নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
হ্যালো .. এই নাম্বরটা ধরুন তো .. ০১৬১......... অপারেটরকে বলবার পর খুব অল্প সময়েই ফোনের লাইনটা ট্রান্সফার করেছিলো। অনেকক্ষণ ধরে নাম্বরটিতে রিং বেজে চলার পর এক সময় মনে হল ফোনটা হয়তো ধরবেনা, যেই রাখতে যাবে ঠিক তখনি ওপাশ থেকে হ্যালো .. হ্যালো। ছেলেটা কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো এটা রিমুর গলা। "হ্যা আমি, চিনতে পারছো ?" রিমু'কে ফোন দিয়েছিল অনেকদিন পর, তাই যখন বলল চিনতে পারছে কিনা তখন রিমু বলল "কে আপনি ?" সে ভেবেছিলাম হয়তো প্রথম কথাতেই চিনতে পারবে, কিন্তু ওর এই না চেনাটাই স্বাভাবিক ছিল, কারণ ভূলে যাবার মত অনেকদিন পর ছেলেটা তাকে ফোন দিয়েছিল।
" রিমু, আমি বলছি, চিনতে পারছোনা ? আমি ..."
- হঠাত বোধহয় চিনতে পারলো সে "ওহো তুমি, কি ব্যপার এতদিন পর"
"এই তো, তারপর কেমন আছো"
- হ্যা ভাল আছি, তা কি মনে করে হঠাৎ"
"আচ্ছা তোমার ফেসবুক আইডি কি ডিলিট করে ফেলেছো ?" প্রশ্নটা সরাসরি করল তাকে
- রিমু খুব উৎসুক হয়ে বলল "কই না তো ? এইতো কিছুক্ষণ আগেও ফেসবুকে ছিলাম"
ছেলেটা কেমন কনফিউজড হয়ে গেল "কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছিল ডিলিট করে দিয়েছো, কারণ তোমার পেইজ'টা পাচ্ছিলাম না"
- "না না আমি ডিলিট করিনি" রিমু খুব কনফিডেন্টলি কথাটা বলল
ছেলেটা এবার ইতস্তত করছে "হুমম, বুঝতে পারছিনা ব্যপারটা"
- "তা এতদিন পরে আমার ফেসবুক নিয়ে তুমি ভাবছে, বেশ" একটা কৌতুহল নিয়ে মেয়েটা প্রশ্নটা করলো
ছেলেটা বলল "না রিমু, তোমার লিংকটা ছিল তাই ব্রাউজ করছিলাম, দেখি পাচ্ছিলাম না; তাই ভাবলাম রাগ করে বোধহয় ডিলিট করে দিয়েছো"
- "রাগ করবো কার উপর, যার উপর রাগ করার অধিকার ছিল, সে তো আর আমাকে সেই অধিকার দেয়নি" মেয়েটা বেশ অভিমানী হয়ে কথাগুলো বলল
"থাক রিমু, পেছনের কথা না ভাবাই ভাল, এখন তো তুমি ভাল আছো, স্বামী-সংসার সবকিছুই তো আছে" ছেলেটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো
- "হ্যা আছে, কিন্তু সবকিছু নেই"
ফোনের আলাপটাকে সহজ করবার জন্য ছেলেটা হাসলো "আচ্ছা তোমার জামাই কেমন আছে"
- "ও ভাল আছে"
"তোমার তো মাস্টার্স শেষ হয়েছিল, এখন কিছু করছো ?"
- মেয়েটা মৃদু হেসে বলল "মাস্টার্সের রেজাল্ট এখনো দেয়নি, সামনে দিবে।
আর কিছুই করছিনে, আছি শ্বশুরবাড়ী, সারাদিন এখানেই থাকি"
"বাহ ! বেশ তো !"
ওরা কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বললোনা, দুজনেই চুপচাপ রইলো। ছেলেটা ফোন রাখতে যাবে, ঠিক তখনই মেয়েটা বলে উঠলো -
- "আচ্ছা, আজ হঠাত তুমি আমাকে এতদিন পর আমার ফেসুবক নিয়ে ফোন দিলে, ব্যাপরটা কেমন যেন লাগছে"
"কেন কি হয়েছে, কোন সন্দেহ হচ্ছে ? আসলেই আমি তোমাকে ফেসবুকে না পেয়ে সেজন্য তুমি ফোন দিয়েছি"
- মেয়েটার তবু সন্দেহ গেলনা " না তুমি বলেছিলে আর কখনো তোমার সাথে কথা হবে না, আর সেই তুমি নিজেই ফোন দিলে"
একটা সময় ওরা খুব কাছাকাছি ছিল, দুজন দুজনকে চিনতো, জানতো। কিন্তু তারপর লম্বা একটা সময় দুজনে আলাদা আলাদা, দীর্ঘদিন পর আবার দেখা, কিন্তু ততদিনে দুজনের জীবনে দুটো পথে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, কোন উপায় ছিলনা সে পথ থেকে ফিরে আবার একই পথে মেশার। তাইতো যা হবার ছিলনা তা নিয়ে ছেলেটা নিজেই কখনো বাড়াবাড়ি করেনি, মেয়েটা জোড় করেছিল কিন্তু তাতে সায় দেয়নি ছেলেটা। আর সেজন্যই ওরা ফিরে গিয়েছিল ওদের যার যার পথে, মাঝে শুধু এই প্রতিজ্ঞাটা ছিল - আর কখনো ওরা দুজনে কখনো কোন যোগাযোগ রাখবেনা।
ফোন রাখার পর ছেলেটা ফেসবুকের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, রিমুর বলা শেষ কথাগুলো বারবার মনে হতে লাগলো। সেদিন যেন সে কিছুতেই অন্য কাজে মন দিতে পারছিলো না, ঘুরে ফিরে বারবার রিমুর কথা মনে হতে লাগলো। কতদিন পর তার সাথে কথা বলা, খুব দূরে না থেকেও যেন তারা একে অপর থেকে যোজন যোজন তফাতে।
ছেলেটার মনে হল, আসলেই সত্যিটা রিমু'কে জানানো দরকার। কেন সে তাকে ফোন দিয়েছিল।
ছেলেটা নিজের ভেতরই নিজেকে অপরাধী করে তুলছিল, বারবার মনে হতে লাগলো সে যতক্ষণ না রিমুকে সত্যিটা জানাতে পারছে সে নিজেকে ততক্ষণ স্বস্তি দিতে পারছেনা, আর এভাব মিথ্যে বলবার দরকারটাই বা কি। কথা তো হয়েছে অনেকদিন পর তাও আবার সত্যি'টা লুকিয়ে, ছেলেটা ভাবতেই পারছেনা, শুধু মনে হল, রিমুর জানা দরকার কতটা অনুভব তাকে সে করেছে, আর এতটাই এতটাই মিস করেছিল যে তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে সে আজ আবার ফোন দেয় তাকে, শুধু একটা ফেসবুকের অযুহাত তুলে।
তাইতো, অফিস শেষে বেরুবার আগে, অপারেটরকে ০১৬১.. ফোনটা আবার ধরতে বললো। একটা চাপা অস্থিরতা ছিল ছেলেটার, রিং বাজতেই রিসিভার'টা তুলে ধরলো, ক্রিং .. ক্রিং ... ক্রিং... রিং বেজেই চলেছে, রিমু ফোন ধরছেনা, ছেলেটা আনমনেই কাউন্টডাওন শুরু করলো, এই ভেবে কাউন্টডাওন শেষ হবার আগেই হয়তো রিমু ফোন ধরবে আর তখনই তাকে জানিয়ে দেবে ফোন করার সত্যি'টা।
5...4...3...2...1... & ... 0
ছেলেটা রিসিভার'টা ধরেই থাকলো।
রিমু ফোনটা ধরেনি, কেটে দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।