আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
ছেলেটি পপেল ভাইয়ের ফুটবল টিমের গোল কিপার ছিল ! বাঁ কিংবা ডান দিকে শূন্য উড়ে বল গ্রিপ করার ব্যাপারে আশ্চার্য দক্ষতা ছিল তার । জটলা থেকে মুহুর্তেই ছিটকে আসার কয়েক সেকেন্ড আগেই সে গেস করে নিতে পারতো বল কোন দিকে যাবে, সেদিকেই ঝাপিয়ে পড়তো !
একদিনের ঘটনা ছেলেটি আর তার বন্ধু গৌতম জাম্বুরা নামের খ্যাত ছোট একটা রাবারের বল দিয়ে মাঠে খেলা করছে । পাঁচ নাম্বার বড় বল দিয়ে মাঠের এক পাশে খেলা করছে শহীদবাগ স্পের্টিং ক্লাবের সদস্যরা ! বল চলে গেল সে দিকে । ছেলেটি বল আনতে গেলে সেই ক্লাবের একজন তাকে উপদেশ দিল প্লেয়ার হতে চইলে জাম্বুরা দিয়ে খেলো না ! পাঁচ নাম্বার বড় বল দিয়ে খেল । ছেলেটি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে !
মজার কথা হচ্ছে ঠিক তার তিন দিন পরে শহীদবাগ স্পোর্টিং ক্লাবে সাথে পপেল ভাইয়ের টিমের খেলা ।
ছেলেটি সেই টিমের গোল রক্ষক ! তুমুল উত্তজনায় খেলায় দুই এক গোলে শহীদবাগ কে হারলো পপেপ ভাইয়ের দল ! তার ভিতর একটা পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছি ছেলেটি !
গোল কিপার হিসাবে সেই বয়সেই ভাল নাম ডাক ছিল আসে পাশে ! একবার সে রামপুরায় এক স্কুলে খেলতে গিয়ে ছিল হায়ারে ! গোলপোস্টের পিছনে পাড়ার স্থানীয় মাস্তানরা দাড়িয়ে ছিল লাঠিসোটা নিয়ে ! গোল ধরলে আর রক্ষা নেই । গুনে গুনে সাতটা গোল হজম করতে হয়েছিল সেদিন !
যারা ছেলেটিকে হায়ার করে নিয়ে গিয়েছিল তারা টাকা তো দেয়ই নি, ফেরার পথে বাস ভাড়াও দেয় নি !
স্কুল টিকেও ছেলেটি গোল রক্ষক ছিল ! তবে সেখানে ফলাফল খুব একটা ভাল ছিল না ! একবার স্কুলের একটা খেলায় পাঁচ পাঁচ টা গোল খেয়ে বসলো ! ছোট মাঠ ! কখন যে চোখের পলকে জালে বল আটকে যেত বোঝা মুশকিল ছিল !
তবে ক্লাসের সেই শামলা মেয়েটিকে তার ভাল লাগলো সেই মেয়েটি যখন পাঁচ গোল খেয়েছে শুনে ফিক করে হেসে দিয়েছিল সেই সুখেই ছেলেটির কয়েকয়া দিন কেটে গেল ! যদিও কোন দিন মেয়েটির সাথে তার কথা হয়নি তবুও কয়েকমাস চেষ্টায় পাড়ায় এক পাঁচিলে আড্ডায় বসা অবস্থা মেয়েটিকে চিরুনী দিয়ে চুল আচড়াতে দেখেছিল !
এই টুকুই !
ফুটবল খেলায় ছেলেটি ছিল মোহমেডান স্পোটিং ক্লাবের সাপোর্টার !
ফুটবল খেলা ছাড়াও আরেকটি অভ্যাস ছিল ছেলেটির । বই পড়া ! তার চারিপাশে ছিল অফুরন্ত বইয়ের ভান্ডার । তার জীববিজ্ঞানীর মামার আলমারী ভর্তি বই ছিল । আর রাস্তার অপাশে ছিল সবুজ লাইব্রেরী নামে একটা লাইব্রেবী ! সেখানে থেকে ছেলেটি কুয়াশা সিরিজ নিয়ে পড়তো একটাকা কি দুটাকায় ।
দোকানদার বইয়ের পাতা ভাজ না করার শর্তে কুয়াশা সিরিজ দিত ছেলেটিকে পড়তে !
ছেলেটি তার বই পড়ার অভ্যাসটা পেয়েছিল তার মায়ের কাছ থেকে ! সংসারের হাজার ঝক্কিঝামেলা সামলে ছেলেটির মা বই পড়তেন । আশুতোষ, নীহাররঞ্জন, নিমাই আর কত বই !
তার আব্বাও বই পড়তেন ! তবে বেশির ভাগই আইন আর ইসলামি ধর্মতত্ত্বের বই । ছেলেটির স্মৃতিতে বাবা মানেই কালো কোট । দুপুর বেলা কোর্ট থেকে বাবা ফিরছেন । হাতে চিতল মাছ ঝুলছে ।
বাবা মারা যাবার পর আর কখনও সে চিতলমাচ খায় নি !
ছেলেটির জীবনে সব থেকে পুরানো স্মৃতি হল রাজশাহী ! রোদ চিকচিকে ঘোলা জলের একটা নদী ! রাজশাহী শহরের হেতেম খা জামে মসজিদের কাছে একটা বাড়িতে থাকতো তার বড় খালা । বড় খালার তিন ছেলে এক মেয়ে ! তাদের ভিত বাবলা ছিল তার সম বয়সী ! দুরন্ত স্বভাবের বাবলা কথা বলতো রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় যা ছেলেটির কানে মধু বর্ষন করতো ! তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো রাজশাহীর পদ্মায় পাড় সহ অনেক জায়গায় !
বাবালার সাথে বোধ করি ছেলেটি ইভ টিজিংয়ের হাতে খড়ি হয়েছিল সেই ছোট বেলায় । ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন মনে হয় ! তবে এখন কার ইভটিজিং আট তখন কার ইভটিজিংয়ের ভিতর ছিল বিস্তর ফারাক ! বাবালা একদিন আবিস্কার করলো একটি রূপসী মেয়ে সাহেব বাজার কোচিংয়ে নিয়মিত কোচিং করতে যায় ! বাবলা সাইকেল চালাচ্ছে । ছেলেটি বসে আছে রডে । মেয়েটি কোচিং থেকে বের হয়ে রিক্সায় চেপেছে ।
রিক্সার পেছন পেছন সাইকেল ঢুকছে সরু একটা গলির ভেতর !
রিক্সার সেই বালিকা মেয়েটি যে ফোস করে নি তা নয় । কয়েছে তবে সেই ফোঁস ফাঁসও ছিল কতই না মধুর ! কতই না রোমান্টিক !
ছেলেটির আরেক স্মৃতির শহরের নাম চট্টগ্রাম ! ছেলেবেলায় বছরে অন্তত দু-তিনবার চট্টগ্রামে ‘চাচারবাড়ি’ যাওয়া হত তার। কী সুন্দর সুন্দরই ছিল শৈশব-কৈশরের সেইসব আনন্দময় দিনগুলি !
সারারাত কুউউ ঝিকঝিক করে ট্রেন চলত। সকালবেলায় চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে ট্রেন থামত। ছেলটি তখন এতই ছোট যে তাকে ট্রেনের জানলা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হত।
বিশালদেহী বড়চাচা কিংবা বড় চাচাতো ভাই ছেলেটিকে দুহাতে জাপটে ধরতেন।
তারা জামাল খান লেইনে পৌঁছে যেতে স্টেশন থেকে ।
দেওয়াল আর সুপারি গাছে ঘেরা বেশ খানিকটা জায়গা। তারই ওপর পাশাপাশি একটি টিনসেড আর একটি পাকা দোতলা দালান। বড় চাচারা টিনসেড আর পাকা দালান মিলিয়ে থাকেন !
চাচাতো ভাইদের মধ্যে মাহাবুব ছিল ছএলেটি সমবয়েসি ।
কাজেই তাকে মাহবুবের সঙ্গেই মিশতে হত বেশি। মাহবুব আবার বেশ পড়ুয়া টাইপ ছিল। সারাক্ষণ মুখে শুধু পড়ার কথা। কোন টিলার ওপর কোন ভালো ছাত্র থাকে, সেখানে ছেলেটিকে নিয়ে যেত। ছেলটির মন পড়ে থাকত বাটালি হিলের ওপর।
মাহাবুবের সঙ্গে ভোরবেলা উঠে হাঁটতে বেরোতো। জামাল খান লেইন-এর গলি দিয়ে বেড়িয়ে ডান দিকে হাঁটতে হাঁটতে কাজীর দেউড়ি, তারপর বাঁ দিকে টার্ন নিয়ে সার্কিট হাউজের সামনে দিয়ে একটা গাছের ছাওয়া মোড় পড়ত; তারপর সে মোড়ের বড় রাস্তা (সম্ভবত এশিয়ান হাইওয়ে) পেড়িয়ে একটা কলোনির পাশ দিয়ে হেঁটে তারা দুজনে ছোট একটা টিলায় উঠে পড়ত। মাহাবুব বলত, বাটালি হিল।
বাটালি হিলে উঠে আনন্দে ছেলেটির শরীর কাঁপত ...
কখনও জামাল খান লেইনের ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা গলিপথ ধরে বিখ্যাত আশকার দিঘীর পাড় দিয়ে হাঁটত তারা।
ডিসি হিল, লাভ লেইন, ব্রডওয়ে (একটা দোকানের নাম সম্ভবত) এসবই ছিল তার ছেলেবেলার প্রিয়শব্দ।
চট্টগ্রাম শহরে বেড়াতে যাবার একটি উল্লেখযোগ্য স্পট হল পতেঙ্গা সমুদ্রসৈতক। পরিবারের বড়দের সঙ্গে যেত পতেঙ্গা । হয়তো কুমিল্লা শহর থেকে চাচাতো বোনের বর এসেছেন । হয়তো সেই দুলাভাইকেই পতেঙ্গা নিয়ে যেতে ধরে বসলো । সাধারণত তারা যেত দুপুরের পর।
বিমান অফিসের ঠিক সামনে ছিল বেবি ট্যাক্সির স্ট্যান্ড । সেখান থেকেই রওবা হয়ে যেত !
চট্টগ্রাম শহরে তার আরেকটি আনন্দের উৎস ছিল ফয়েজ লেক। সত্তর এবং আশির দশকের ‘কুমারী’ ফয়েস লেক- এর সৌন্দর্যই ছিল অন্যরকম। ভারি নির্জন। বিশেষ করে সেই হাফব্রিজটি ছিল গভীর নির্জনতায় ডুবে।
হ্রদের পানি তিরতির করে কাঁপত। তাতে আকাশের ছায়া।
ছেলেটির আরেকটি স্মৃতিময় জায়গার নাম নীলক্ষেত ! ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে যখন সে ঢাকা সিটি কলেজে পড়ত তখন নীলক্ষেতে যাতায়াত শুরু করে । সেই সময় আমার ইংরেজি পেপারব্যাক পড়ার নেশা ছিল তার। পুরনো ইংরেজি পেপারব্যাক নীলক্ষেত ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না ।
নীলক্ষেতের মোড়টি সিটি কলেজের কাছেই। তখনকার দিনে আজকের মতো এত বিচ্ছিরি জ্যামজট ছিল না। কলেজ থেকে নীলক্ষেতের পুরনো বইয়ে আড়তে হেঁটে যাওয়া প্রায় নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার। কলেজে পড়ার সময়ই মার্কিন ঔপন্যাসিক Harold Robbins -এর অনেক বই পড়ে ফেলেছিল সে। সহজ ভাষায় লিখতেন রবিন্স, উপন্যাসের প্লট আর চরিত্রগুলি ছিল আকর্ষনীয় আর নানা ঘটনায় পরিপূর্ন।
প্রথম রবিন্সের নেভার লাভ আ ষ্ট্রেঞ্জার পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেছিলো সে। ওটাই রবিন্সের প্রথম বই। নীলক্ষেতে রবিন্সের পুরনো বই পাওয়া যেত। প্রধানত সেই টানেই যেত সে। ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে ১০০ টাকায় হ্যারল্ড রবিন্সের তিনটা উপন্যাস পাওয়া যেত ।
ছেলেটির এখনও মনে হয় সেদিন নীলক্ষেতে Encyclopædia of Western music বইটি না পেলে হওতো প্রাশ্চাত্যে ধ্রুপদি সংগীতের উপর জ্ঞান অসম্পূর্ন থেকে যেত । ১৯৯৬ সালে সতের’শ টাকা তো আর জলে যায়নি।
অন্তত তার জন্য নীলক্ষেতের প্রধান আকর্ষন ছিল ‘দেশ' পত্রিকা। দেশ পত্রিকার গল্প আর প্রবন্ধ পড়তে তার ভালো লাগত । দেশ পত্রিকার মারফত কত না শক্তিমান কবি লেখকের লেখার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে ।
ছেলেটি মন্দক্রান্তা সেন-এর কবিতা সর্বপ্রথম মনে হয় দেশ পত্রিকাতেই পড়ে। নীলক্ষেতের বইবিক্রেতার হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিলে অনেক ক’টা দেশ পত্রিকা দিয়ে দিত। সস্তাই মনে হত। একশ টাকায় অতগুলি ‘অমূল্য’ পত্রিকা দিয়ে দিচ্ছে।
কলেজ জীবনে তেমন না-হলেও ছেলেটির নীলক্ষেতের তেহারি খাওয়ার অভ্যেস গড়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে।
কলাভবন থেকে রিকশায় উঠে সদলবলে তারা চলে যেত দুপুরের দিকে । তারপর ...
কত কত দিন নীলক্ষেতের রেস্টুরেন্টে বসে থেকেছে সে। কখনও বৃষ্টির দিনে আটকে গেছে। চা- সিগারেট নিয়ে নীলক্ষেতের কোনও রেঁস্তরায় বসে আছে। দীর্ঘক্ষণ।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি ... ছেলেটির আবার এ শহরের বৃষ্টি তে কেমন ঘোর লেগে যেত ...বিশেষ করে সন্ধ্যার বৃষ্টি ...
১৯৮৯ সালের ১৭ অগস্ট কলা ভবনের চারতলার একটি কক্ষে । ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাস শুরু হয়। ছেলেটির প্রথম ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ! প্রথম ক্লাসটিই ছিল মোমিন স্যারের। ক্লাসে স্যার কুড়ি মিনিটির মতো ছিলেন। ইতিহাস বিষয়ে কিছু না সেদিন তিনি কিছু না বললেও তিনটি কথা বলেছিলেন ।
(১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মুড়ির চেয়েও সস্তা। কাজেই মনোযোগী হও (২) ইতিহাসের খুঁটিনাটি তথ্য বাস্তবজীবনে তত কাজে নাও লাগতে পারে! কাজেই যদ্দিন এখানে আছো, ইংরেজি ভাষাটা ভালো করে শিখ। আর (৩) রিকশায় কখনও তিনজন উঠবে না!
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মোমিন চৌধুরী প্রকৃত শিক্ষক ছিলেন। মোমিন স্যার যা পড়াতেন তাই পড়াতেন। কখনও পাঠের কেন্দ্র থেকে চ্যূত হতেন না।
মানে ‘সাব লিঙ্কে’ ঢুকতেন না। তদুপরি স্যারের বাচন ভঙ্গি ছিল চমৎকার ।
ইতিহাস বিভাগের আরেক জন অধ্যাপক ছেলেটিকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিলেন । অধ্যাপক আহমেদ কামাল। আহমেদ কামাল স্যার তাদের ‘এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়া’ পড়াতেন ।
স্যার মৌলিক বৈদিক টেক্সট পাঠ করে ব্যাখ্যা করতেন ক্লাসে। এই অভিজ্ঞতা ছেলেটির কাছে ছিল অভূতপূর্ব।
সেই সময়ে ক্লাসের মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের পরিচয় হওয়ার ঘটনাটি ছিল কিন্তু বেশ মজার । প্রথম ক্লাসেই দু-এক জন ছাত্রের সঙ্গে ছেলেটি পরিচয় হল। তাদের একজন ছিল মঞ্জু।
খুলনার ছেলে। বেশ সপ্রতিভ বলে মনে হল। লম্বা। চশমা পরা। কাঁধ অবধি দীর্ঘচুল।
দেখেই মনে হয়েছিল সাহিত্য-তাহিত্য করে। একদিন ছেলেটি মঞ্জুকে বলল, শুধু পড়াশোনা করে কী লাভ বল? সাহিত্যও তো করতে হয়। মঞ্জু তার কথায় সায় দিল। ছেলেটি বলল, একটা সাহিত্য পত্রিকা বার করলে কেমন হয়? মঞ্জু সায় দেয়। বলল, এই কথাটা মেয়েদেরও বল না কেন।
মঞ্জু লম্বা ফর্সা মতন একটা মেয়ের কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগল। মঞ্জু ফিরে এসে ছেলেটিকেবলল, মেয়েরাও নাকি সাহিত্য নিয়ে ভীষণ আগ্রহী। সাহিত্য পত্রিকা বার করার কথা ভাবছে। ঠিক হল, এ নিয়ে আগামীকার টিএসসি তে জরুরি বৈঠক। পরের দিন সাহিত্যবিষয়ক জরুরি বৈঠকে ক্লাসের প্রায় কুড়িজন ছেলেমেয়ে উপস্থিত দেখলাম।
প্রথমেই যে যার নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানাল। এরপর কথা নানা দিকে গড়াল। কেবল ওই সাহিত্য পত্রিকা বাদে ...
ছেলটি শ্যামলা রঙের মেয়েটাকে প্রথম দেখে লেকচার থিয়েটারে। সাবসিডিয়ারি ক্লাসে। তখন অনার্স কোর্স ছাড়াও দুটো সাবসিপিয়ারি সাবজেক্ট নিতে হত।
ছেলেটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান নিয়েছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ক্লাসে সামনের বেঞ্চে বসেছিল মেয়েটি । পাশ থেকে অপরূপ মুখটা দেখে বুক ধরাস করে উঠেছিল ছেলটির ।
কে এ! ভারি মিষ্টি চেহারা। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স পড়ছে ।
নাম? ধরা যাক: রূপসী বাংলা। রূপসী বাংলাকে দেখার পর থেকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল ছেলেটি। রাত কাটতে লাগল নির্ঘুম। রূপসী বাংলাকে দেখার আগে সে ছিল অজ্ঞেয়বাদী বা এগনোস্টিক!
ক্লাসের আগে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে কলাভবনের সামনের মাঠে রোদের ভিতর গোল হয়ে বসে আড্ডা দিত তারা । রূপসী বাংলাও বসত, খানিকটা দূরে, গোল হয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে।
ছেলেটি এমন ভাবে বসতাম যেন ঈশ্বর নির্মিত প্রতিমা টিকে দেখতে পায়। নীপা ছিল বেশ অর্ন্তজ্ঞানের অধিকারিনী। কী ভাবে যেন সব টের পেয়েছিল। নীপা একদিন ছেলেটিকে বলল, ইমন, দশটা টাকা দে না।
ছেলেটি পকেট থেকে টাকা বের করে দিল ! নীপা উঠে ঝাড়মুড়ি কিনল।
তারপর, কী আশ্চর্য, রূপসী বাংলার পাশে গিয়ে বসল। একটু পর ছেলেটি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো রূপসী বাংলা ঝালমুড়ি খাচ্ছে আর ডাগর-ডাগর চোখে আমাকে দেখছে।
কদিন পর নীপাই ছেলেটির সঙ্গে রূপসী বাংলার পরিচয় করিয়ে দিল। ইতিহাস বিভাগের করিডোরে এসেছিল রূপসী বাংলা । মৃদু পরিচয় হল বটে, তবে ছেলেটি রূপসী বাংলার কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করেনি।
তাকে দূর থেকেই দেখত ছেলেটি। তার কারণ ছিল। ছেলেটির অতল অমীমাংশিত আচরণে প্রতি ক্যাম্পাসের বন্ধুরা গভীর আকর্ষন বোধ করত। সর্বদা আশপাশে ঘুরঘুর করত। তাছাড়া ছেলেটি ছিল খানিকটা সহজ-সরল ।
বন্ধুদের বিশাল সার্কেল-এর চোখে ধুলো দিয়ে রূপসী বাংলার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে ছিল অজ্ঞাত !
কলাভবনের চারতলায় আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের পাশে মেয়েদের ক্যান্টিন । রিফ্রেশ রুম। ওই করিডোরের নাম ‘লোফারস কর্নার। ’একদিন লোফারস কর্নারে ছেলেটি আর হুমায়ূন রেজা দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে রূপসী বাংলা বেরিয়ে এল।
ডাগর ডাগর চোখে ছেলেটিকে দেখল । হাসল। ঘাড় সামান্য কাত করে জিগ্যেস করল, ভালো আছেন? উত্তরে শীতে- জমে-যাওয়া ছেলেটি কী বলেছিল তা আর মনে নেই। হুমায়ূন রেজা ব্যাপরটা জানত। মিটমিট করে হাসছিল ও।
সেসব দিনে ক্যাম্পাসে বিনা নোটিশে গোলাগুলি শুরু হয়ে যেত । ১৯৯০ সালের আগে যারা একসঙ্গে স্বৈরাচার বিরোধী সফল আন্দোলন করেছিল, সংঘাত চলত তাদের মধ্যেই । প্রচন্ড শব্দে আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীরা এদিক-সেদিক দৌড়াত। পুলিশও অ্যাকশন নিত। একবার ইতিহাস বিভাগের করিডোরে টিয়ার গ্যাসের শেল এসে পড়েছিল।
প্রচন্ড ধোঁয়ার মধ্যে ছেলেটির চৈতন্য লোপ পেয়ে যায় আর কী। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তার। কোনওমতে চেয়ারম্যানের ঘরে ঢুকে রক্ষা পায়। ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান তখন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার স্যার মেঝের ওপর উবু হয়ে বসে আছেন।
আনোয়ার স্যার চমৎকার করে কথা বলতে-বলতে মিটমিট করে হাসেন। বাইরে প্রচন্ড গোলাগুলি । তা সত্ত্বেও স্যারের হাসিটি ম্লান হয়নি। আসলে ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাসের চেয়ে ক্লাসের বাইরে শিখছিল বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিপদেও কম পড়িনে ছেলেটি ।
একবার। পিকনিকের তারিখ নির্ধারণ নিয়ে গন্ডগোল বেঁধে গেল। যারা তারিখ নির্ধারণ করেছিল তারা ছিল সরকারি দলের সমর্থক। ছেলেটি অনেকটা বেপরোয়া হয়েই ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ নিল। কাজেই সরকারপক্ষীয়রা ছেলেটির বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠল।
তখন সরকারী দলের ক্যাডার ছিল হেমায়েৎ । বিশ্ববিদ্যালয়ের মূর্তিমান ত্রাস । পরের দিন সকালে ইতিহাস বিভাগের করিডোরের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। ছেলেটিকে দেখেই জড়িয়ে ধরল বাবু । বাবু তার ক্লাসমেট; সূর্যসেন হলে থাকে ।
সামান্য ঘটনা। তুচ্ছ পিকনিকের ডেট। এতেই সশন্ত্র ক্যাডার ডেকে এনেছে। এই দেশের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ঘোর সন্দিহান হয়ে উঠে ছেলেটি !
এই ঘটনার তিন দিন পর সকাল বেলায় গোলাগুলির সময় ভাষা ইনসটিটিউট-এর সামনে হেমায়েৎ প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যায়! হেমায়েৎ যে ছেলেটিকে গুলি করতে চেয়েছিল সেটা ক্যাম্পাসের অনেকেই জানত। যে কারণে হেমায়েৎ নিহত হওয়ার পর পরই ছেলেটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে এক ধরণের অলৌকিক গুঞ্জন ছড়ায়।
তাকে জড়িয়ে এক ধরণের দিব্য মাহাত্ম্য ছড়ায়।
১৯৯৪ সাল। শিক্ষাসফরে বেরিয়েছে তারা। রাঙামাটি-কক্সবাজার হয়ে সন্ধ্যায় টেকনাফে এসে পৌঁছেছে। হোটেল নাফ ইন্টারন্যাশনালে।
দিনটা ছিল ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ । সকালবেলায় চমৎকার রোদ উঠেছে। বেশ শীতও টের পাওয়া যাচ্ছিল। তখন খুব সিগারেট খেত ছেলেটি। নাশতার পর দ্বিতীয় সিগারেটটি ধরিয়েছে সে।
সবার সঙ্গে ছেলেটি হাঁটছে সেই ব্রিজের দিকে। একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে নাসরীনের দিকে আড়চোখে তাকালো ছএলটি। ওকে ভীষন গম্ভীর মনে হল।
কেন ? ছেলেটি সাড়া দিচ্ছিল না বলে?
কেন সাড়া দেবে সে ? কেন বন্দি হবে?
আজ শাড়ি পড়েছে নাসরীন। অন্যমেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পড়লেও কয়েকদিন হল শাড়ি পড়ছে নাসরীন।
গতকাল তারা মহেশখালি দ্বীপে ছিল। অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে বলেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে অত উচুঁতে টিলার ওপর সেই বৌদ্ধমন্দিরে পৌঁছতে পারেনি ছেলেটি। সিঁড়িতে বসে সিগারেট টানছিলো। কী কারণে নাসরীনও আর উঠল না। ও সিঁড়িতে বসে পড়ল ছেলেটির পাশেই ! মেজবা স্যারও উঠলেন না।
নাসরীনের ঠিক পাশে বসে পড়লেন স্যার। টুকটাক কথা বলছেন নাসরীনের সঙ্গে। নাসরীনের চোখমুখে অস্বস্তি - বার বার ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছিল।
অথচ ছেলেটি প্রকৃতির পাঠ নেবে বলে
নাসরীনের আকর্ষন সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেছে।
আধুনিক জীবন এমন করেই জটিল।
জটিল ও ক্লান্তিকর।
দ্বীপে নেমে সবাই দূদ্দাড় করে হূমায়ুন আহমেদের বাড়ি দেখতে ছুটল। যেন হূমায়ুন আহমেদের বাড়িটি দেখার জন্যই সবাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এসেছে। হূমায়ুন আহমেদের বাড়িটি দ্বীপের দক্ষিণে। তারা নেমেছিল উত্তরে।
মেজবাও সেদিকে রওনা দিলেন ! ছেলেটি মুচকি হাসে। ভিড়ের মধ্যে নাসরীনও রয়েছে। শাড়ি পরেছে বলে সাবধানে হাঁটছে। ছেলেটি আজ একটু একা থাকতে চায়। নাসরীনকে এড়ানো দরকার।
ওকে বোকা বানানোর জন্য ছেলেটিও সবার সঙ্গে কিছুদূর হাঁটল। তারপর আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ল।
সেই জেলে নৌকার ছায়ায় এসে বসল ছেলেটি। মনে মনে ঠিক করল যতক্ষণ এই দ্বীপে থাকবে ততক্ষন সিগারেট ধরাবে না।
দূর থেকে নাসরীনকে এদিকেই আসতে দেখল ছেলেটি।
ঘটনাটা ও এখন ওর মতন করে ব্যাখ্যা করবে: জেলে নৌকার ছায়ায় ছেলেটি ওর জন্য অপেক্ষা করছে। নাসরীন ঠিক পাশে এসে বসল। শুঁটকি মাছ ও লোনা গন্ধ ছাপিয়ে কী এক পারফিউমের তীব্র সুগন্ধ নাকে গেল ছেলেটির। কিংবা গন্ধটা নাসরীনের শরীরেরও হতে পারি।
আমার অনেকটা ঘেঁষে বসেছে নাসরীন।
কিছুটা সাহসী হয়ে উঠছে কি? দু-তিনটে উদোম জেলে শিশু ও গাঙচিল বাদ দিলে আশেপাশে জীবিত কেউই নেই। জেলে শিশুরা ছেলেটি আর মেয়েটিকে দেখছে। আর ছেলেটি দেখছি ওদের, ওদের পিছনে দূরের বার্মিজ পাহাড়। ঝিকিমিকি রোদ। সমুদ্র।
গাঙচিল। বালি। ঢেউ। তার নানা স্তরের রং। নাসরীন দেখছিল ছেলেটিকে।
সময়টা ১৯৯৪। ১৭ ডিসেম্বর। মধ্যাহ্ন। নারী। নারী ও প্রকৃতি।
নারী দেখছিল তার পছন্দের পুরুষটিকে। পুরুষটি দেখছিল অপার এক প্রকৃতিকে। দেখছিল বালিয়াড়ির রোদ ও জেলেদের শিশুদের। এসবই ঘৃনা করছিল নাসরীন? পুরুষটি ভাবছিল, সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে যে, সেন্ট মার্টিন ঠিক বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ নয়- বরং সেটি মায়ানমারের পাহাড় শ্রেণিরই বিস্তার!!
--------
এতোক্ষন যে ছেলেটি ছেলেটি করলাম আপনাদের নিশ্চই বুঝতে একটুও কষ্ট হয় নি যে এই ছেলেটিই আমাদের মাঝে আর নেই !
না । ভুল বললাম ।
ছেলেটি হয়তো স্বশরীরে নেই আমাদের পাশে কিন্তু আছে আমাদের মাঝে । থাকবে !
উপরে যা লিখলাম তা সবটাই তার লেখা থেকেই । ইমন ভাই বেশ কিছু স্মৃতি কথা লিখেছেন তার ব্লগে । আমি তার গল্পই পড়ি বেশি ! কদিন থেকে তার স্মৃতি কথা গুলো পড়ছিলাম । সেখান থেকেই কিছু তুলে নিয়ে এলাম ।
আজকে তার আরেকটা স্মৃতি কথা দিয়েই লেখা শেষ করবো !
যে কবিতার লাইনটার লিখলেই আমাদের তার কথা সবার মনে পড়ে যায় সেটা হল
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন,
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।
অনেকেই জানে না এই লাইন দুটি রচিত হওয়ার ঘটনা !
ঘটনা টা বলি !
তখন ৯৬ সালের মাঝামাঝি সময় ! ইমন ভাইয়ের শরীর খানিকটা খারাপ ! টাইফয়েড হয়ে গেছে ! শরীর দুর্বল !
এমন একটা দিনে পাড়ার বাবু নামের একটা ছেলে আসে ইমন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আরেকটা ছেলেকে সাথে নিয়ে ! বাবুর সাথে ইমন ভাইয়ের ভালই ভাব ছিল । বাবু হাওয়াইন গিটার বাজাত আর ইমন ভাই স্পেনিশ গিটার ! দুজন মিলে মাঝে মধ্যে মিউজিক নিয়ে আলোচনা করতেন !
বাবু পাশের ছেলেটাকে পরিচয় করিয়ে দিল নয়ন বলে ! নয়ন ইমন ভাইয়রের কাছে গিটার শিখতে চায় !
এর পর থেকেই নয়নের যাওয়া আসা হত ইমন ভাইয়ের বাসায় !
নয়নের বড় ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। রসায়ন নিয়ে পড়বে ! কিন্তু প্রথমবারে সেখানে চান্স না পাওয়াতে বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু নয়ন ছিল মেধাবী ছাত্র ! পারিবারিক এক কারনে সে ঠিক মত পড়তে পারেনি !
নয়ন মেধাবী ছিল ! এম ভাবে হতাশ হতে দেখে ইমন ভাইয়ের খারাপ লাগতো ! তিনি তাকে উৎসাহ দিতেন !
ইমন ভাই তাকে পরামর্শ দিলেন বাড়িতে পড়তে না পারলে অন্য কোথাও গিয়ে মন দিয়ে পড়াশুনা করার জন্য ! নয়ন তাই করলো ! শ্যামলীতে মামুনদের বাড়িতে গিয়ে পড়তে লাগলো !
পরের বছর পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এল । এবার নয়ন টিকে গেল ।
সুসংবাদ টা সে খালি হাতে দিতে আসে নি । দুই কেজি মধুমিতার রসগোল্লা নিয়ে এসেছে । নয়নের মুখ ছিল উদ্ভাসিত ! কদিন পরে এসে খুশি খুশি কন্ঠে ইমন ভাইকে বলল
"অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি পেয়ে গেছি ইমন ভাই" !
ইমন ভাইয়ের মনে পড়লো নয়ন প্রাণ রসায়নেই পড়তে চেয়েছিল ! তখনই ইমন ভাইয়ের মনের ভিতর, মস্তিস্কের কোষে কোষে বিদ্যুৎ খেলে গেল । ইমন ভাই শীর্ষেন্দুর মানবজমিন বইটা সদ্য কিনেছে । সেই বইটা টেনে বইয়ের প্রথম পাতায় বল পয়েন্ট দিয়ে লিখলেন ..।
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন,
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।
তারপর বইটা নয়ককে উফার দিলেন ! সাথে সাথে সৃষ্টি হল অমর এই দুটি কবিতার লাইনের ! যে লাইন দুটি উচ্চারিত হলেই একজনের নাম মনে আসে !
ইমন জুবায়ের !
প্রিয় ইমন ভাই যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন সব সময় !
ইমন ভাইয়ের ব্লগটা আগে প্রথম পাতায় দেখা যেত । সামু কর্তপক্ষ সেটার কি করলো কে জানে ? এখন আর দেখা যায় না কেন ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।