আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতপ্রেমী পাকিস্তান বেকায়দায় বিএনপি

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত জামায়াতকে নিয়ে জোটবদ্ধ রাজনীতি অব্যাহত রাখায় তরুণ প্রজন্ম, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষের চাপের মুখে আছে প্রধান বিরোধী দল। নতুন এবং পুরনো ভোটারদের এ ধরনের মনোভাব বিএনপির ভাবমূর্তি এবং দলটির ভোটের রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।
জামায়াতের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার চলছে।

দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর বিচারের ফাঁসির রায় হচ্ছে। এদের মধ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের এক মন্ত্রী প্রতিবাদ করেছে। এরপর তাদের সংসদ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব নেয়ার আগে বলা হয়েছে, কাদের মোল্লা একজন ‘সাচ্চা পাাকিস্তানি, একাত্তরে সাচ্চা পাকিস্তানি থাকার জন্যই তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।


এ ঘটনার পর বাংলাদেশে তোলপাড় শরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি বলে তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তানের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে জামায়াতের বিরুদ্ধে চলে যায় কি না এ আশঙ্কা থেকেই বিএনপি নিশ্চুপ বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। জামায়াতে ইসলাম নিয়ে যাদের ভিতর দ্বিধা ছিল প্রকাশ্যে পাকিস্তানের এই অবস্থানের কারণে তারা এখন দ্বিধামুক্ত।

বিএনপি নিজের অবস্থান পরিষ্কার না করায় দ্বিধামুক্ত মানুষগুলো জামায়াত এবং বিএনপিকে এক কাতারে দাঁড় করাচ্ছে। তাদের মতে সাধারণ ভোটারসহ দেশের জনগণের চেয়ে বিএনপির কাছে জামায়াতই অধিক প্রিয়।
কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর পাকিস্তান পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসায় প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তানের সংসদে যে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে সে বিষয়ে বিরোধী দলের নেত্রী সুস্পষ্ট বক্তব্য দিবেন বলে সবাই আশা করেছিল।

কিন্ত এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য না আসায় জাতি হতাশ হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসাম খান বলেন, ‘আমরা বার বার বলে এসেছি, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়। কিন্তু সরকার যুদ্ধাপরাধীর নয়, মানবতাবিরোধীদের বিচার করছে। এই বিচার নিয়ে সারাবিশ্বেই আপত্তি রয়েছে। এই বিচার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হউক, এটা আমরা বলে আসছি।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে এ নিয়ে প্রস্তাব এনেছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর দায়িত্ব সরকারের। ’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি। আজ বর্তমান সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। ফলে অন্য দেশে একরম প্রস্তাব আনার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামকে এতদিন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয় দলই ব্যবহার করেছে। আওয়ামী লীগ ভোটের হিসাবে একবার সঙ্গে রেখেছিল। কিন্তু বিএনপি সব ধরনের হিসাবের পর সার্বক্ষণিকভাবেই সঙ্গে নিয়েছে জামায়াতকে। ধর্মভিত্তিক দলের পোশাক পরিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ দলটিকে আলো বাতাস দিয়ে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আজকের প্রধান বিরোধী দল। বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াতকে চিহ্নিত করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো।

বিএনপি এদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করায় আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলগুলোকে বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধী দলের মদদদাতা হিসেবে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়েছে। জবাবে বিএনপিও আওয়ামী লীগকে ছেড়ে কথা বলেনি। ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তত্কালীন সরকার বিরোধী আন্দোলন করায় আওয়ামী লীগকেও অনেক কথা শুনতে হয়েছে। জামায়াত ইস্যুতে কথার মারপ্যাচের কারণে তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান, জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি এসবের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে গিয়ে তারা অধিকাংশ সময়ই বিভ্রান্তিতে পড়েছে।

কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তানের মন্ত্রী তাদের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য, এ নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় এবং এ প্রসঙ্গে বিএনপির মুখে কুলুপ আঁটার কৌশল তরুণ প্রজন্মকে পরিষ্কার করে দিয়েছে। যে কারণে তারা এখন নিজেদের দ্বিধামুক্ত ভাবতে পারছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তানের অবস্থান তরুণ প্রজন্মকে নিশ্চিত করেছে জামায়াত নেতারা এখনও পাকিস্তানি মনোভাব পোষণ করে। এ ধরনের একটি দলের সঙ্গে যারা জোট বাঁধে তাদেরও পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতি আছে বলে তারা মনে করেন। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তারা বলেন, যে দেশের হানাদার বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছেন, যাদের হাতে সমভ্রম হারিয়েছেন দেশের মা-বোনরা, সেই দেশের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াতে দলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে।

দলটির প্রতি যে মোহ ছিল তা ভাঙতে শুরু করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহাখালীর মোর্শেদুল ইসলাম, তার সঙ্গে গত শুক্রবার কথা হয় শাহবাগে; তরুণ প্রজন্মের এই প্রতিনিধির মতে, জামায়াতে ইসলাম এখনও পাকিস্তানের দল। ’৭১-এ তারা পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে যা করেছে বলে আমরা শুনে এসেছি তার পুরোটাই সত্য। এ বিষয়ে আর কোনো দ্বিধা আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু বিএনপির মতো একটি দল কেন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এখন নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

বিএনপির অতীত যা-ই থাকুক এ সময়ের সেন্টিমেন্ট বুঝে তাদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। একইদিন আরও বেশ কয়েক তরুণের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই ধরনে বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, শুধু নতুন প্রজন্ম কেন, কোনো স্বাধীনতাকমী বাঙালিই চায় না বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করুক। কিন্তু তবুও এটি আমাদের রাজনীতিতে বিদ্যমান— যা খুবই বেদনাদায়ক। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি অনেকদিন ক্ষমতায় ছিল, দলটি প্রতিষ্ঠাতা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা।

তাই আমরা আশা করব, বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট গঠন করবে। শুধু জামায়াত কেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিহার করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের দুই প্রধান দলই জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করেছে। এটিকে তারা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দাবি করলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে।

সুযোগ তৈরি হয়েছে জোট থেকে তাদের বাদ দেয়ার। আমরা চাই বিএনপি জামায়াতকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করুক। তবে এটি ওই রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। শুধু নতুন প্রজন্ম কেন, আমরাও চাই না বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে থাকুক।
সুত্র
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.