জননী জন্মভূমি স্বর্গদাপী গরীয়সী
কুরাঈশরা ধর্মের নামে কাবা ঘরে উলঙ্গ তাওয়াফ করত, মদ-জুয়া-খুন-রাহাজানী-লুটতরাজ, পরের অধিকার হরণ, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন, সুদের অনাদায়ে ঋণগ্রহীতার স্ত্রী-কন্যাদের দখল ও ভোগ এবং বাস্তুভিটা চ্যুত করা, বর্ণ বৈষম্য বা শ্রেণীভেদ তৈরি করে দুর্বলদের ওপর অত্যাচার চালানো, বিচারের নামে অবিচার ও প্রহসন করা এমনি হাজারো অপকর্ম করত। বলা চলে গোটা সমাজ-রাষ্ট্রটা দুর্বৃত্তায়নের জগদ্দলে নিপিষ্ঠ ছিল। অসহায় নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধকে বহু খোদার কল্পিত রূপে ধনিক ও দুষ্ট লোকদের গোলামে পরিণত করেছিল। সে সমাজের পুঁজিপতি, সমাজপতি ও ধর্মব্যবসায়ীরা মিলে ত্রিশূল তৈরি করে মানবতাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করছিল। ধণি আরো ধনি হচ্ছিল দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছিল, ভদ্র সভ্যজনেরা সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীতে পরিণত হয়েছিল।
ফলে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের মহা ফাপরে পড়ে মানবতা ধুকছিল। মানবতার মুক্তির কোন পথই দেখা যাচ্ছিল না। এমনি সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর মনোনীত পথপ্রদর্শক, মানবতার বন্ধু, বিশ্ব সভ্যতার রক্ষক, মানবতার মুক্তি দূঁত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ধরাধামে প্রেরণ করেন। তিনি প্রথমে মানবতার নৈতিক শক্তিকে মজবুত করার দিকে মনোনিবেশ করলেন। যাতে করে আসন্ন সংগ্রামে তারঁ সাথীরা শীশাঢালা প্রাচীর হয়ে লড়াই করতে পারে।
তিনি বললেন নানান রূপি বর্ণচোরা বহুখোদাকে অস্বীকার করতে। যে সমাজপতি, পুজিপতি ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা এসব কল্পিত খোদার আড়ালে নিজেরাই খোদা হয়ে বসেছিল তাদের প্রভুত্বকে অস্বীকার করতে। মানবতার শির একমাত্র বিশ্বপ্রতিপালকের নিকট নতি করতে আহবান জানালেন। ক্ষমতাসীন খোদারা প্রমাদ গুনল। এতদিনের প্রবৃত্তির গোলামী করা তাদের রাজত্বের অবসান কল্পনায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠল।
তারা সে সমাজের সবচেয়ে ভাল মানুষটিকে হামলা-লাঞ্চনা ও সর্বশেষ হত্যা করারও ষড়যন্ত্র আটল। তাঁর বহু অনুসারীকে বন্দী, নির্যাতন, বিকলাঙ্গ এমনকি হত্যা পর্যন্ত করল। তাদের পাশবিকতা এমন চরমে পৌঁছল যে, সুমাইয়া রা. কে বর্ষা নিক্ষেপ করে তার যৌনাঙ্গকে এফোড়ওফোড় করে শহীদ করে দিল। নারীর প্রতি তাদের সম্মানের নমুনাটা এমনই ছিল।
আজকেও নবী মুহাম্মদ সা.-এর পথে যারা মানবতার মুক্তি কামনা করবেন তাদেরকেও সেই দৃশ্যগুলো মাথায় রাখতে হবে ।
আজকের তথাকথিত প্রগতির শকুনেরা নারীকে পণ্যে পরিণত করে পতিতালয়ের লাইসেন্স দিয়েছে, কন্যা সন্তনকে সুন্দর বসুন্ধরার আলো দেখার আগেই মাতৃজঠর থেকেই হত্যা করছে ও উৎসাহিত করছে, ধর্ষনের সেঞ্চুরিয়ানকে পুরস্কৃত করছে। নারীকে উত্যক্ত করার ও ধষর্ন করার সুড়সুড়ি দিছ্ছে।
নারীকে ঘরে বাইরে সমান ভাবে হাতের নাগালে ও সহজলভ্য করার জন্য নারীর সুরক্ষা পর্দার বিধানকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। তাদের কর্মস্হল ও যাতায়াত আরামদায়ক ও নিরাপদ-নিরুপদ্রব করাকে তথাকথিত আধুনিকতা ও নারী মুক্তির নামে বাধাগ্রস্হ করছে ও তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কালো টাকা, দুর্বৃত্তায়ন ও হলুদ প্রচার মাধ্যমের দাপটে মানবতার সর্বাঙ্গীন কল্যাণের আদর্শ ইসলামের বিধানকে বিকৃত ও ব্যঙ্গ করছে।
সুদী ব্যবস্থায় দরিদ্রকে আরও দরিদ্র আর দুর্বত্ত ও কালোবাজারী ও হারামীকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্র করছে। এ অবস্থায় মুক্ত বুদ্ধির সচেতন জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা তাদের সন্তানদেরকে কেমন পরিবেশে লেখে যেতে চায়? তারা কি প্রকৃত মুক্তি চায় নাকি চশমাধারী মতলববাজ ভাড়াটে ও পরগাছা বুদ্ধিজীবীদের তথাকথিত মুক্তি চায়? প্রথমে সিদ্ধান্ত তারপর সংগ্রাম। তাবৎ মজলুম-নিপীড়িত-নির্যাতিত-অসহায়-ভূখানাঙ্গা-বাস্তুহারা, কুলি-মুটে-মজুর, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, কৃষক-শ্রমিক সবাইকে নিজের বুদ্ধি-বিবেক স্বাধীনভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং এগিয়ে আসতে হবে।
মূলত: নবী মুহাম্মদ সা. এর আহবানের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ও ফল অনুধাবন করেই মুশরিক কুরাইশরা তাঁর বিরুদ্ধে এমন খড়গহস্ত হয়েছিল। আর এর ফলেই মুশরিকরা আল্লাহর নবীর স. সাহাবী খুবাইব ইবন আদী রা. কে মক্কার তানয়ীমে শুলে চড়ায়।
তাঁকে শহীদ করার পূর্বমুহূর্তে কুরাইশরা তাঁকে বলল: তোমার স্হলে যদি মুহাম্মদ-কে (স.) আনা হয় আর তুমি মুক্ত হয়ে যাও তা হলে কেমন হয়?
আল্লাহর নবীর সাথী বললেন : আমার স্থলে আসাতো দূরের কথা, আল্লাহর নবীর গায়ে একটা কাঁটা ফুটুক আর আমি নিরাপদে আমার পরিবারের মধ্যে ফিরে যাই তাও আমি পছন্দ করি না।
কুরাইশরা এই উত্তর শোনার পর সমস্বরে চিল্লায়ে উঠল: তাকে হত্যা কর। তাকে হত্যা কর।
এরপর আল্লাহর রাসূলের এই সাথীকে তীর মারতে মারতে শহীদ করা হয়।
এই হলো নবীর প্রেমের নজরানা।
আজকে সারা বিশ্বে সেই খুবাইবের হত্যাকারীরা তৎপর । কিন্তু খুবাইবের সেই উত্তরসূরীদের আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে দেখা যাচ্ছে শহীদীগাহে । আমরা যারা নিজেদেরকে রাসূলের শাফায়াতের হকদার মনে করি তারা কি করলাম?
তবে আমরা যারা সুবিধাবাদী মুসলিম আমরা অন্তত এই দোয়াটি করে দুফোটা অশ্রুজল মহান রবের দরবারে পেশ করতে পারি আর পারি নিজের সামর্থ্যকে আল্লাহর পথে মানবতার কল্লাণে কাজে লাগাতে। নিজেকে ভয়বহ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে ও অপরকে মুক্ত হতে সাহায্য করতে আর এজমিনকে মানব জাতির জন্য নিরাপদ আবাস হিসাবে গড়ার সংগ্রামে জড়িত হতে।
শেষ করতে চাই আমাদের জাতীয় কবির কথা দিয়ে:
"আর কতকাল থাকবি বেটি
মাটির ঢেলা মূর্তি আড়াল,
স্বর্গটাকে জয় করিল
অত্যাচারি শক্তি চাড়াল।
"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।