শাহবাগের ইশ্যুটা যখন সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে তখন একটা স্লোগান খুব জনপ্রিয় ছিল। "তুমি কে আমি কে, বাঙালী...বাঙালী"। কতবার মাথা নিচু করে শাহবাগের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করেছি, কতবার এই কান ফাটা স্লোগান শুনেছি। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে, কেউ তালে, কেউ বেতালে। দেশপ্রেমের ফাঁকা বুলি।
যেদিন আল্লাহর রহমতে দ্বীনের বুঝটুকু পেলাম, যেদিন বুঝলাম আমি একটি উম্মাহর অংশ সেদিন...। সেদিন থেকেই সীমান্তের এই কাঁটাতারে আমার ঘৃণা জন্মালো। অরুচি আসলো এই জঘন্য জাতীয়তাবাদের মিথ্যে অহমে। আমরা মুসলিম। আমরা একটি জাতি, একটি উম্মাহ, একটি পরিবার।
এই মুসলিম উম্মাহ একটি দেহের মত যার পায়ে একটি কাঁটার আঘাতেও সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, হওয়া উচিত
আরেকটি ৩১ ডিসেম্বর। আরেকটি বছরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নতুন একটি বছরের বরণ করে নেওয়ার কুৎসিত আর নোংরা কিছু আনুষ্ঠানিকতার অংশ হতে হয়তো আপনিও প্রস্তুত। পছন্দ করে কিনে রেখেছেন নিউ ইয়ার কার্ড, লিখে রেখেছেন সুন্দর কোন SMS, প্রিয়জনের জন্য কিনে রেখেছেন কোন উপহার কিংবা নতুন বছরের প্রথম দিনটাতে মোজমাস্তির যাতে কোন কমতি না হয় সেজন্য বুকিং দিয়ে রেখেছেন কোন নাইট ক্লাব কিংবা বারে! আপনিও মুসলিম। আপনার ফেসবুক ইনফোতেও লেখা আছে 'proud to be a muslim'। আপনিও শুক্রবারে ক্লিন শেভ করে আয়রন করা পান্জাবীটা আলমিরা থেকে নামিয়ে জায়নামাজটা বগলদাবা করে জুমার নামাজে যান।
মিলাদে হুজুরের লম্বা মুনাজাতে আবেগাপ্লুত হয়ে আপনিও হয়তো কোনদিন চোখের পানি মুছেছেন। মুসলিম উম্মাহর দুর্দশায় ফেসবুকে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস সেঁটে, ধুম থ্রির HD প্রিন্ট ডাউনলোড দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর দশজনের মত আপনারও নিশ্চয় অগাধ বিশ্বাস যে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন কিংবা জাহান্নামে পুড়িয়ে হলেও সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানের জন্য একদিন জান্নাতে দাখিল করবেন! হ্যাঁ ভাই আপনাকে, আমি আপনাকেই বলছি। বারো মাসে তেরো পূজার মত সারাবছর জুড়ে অগণিত আনন্দ উৎসবে মুশগুল এই আপনাকে আজ আরেকটি উৎসবের আগে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আপনার পরিবারের সাথে, আপনার দেহের সাথে, একটা উম্মাহর সাথে।
এক যুবতী, তাকে রাস্তার মধ্যখানে ফেলে রাখা হয়েছে , অতঃপর তার শরীর থেকে সব ধরনের কাপড় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে , অথচ সে হচ্ছে মুসলিম সচ্চরিত্রবান পর্দানিশীন , এরপর প্রায় একশ (কসাই) বাশারের কুলাঙ্গার তার সম্ভ্রম লুন্ঠনে ধেয়ে আসছে ।
মানুষ তখন আতঙ্কে দেয়ালের পিছনে লুকায়িত , কিন্তু যখুনি কোনো লোক আড়াল থেকে বের হয়ে এই যুবতীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে , তাকে উঠিয়ে কিছুদুর নিয়ে যায় , তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় , এভাবে একের পর এক কয়েক যুবক এই যুবতীকে উদ্ধারে শহীদ হয়েছে !!! আরেক ব্যক্তি , তাকে বলা হয়েছে , বল , বাশশার ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ! কিন্তু সে এই ঘৃণিত ঈমানবিধ্বংসী কথা বলেনি , সে বলেছে ,আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই । অতএব তাকে জীবন্তাবস্থায় মাটিতে গর্ত খুড়ে দাফন দিয়েছে !!!
এটা সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা। আপনার বাড়ীর মেয়েটা কি নিউ ইয়ার কনসার্টে ঠিকঠাক মত পৌছেছে? ফোন করে খবর নিয়েছেন তো? তাকে আনতে যাবে কে, আপনি? নাকি মেয়ে সারারাত মোজমাস্তি করবে এই ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মত মধ্যযুগীয় আপনি নন?
ক্রিসমাস উপলক্ষে আরব আমিরাতে $১১ মিলিয়ন ব্যয় করা হয় ক্রিসমাস ট্রিগুলোকে জেমপাথর (এক ধরণের দামী পাথর) দিয়ে সাজাতে। এরকম একটা ছবিতে আরব শেখকে দেখলাম হাসুমুখে পোজ দিতে। আপনি নিউ ইয়ারের ধামাল কনসার্টের যে টিকিটটা কিনেছেন তার দামও নিশ্চয় হাজার টাকা! আর ভারত মাতার দিদি আর দাদাবাবুরা আসলে তো কথাই নেই।
২০১৪ সালের টি-টিয়োন্টি বিশ্বকাপের টিকিট কিনতে নিশ্চয় রাত জেগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন? আপনাকে সেদিন দেখলাম সাকিব তামিমের মাসিক আয়ের হিসেব নিয়ে বন্ধুদের সাথে বেশ আড্ডা জমিয়েছেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এখনো টপ পাইভেই আসতে পারেনি খুবই টেনশনে আছেন তাইনা? ওদিকে মেসির ইনজুরির খবর কি? চ্যম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে সে থাকছে তো? আচ্ছা আসন্ন বিশ্বকাপ টি টোয়েনটির জন্য কাকে কাকে একাদশে রাখলে ভাল হয় কিছু ভেবেছেন?? ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য LED টিভিটা ব্যবস্থা করে রেখেছেন কি? ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কাতার খরচ করতে যাচ্ছে প্রায় $200 মিলিয়ন! অন্যান্য খরচ তো বাদই দিলাম। তবে খরচটা একটু কম হয়ে যাচ্ছে কি বলেন?? এদিকে আপনার পছন্দের টিমের জার্সি, ফ্ল্যাগ, হাজারো আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসবে কুফফাররা!আহা কতকাজ এখনো বাকি! আজকের নিউ ইয়ারের মজাটা করে নেন তারপর প্ল্যান করে মাঠে নামা যাবে!
অনেকদিন আগে আবু গারিব কারাগার থেকে একটা চিঠি আসল। মুসলিম উম্মাহর ভাইদের উদ্দেশ্য করে লিখলো এক ইরাকি বোন ফাতেমা। সে লিখলো তাকে দিনে নয়বারেরও অধিক ধর্ষণ করা হয়েছে।
সে সহ আরো মুসলিম বোনদের পেটে আমেরিকান কুত্তাদের সন্তান। সে উদাত্ত আহবান জানালো তার ভাইদের কাছে তারা যেন আবু গারিব কারাগারে যায়। তাদের সহ জালিমদের যেন কারাগার সহ ধ্বসিয়ে দেয়। আপনি হয়তো তখন হলিউডের নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির ক্রিটিক বর্ণনা করছিলেন বন্ধুদের কাছে। GRE, TOEFL নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আর দোয়া করছিলেন আমেরিকার ভিসাটা যেন এবার আল্লাহ হয়! ফাতেমার সেই চিঠি পাওয়ার পর অল্প কিছু মুজাহিদিন আবু গারিব কারাগারে হামলা চালায়।
কুফফারদের ভারী অস্ত্রসস্ত্রের সামনে তারা জানতো তাদের কিছুই করার নেই তারপরও তারা গিয়েছিল আর আবু গারিব কারাগারের একটা দেয়াল ধ্বসিয়ে দিয়েছিল। আপনি হয়তো খবরটাও শুনেছিলেন আর ফেসবুকে পোস্টও করেছিলেন ক্যাপসন দিয়ে, "জঙ্গিদের জ্বালায় আর বাঁচিনা"।
খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে? বন্ধুরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে? আপনি না গেলে কিছু জমবেই না? এই আরেকটু আপনাকে বেশীক্ষণ আটকে রাখবো না!
হ্যাঁ যা বলছিলাম গত দুইদিনেই সিরিয়ায় বাশারের বিমান হামলায় শহীদ প্রায় পাঁচশত। আপনি ভিডিও গেমে নিশ্চয় একদিনেই এর চেয়ে বেশী মারতে পারেন! সিরিয়ায় এখন চলছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াভহ শৈত্যপ্রবাহ! রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে আমাদের মুসলিম ভাই বোনেরা আছে সীমাহীন কষ্টে! কয়দিন আগে বাশার আল আসাদের বিমান হামলায় আহত তিন বছরের এক শিশু হাসপাতালে মৃত্যুর আগে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেল কলিজা ছেঁড়া একটা লাইন, “I’m gonna tell God everything!”। সে তার রবকে সবকিছু বলে দেবে!
ওয়াল্লাহি এটাই আপনার পরিবার।
এটাই আমাদের উম্মাহ! আপনি যখন কাফেরদের সাথে আজকের মত প্রতিটা দিন মোজ মাস্তি আর আনন্দে কাটাচ্ছেন আপনার পরিবারের মানুষগুলো এভাবেই দিনাতিপাত করছে। আপনি যখন কাফেরদের বিনোদনে আত্মার প্রশান্তি খুজচ্ছেন আপনি এভাবেই এই উম্মাহ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আপনি যখন আজকের সাথে waiting for tonight এর তালে উন্মাতাল হতে তৈরি উম্মাহর অভিশাপ আপনার উপর এসে পড়ছে! রক্তাক্ত উম্মাহর সাথে আপনি এভাবেই উপহাস করছেন, কৌতুক করছেন!
ওয়াল্লাহি আল্লাহ অবশ্যই তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেন, এই উম্মাহকে হেফাজত করবেন। অবশ্যই করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনার এই আনন্দ উৎসব আর উপহাসকে এই উম্মাহ করুণার চোখে দেখে এই কারনেই যে আপনি কোনদিন বিজয়ের কাফেলায় শরিক হতে পারবেন না।
আপনি কোনদিন আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় বিজয়ের আনন্দ মিছিলে নামতে পারবেন না। আপনি আপনার দ্বীনকে বিক্রি করে দিয়েছেন ভাই। আপনি বিক্রি করেছেন উম্মাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা, গিরাহ। আপনার অন্তরের সবটুকু অনুভূতি শুষে নিয়েছে কুফরের ড্রাকুলারা! শাহবাগে শখের দেশপ্রেমী সবাই হতে পারে, আনন্দ উৎসবে সবাই উন্মাদ হতে পারে ওয়াল্লাহি উম্মাহর এই বিজয়ের পতাকা সবাই উড়াতে পারেনা। ক্রিসমাস, ভ্যালেন্টাইন, নিউ ইয়ারের উৎসবে এই উন্মাদ আপনি কোনদিন পারবে না, ক্রিকেট ম্যাচের টিকেট না পেয়ে ব্যাংক ভাংচুর করা বিপ্লবী উম্মাহর অংশ হতে পারেনা।
হলিউড বলিউডের ন্যাকামু দেখে অশ্রুসিক্ত করা নয়নে কোনদিন উম্মাহর জন্য ভালোবাসা থাকতে পারেনা।
পরশু একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছি জানেন! এক শায়খকে স্বপ্নে দেখলাম যিদি ইতোমধ্যে জিহাদ আর মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে লেকচার দিয়ে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন! স্বপ্নে দেখলাম আমি উনার কাছে উম্মাহর এই দুর্দশায় আমাদের কি করা উচিত জানতে চাচ্ছি। তিনি আমাকে উত্তর দিচ্ছেন জিহাদ করতে হবে, কাফেরদের টুটি চেপে ধরতে হবে, উম্মাহকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতে হবে! মূলত এই কথাগুলো আমার অবচেতন মনের। এই কথাগুলো আমি খুব করে চাই সবাই বুঝুক, সবাই একমত হোক তাই স্বপ্নেও কথাগুলো চলে এসেছে! আমরা খুব করে চাই আপনি এই উম্মাহর অংশ হয়ে কাজ করুন। কাফেরদের ঘৃণা করতে শিখুন, ভালবাসতে শিখুন আপনার দ্বীন আর এই উম্মাহকে! আমরা মনে প্রাণে চাই আজকের এই দিনটিই হোক আপনার পরিবারের দিকে, উম্মাহর দিকে, আপনার দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তনের সময়।
সগ্রহিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।