হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
নাৎসী বন্দীশিবির গুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় ছিল আউসউইৎস বন্দীশিবির। পোল্যান্ডের প্রাচীন শহর ক্র্যাকোফের কাছি ছিল মৃত্যুশিবিরটি। পলিশ ভাষায় শহরটির নাম অমুইনচিম।
১৯৪০ এর মে মাসে আউসউইৎস এর প্রথম ক্যাম্প ও ১৯৪১ এর অক্টোবরে ক্যাম্পের ঊত্তর পশ্চিমে বির্কেনাউ-তে দ্বিতীয় ক্যাম্প নির্মান করা হয়। দুটি ক্যাম্পের মোট আয়তন ছিল মোট ৪০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৪০ এর মে থেকে ১৯৪৫ এর জানুয়ারী পর্যন্ত ক্যাম্পে হত্যার কাজ চলছিল। জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, হল্যান্ড, রুমানিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, ডেনমার্ক এবং পোল্যান্ড এর বন্দীদের এখানে আনা হয় হত্যা করার জন্য। ১৯৪৫ সালের ২৭ শে জানুয়ারী আউসউইৎস মুক্ত হল।
“আরবেইট ম্যাকত ফেরি” (ওয়ার্ক মেইকস ওয়ান ফ্রি)আউসউইৎস এর গেটে লেখা। হ্যা সবাই ফ্রি হয়ে যেত মৃত্যুর মাধ্যমে
১৯৪০ সালে মে মাসে জাকজ়েন হাউজেন থেকে ৩০ জন দাগী আসামী আনা হয় জল্লাদ হিসাবে। আউসউইৎস এ প্রথম বন্দীর দল এসে পৌছায় ১৯৪০ সালের ১৪ই জুন। যার মধ্যে ছিল ২০ জন ইহুদী সহ ৭২৮ জন পোলিশ বন্দী। ব্লক-২ ছিল “প্রিজন উইথন প্রিজন” এখানকার ১.৫ বর্গমিটার বা ১৬ বর্গফুট ষ্টান্ডিং সেল এ সারা রাত চারজন বন্দীকে দাড়িয়ে রাখা হত, সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার পর ষ্টারভেশন সেলে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বন্দীদের দাড করিয়ে রাখা হত।
মৃতদের চুল স্তুপ করা
ডার্ক সেলে এ ছোট্ট জানালাযুক্ত ঘরে বন্দীদের রেখে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া হত। অক্সিজেন এর অভাবে বন্দীরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। ব্লক ২ এর বেসমেন্ট এ ৬০০ জন রুশ এবং ২৫০ জন পোলিশ বন্দীর ওপর জাইক্লোন-বি প্রয়োগ করে দেখা হয় বন্দীদের মৃত্যু হচ্ছে কিনা। সফল হবার পর গ্যাস চেম্বার বানিয়ে ১৯৪১-১৯৪২ পর্যন্ত ৬০০০০ মানুষ হত্যা করা হয়। বার্কিনিউতে আউসউইৎস-২ বানানোর পর “দ্যা লিটল রেড হাউজ” ও “দ্যা লিটল হোয়াইট হাঊজ” নামে দুটি গ্যাস চেম্বার তৈরী করা হয়।
ইহুদি সমস্যার “দ্যা ফাইনাল সলুশন”। মাল গাড়িতে করে বন্দীদের আনার পর কর্মক্ষমদের ডান দিকে, অকর্মক্ষমদের বাম দিকে পাঠানো হত। মোট বন্দীদের ৪ ভাগের ৩ ভাগ এইভাবে গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়া হত। যাদের প্রায় সবাই ছিল নারী, শিশু, বৃদ্ব। আউসউইৎস নবাগত বন্দীদের যে সব ডাক্তাররা পরিক্ষা করতেন তাদের মধ্যে ছিল ডাঃ জোহান ক্রেমার।
তার ভাষায় ‘ভোর তিনটায় গেলাম প্রথম স্পেশাল এ্যাকশনে। যা দেখতে হল তার তুলনায় দান্তের ইনফার্নোও যেন প্রায় মিলনান্তক নাটক’।
গ্যাস চেম্বার গুলোর মধ্যে নকল শাওয়ার ঝুলিয়ে রাখা হত। বন্দীদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উলঙ্গ করে গ্যস চেম্বারে ঢুকিয়ে দেয়া হত। দরজা বন্ধ করে এস এস বাহিনীর লোকরা জাইক্লোন বি গ্যাস চেম্বারের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিত।
আউসউইৎস-২ প্রতিদিন ২০০০০ বন্দীকে হত্যা করা হত। সর্বমোট ৪ মিলিয়ন মানুষ এখানে হত্যা করা হয়
নাৎসী জমানায় জার্মানিতে ও জার্মান অধিকৃত ইঊরোপের বিভিন্ন দেশে বন্দিশিবির ও মৃত্যুশিবির বানানো হয়েছিল। নিচে তার পূর্ন বিবরন দেয়া হলঃ
• ১৯৩৩ সালের ২২ শে মার্চ ডাউখ বন্দিশিবির
• ১৯৩৬ সালের জাকজেন হাউজেন বন্দিশিবির
• ১৯৩৭ সালের ১৫ জুলাই বুখেনোয়াল বন্দিশিবির
• ১৯৪১ সালের ৮ ই ডিসেম্ভর চেলমনা মৃত্যুশিবির
• ১৯৪২ সালের ১লা জুন ট্রের লিংক মৃত্যুশিবির
• ১৯৪২ এর মার্চে সবিবোর মৃত্যুশিবির
• ১৯৪১ সালের শরৎকালে বেলজেক মৃত্যুশিবির এবং লুবলিন মৃত্যুশিবির
• ১৯৪৩ সালের এপ্রিল এ বেরগেন-বেলসেন মৃত্যুশিবির
• ১৯৪৩ এর সেপ্টম্ভরে ডোরা/মিডেলবাউ বন্দিশিবির
• ১৯৩৮ এর মে মাসে ফ্লোজেনবার্গ বন্দিশিবির
• ১৯৪০ এর আগষ্টে গেস-রোজেব বন্দিশিবির
• ১৯৪১ সালে ইয়ানুস্কা বন্দিশিবির
• ১৯৪৩ এর মার্চে কাইজারওয়ার্ল্ড বন্দিশিবির
• ১৯৩৮ সালের আগষ্টে সাউথ হাউজেন বন্দিশিবির
• ১৯৪১ সালের মে মাসে নাৎসোয়াইলার ষ্ট্রটফন বন্দিশিবির
• ১৯৪০ সালের জুন মাসে নায়েঙ্গামে
• ১৯৩৩ সালে ওরা নিয়েনবুর্গ
• ১৯৪২ সালের জানুয়ারীতে প্লাজোভা বন্দিশিবির
• ১৯৩৯ সালের মে মাসে র্যাভেনব্রুক বন্দিশিবির
• ১৯৩৯ সালে ষ্টুটহফ বন্দিশিবির
• ১৯৪১ সালের নভেম্বরে টেরিজিন বন্দিশিবির
• ১৯৩৯ সালে ভেষ্টারবর্ক বন্দিশিবির
আফসোস আমাদের দেশে আজ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু তৈরি হয়, কিন্ত সামান্য টাকা খরচ করে আমরা আমাদের বধ্যভূমি গুলোর পূর্নাঙ্গ তালিকা করতে পারলাম ন। হায় রে আমার সোনাঝরা দেশ!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।