বিরবল ৩
গোদাগাড়ী নামকরন সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, গেলেও দুই ধরণের জনশ্রুতি রয়েছে৷ “এক”- শ্রী চৈতন্যদেবের ভাবশিষ্য শ্রী গোদাধর প্রতি পূর্ণিমায় গরুর গাড়ীতে চড়ে এ এলাকায় স্লান করতে আসতেন৷ এখানে লোকমুখে কথা উঠে-”কার গাড়ী যায় ? “ উত্তরে বলে- “ গোদার গাড়ী”৷ সে থেকে এলাকার নাম গোদাগাড়ী৷
“দুই”-নবাব আর্লী বর্দি খাঁ মারাঠী বর্গীদের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাময়িকভাবে রাজধানী পদ্মা তীরবর্তী বারুই পাড়ায় কেল্লা বাড়ী নির্মাণ করেন এবং এখানে পরিবার পরিজন ও অর্থ সম্পদ রক্ষনা-বেক্ষনে নিরাপদ মনে করেন৷ অনুমান করা হয় “গোদা” শব্দটি ফার্সি থেকে আসা যার অর্থ দেহ, শরীর, তনু, কায়া এবং “গারী” শব্দটি আরবি যার অর্থ- “রক্ষা”৷ নবাব তার পরিবার পরিজনের দেহ রক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা নেন তা থেকে নামকরণ হয় গোদাগারী৷ পরে হয়ে যায় গোদাগাড়ী৷
নামকরন নিয়ে মতভেদ যাই থাক না কেন ১৮৬৫ সালে স্থাপিত পুলিশ থানাকে কেন্দ্র করে গোদাগাড়ী প্রশাসনিক থানা এবং পরে ১৯৮৪ সালে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ গড়ে ওঠে৷ এভাবে উপজেলার নাম গোদাগাড়ী প্রতিষ্ঠা লাভ করে৷
ভৌগলিক অবস্থান :
২৪’’১৭’ থেকে ২৪’’৩৭’’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮’’১৭’ থেকে ৮৮’’৩৩’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে গোদাগাড়ীর অবস্থান৷ রাজশাহী জেলা সদর থেকে দুরত্ব ৩১ কিলোমিটার এবং রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৯১ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে এ উপজেলার অবস্থান যার আয়তন ৪১৩.১৩ বর্গ কিলোমিটার৷ এর উত্তরে চাপাই নবাবগঞ্জ সদর ও তানোর উপজেলা, দক্ষিনে পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলা (ভারত) ও পদ্মা নদী পূর্বে পবা ও তানোর উপজেলা, পশ্চিমে নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা৷
জনগোষ্ঠী :
নৃতাত্বিক বিশ্লেষণে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তার চিহ্ন গোদাগাড়ীতেও বিদ্যমান৷ এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৭৯,৫৪৫ জন যার মধ্যে পুরুষ-১,৪৩,২০২ এবং মহিলা-১,৩৬,৩৪৩ জন৷ শিক্ষার হার ৪২.১০% প্রধান পেশা-কৃষিকাজ৷
ভাষা ও সংস্কৃতি :
প্রধান ভাষা বাংলা তবে এর নানা আঞ্চলিক রুপ লক্ষ্যণীয়৷ যার আংশিক শের শাহ্ বাদিয়া উপভাষা প্রভাবিত এবং আংশিক মুর্শিদাবাদ অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসী অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের ভাষার প্রভাবে প্রভাবিত৷ এ অঞ্চলের প্রধান সাংস্কৃতিক সম্পদ মুর্শিদী, মারফতি, আলকাপগান, পালাগান (লুপ্তপ্রায়), গম্ভীরা ইত্যাদি৷ এছাড়াও আদিবাসীদের মুখের ভাষাও লক্ষ্যণীয়৷ এ অঞ্চলে হিন্দু, মুসলিম, সাওতাল, মুন্ডা, ওরাও, মালোসহ নানা জনগোষ্ঠী ও ভাষাভাষি মানুষের সহাবস্থান এক মিশ্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক৷
ঐতিহাসিক নির্দশন :
গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী নামকস্থানে সনাতন ধর্মের সবচাইতে বড় তীর্থ স্থান ঠাকুর নরোত্তম দাসের বাড়ী৷ সুলতানগঞ্জে ইসলাম ধর্মের প্রচারক শাহ্ সুলতান (রহঃ) এর মাজার৷ কদমশহরে সেন রাজাদের রাজধানীর ধবংশাবশেষ৷ গোদাগাড়ী উপজেলার সদরে পদ্মানদীর তীরে আলিবর্দি খা-র কেল্লা ধবংশস্তুপ কেল্লাবারুইপাড়াতে অবস্থান৷ গোদাগাড়ীর আই হাই পানিহার এলাকায় ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরী ৷ বরেন্দ্র অঞ্চলে আদিবাসীদের বাসস্থান ও গীর্জা৷ রিশিকুলের বিল পাতিকোলা এবং বাসুদেবপুরের চড়ই বিল রয়েছে৷ ষোড়শ শতকে কুমোর পুরে হযরত শাহ্ আলী কুলী বেগ (রহঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন যার মাজার এখনও বর্তমান৷
প্রত্নতাত্বিক নির্দশন :
গোদাগাড়ীর বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নির্দশন পাওয়া গিয়েছে যার নির্দশন বরেন্দ্র গবেষনা যাদুঘরে নির্দশন রয়েছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হ’লঃ
ক্রমিক নং বিবরণ সময়কাল প্রাপ্তিস্থান
১. একটি বৃক্ষ দেবীর মাথা ও উর্দ্ধাংশ ১১’শ শতাব্দী গোলাই, গোদাগাড়ী
২. মনষাদেবীর মাথা ও উর্দ্ধাংশ ১২’শ শতাব্দী গোলাই, গোদাগাড়ী
৩. মক্করের মাথা ১২’শ শতাব্দী দেওপাড়া, গোদাগাড়ী
৪. সূর্য দেবতার নিম্নাংশ ১২’শ শতাব্দী জগপুর, গোদাগাড়ী
৫. পার্বতী (চাঁদী) ১২’শ শতাব্দী মান্ডইল, গোদাগাড়ী
৬. বিষ্ণু দেবতা ১০ম শতাব্দী কুমোরপুর, গোদাগাড়ী
৭. নব গ্রহের ভগ্নাংশ ১১’শ শতাব্দী বিজয়নগর, গোদাগাড়ী
৮. কৃষ্ণকায় পুরুষ প্রতিমুর্তি ১০ম শতাব্দী শীতলপুর, গোদাগাড়ী
৯. কড়ি কাঠে লিখিত লিপি -- সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী
১০. সুলতান জালালউদ্দিন মোহাম্মদ শাহ এর সময়কার আরবি লিপি -- সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ী
ক্রীড়া:
গোদাগাড়ী উপজেলায় ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ড বল ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরণের খেলা-ধূলার চর্চা রয়েছে৷ ক্রীড়াঙ্গনে গোদাগাড়ীর সন্তান জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছে৷
সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠন:
গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে শিল্পকলা একাডেমী, পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব, পিরিজপুরে, সুরসপ্তক,
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।