আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুপামারোস অব উরুগুয়ে এবং প্রেসিডেন্ট মুজিকা

মনের কথা ব্লগে বলে ফেলুন,নয়তো মনে কথার বদহজম হবে

সময়টা ষাটের দশক ৩০ লাখ লোকের ছিমছাম দেশ উরুগুয়ে। দেশের লোকজন ভেড়ার পশম আর মাংস রপ্তানী করে বেশ চলছিলেন । আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও বেশ ভালো। দেশে আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ত্বে মাত্র ১২০০০ আর্মি আর ২২০০০ পুলিস নিয়োজিত । বিপত্তি শুরু হলো কোরিয়া যুদ্ধের পরে ; রপ্তানিতে ভাটা পড়লো ।

ধীরে ধীরে বেকারত্ব বাড়তে থাকলো,সেই সাথে বাড়তে থাকলো দূর্নীতি।
বেকারত্ত্ব,দূর্নীতি আস্তে আস্তে এমন এক পর্যায়ে পৌছালো যে সাধারন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ে Raul Sendic এর নেতৃত্বে ১৯৬৩ সালে আত্নপ্রকাশ করে ‘Tupamaros of Uruguay’।

‘Tupamaros’ নামকরণ করা হয়েছে ইনকা বিপ্লবী ‘Tupac Amaru’ এর নাম অনুসারে। ‘ Tupamaros of Uruguay’ একটি আরবান গেরিলা দল ।

দলটি টাকা, খাবার লুট করে গরীবদের মাঝে বিলি করতো।
১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত দলটি বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এদিকে ১৯৭০-৭১ সালে দেশে একের পর এক আলোচিত দূর্নীতির ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে গেরিলা দলটির প্রতি জন-সমর্থন ও বাড়তে থাকে।
দলটি এবার টাকা, খাবার লুট করে গরীবদের মাঝে বিলি করার পাশাপাশি রাজনৈতিক জবাব দিতে বেশ কিছু অপহরণের ঘটাতে লাগলো।


অপহরণগুলোর মধ্যে ১৯৭০-৭১ সালে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত, দেশটির এটর্নী জেনারেল , প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী ,মার্কিন চর Dan Mitrione এর অপহরণ উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে Dan Mitrione কে হত্যা করা হয়ে ছিল।
Dan Mitrione ছিল একজন Interrogation specialist; সে উরুগুয়ে পুলিশকে নির্যাতনের নানা কৌশল শিক্ষা দিতো। এক পর্যায়ে গেরিলাদের ঠেকাতে ২০০০০ সদস্যের Metropoliton Guards নামের স্পেশাল বাহিনী গঠন করা হয়। এতেও গেরিলাদের দমানো যাচ্ছিলোনা।

Metropoliton Guards কে প্রশিক্ষন দেয়ার দায়িত্ব নেয় America এবং Brazil.
সময় গড়াতে থাকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বামপন্থি Frente Amplio কে সমর্থন দেয় Tupamaros of Uruguay । যথেষ্ঠ প্রশ্নবিদ্ধ এই নির্বাচনে পশ্চিম সমর্থিত Juan Maria Bordaberry জয়ী হন। এরপর ১৯৭৩ সালে সেনাশাসনের শুরু হয় দেশটিতে।
১৯৭৩-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে সেনা শাসন ছিল।

এত শত বাধার মাঝেও গেরিলারা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছে।
অবশেষে ১৯৮৫ সালে দেশটিতে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে Tupamaros of Uruguay ; Popular Participation Movement নামে অংশগ্রহন করে। আর এর মাধ্যমে গেরিলা দলটি প্রকাশ্য রাজনীতিতে আত্নপ্রকাশ করে।
গেরিলা দলটির অন্যতম সদস্য ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট

Jose Pepe Mujica।

যাকে লোকে‘দ্বিতীয় রবিনহুড’ বলে জানে। খুব সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত উনি। জেল খেটেছেন ১৪ বছর। সারা জীবন এত কষ্ট করার পরেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে সরকারি বিলাস বহুল বাড়িতে ওঠেননি। থাকছেন স্ত্রীর মালিকানাধীন খামার বাড়িতে।

বাড়িতে কোন কাজের লোক নেই। মূল্যবান সম্পদের মধ্যে ১৯৮৭ সালের ভক্স-ওয়াগন গাড়ি আছে। প্রতি মাসে বেতনের ৯০ শতাংশ (৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দান করেন উরুগুয়ের ৭৮ বছরের এই রাষ্ট্রনায়ক। জন-সাধারনের জীবন-মান উন্নয়নে এই টাকা ব্যয় করা হয় ।
জীবন-যাপন নিয়ে উনার বক্তব্য-‘বস্তুগত জিনিসে সুখ আসেনা,সুখ আসে মন থেকে।

টাকা দিয়ে সুখ কেনাও যায় না। জীবনটা এভাবে দারুণ উপভোগ করছি’।
তিনি আরো বলেন- ‘আমাকে বলা হয় সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্ট। কিন্তু,আমি কখন ও নিজেকে গরীব ভাবিনা। গরীব তারাই যারা জীবনকে ব্যয় বহুল করে তোলার জন্য দাসের মতো খেটে মরে ।

আরো চাই, আরো চাই এই মনোভাবে পার করে সারাটা দিন। আমাকে গরীব প্রেসিডেন্ট না বলে বুড়ো রাষ্ট্রপতি বলতে পারেন। তবে সুখেই আছি আমি’।
লোকে স্বীকার করুক আর নাই করুক প্রেসিডেন্ট Jose Pepe Mujica সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে সাম্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বেচে থাকুন মুজিকা,বেচে থাকুক সাম্য।


তথ্যসূত্রঃ
http://www.latinamericanstudies.org
http://www.infoplease.com
দৈনিক প্রথম আলো,২৭ ডিসেম্বর,২০১৩।








অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.