আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উনিশশো একাত্তর-৪



ক্যাপ্টেন রফিক কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন পরিস্থিতি পুরো পুরি পক্ষে থাকা সত্ত্বেও কর্নেল এম আর চৌধুরি কেন এগ্রেসিভ হতে চাইছেন না। রেলের ইঞ্জিনিয়ার শফি সাহেবের রেলওয়ে হিলের বাসায় আলোচনা হচ্ছিল তাঁদের। মূল আলোচক ছিলেন ১৯৫১ সালে কমিশন পাওয়া অভিজ্ঞ, পোড় খাওয়া কর্নেল চৌধুরি আর ১৯৬৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন পাওয়া ক্যাপ্টেন রফিক। মেজর জিয়া দু’জনের কথা শুনছিলেন মনোযোগী ছাত্রের মত। কথা বলছিলেন কম।

রফিক বললেন, ‘স্যার ওরা আর কয়জন? এক ২০ বেলুচ কে নিয়েই তো ভয়? আপনার রিক্রুট তো প্রায় দুই হাজার, তার পর স্যারের ৮ বেঙ্গল আছে, আর ইপআরে তো বাঙ্গালিই বেশি। কাপ্তাই এ ১৭ উইঙ্গে হারুন আমাদের সাথে আছে, রামগড়ের সিও ও তো আমাদের’।
এম আর চৌধুরি বললেন, ‘তুমার কথা একেবারে ফালাই দেবার মত না। তয় যুদধের জন্যে আরও কিছু চিন্তা ভাবনা করার আছে, ইবিআরসিরে তুমি যে কাউন্ট করলা, ওরা তুমরার ইপিআরের মত ট্রেইন্ড না। রিক্রুটদের অনেকে তো এখনও ফায়ারিংও করে নাই।

৮ বেঙ্গলের নাই অস্ত্র পাতি। এসএসডিরে কাজে লাগানো যাইতে পারে, আর আছে আমার ওস্তাদরা। আর ওদের কথা ভাবো, ২০ বেলুচের অস্ত্র সশ্ত্র সহ দুই কোম্পানি প্লাস, আর্টিলারি ব্যাটারি আছে, ট্যাঙ্ক আছে এক ট্রুপ, কমান্ডো আছে এক কোম্পানি, পাহাড়ে মিজোরা আছে, আর নেভাল বেইস তো আছেই’।

রফিক বলেন তারপরও স্যার আমাদের এডভান্টেজ অনেক বেশি। জিয়া বললেন, ‘স্যার, রফিক শুড বি এওয়ার অব দি হোল প্ল্যান’।

চৌধুরি বললেন, ‘কেন আমিন ওরে বলে নাই?’ জিয়া বললেন, ‘রফিক বিফোর গোয়িং ইন টু একশন উই শুড অলসো টেইক একাউন্ট অব হোয়াট অল আদারস আর থিংকিং,। স্পেসিয়ালি দ্য আদার ইউনিটস, দ্য পলিটিসিয়ানস’ উই শুড নট স্টারট এ আইসোলেটেড ব্যাটেল’। চৌধুরি বললেন, ‘আমরা চাচ্ছি শুভপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে রামগড়ের ওপাশে সাব্রুম পর্যন্ত পুরো এলাকাটাকে ডিফেন্সিভ বেইস হিসাবে গড়ে তুলতে। আমিনের কাছে ৫২টা থ্রি টন (৩ টনী ট্রাক) আছে, ৪ বেঙ্গল যদি শুভ পুর পর্যন্ত আসতে পারে, তাদেরকে এই থ্রি টনে এনে শুভ পুর থেকে সাবরুম পর্যন্ত লাইন্স অব কমিউনিকেশন্সের দায়িত্ব দেওয়া যায়। করের হাট থেকে সাবরুম পর্যন্ত লজিস্টিক লাইনটা তাহলে ঠিক থাকে।

সেকেন্ড বেংগলকে ট্রেনে লিফট দিতে পারবে রেলওওয়ে, সমস্যা হল থার্ড আর ফারস্ট বেঙ্গল কে নিয়ে। ফারস্ট বেঙ্গলকে হয়তো রিভার রুটে আনা যাবে, থার্ড বেঙ্গল কী করবে ভাবতে হবে’।

রফিক বললেন, ‘আমাদের যে ট্রুপ্স আছে, এমনিতেই এক মাস চট্টগ্রাম দখলে রাখা যাবে। হাসলেন চৌধুরি, ‘জিয়া হেতানে তো মনে হয় ঘোড়া জুইতা আইছে, টেল হিম টু হোল্ড হিজ হর্স, ফর দ্যা রাইট টাইম। পলিটিক্াল লোকেদেরও তো কোন ডাইরেক্টিভস পাওয়া যাচ্ছে না।

যুদধ তো আর খালি ফৌজে করবো না’।
রফিক বললেন, ‘স্যার এখানকার আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে আর বঙ্গবন্ধু তো ৭ তারিখেই বলে দিয়েছেন’। চৌধুরি বললেন, ‘সিদ্দিকীরে চিনোতো ওই যে, চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সভাপতি, কাল কমান্ডান্ট ওনারে ঢাকা পাঠাইছেন, কর্নেল ওসমানী আর শেখ সাহেবের কাছে প্রস্তাব নিয়ে, শেখ সাহেব যদি চট্টগ্রামে চলে আসতে পারেন, বাকীটা ইন শা আল্লাহ আমরাই কইরালতে পারবো। আমিন ইবি আরসির ট্রুপ্স নিয়ে নেভাল বেইস দখল করবে, ৮ বেঙ্গল ধরবে ২০ বেলুচরে আর তুমি হাজি ক্যাম্প এলাকায় ডিফেন্স নিবা’। রফিকের কাছে সব কিছু জুতসই মনে না হলেও তিনি বুঝলেন এই পরিস্থিতে কর্নেল চৌধুরির পরিকল্পনায় কোন ভুল নেই।



সূত্রঃ The 25/26 March 1971 revolt in Chittagong; Mahmud ur Rahman Choudhury, Time: Flames of Freedom, Beginning of Liberation war in Chittagong, স্মৃতিচারণঃ অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলো- মেজর জেনারেল (অবঃ) আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীর বিক্রম (Date: 16/12/2007), ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের সাথে মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া ও আমার আলাপ চারিতা, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.