২০০৮ এর অক্টোবর থেকে হঠাৎ একজনকে এই ব্লগে লিখতে দেখি। তার লেখাগুলো নতুন ব্লগারেরা সচরাচর যেমনটা লিখে থাকেন তেমনটা নয়। তার প্রথম লেখাটা ছিলো রবিঠাকুর সন্মন্ধীয়। তখন আমি আকন্ঠ রবিঠাকুরেই ডুবে থাকতাম কাজেই লেখাটা চোখে পড়লো ঠিকই কিন্তু কেন যেন কোনো মন্তব্য করা হলোনা। হয়তোবা এমন গুরুগম্ভীর লেখাটায় মন্তব্যের কোনো ভাষা খুঁজে পাইনি আমি সেদিন।
তারপর একের পর এক তার জ্ঞানগর্ভ লেখাগুলি দেখে একটু ভয়ে ভয়েই থাকতাম। কাছ ঘেষতামনা খুব একটা তার। হ্যা আমি ইমন ভাইয়ার কথাই বলছি। আমাদের ইমন জুবায়ের ভাইয়া। তার প্রথম লেখাটি ছিলো রবীন্দ্রনাথ।
Click This Link
এরপর তার সাথে আমার কিছুটা সখ্যতা হলো তার রাগসঙ্গীত বিষয়ক পোস্টগুলোদেখে। ততদিনে আমি জেনে গেছি ভাইয়া ব্ল্যাকের জন্য গান লিখেছেন অনেক অনেক। যাইহোক সেসময় আমি ছায়ানটে রাগ সঙ্গীতের কোর্স করছিলাম। সেখানে একজন পিচ্চি ভাইয়া ইমন জুবায়ের দেখে আমি ধরেই নিলাম সেটাই এই ইমন ভাইয়া। আমি সেখানে তাকে কিছুই জিগাসা করিনি কিন্তু ব্লগে এসে তাকে সেকথা জিগাসা করতে উনি হেসেই খুন যদিও উনি খোলাসা করে দিলেন যে ছায়ানটের সেই ইমন তিনি নন তবুও তার সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানালেন না তার স্বভাবসিদ্ধ গাম্ভীরতায়।
২০০৯ এর ১৭ই অগাস্ট। হঠাৎ অবাক করে দিলেন ইমনভাইয়া আমাকে আমার জন্মদিনে।
Click This Link
এই পোস্টটিতে উনি সবার আগে শুভেচ্ছা জানালেন আমাকে আর নাফিস ইফতেখারকে। তার আগে ভাইয়াকে কবে কোথায় কখন আমি বলেছিলাম আমার জন্মদিনের কথা সেকথা আর মনে নেই আমার। শুধু মনে আছে এত অবাক হয়েছিলাম! এত ভালোলাগা, এমন শুভেচ্ছার আনন্দ আসলেই অভাবনীয় এক মুহুর্ত ছিলো আমার কাছে।
এর কিছুদিন পর বাচ্চাদের নিয়ে লেখা আমার এক পোস্টে ভাইয়ার কিছু কমেন্টে বুঝতে পারি বাচ্চাদের জন্য তার এক বুক ভালোবাসার কথা। সত্যি বলতে কি একমাত্র এই পোস্ট টিতেই আমি দেখেছিলাম ভাইয়ার স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য্যের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। শিশুসুলভ চপলতায় উনি আমাকে দিয়েছিলেন উনার ভাগনীর বেশ কিছু ছবি। সেসব ছবি এডিট করে করে রাজকন্যা, কখনও বা ফেইরী এসবে সাজিয়ে দেবার খেলায় মেতেছিলেন তিনি। আমার কাছে ইমন ভাইয়ার সেই চেহারাটা আজীবন অক্ষয় হয়ে থাকবে।
আমার সেই পোস্ট যেখানে ইমন ভাইয়ার আরেকটা দিকের দেখা পেয়েছিলাম আমি। Click This Link
এরপর আমি অন্য নিকে চলে আসলাম। বেশ কিছুদিন জানতে দেইনি কাউকেই সেই পুরানো আমিকে। ভাইয়ার সাথে একটা দূরত্ব তৈরী হলো। আমি তাকে ঠিকই চিনতাম কিন্তু উনি আমাকে আর তখন চিনতে পারতেন না।
তবুও লুকোচুরির ছলে অনেক অনেকবার তার পোস্টে কমেন্ট করে আসতাম আমি। এমনি একদিন তার এক পোস্টে ভাইয়াকে জানালাম আমি ২১ ডিসেম্বর নিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের কথা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভাইয়া এমন একটা পোস্ট দিলেন আমাকে যে আমি আবারও অভিভুত হলাম! নিশ্চিন্ত হলাম আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার ব্যাপারে।
Click This Link
বেশকিছুদিন যাবৎ ভাইয়া কিছুটা নীরব হয়ে গিয়েছিলেন যেন তবুও মাঝে মধ্যেই উঁকি দিতেন আমার সব হাবিজাবি পোস্টে। কবিতায় বা তার এতটুকু ভালো লাগার পোস্ট হলেও দিয়ে আসতেন কিছু প্লাস! ফেসবুকে আমি তাকে জ্বালিয়ে মারতাম।
ভাইয়া হু হা করে চুপ হয়ে যেতেন। ইদানিং বেশ চুপচাপ থাকতেন। আজ হঠাৎ সকালবেলা ফেসবুক খুলে সুরন্জনা আপুর স্টাটাস দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম!! ব্লগে এসে নিশ্চিৎ হলাম রেজোয়ানার পোস্ট দেখে। সাথে সাথে ভাইয়ার ব্লগে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। তার প্রিয় পোস্টের তালিকার সবার আগে চোখ আটকে গেলো।
প্রিয় পোস্ট
!!টোনাটুনি পিঠাঘর - বাংলাদেশের ১০১ পিঠাপুলির নাম ও গড়ন বা রচনা সমগ্র!! - শায়মা
কি আশ্চর্য্য!! তোমার মত একজনের প্রিয় পোস্টের তালিকায় আমার মত একজনের একটা পোস্ট দেখতে পাবো এত সৌভাগ্যবতী নিশ্চয়ই আমি নই ভাইয়া। এ শুধু স্নেহ আর ভালোবাসারই নিদর্শন! কার জীবনে ইমন ভাইয়ার কতখানি অবদান বা স্মৃতি আছে জানিনা তবে আমার জীবনে এই স্মৃতিটা বুঝি অবিস্মরণীয় দুঃখ হয়ে থাকবে। তুমি আমাকে কতখানি ঋণী করে দিয়ে গেলে তুমি তা কখনই জানবেনা। রান্নাবান্না বা খানাপিনা পোস্টে কত জনকেই মজা করে দাওয়াৎ দেই বা খাওয়াবার প্রতিশ্রুতি দেই কিন্তু তোমার কাছে দুষ্টুমী করে বলা দায়বদ্ধতাটুকু হয়তো এ জীবনে কখনও আমার ভোলা হবেনা।
ভাইয়া তুমি নেই তবে তুমি ছিলে এই ব্লগ বা সমগ্র ব্লগসমাজের গর্ব! এমন একটা মানুষও বুঝি খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার এ ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে।
তোমার অবদান শুধু ব্লগেই নয় সঙ্গীত জগতেও কম নয়। তোমার জ্ঞানের পরিধি কত বেশি বিস্তৃত ছিলো তা হয়তো আমার সারাজীবনে পরিমাপ করেও শেষ করা হবেনা। আমি ভেবে পাইনা ইতিহাস, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, মিথ, সঙ্গীত, শাস্ত্র কোন বিষয়েই না তুমি জানতে! তোমার মত আর একটি ইমন জুবায়ের হয়তো শত বর্ষেও জন্মাবেনা এইখানে।
তোমার মত নির্বিবাদী একনিষ্ঠ ও সকল সমালোচনার উর্ধে একজন মানুষকে আমি সত্যিই আর কখনও দেখিনি। চর্মচক্ষুতে দেখা হয়নি তোমাকে তবে মনের চোখে যতটুকু দেখেছি তাতে তুমি এক অসাধারণ মানুষ ছিলে।
তোমার তুলনা শুধু তুমিই।
আর কখনও অবাক হবোনা ওমন কোনো শুভেচ্ছায়, ওমন কোনো আনন্দে যা এক জীবনে তুমি আমাকে একদিন ভাসিয়েছিলে। আর কখনও কিছু জানতে হলেই জিগাসা করতে পারবোনা তোমাকে। কেউ আর সান্তনা দিয়ে প্রমান করেও দেবেনা যে পৃথিবী ধ্বংস হবেনা। আমার কোনো ভয় নেই ।
সব ভয়কে জয় করে তিনি নিজেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর কখনও কোনোদিন কোনো লেখা ভেসে উঠতে দেখবোনা তার এই ব্লগের পাতায়। যার লেখকের জায়গাটায় লেখা থাকবে ইমন জুবায়ের। তবুও তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে। যে কোনো আলোচনায় শ্রেষ্ঠ লেখকের নামে উঠে আসবে তোমার নাম!
অনেক অনেক ভালো থেকো ভাইয়ামনি!!!
যেখানেই থাকো!!!!!
একদিন তুমি লিখেছিলে আমার এই ব্লগে প্রথম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্ট আর আমি আজ লিখছি তোমার মৃত্যুদিনের শোকসন্তপ্ত স্মৃতির পোস্ট।
এর চাইতে বেদনা আর কি হতে পারে? বলতে পারো ভাইয়া তোমার ওই ওপারের দেশ হতে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।