আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাঁদবিলের পণ্যের কদর দেশজুড়ে

মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের পালবাড়ির তৈরি মাটির তৈজসপত্রের কদর দেশজুড়ে। এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি মুড়িভাজা হাঁড়ি, রুটি বানানোর তাওয়া, মালসা পানির কলস, ফুলের টব, ফুলদানি দেব-দেবীর মূর্তিসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন তৈজসপত্রের কদর শুধু প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের কাছে নয় বরং সুদূর যশোর খুলনাসহ ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। কালের বিবর্তনে আধুনিক প্রযুক্তির উৎপাদিত অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এখনো প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বাপ-দাদার পেশা অাঁকড়ে ধরে আছেন। মেহেরপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের আমঝুপি ইউনিয়নের জনপদ চাঁদবিল। এই গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই কাঁদা-মাটির গন্ধমাখা শরীর।

এদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় মাটির নানা তৈজসপত্র। মাটির হাঁড়ি, সরা, ভাড়, কলস, রসের কলসি, তাওয়া, নান্দা, ফুলের টব, দেব- দেবীর মূর্তিসহ আরও কত কিছু। প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাদের তৈরি তৈজসপত্রের মান ও চাহিদা এখনো সমান তালে। বয়সের ভারে ক্লান্ত চাঁদবিলের বিষ্ণু পাল। আজও বাপ-দাদার পেশা নিয়ে বেঁচে আছেন।

নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন নানা তৈজসপত্র। তিনি বলেন, ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি সেখানে বসবাস করছেন এবং মাটির মায়ায় জড়িয়ে আছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করছেন বিভিন্ন তৈজসপত্র। আর এসব তৈজসপত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ক্রেতারা। জগন্নাথ পালের স্ত্রী সুমিতা পাল জানান, কিশোর বয়সে বাবা-মা'র দেখাদেখি এই কুমোর পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

রাত-দিন কাদামাটির কাজ করে মাটির মানুষ হয়ে গেছেন তিনি। সংসারে ৬ মেয়ে ২ ছেলে। এই পেশার আয় থেকে তিনি দুই বিঘা জমি কিনেছেন, পাকা দালান গড়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। তিনি বলেন, আগে মাটি এমনিই পাওয়া যেত।

এখন মাটি কিনতে হয় বলে তাদের উৎপাদিত সামগ্রীর দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবীণ কুমোর হিসেবে পরিচিত হৈমন্তি পাল ও তার স্ত্রী কাবরুলী বালা এখনো এ পেশায় নিয়োজিত। ছেলে জিতেন গ্রামে কামলা খাটার পাশাপাশি এ কাজ করেন। হৈমন্তি পাল মাটির পাত্র তৈরি করেন আর আধা শুকনো হলে তাতে নানা রকমের নকশা করেন স্ত্রী কাবরুলী বালা। এদের কাজে নিপুণতা ও সৌন্দর্য আছে।

তাদের ডোরাকাটা ফুলের টবের চাহিদা আছে। তাদের তৈরি টব ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে এসে কিনে নিয়ে যায়। নবীন পাল জানান, মাটির তৈরি অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি বেড়েছে পোড়ামাটির রিংয়ের চাহিদা। স্বল্প খরচে ভূগর্ভস্থ ট্যাংক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এই রিং দিয়ে। যেখানে ইট, বালি, সিমেন্ট দিয়ে একটি ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

সেখানে রিং দিয়ে সমপরিমাণ ট্যাংক তৈরি করতে খরচ হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। যার কারণে মানুষের কাছে রিংয়ের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। আমঝুপি ইউনিয়নের প্রবীণ ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বাবলু জানান, আমঝুপির চাঁদবিল গ্রামের কুমোরদের তৈরি সামগ্রীর এলাকায় যথেষ্ট চাহিদা। মানও ভালো। এ জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই গ্রামে এসে বিভিন্ন সামগ্রী কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রি করে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ এবং বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা গেলে এই কুমোরদের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যাবে এবং এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.