রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবগঠিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হলেন এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে হাজতবাস করা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা। মঙ্গলবার বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী টিএমসিপি-র বিজয় মিছিল শেষে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাই ঘোষণা করেন, বিশ্বজিৎ হবেন টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। তার বক্তব্য, 'বাপ্পাকে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। '
তবে বাপ্পার এই 'দায়িত্বপ্রাপ্তি'তে আতঙ্কিত নিগৃহীতা সেই ছাত্রী। তিনি বলেন, 'আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এমন কিছু ঘটবে।
তাই কর্তৃপক্ষকে আগেই বকেয়া পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু ১৮ নভেম্বর আমাকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, বিশেষ ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন আদৌ আর ক্যাম্পাসে যেতে পারব বলেই তো মনে হচ্ছে না। বাপ্পার হাত থেকে কে আমায় বাঁচাবে!'
গত ২৯ জুলাই পরীক্ষা শেষে বাংলা স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী যখন মেসে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনই বাপ্পা ও তার দলবল চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রীকে টেনে-হিঁচড়ে ইউনিয়ম রুম সংলগ্ন ১১৩ নম্বর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেই কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে সিঁথি থানায় অভিযোগ করেন এই ছাত্রী। অভিযুক্তদের কয়েকজন ধরা পড়লেও মূল অভিযুক্ত বাপ্পাকে ধরতে পুলিশ চেষ্টা করেনি। নিগৃহীতা ছাত্রী মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশনে দরবার করেন। আগস্টে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন বাপ্পা। সেই আবেদন খারিজ হওয়ার পরেই চাপে পড়ে বাপ্পাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশে তার পুলিশ ও পরে জেল হেফাজত হয়। আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন বাপ্পা।
তবে পরের পর ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে বাপ্পার দিকে। দমদম-আর জি কর রুটে অটো চালিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া এই তৃণমূল নেতা প্রায় ত্রিশ বছর বয়সে রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র সংগঠন দেখার দায়িত্ব পান। প্রথম বিতর্কে জড়ান খালি গায়ে ইউনিয়ন-রুমে অশ্লীল নাচের কারণে।
তদন্ত কমিটি গড়েও বাপ্পার কেশাগ্র অবশ্য ছুঁতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্র সংসদের টাকা তছরুপ, ক্যাম্পাসে নেশার সামগ্রী রাখা, মেরেধরে ক্যান্টিন তুলে দেয়া, বেটিং-চক্র চালানো, বিভিন্ন বিভাগে ছাত্র-ভর্তির ক্ষেত্রে আসন কেনা-বেচা, টোকাটুকিতে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মার, শিক্ষিকার প্রতি কটূক্তি-অভিযোগের শেষ নেই। বাপ্পার কারণে এবং টিএমসিপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বহু পড়ুয়া ক্যাম্পাসে ঢুকতেও ভয় পান।
রবীন্দ্রভারতী ছাত্র সংসদের সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, টিএমসিপি-রই অন্য নেতা অলিউর মণ্ডলেরও অভিযোগ, 'আমিও ওর (বাপ্পার) বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ পেয়েছি। ওর জন্যেই সদ্য ভেঙে যাওয়া ছাত্র সংসদের বহু পদাধিকারীই এবার প্রার্থী হতেও পারেনি।
সংগঠন ও দলের শীর্ষ-নেতৃত্বকে জানিয়েছি। জবাব আসেনি। '
যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তাকেই ছাত্র সংসদের দায়িত্ব দেয়ার মধ্যে কি অপকর্মে মদতেরই বার্তা যাচ্ছে না? শঙ্কুর যদিও দাবি, 'ওকে সাধারণ সম্পাদক করাটা বরং কুৎসারই জবাব। ' আর খোদ বাপ্পার প্রতিক্রিয়া, 'পিকনিকে আছি। যা বলার রাজ্য সভাপতিই বলবেন।
তবে যে সমস্ত ছাত্র আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তাদের সামনে আসতে বলুন। কথা বলব। '
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।