব। আপাতত সংক্ষেপে বলি, আমি উপস্থিত কোনো সিস্টেমের পরিবর্তন চাই না, শুধু চিন্তার পরিবর্তন চাই। দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন। যেটাকে আমি জ্ঞানগত বিপ্লব বলি। সিস্টেম আমার কাছে গৌণ।
আগে চিন্তার ক্ষেত্রে, দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ব্যবধান কমাতে হবে। সিস্টেম কোনো বিষয়ই না। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অর্জন ও প্রদর্শন করতে হবে। ”
“শিক্ষা, অর্থনীতি, নারী স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে আমার মতামত আছে। তবে আমি বলে আসছি, সিস্টেমের পরিবর্তন আপাতত চাই না।
মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও জ্ঞানগত দিক থেকে আমাদের মিল অমিলগুলো খতিয়ে দেখতে চাই। কেননা আমি বিশ্বাস করি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে উন্মোক্ত প্রশ্নোত্তর ও মতবিনিময় চললে জাতি হিসেবে আমরা একটি একক প্লাট ফরমে দাঁড়াতে পারব। চলমান এই সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিহিংসাপরায়ন দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ, বিভ্রান্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা এবং বৈষম্যবাদী অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সর্বজনীন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্লাটফরম দাঁড় করানোর একটা জোরালো চেষ্টা অবশ্যই আমরা করতে পারি। ”
এরপর ১৯/১১/২০১৩-এ লিখলাম,
আমরা কী চাই, কিভাবে চাই, আসুন তলিয়ে দেখি।
“নির্বাচন নিয়ে আমি চিন্তিত নয়, চিন্তিত নয় সামনে কে ক্ষমতায় থাকবে বা যাবে।
এ দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর উপরই ছেড়ে দিলাম। বাকিটা পালন করবেন প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ব্লগার, ফেসবুকার রাজনীতি বিশ্লেষকগণ।
তারপরও মাগনা কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম বিএনপি ও খালেদাকে, শুনা তো পরের কথা, তাদের পর্যন্ত যায় কিনা সন্দেহ। আজ খালেদা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যে বৈঠকটি করল, তা অনেক আগেই করতে পারত। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পর হাসিনার সঙ্গে যে সংলাপটি করবে, তাও শুরুতেই করতে পারত।
এবং শেখ হাসিনা যদি এখনও বক্তব্যে উস্কানী পরিহার করেন, পরিস্থিতি আরো সহজ হতে পারে। আর বিএনপি তো বটেই, জামায়াতও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিচারটা মেনে নিতে পারে। জানি, রাজনীতির ভেতরগত খেলাটা অনেক জটিল। তবে এও জানি, সবাই আন্তরিক ও নিঃস্বার্থ হলে জাতীয় ঐক্য সম্ভব।
যাহোক, এ নিয়ে আর মাতামাতি করছি না।
কারণ এতে আমার মতো লাখ লাখ আম পাবলিকের কোনো উন্নতি হবে না। তবে যেই যাক, অবনতি যে হচ্ছে এবং হবে এটা প্রায় নিশ্চিত। তাও সমস্যা ছিল না, কিন্তু ব্যাপারটা সহসাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে এটাই দুশ্চিন্তার কারণ। ”
এতক্ষণ পূর্বের কয়েকটি লেখা হুবহু তুলে ধরলাম। এবার পাঠকরাই বিবেচনা করবেন সে লেখাগুলো অনুযায়ী বর্তমান বাস্তবতা ও সমস্যা কোন পর্যায়ে উপনীত এবং বিম্পির আন্দোলন কেন ব্যর্থ বা কোথায় হোঁচট খেয়েছে।
আজ খালেদা জিয়া সরকারকে নমনীয়ভাবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাতে হয়, শীর্ষ নেতারা বৈঠক করতে হয়, বিদেশিদের নিকট ধর্ণা দিতে হয়। কেন? এ নমনীয় অবস্থান তো আরো আগেই গ্রহণ করতে পারতেন।
আওয়ামী লীগ এখন তাদের নিজ অবস্থান থেকে সরে আসা খুবই কঠিন। আর এর পেছনে বিএনপিও দায়ি। তবে এখনও সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।