আসুন উষ্কানী মূলক রাজনৈতিক বক্তব্য পরিহার করি।
রান্না করা তরকারীর ও ভাতের পাতিল রাখার রেক।
এই,ই,ডি টিভি, গত ২০১৩ মার্চ মাসে কিনে ছিলাম ৬ জন রুমমেট মিলে ৭০ দিনার দিয়ে , যার বাংলাদেশ টাকার মূল্য প্রায় = ১৯ হাজার টাকা মত হবে। আমাদের বিনোদন আর দেশের খবর পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম।
ওভারড্রয়ার উপরে বসানো হয়েছে আমাদের রুমের টিভিটি, তার আশে পাশে দেখা যাচ্ছে প্রচুর এলো মেলো অগোছানো কাপর, কারণ কুয়েতে এখন শীত কাল, কাপড় সহজে শুকায়না, যার যেই ভাবে ইচ্ছা রুমের ভিতর কাপড় শুকাতে দেন, অনেক সময় দেখা যায় ৭/৮ দিনপরও শুকাতে দেওয়া কাপড় এই ভাবে রশির সাথে ঝুলতে থাকে, গুছানোর কেউ নেই,
আমাদের রুমে একটি খাট এখনো খালি পড়ে আছে , কেউ থাকেনা এখানে, খালি খাটটি ব্যাবহার হয় অনেকটা ষ্টোর রুমের মত, আউলা ঝাওলা করে রাখি সবার কাপড় , ব্যাগ, কাগজ পত্র, খাবার, খাটের নিচে যেই যেভাবে ইচ্ছা সেই ভাবে রেখেছে যার যার জিনিস পত্র।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে , একটি অ-গোছালো কম্বল, তার উপর পড়ে আছে একটি লুঙ্গী, হ্যাঁ এই ভাবে আমাদের সকাল শুরু হয়, ঘুম থেকে উঠার পর খুব কম প্রবাসী বেচলার তার বিছানা গুছিয়ে রাখেন, শুধু তায় নয়, সকালে ঘুম হতে উঠার পর নিজের লুঙ্গীটাও ভাজ করে রাখেনা বেশীর ভাগ প্রবাসী বেচলার। প্যান্ট পড়ে লুঙ্গটা এই ভাবে বিছানায় রেখে চলে যাই ডিউটিতে।
অরেকটি বিছানা দেখুন, ঠিক পুর্বের ছবির মত অগোছালো, সবার এই কান্ড।
রুমের একপার্শ্বে এলোমেলো পড়ে আছে কাপড় ইস্ত্রী করার আইরন, ধুদের টিন, ও এটি ড্রাম, ঘরের চার পার্শ্বে এই ভাবে এলো মেলো ইচ্ছামত জিনিস পত্র রাখি আমরা।
এই কম্পিউটারটি আমার, এই কম্পিটার হতে সামুতে ব্লগ লিখি, বেশ পুরানো কম্পিটার, খুব অল্পদামে কিনেছি, ৩.৬৯ গিগা প্রেসসর আর ১.৯৯ গিগা রেম, মুল্য মাত্র ২০ দিনার , মানে বাংলাদেশ টাকার হিসাবে প্রায় ৫ হাজার।
প্রতিমাসে ইন্টার নেট কানেকশন বাবদ দিতে হয় ৫ দিনার, ৫ দিনার সমন প্রায় ১২ শত টাকার চেয়ে কিছু বেশী হবে, ব্রাডবেন্ড ইন্টারনেট কানেকশন, পার্শ্বের রুমের এক মিশরীর কাছে এই সংযোগটি নিয়েছে, তার সামনে একটি পুরানো চেয়ার। চেয়ারটিও একজনের কাছে হতে প্রি পাওয়া।
আমাদের প্রাবস ব্যচেলারদের রান্নঘর, প্রতি সাপ্তাহে পালা করে এক একজন করে পরিষ্কার করি আমরা।
আমাদের রান্না করা গ্যাসের চুলা ও দুটি গ্যাস সিলিন্ডার, কুয়েতে কোন পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়না, কারণ পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ অতিরিক্ত গরমে আবাসিক এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তায় নিজ দায়িত্বে সিলিন্ডা গ্যাস নিজেকে কিনে নিতে হয়, মজার বিষয় কুয়েতে প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস বর্তী জন্য দিতে হয় মাত্র ০.৭৫০ পিলস, মানে ১০০০ পিলস = ১ দিনার, আর ১ দিনার = বাংলাদেশ টাকার হিসাবে প্রায় ২৮০ টাকা মত হবে। অর্থাৎ প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ২৮০ টাকার চেয়েও কম, যদিও কুয়েতে তেল থাকলও কোন গ্যাস নেই, তারপরও গ্যাসের মূল্য খুব কম , আর আমাদের দেশে প্রতিসিলিন্ডার গ্যাসের বর্তমান মুল্য প্রায় ১৫০০০ টাকা।
আমারা সবাই মিলে ২ টি সিলিন্ডার কিনেছি, প্রতি সিলিন্ডার দিয়ে আমাদের প্রায় ১৮ হতে ২০ পর্যন্ত চলে।
পানির ফিল্টার, দুইটি ফিল্টার লাগিয়েছি আমরা আমাদের রুমে, দুইস্তরের ফিল্টারের পর আমরা পানি পান করে, কারণ কুয়েতের পানিতে মাত্ররিক্ত আইরন থাকে। কুয়েতের বেশীর ভাগ এলাকায় আমাদের দেশের মত ওয়াশার পাইপ লাইন দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়না, বড় বড় ট্রাংঙ্ক লরির সাহায্যে পানি বিতরণ করা হয় প্রতিটি বড় বড় বিল্ডিংয়ের ছাড়ে বড় বড় পানির ট্যাংক স্থাপন করা হয়, মোটরের সাহায্যে পানি উপরে তোলা হয় তারপর রুমে রুমে পানি বিতরণ করা হয় । কুয়েতে বিশুদ্ধ পানির মুল্য বেশ উচ্চ, প্রতি দেড় লিটার বোতলের দাম ১০০ ফিলস, মানে বাংলাদেশ টাকার হিসাবে প্রায ৩০ টাকা।
রান্না করার সিলবারের পতিল, বেশ কালো হয়ে গেছে পাতিলের নীচের অংশের দিকে, ভাল করে পরিষ্কার করা হয়না, যাষ্ট সাবান দিয়ে কোন রকম তেল চর্বি ধুয়ে দেওয়া হয়, আমারা মোট ৬ জন রুম মেম্বার আছি , সই হিসাবে পাতিলের সংখ্যা খুবই কম, কোন রকম এটি তরকারী আর এক পাতিল ভাত হলেই চলে যায।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে দেওয়ালের একটি অংশ হলুদ হয়ে গেছে, আসলে এটি কোন রং নয়, চুলার পেচনের অংশ, রান্না করতে করত চুরার আর তেলের চর্বির ধোঁয়ায় এই রকম হলুদ দাগ পড়ে গেছে।
সমল্লা রাখার ছোট রেখ, ছোট ছোট কৌঠায় লবণ, মরিছ, হলুদ কারী পাওডার রাখি এই ভাবে, এটি চুলার উপরে স্থাপন করা হয়েছে।
আমাদের রুমের ফ্রিজ, সাইজে একটি ছোট , ছোট হলেও বেশীর ভাগ সময় খালি পড়ে থাকে ফ্রিজটি, তবে গরমের সময় পানির বোতলে ভর্তী হয়ে থাকে সারাক্ষণ, মধ্যপ্রচ্যের গরমের মাত্র এত পখর আর শুষ্ক ঠান্ডপানি ছাড়া তো গরম কালে জীবন কল্পনাকরা অসম্ভব। বিশেষ করে আবহাওয়ার শুষ্কতার কারণে ঘন ঘন পিপাসা পায়।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাদা রংয়ের একটি ড্রাম, আসলে এটি একটি পানি গরম করার বৈদুৎতিক হিটার, সারাক্ষণ অটোমেটিক ভাবে এই হিটার পানিকে গরম করে রাখে।
শীত কলে কুয়েতের তাপমাত্র প্রায় ১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেটের নীচে নেমে আসে, এই শীতে ঠান্ডপানি দিয়ে গোসল করা মারাত্বক কঠিন হয়ে পড়ে , তায় শীত কালে এই হিটার ব্যাবহার করা হয় পানি গরম করার কাজে।
রান্না ঘরের জানালা দিয়ে তোলা বাইরের একটি ছবি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কিছু ছুরি, এগুলো আমাদের রান্নার কাজে ব্যাবহার হয়, বটি দা ব্যবহার করিনা, শুধু পাতলা ছুরি দিয়ে ছলে আমাদের যাবতীয় রান্নার কুটাকুটির কাজ।
আমাদের রুমের জানালা দিয়ে তোলা আরোও একটি বাইরের ছবি।
টয়লেটা খানিকটা পরিষ্কার, কারণ এই টয়লেট পরিষ্কার কাজে সবচেয়ে বেশী পরিশ্রম করি আমি নিজে, টয়লেট পরিষ্কার নিয়ে রুমে সবার সাথে অনেক বার কথা কাটা কাটি আর ঝগড়া হয়েছিল অনেকবার, সহজে কেউ টয়লেট পরিষ্কার করত চায়না, কি আর করা নিজেই নিয়ে নিলাম টয়লেট পরিষ্কারের কাজটি।
কিন্তু দুঃখ জনক ব্যপার আমাদের রুামের কয়েজন মেম্বার সেভ করে রেজারটি টয়লেটে ভিতর রেখে চলে আসেন।
আগে আমাদের রুমে কাপড় ওয়াশিং মেশিন ছিলনা, সারাদিন কাজে শেষে কাপড় ধোয়া ছিল মারাত্বক একটি কঠিন আর কষ্টকর ব্যাপার, অবশেষে রুমের সাবই মিলে সিদ্ভান্ত নিলাম একটি ওয়াশিং মেশিন কিনবো, কিন্তু ৬ জনের মাঝে একজন ওয়াশিং মেশিন কিনতে রাজী না, কারণ ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ওয়াশ করলে মেশিনের অতিমাত্রয় স্পিনিং কারণে কাপড়ে তারতাড়ি ছিড়ে যায় আর সুতা খুলে যায়, শার্টের বোতাম খুলে যায়, তায় একজন রাজী হয়নি, তিনি টাকাও দেওয়নি , আমারা বাকী ৫ জন ওয়াশিং মেশিনটা কিনলাম, পরে দেখি কথা সত্য ওয়াশিং মেশিনে কাপড় পারিষ্কার করলে কাপড় তারাতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় আর ছিড়ে যায়।
রুম ও রান্না ঘরের ময়লা ফেলার ছোট ঝুড়ি, সাবই ময়লা ঝুড়িতে ফেলবে কিন্তু প্রতিদিন এই ময়লার ঝুড়ি বাইরে ডাষ্টবিনে ফেলতে কেউ রাজিনা। অনেক সময় দেখা যায় দুই তিন দিনও কেউ এই ময়লার বাস্কেটটি বাইরে ডাষ্টবিনে ফেলেনা। এই নিয়েও ঝাগড়া হয় প্রায়।
রুমের বাইরে রাখা এটি ছোট কাটের বক্স, এর ভিতর আমারা সবাই জুতা রাখি।
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন একটি বক্স, এটি এয়ার কুলার, গরম কালে এটি অবশ্য চালু করতে হয়, কুয়েতে এতই গরম যে এসি ছাড়া যে কোন রুমে থাকা মহা মুশকিল। এই এসি নিয়েও রুমের মেম্বাদের সাথে ঝগড়া হয়, একজনের দরকার অতিমাত্রায় ঠান্ডা, এক জনের মিডিয়াম, মহা ঝামেলা, তবে একবার মারাত্বক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম, কারণ গরমের সময় হঠাৎ আমার জ্বর উঠে, আমি ঠান্ড কোন অবস্থায় সহ্য করতে পারতে ছিলাম না, উপায় না দেখে দুই তিন দিন ছিলাম বাইরের খোলা বেলকনিতে।
আশাকরি সবাই বুঝতে পারবেন বিদেশের ব্যাচেলার লাইফ কষ্ট আর সংগ্রামের, সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয়, টয়লেট নিয়ে, ৬ জনের জন্য একটি টয়লেট, সকালে সাবই একসাথে ডিউটিতে যাই তখন খুবই ঝামেলা পোহাতে হয়। আবার বিকালেও সাবই একসাথে একই টাইমে ডিউটি হতে রুমে ফিরে আসে তখন টয়লেটে গোসল করা নিয়ে ঝামেলায় পড়ে হয়।
একজন ঘুমাচ্ছেন অন্যজন এসে রুমের লাইট অনকরে দেন তখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, আবার অনেক সময় টিভি চালু করে দেন, অনেক সময় উচ্ছ স্বরে কথা বলেন, সাবই ঘুমাচ্ছে গভীর রাথে মোবাইল ফোনের রিং টোনে অনেক সময় ঘুম ভেঙ্গে যায়, মহা মুশকিল আর কঠিন বিদেশের ব্যাচেলার জীবণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।