Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience শপথ নয়াদিল্লির নারীদের
‘চল মেয়ে, তোকে আকাশ দেখাই। রাতের আকাশ। চল, তোকে নিয়ে হাঁটি। রাত একটা, দুটো, তিনটে রাত যতোই হোক না কেন! কোন ভয় নেই তোর। আর কবার এভাবে মরবি তুই?’ প্ল্যাকার্ডে এমনই লেখা নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে হাঁটতে বেরিয়েছিল নয়াদিল্লিবাসী।
শপথ নারীদের জন্য নতুন পৃথিবী গড়ার। এভাবেই দিল্লির বাসে গণধর্ষণের শিকার নির্ভয়ার (গণধর্ষণের ঘটনায় নিহত সেই মেয়েটিকে ওই নামই দিয়েছিল ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া) উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিল তারা। রাত যখন ঠিক ১২টা, নীরবতা পালন করা হল ২ মিনিট। এর সঙ্গে অঙ্গীকার ‘কোনও যৌন নিগ্রহ বা হিংসা ঘটাব না। এমন ঘটনা চোখে পড়লে চুপ করেও এড়িয়ে যাব না।
কারণ এই ঘটনা ঘটতে পারে আমার সঙ্গেও’ বলে দৃপ্তকণ্ঠে দিল্লিবাসীর একাট্টা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিতি। ওই আয়োজনে দিল্লিবাসীর সঙ্গে একাÍতা প্রকাশ করেছিলেন বলিউডসহ দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রের নামি-দামি তারকা।
এই রাত দখলের লড়াই নিছক প্রতীকী নয়, নির্ভয়ার মৃত্যুকে সামনে রেখে শহরটি যেন সমাজবদলের ডাক দিল। চিন্তার বদল। দৃষ্টির বদল।
শুধু ধর্ষণ বা যৌন হিংসা কেন! ঘরে-বাইরে, বাস-মেট্রোয় প্রতিদিন মহিলাদের যে হেনস্থার শিকার হতে হয়, বদল হোক এরও। তাই গান হল, কবিতা হল, পথনাটক হল। এল অনেক অঙ্গীকারও। এরপর গতকালও অনেক পদপে এসেছে ভারতের সরকার ও বিচার বিভাগের কাছ থেকে। জানা গেছে, ওই গণধর্ষণের ঘটনায় গঠিত হচ্ছে দ্রুত বিচার আদালত।
চার্জশিটে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে ৩০ থেকে ৪০ জনকে সাক্ষি করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে দিল্লি ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরাও থাকবেন। প্রধান সাক্ষি হবেন গণধর্ষণের সময় নির্ভয়ার সঙ্গে থাকা সেই তরুণ যিনি তাকে বাঁচাতে গিয়ে ধর্ষকদের মারধরে গুরুতর আহত হন। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল আরও লোমহর্ষক তথ্য।
নির্ভয়াকে গণধর্ষণের পর ধর্ষণকারীরা তাকে বাসচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল। বন্ধুটি দ্রুত তাকে সরিয়ে নিলে প্রাণে বেঁচে যান দামিনি। দ্রুত বিচার আদালতে জমা দেওয়ার জন্য তৈরি করা চার্জশিটে ঘটনার এ রকম বিবরণ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। গতকাল বুধবার আদালত গঠন করেন ভারতের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবির। আজ থেকে সাকেত জেলা আদালতে ওই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এ শুনানিতে জড়িত ধর্ষকদের বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা জানান, নৈতিক কারণেই তারা ওই আসামিদের পে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেবেন না। এটিও আইনজীবীদের প থেকে নির্ভয়ার জন্য অভয় বাণী হিসেবে অভিহিত করেছেন আইনজীবী সংগঠনের সভাপতি। এছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শশি থারুর প্রস্তাব দিয়েছেন নিগৃহীত তরুণীর নামে ধর্ষণবিরোধী আইন প্রণয়ন করার। তরুণীর স্মৃতির উদ্দেশে এটি যোগ্য সম্মাননা হবে বলে মত দিয়েছেন অনেকেই।
আবার ফিরে আসি নির্ভয়ার জন্য মঙ্গলবারের সেই ব্যতিক্রমী আয়োজনটিতে। অনেক রাতে শেষ হয়েছিল শপথের সেই অনুষ্ঠানটি। সেদিনের সেই ঘটনাস্থল মুনিরকা বাসস্ট্যান্ড যেখানে এখন দুটি পুলিশের পাহারা বসেছে। সেখানে মোমের শিখা জ্বলছে। কেউ না কেউ বুজে যাওয়া শিখা থেকে নতুন মোম জ্বালিয়ে দিচ্ছেন।
ওই বাসস্ট্যান্ডেই নিহতের নামে শোকস্তম্ভ গড়ার দাবি তুলেছে শহর। চোখের সামনে এভাবেই বেঁচে থাকুক অচেনা চিরপরিচিত মেয়েটি। রাতের চলতি গাড়িগুলো পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই নামছেন। এক কিশোরীও এল বাবার সঙ্গে।
হাতে ফুল। একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল অসংখ্য মোমবাতির দিকে। চোখ ফেটে জল। কান্নাভরা চোখে বাসস্ট্যান্ডে একটি কাগজে লিখে দিল, ‘সরি’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।