“পঞ্চম শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৩২ জন খুদে শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৪২ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সূত্র- প্রথম আলো (৩০/১২/২০১২)
ওপরের খবরটা দেখে আপনার কি মনে হয়? প্রথমেত সবারই খুব ভালো লাগে এইরকম ভালো রেজাল্ট দেখলে।
কচি-কচি বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা মাত্র ৯/১০ বছর বয়সেই অচেনা স্কুলে গিয়ে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে ফলাফল করল। শিক্ষার্থীর রাতদিন জেগে বকবক পড়াশোনা, অভিভাবকদের পড়ার জন্য চাপ (এটা এক স্বীকৃত মানসিক অত্যাচার), শিক্ষকদের সহযোগিতা (বকুনি) ইত্যাদি সব সফল হল!!!
আসলেই কি তাই………??? এতগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে জিপিএ-৫ পেল!!! আসলেই কি এরা সবাই এতই ভাল শিক্ষার্থী? সবাই এই বয়সেই এত পড়াশোনা করে? আপনাদের কারো কারো কোন সন্তান/ছোট ভাই, বোনের পরীক্ষার রেজাল্টের আগে আপনাদের কি কখনো মনে হয়েছিল, Confirm জিপিএ-৫??
আমার মা একজন সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। প্রতিবারের মত এবারো মায়ের উপর সমাপনী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সর্বমোট ৫০০ খাতা মূল্যায়ন করার জন্য দেয়া হয়েছিল। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ ছিল এটা যে, কোন শিক্ষার্থী যদি ৭৫ নম্বর পায়, তবে তা ৮০ নম্বর পরিণত করতে হবে।
এছাড়া যেভাবে হোক প্রশ্নের উত্তরের নম্বর যেন বাড়িয়ে দেয়া হয়। খাতায় সব প্রশ্নের উত্তরের নম্বর দেয়ার (প্রাথমিক মূল্যায়ন) পর দেখা গেল মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৮০-১০০ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৬৫-৭৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৪৬-৬৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, বাকি ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৩০-৪৫ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে। এখন নির্দেশ মোতাবেক যেসব শিক্ষার্থী ৭০-৭৫ নম্বর পেয়েছে, তাদের সবার নম্বর ৮০ করা হয়। যারা ৫০-৬৯ এর মধ্যে নম্বর পেয়েছে, নম্বর ৬৫-৭০ করা হয়, আর যাদের পাস নম্বর আসেনি, তাদের পাস নম্বর দেয়া হয়। আর এই নম্বর বাড়িয়ে দিতে গিয়েই চরম ভোগান্তি তৈরী হয়েছিল, এমনিতেই এতগুলো খাতা একজন মানুষকে দিন-রাত পরিশ্রম করে দেখতে হয়েছে (সময় দেয়া হয়েছিল মাত্র ৫ দিন, হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০০ এর মত খাতা দেখা, এরপর সবগুলো খাতার নম্বর যোগ করে তা মার্কশীটে অন্তর্ভুক্ত করা), এরপর যেসব খাতার নম্বর কম এসেছে সেসব খাতার নম্বর বাড়িয়ে আবার যোগ করা।
সব খাতা মূল্যায়ন করা শেষে খাতাগুলো নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে রেখে আসা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে ফোন করে তলব করা হয় আবার খাতাগুলো দেখার জন্য, কারণ অনেকগুলো খাতার নম্বর ৭৫ এ আছে, তা ৮০ করতে হবে। হায়, কর্তৃপক্ষকে কিছুতেই বোঝানো যায় না, যে খাতাগুলো ৬০-৬৫ থেকে ৭৫ এ নিয়ে আনা হয়েছে, আর নম্বর দেয়ার মত কোন জায়গায়ই নেই, আর উত্তরই লেখা নেই, নম্বরটা দিবে কিভাবে…? তারপরেও জোর করে আরও খাতার নম্বর বাড়িয়ে ৮০ করা হয়েছে।
ফল ভালো, কিন্তু মান ভাল না। এভাবে এতগুলো শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা না থাকা সত্বেও জিপিএ-৫ দেয়া হল, এটা তাদের মেধার সাথে চূড়ান্ত প্রতারণা করা হল।
এই ছেলে-মেয়ে জানে যে তারা কেমন পরীক্ষা দিয়েছিল, এখন তারা এটাই বুঝেছে কোনরকম মোটামুটিভাবে পরীক্ষা দিলেই এখন খুব সহজেই ভালো রেজাল্ট (জিপিএ-৫) করা যাবে। এরপর…… এরপর যখন এই এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে কোন ভাল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না, তখন তার কেমন লাগবে? শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের মানষিক অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? চাকরীর বাজারের কথা তো আরও পরে।
এখন এসব বলে কি আর হবে! সবকিছুতেই রাজনীতিকরণ, এ তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে এভাবে ঢালাওভাবে জিপিএ-৫, এই ভাল রেজাল্টটের মাধ্যমে রাজনীতিকভাবে লাভবান হওয়ার একটা চেষ্টা সব সরকার মহলের থাকে।
তারপরেও সবকিছুর ভাল-মন্দ থাকে। আমরা অব্যশই ভালটাই নিবো।
এই ভাল হোক যে, যেসব শিক্ষার্থী ৫ পেয়েছে তা থেকে আরো ভাল কিছু করার উৎসাহ পায়, সবার আত্মবিশ্বাসের ভিত আরো শক্ত হয়। সবার প্রতি শুভকামনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।