আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
অনেক মানুষের বিয়ে হয় ! আমার বিয়া কবে হবে কে জানে ?
যাক, সেই দিকে না যাই !
মানুষ বিয়ে করলে নিজের রিলেশনশীপ স্টাটাস চেঞ্জ করে । নিজেদের বিয়ের ছবি শেয়ার করে । আরো কত রকম গল্প করে নিজের বিয়ে কে নিয়ে !
কিন্তু বিয়ের যে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট সেইটা নিয়ে সহজে কেউ কোন কথা বলে না । মানে হল বাসর রাতে সে তার প্রিয় মানুষটির সাথে কি আলাপ করলো এই কথা কেউ বলে না ! বললেও অনেক পরে ! রহস্য রহস্যই থেকে যায় ! তো আজকে সেই রহস্য উন্মোচন করার জন্যই নিয়ে এলাম সামু ব্লগারস বাসর রাইত টকস ! কোন ব্লগার বাসর রাতে তার প্রিয় এবং সদ্য বিবাহিত মানুষটির সাথে কি কথা বলবে কিংবা কি কথা বলেছে তাই নিয়ে আজকের ব্লগ ! আসুন দেখে নেওয়া যাক !
বেঈমান আমি
বাসর রাতের বাইরে ফুটফুটে জোঁছনা ! ঘরের সব আলো বন্ধ ! জোছনার আলোয় ঘর আলোকিত !! এমন সময় বেঈমান আমি ভাই বাসর ঘরে প্রবেশ করল !
খাটের উপর তার বউ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে ! লাল শেরওয়ানী পরা বেঈমান আমি ভাই এগিয়ে চলল খাটের দিকে ! তার বউ তখনও বসে আছে চুপ করে ঘোমটার আড়ালে ! বেঈমান আমি খাটের উপর বসলো !
আস্তে করে নতুন বউয়ের ঘোমটা তুলল !
-এই কি খবর তোমার ? তোমার ব্রো কেমন আছে ?
নতুন বউ কোন কথা না বলে তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে ! তারপর বলল
-এটা কি ধরনের কথা হল ?
-কেন ? কি হল আবার ? আমি কি করলাম ? আমি বললাম তোমার ব্রো কেমন আছে ? ঐ যে তোমার একটা পিচ্চি ব্রো আছে না ?
-আমি কি করলাম মানে ? নতুন বউয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে ?
-আসলে প্রথমবার বিয়ে করেছিতো তাই নিয়ম কানুন ঠিক জানি না !
-তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি এর আগে আর কত শত বিয়ে করে এসেছি !
-আরে তুমি এমনভাবে নিচ্ছো কেন ! আচ্ছা শুনো আজকে আমরা এই বিষয় নিয়ে না কথা বলি ! আমরা অন্য কিছু নিয়ে কথা কেমন !
-হুম ! তাই বলা উটিৎ ! কিন্তু এমন ভাবে শুরু করলা ? তোমার মুখটা আসলে..।
-আমি আবার কি করলাম ? আমি কেবল জানতে চেয়েছি তোমার ছোট ব্রো কেমন আছে ।
এটা কি দোষ হয়ে গেছে ?
-না দোষ হয় নি ! কিন্তু এটা এই প্রশ্ন করার সময় না ! তুমি জানোই জানোই না কোন কথা কখন বলতে হয় !
-হুম ! আর তুমি তো খুব জানো ! কথায় কথায় খালি দোষ ধরা !
-এই ! ভাল হবে না বলছি ! নতুনু বউয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানো ! বদ লোক !
- আহা ! আমার ভালু মাইয়া ! আর তার উপর তুমি তো আর নতুন কেউ না !
-আমি কি ?
-তুমি তো সেই ....।
-এই খবরদার ! আর একটা কথা বলবি তো .....
-আরে ....।
-ঢিসুম ঢিসুম ঢিসুম !
-একটু আস্তে ঢিসুম ! ঢিসুম !
-আবারও ঢিসুম ! ঢিসুম ! ঢিসুম !
-ঢিসুম ! ঢিসুম !
নোমান নমি
নোমান ভাইয়ের বিয়েও কোন এক জোঁছনা রাতে ! চারিদিকে জোঁছনার আলো থই থই ! সেই জোছনার আলো গায়ে মেখে নোমান ভাই বাসর ঘরে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে ! প্রস্তুতির প্রথম পর্যায়ে নিজের মোবাইল বের করে একটা স্টাটাস দিয়ে দিল !
"আজ মধুরাত আমার ফুলশয্যা" !
বাসর ঘরে ঢোকার আগেই সাড়ে চার'শ লাইক এসে হাজির !
নোমান ভাই দরজা ঠেলে ঘরের ভিতর ঢুকলেন ! ভেবেছিলেন সামনে দেখবেন তার নব বিবাহিত বউ মাথায় লম্বা ঘোমটা টা বসে আছে থাকবে তার জন্য ! কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখে তার নববিবাহিত বউও মোবাইল নিয়ে বসে আছে !
নোমান কে ঘরে ঢুকতেই তার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার এই জালপরী মিলি টা কে শুনি ?
নোমান ভাই কিছু না বোঝার ভান করে বলল
-তুমি কার কথা বলছো ?
-ন্যাকা সাজবা না ! তুমি একটা স্টাটাস দিতে দেরি নাই আর মেয়ে লাইক কমান্ট দিয়ে ভাসিয়ে ফেলে ! এই দেখো কি লিখেছ !
কাচুমুচু ভাবে নোমান ভাই ভাবির মোবাইলের দিকে এগিয়ে গেল !
একটু আগে দেওয়া স্টাটাসেই মেয়েটি কমান্ট করেছ !
"নোমার তুমি কেন এমন করলে ? আমার স্বপ্নে এভাবে ভেঙ্গে দিলে ?"
কামন্টে দেখা যাচ্ছে আবার ১৪টা লাইকও পরেছে ! বেটা বদমাইশ নিপুন দেখি আবার কমান্ট করেছে "মিলি আফা আপনের টেনশন নাই ! নোমান ভাই গেছে তো কি হইছে আমি তার রুমমেইট ছিলাম । আমরা তো আছি" !
ভাবি বলল
-কি কথা বলছো না কেন ?
-আমি কি বলবো বল ! কত মানুষই তো কামন্ট দেয় ! সবারটা কি দেখতে পারি বল !
-এই মেয়ের সাথে কোন দিন চ্যাটিং কর নাই তো ?
-না না ! ছি ছি ! কি বল এই সব ! চ্যাটিং কেন করবো ?
-খুব যে সাধু সাজতেছো ! তাই না ? মোবাইল দাও !
-কেন ?
-আজ থেকে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ ! তোমার মডেম কাল সকালে আমার কাছে জমা দিবা ! বুঝছো ?
নোমান ভাই বিমর্ষ কন্ঠে বলল
-বুঝেছি !
-গুড বয় ! এখন আমার পাশে এসে বস তো ! আমার আমাকে একটা কবিতা শোনাও ! আজ থেকে তোমার সব কবিতা হবে আমার জন্য ! বুঝেছো ?
-হুম ! বুঝেছি !
নাজিম-উদ-দৌলা
চারিদিকে নিঃছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে । বাসর ঘরটি তৈরি হয়েছে টাইটেনিয়াম ধাতু দিয়ে ।
চার কোন বিশ বাই বিশ ফুট মাপে ! পুরো ঘরটি সম্পূর্ন ভাবে ওয়াটার প্রুফ এবং সাউন্ডপ্রুফ ! ঘরের চার দিকে চার জন গার্ড অটোমেটিক অস্ত্র নিয়ে পাহারায় আছে ! সব রকম আক্রমন ঠেকাতে তারা প্রস্তত !
এমন সময় রিমোট কন্ট্রলের সুউচ টিপ দিল নাজিম ! দরজা খুলে গেল নিঃশব্দে ! নাজিম ঘরে ঢুকে পড়লো ! সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ হয়ে গেল !
ঘরে ঢুকেই নাজিম চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিল ! সব কিছু ঠিক আছে কি না বুঝার চেষ্টা ! দরজার ডান পাশের কোনার দিকে সেট করা অটোমেটিক সেন্সসরের দিকে তাকিয়ে নিল চট করে ! সেখানে সবুজ বাতি জ্বলছে ! তার নতুন বউয়ের শরীরের তাপমাত্রা এবং তার নিজের শরীরের তাপমাত্রা সেন্সসরে সেট করা আছে ! যদি তার বউ ব্যাতীত অন্য কেউ ঘরে ঢোকার চেষ্টা করতো কিংবা কোন আষ্টম মাত্রার বোবট তার বউয়ের ছদ্ববেশ নেওয়ার চেষ্টা করতো তাহলে সেন্সসরে লাল বাতি জ্বলে উঠতো !
নাজিম আস্তে আস্তে যান্ত্রিক পালঙ্কটার দিকে এগিয়ে যায় ! আধুনিক যুগের সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে পালঙ্কটাতে !
নাজিম আস্তে করে খাটের উপর বসে ! সঙ্গে সঙ্গে এক মধুর সংগীত বেজে উঠে ! নাজিম একটা সুইচ টিপ মারে ! ছাদ থেকে একটা যান্ত্রিক হাত চলে আছে । নব বিবাহিত স্ত্রীর শাড়ির ঘোমটার সাথে আলতো করে লেগে যায় । উঠে যেতে থাকে বউয়ের ঘোমটা ! নাজিম অপেক্ষা করতে থাকে তার বউয়ের চেহারা দেখার জন্য !!
অন্যমনস্ক শরৎ
পুরো বাসর ঘরটা লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো ! রুমের চার দিকে চারটা ৫০ ওয়াটের এনার্জি সেভিং লাইট জ্বলতেছে । পুরা ঘরে একেবারে দিনের আলোর মত ফকফকা আলো জ্বলতেছে !
ভাবি বসে আছে লাল গোলাপের বিছানায় ঠিক মাঝখানে ।
ঠিক এমন সময় শরৎ ভাইয়ের প্রবেশ ঘরের ভিতর ।
গায়ে পাঞ্জাবী কাধে তার চিরো পরিচিত ব্যাগ খানা !
শরৎ ভাই খাটের উপর ব্যাগ খানা খুলে রাখলেন !
ভাবি বুঝতে পারছেন এখনই শরৎ ভাই তার ঘোমটা খালি তুলে ধরবে !
এই আস্তে আস্তে শরৎ ভাই ভাবির ঘোমটা খানি তুলে ধরলেন ! ভাবি লজ্জা পাচ্ছে ! ঠিক মত তাকাতে পারছে না ! ভাবি মনে করছে এখই শরৎ ভাই কিছু বলবে ! ভাবী অপেক্ষায় আছেন !
তখই ভাবী শরৎ ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন !
-এই একটু বাঁ দিকে মাথাটা ঘোরাও তো ! আর চোখটা একটু খোল ! ঐ যে সামনে যে নীল রংয়ের শোপিচ আছে না ঐ দিকে তাকাও !
ভাবী তো অবাক ! কি শুনবেন ভেবেছিলেন আর কি শুনছেন ?
শরৎ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন তিনি ক্যামরা নিয়ে প্রস্তুত !
-কই তাকাও !
ভাবি তাকালেন !
শরৎ ভেইয়ের ক্যামারা কথা বলে উঠল ! ভাবি মনে করলো এই বুঝি ছবি তোলা শেষ !
-হুম ! এই তাকাও ডান দিকে ! ঠিক ফুল দানিটার দিকে ! এই তো ! .....ঠিক আছে !...... ভেরি গুড !
আরও কয়েকটা ছবি উঠলো !
ভাবির এবার মনে হল হয়তো আর ছবি উঠবে না !
-আরে নড় না তো ! একটু হাতটা তোল তো !
-এই ! এবার মাথাটা একটু উপরে উঠাও ! হয়েছে ! ......এই তো !
-এই বার ঘোমটা আরেকটু উপরে তুল ! হুম ! ....গুড !
এভাবে চলতে থাকলো ছবি তোলা ! কিছুক্ষন পরে ভাবি আর থাকতে না পেরে বলল
-তুমি কি কেবল ছবিই তুলবে ? আজকের রাতে কেউ ছবি তোলে ?
-আরে তুমি এইটা কি বলছো ! একজন প্রফেশনাল ফটোসাংবাদিক হওয়ার সুবাধে এইটা আমার প্রথম এবং নৈতিক দায়িত্ব হল জীবনে সব থেকে অবিস্মরনীয় মুহুর্ত গুলো ফ্রেমে বন্দী করা ! আমি তো এই দায়িত্ব থেকে পিছু হটতে পারি না ! ঠিক আছে আবার শুরু করা যাক !
-রাখো তো নৈতিক দায়িত্ব !
ভাবির রাগ করে উঠর বারান্দার দিকে গমন !
কাল্পনিক ভালবাসা
কাভা ভাই দুরু দুরু বুক নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো ! আজকে অন্যতম একটা বিশেষ দিন । সারা জীবন মনে রাখার মত একটা দিন !
কাভা ভাই একটু চিন্তিত সাথে একটু উত্তেজিতও ! প্রথমবারের মত বিয়ে করে প্রথমবারের মত বাসর ঘরে ঢুকছেন !
আলো আধারীর খেলা চলছে পুরো ঘরে ! তার মাঝখানে ভাবী বসে আছে সাজানো খাটটার মাঝ খানে !
আস্তে আস্তে এগিয়ে চললেন কাভা ভাই ! বুকের মাঝে এখনও সেই উত্তেজনাটা কাজ করছে !
কি বলবেন ......
কি বলবেন না এইস সব !
কাভা ভাই খাটের কাছে এসে দাড়ালেন ! এখন কি বলবেন ভাবছেন !
উনি তো সব সময় ভদ্র মানুষ ! হঠাৎ বললেন
-ইয়ে ! বসবো ?
ভাবী মুখ তুলে তাকালেন । তারপর বললেন
-তুমি কি চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছো যে বসার আগে অনুমুতি চাইছো ?
কাভা ভাই বসতে বসতে বলল
-তুমি কিন্তু একটা চমৎকার পয়েন্ট বলেছ ! আমি তোমার সাথে সম্পূর্ন এক মত প্রকাশ করছি ! এই রকম একটা দিনে আমার বক্তব্য হওয়া উচিৎ ছিল আরো যুক্তিযুক্ত এবং অর্থপূর্ন ! আসলেই আমার এই রকম একটা বক্তব্য কিছুতেই গ্রহন যোগ্য না ! আমার তোমার সাথে সম্পূর্ন সহমত প্রকাশ করতেছি !
ভাবি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন কাভা ভাইয়ের দিকে !
কাভা ভাই আবার বলল
-আসলে আমাদের মনে এই রাতটাকে একটা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ! সেই সাথে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ যেটা আমার এবং তোমার পরবর্তী জীবনের উপর একটি সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলবে ! আমাদের মনে হয় এখন থেকেই আগামী দিনের জন্য একটি যুগ উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিৎ সেই সাথে আমরা যাতেই সেই সিদ্ধান্তটা ভালভাবে এবং ভালবাসার সাথে পূরন করতে পারি, আমাদের দুজনকেই সেই সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে !
কাভা ভাইয়ের কথা শুনে ভাবীর মাথা ঘুরতে লাগলো !
কাভা ভাই আবার বলল
-আর শুনো আর তোমার সাথে আরেকটা অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয় এখনই আলোচনা করে ফেলতে চাই ! আমার মনে হয় কথা বলাট জন্য এমন রাতের থেকে আর কোন সুন্দর এবংন উপযোগী রাত পাওয়া যাবে না ! তুমি .....। আরে এই এই কি হল ........ কি হল তোমার ?
ভাবি মাথা ঘুরে খাটের উপর পরে গেল !
বিঃদ্রঃ বেশ কিছুদিন আগে আলিম আল রাজি একটা পোষ্ট দিয়েছিল ! ঠিক এই শিরোনামেই ! অবশ্য অনেক দিন আগে ! যাদের কে নিয়ে লিখেছিলেন কেবল হাসান ভাই ছাড়া আর কেউকেই এখন ব্লগে দেখা যায় না ! তাই মনে হল এখনকার কয়েকজন কে নিয়ে এইরকম একটা পোষ্ট দেওয়া যাক ! দেখা যাক কেমন হয় !
আরেকটা কথা । এইটা একটা একান্তই ফান পোষ্ট ! আশা করি ফান হিসাবেই নিবেন ! তাহলে বড় খুশি হব !
আরো কয়েক পর্ব লেখার ইচ্ছা আছে এই পর্বে কেবল অবিবাহিত ব্লগার নিয়ে লিখলাম সামনের বার দেখা যাক বিবাহিতদের নিয়ে লেখা যায় নাকি !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।