মন চাই কৈতর হয়ে উড়ি আমি আসমানে আজ অথবা মাছ হয়ে সাতার কাটি জলের গহীনে।
চাকরীর জন্য যারা রাস্তায় আন্দোলন করেছে, তাদের নাকি কাউকে চাকরী দেয়া হবে না। তাদের প্রধানমন্ত্রী চিনে রেখেছেন কাল সাপের চৌদ্দ গোষ্ঠী চিনে রাখার মতো। যারা রাস্তায় আন্দোলন করে, তারা কি করে মেধাবী হয়, প্রধানমন্ত্রীর মতো আলমগীরও এ কথা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।
নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া আলমগীর বের হচ্ছে না কোথাও।
পৃথিবীর ল্যান্ডস্কেপ ম্যাপের মতো টেবিলে বসে বিদ্যার ডিঙি চালা্চেছ সারাদিন। চাকরীর পরীক্ষায় কত কি প্রশ্ন আসে। বাদ যায় না কোনো বিষয়ই। সবজান্তার অজানার মতো নিজের বিষয়ই তার কাছে থেকে যাচ্ছে অজানা। আলমগীর ভূগোলের উপর গ্র্যাজুয়েশন করে বেকার বসে আছে।
যৌবনের কড়া রোদ ঢেকে আছে মেঘে। উপর থেকে চাপ আসছে। পাশ থেকে সরে যাচ্ছে কেউ। আর তো এভাবে থাকা যায় না। কিন্তু চাকরীর আশা ও সুযোগ পাল তোলা নৌকায় বসে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ দেখার মতো।
সার্কুলার হবে; কিন্তু কবে কখন, তা মানমন্দিরে বসে টেলিস্কোপ চোখে রেখে প্লটো গ্রহ আবিস্কারের মতো জ্যোতিবৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার। তবু দৃঢ় চিত্তে অপেক্ষায় আছে আলমগীর নববধূর ঘোমটা টানার মতো সভ্যতার সমস্ত চাওয়া পাওয়াকে উপেক্ষা করে।
আলমগীরের ছোট ভাই এমদাদ মিছিলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ফণা তোলা গোখড়া সাপের মতো মাথা দোলানো সত্ত্বেও। সাংবাদিকদের ক্যামেরার লেন্সের আওতায়ও এসেছে বার কয়েক। পুলিশের দৌড় খেয়েছে- একথা গর্ভ করে বলেছে এ ওর কাছে।
এবং টেলিভিশনের পর্দায় খোজে ফিরেছে তার বীরত্বের দৃশ্যটুকু । কারণ, এদিকে বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদেরই চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এই ভরসায় এমদাদ ভাইয়ের মতো চাকরীর পড়া বাদ দিয়ে আপাদমস্তক সাহিত্যের রসে মগ্ন হয়ে আছে । ক্লাশের যে মেয়েটা একাদিন তাকে যেচে বার্তা পাঠিয়েছিল প্রেমের, অন্য ছেলের সাথে সেই মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে যুতসই একটা গল্প লেখার চিন্তা-ভাবনা করছে এটা সেটা পড়ার ফাকে ফাকে । পরাজয়ের একটা নাকাড়াও বাজে বিস্তীর্ণ প্রান্তরের কোনো এক কোণে ।
মেয়েটা কেন অন্য ছেলের হাত ধরতে গেল? সে তো অন্য কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায় নি এখনো । তাকায়নি বলেই এ রহস্যের দুর্জ্ঞেয়তা এমদাদ অনুভব করতে পারে না ।
শ্রাবণ মেঘের দিনেও আলমগীরের মেজাজ তেমিয়ে আছে। খরচের শেষ টাকাটা নিংড়ে দিয়েছে আরো একটা চাকরীর ফরম পূরণ করার জন্য। এর মধ্যে কোথায় আবার ডেকেছে মৌখিক পরীক্ষার জন্য।
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় কিনা তাই আলমগীরের যাওয়া ভেজা লাল মাটির পথচারীরর মতো থেমে থাকেনি। কিন্তু আলমগীরের মাথা ভনভন করতে লাগল পরীক্ষা স্থলে ঢুকে। সে ছোট বেলায় একবার মামার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়েছিল বড়দের সাথে। বড়দের নির্লজ্জলের মতো দাতঁ দেখতে চাওয়া, চুলের বেণী খোলা, হাটার ভঙ্গি দেখা, পায়ের নখে ঘা আছে কিনা সেটা খুটিয়ে বের করা - সবশেষে মেয়টো যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ল, মেয়টার জন্য আলমগীরের মায়া লেগেছিল খুব। আলমগীরের মনে হলো, মেয়েদের প্রতি অন্যায়ের আয়োজন চলছে যেন এখানে।
গোটা দশ জোড়া চোখ আলমগীরের আমলনামা যেন চেখে চেখে দেখছে।
সাদা-কালো-রঙিন রংয়ে নিজের বয়স ঢেকে রাখা এক সুন্দরী মহিলা আলমগীরকে প্রথম প্রশ্ন করল। বুকটা তেলে বেগুনের মতো চ্যাত করে উঠল তার। - আচ্ছা আলমগীর সাহেব, পৃথিবী যদি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে, তাহলে সূর্য কাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে?
আলমগীরের মাথাটা হঠাত ফাকা হয়ে গেল। কোথায় ঘুরে সেটা বলতে না পারলেও অনুভব করল সূর্য তার আশেপাশেই আছে।
ভূগোল সংক্রান্ত আরো কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে আলমগীর ভাবল, এগুলো চাকরীর পড়া হয় কি করে? নিশ্চয়ই এরা চাকরীরর পড়া সম্পর্কে কিছু জানে না।
পরীক্ষা স্থল থেকে বের হয়ে মুখটা নেতিয়ে পড়া ফুলের মতো হয়ে গেল আলমগীরের । প্রাক্তন এক পরীক্ষার্থী আলমগীরকে জিজ্ঞেস করল, পরীক্ষা কেমন হয়েছে? উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলেটা বলল, আমি ভাই বিজ্ঞানের ছাত্র। প্রত্যেক পরীক্ষা্য়ই প্রথম শ্রেণী পেয়েছি। অবসরে অনেক সাহিত্য পড়েছি ঠিক, কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্রের পক্ষে সাহিত্যের চৌদ্দ পুরুষের কুলজি কিভাবে মনে রাখা সম্ভব বলুন তো ।
ওসব করতে গেলে কি আর প্রথম শ্রেণী পেতাম কোনো পরীক্ষায় ? ওদের জাহাজও চাই, লবণও চাই।
ছেলেটার কথার মাথা-মুন্ডু কিছুই ঢুকল না আলমগীরের মাথায়। তার সন্দেহ হলো আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলমগীরের ভাইও ছিল একথা প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় জেনে গেছে। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এরা । তানাহলে চাকরীর পড়ার প্রসঙ্গ কেন এলো না পরীক্ষায় !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।