সাঁস ভি কাভি বহু থি...থি কেয়া ?!? - পর্ব - ৩
আজকের পর্বটা যেহেতু শেষ পর্ব তাই তুলনামূলক একটু বড়।
আমার স্ত্রী বর্তমানে ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট। সেই হিসাবে শশুড়বাড়ী থেকে তার যতটুকু প্রাধান্য পাবার কথা তার কিছুই সে পায় নি। আট মাস আগে আমার বোনও প্রেগন্যান্ট ছিল এবং তকেে ঘিরে আমার বাবা-মা'র যে চিন্তা এবং যত্ন দেখেছিলাম, তার পুরোটাই এখন অনুপস্থিত। যদিও একই বাসা, একই বাবা-মা...শুধু মেয়েটি অন্যের।
প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাসে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং একটু বাড়তি মনোযোগের প্রয়োজন হয়। তাই সে সময়টা তাকে তার বাবার বাড়ীতেই রেখেছিলাম। সে থাকতে চায়নি, আমিই জোর করেছিলাম। সেই তিন মাসে আমার বাবা একবারও ফোন করে খোঁজ নেয়নি যে তার ছেলের বউ আদৌ বেঁচে আছে কিনা। আমার মা কয়বার ফোন দিয়ছিল, নিজের কিছু প্রয়োজনে।
অখচ এদেরকেই আমার বড় রান্না করে নিজ হাতে প্লেটে খাবার তুলে দেয়। যাইহোক, আমার মা এই সুযোগে সবাইকে বলল, বউ বাপরে বাড়ী গিয়ে পরে আছে তিন মাস ধরে কোন খোঁজ খবর নাই...। কিন্তু এটা বলে নাই যে সে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট...সে অসুস্থ। একবার, মিনারেল কমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। আম্মা শুনে বলল, এটা এমন কিছু না...খামাখা ভর্তি।
আমার বোন যখন প্রেগনান্ট ছিল তখন সে প্রায় সারাদিনই শুয়ে বসে কাটাতো। আর আব্ব-আম্মা পারলে মুখে তুলে খাওয়াতো। আর আমার বউ সারাদির অফিস করে সন্ধা সাতটায় বাসায় ফিরে রান্না করে খায় এবং খাওয়ায়। তার শাশুড়ী সেই সময়টা বসে বসে স্টার জলসাতে সিরিয়াল দেখে। একবার রান্নাঘরে উঁকি দিয়েও দেখে না।
বরং সুযোগ পেলে একটা-দুটা কথা শুনিয়ে যায়।
তারা তাদের সুইডেনের নাতীর সাথে নানারকম রংঢং করে স্কাইপেতে কথা বলে। ওরা দেশে আসলে কি করবে তার প্ল্যান করে। কিন্তু আমার সন্তান নিয়ে তাদের কোনই মাথা ব্যাথা নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখতে তাদের কোন আগ্রহ দেখা যায় না।
আমার বউই আগ্রহ নিয়ে দেখাতে যায়। আমার মা ভ্রু কুুঁচকে দেখে নির্বিকারভাবে ফেরত দিয়ে দেয়। কখনই জানতে চায় না বাচ্চাটা পেটের ভিতর কি করে কিংবা এই অবস্থায় বউটার কষ্ট হচ্ছে কিনা। কিম্বা এই অবস্থায় কি করণীয় বা কোন উপদেশ কিছুই দেয় না। নিজের প্রতি, স্ত্রীর প্রতি অবহেলা মেনে নেয়া গেলেও নিজের সন্তানের অবহেলা সহ্য করা যায় না।
পরিশিষ্টঃ
আমদের মনে রাখা উচিত, ছেলের বউ ছোট করা মানে হল নিজের ছেলেকেই ছোট করা। তাকে কষ্ট দেয়ার মানে হল ছেলেকেই কষ্ট দেয়া। এভাবে কখনই ছেলেকে কাছে পাওয়া যায় না। আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে জন্ম দিলেও অন্যের আদরের মেয়েকে অবহেলা কিংবা ছোট করার অধিকার তাকে কেউ দেয়নি। আমার বউ তার বাবা-মা'র কাছে ঠিক ততখানিই আদরের ঠিক যতখানি আমার বোন আমার বাবা-মা'র কাছে।
আমার বাবা-মা দুজনেই অনেক শিক্ষিত, সমাজে অনেক প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা জাগে না। কারণ সেটা অর্জন করে নিতে হয়। তারা সেটা পারে নি। এটা তাদের ব্যর্থতা।
অন্যকে ছোট করে নিজে কখনো বড় হওয়া যায় না। আমি সৌভাগ্যবান যে আমার এমন একজন স্ত্রী আছে যে কিনা একা একা সুখী হতে চায় না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চায়। সে কখনই এসব নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করে না। খুব মন খারাপ লাগলে হয়তো হতাশ হয়ে কেঁদে ফেলে।
আমি যতটুকু পারি তাকে সময় দেই, সাহায্য করি যাতে সে একা বোধ না করে।
সবাই আমদের জন্য আমাদের সন্তানের জন্য দোয়া করবেন, কারণ এটাই শেষ পর্যন্ত কাজে দেবে। সকলকে ধন্যবাদ!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।