আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়ের অভিযাত্রা – Time Travel [MEGA TUNE]

 
আমার টিউন টি আমার বাবার লেখা আর্টিকেল থেকে নেয়া। আশাকরি ভালো লাগবে।
http://scienceinquran.tk

সূধী পাঠক, আমরা, সাধারণেরা যখন কোন জটীল বিষয় নিয়ে হোঁচট খাই তখন সমাধানের জন্য যাই জ্ঞানী-গুণিদের কাছে,যারা চিন্তাভাবনা করেন। আবার যখন কোন বৈজ্ঞানীক বিষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখন তাকিয়ে থাকি বিজ্ঞানীর কি বলেন, সেদিকে; কারণ তারাও চিন্ত ভাবনা করেন। তারা প্রকল্পিত বিষয়ের উপর গবেষণা করে নিজেদের অভিমতকে তত্ত্বরুপে আমাদের কাছে পরিবেশন করেন,আমরা অবাক হই।

সময়ের ব্যবধানে সেই তত্ত্ব সূত্ররূপে চিরন্তন সত্যের রূপ ধারণ করে। আমরা তা কণ্ঠস্থ করি,প্রকৃতির নীতি বলে মেনে নেই,মনে করি এটিই পরম সত্য। সব সূত্রকেই যেমন একেবারে নিঃকণ্টক বলে মেনে নেওয়া যায়না তেমনি কোন কল্পনাকেও একেবারে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়না কারণ কল্পনার দর্শণ থেকেই প্রকল্পের উদ্ভব ঘটে আর দিনে দিনে তা থেকে সৃষ্টি হয় সূত্রের।   একদিন  কল্পনার রাজ্যে যা থাকে কুঁয়াশায় ঢাকা,কোনদিন তারই দেখা মিলে সত্যের কাঠ গড়ায়। তাইতো আজ যা বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের কল্পনা,সময়ের বিবর্তেনে হয়ে উঠবে আমাদের জীবনে নিত্য।


                                       
সময় ভ্রমন বা Time Travel বিজ্ঞানীদের কাছেও এমনিতর একটি কল্পনা, বিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্ন স্থানের মধ্যে সময়মত ভ্রমন যা মহাশূণ্যে দুই স্থানের মধ্যে ভ্রমনের সাদৃশ্য। টাইম ট্রাভেলকে তাত্ত্বিকভাবে বলাযেতে পারে সময়ের সাথে পিছন দিকে ফিরে যাওয়া যা পূর্ব মুহুর্তে অতীত হয়ে গেছে, বা এই ক্রমে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া যা আসবে পরমুহুর্তে; ভ্রমনার্থীর মধ্যবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতার প্রয়োজনে নয়। বিষয়টি প্রকৃতই কাল্পনিক ব্যপার। এই সময় ভ্রমনকে সময় মেশিন ও বলা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে পুরানো অনেক গল্প রয়েছে,যেমনটা রয়েছে হিন্দু পুরাণে তেমনি রয়েছে বৌদ্ধ কাহিনীতে।

সময়ের আপেক্ষিকতার কিছু কছু ইঙ্গিত ঐসমস্ত গল্পে খুঁজে পাওয়া যায়,তবে তা আজাকের বিজ্ঞানের হিসেবের মত নয়,য়েমন হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে রাইবত কাকুদমী(Raivata Kakudmi,)স্বর্গে বহ্মার সাথে দেখা করতে গিয়ে ফিরে এসে অনুভব করেছেন যে তার অনেক বয়স পার হয়ে গেছে। বৌদ্ধমতে স্বর্গ দেবতাদের বিভিন্ন জন বিভিন্ন গতিতি সময় অতিবাহিত করে, এমনকি মানুষ ও সেখানে দীর্ঘদিন বাঁচ। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানেও এ ধরনের ধারনা দেওয়া হয়েছে, গুহাবাসীদের কাহিনীআরশের একদিন পৃথিবীর একদিন, ফিরিশতাদের চলাচলের সময় একদিনে পৃথিবীর পঞ্চাশ হাজার বসরের সমান সময় অতিবাহিত করে করে্,..ইত্যাদি। এমনি ভাবে জাপানী গল্পে তরুন মাছশিকারীর ভবিষ্যতে ভ্রমনের গল্পও রয়েছে। আধুনিক কালেরও এমনি অনেক গল্প রয়েছে যেখানে ভবিষ্যত কালে ভ্রমনের অনেক গল্প বর্ণিত হয়েছে।

সূধী পাঠক আমরা এ সকল গল্পের বিবেচনায় আলোচনা করছিনা,এ শুধু প্রচলিত ধারনার ইঙ্গিত দেওয়া হল,আমাদের আলোচ্য বিষয় হল এ বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলছে।
পুরাণকাহিনী বা আধুনীক গল্পে যে শুধূ ভবিষ্যত ভ্রমনের কথাই বলা হয়েছে তা নয়, অতীতে গমনের কাহিনীও বহু ভাবে কাহিনী-গল্পে প্রোথিত হয়েছে। শুধু যে পুরাণ কাহিনীতে গল্পরূপেই চলে আসছে তা নয় ,এ নিয়ে বিজ্ঞান সমাজে উঠেছে চিন্তার ঢেউ। বিজ্ঞানীগণ নানা পরীক্ষা নীরিক্ষা ও শ্রম দিয়ে নানাজন নানাভাবে প্রস্তাব করেছেন এই সময়ের অভিগমন নিয়ে। কল্পনার রাজ্যে সময়কে নানাভাবে বিবর্ধন বিবর্তন ও সঙ্কোচন করে দেখেছেন যে সময় স্থির নয়,মহাবিশ্বের কন্দরে কন্দরে সময়ের যাত্রা ঐকতানীয় নয়; যেন দেবতার রাজ্যে সময় রাজার শাসনে চলে।

সময়ের এই বিষম চলনে বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর সামনে।
সকলেরই ধারণা সময় একটি স্থির বিষয়। পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন দেখিয়েছেন যে,সময় হল মায়া বা বিভ্রম, এটি আপেক্ষিক। বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের কাছে সময় বিভিন্ন রকমে অনুভূত হয় আর এই অনুভব নির্ভর করে মহাশূণ্যে তার নিজস্ব গতির উপর। আইনস্টাইনের কাছে সময় চতুর্থ মাত্রা যেখানে মহাশূণ্যকে বলা হয় তিনমাত্রার ক্ষেত্র অর্থাৎ যার রয়েছে দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা কিন্তু সময়ের রয়েছে আরেকটি মাত্রা যাকে বলা হয় ‘দিক’।

প্রথা অনুযায়ী সময় শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে চলে; তাই নতুন তত্ত্বে বলা হচ্ছে সময়‘বাস্তব’,কিন্তু অধিকাংশ পদার্থবিদ মনে করেন সময় কূহেলিকা। আবার আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ( special relativity) বলছে সময় ধীর বা ত্বরাণ্বিত হওয়া নির্ভর করে কোনকিছুর সাপেক্ষে ‌পর্যবেক্ষকের গতির উপর। আলোর গতির কাছাকাছি কোন মহাশূণ্য যানে কোন নভোচারীর বয়স বাড়িতে তার জমজ ভাইয়ের চেয়ে অনেক কমে যাবে। আবার আইস্টাইনের সধারন আপেক্ষিকতাবাদেও মহাকর্ষ সময়কে বাকিয়ে দিতে পারে। চারমাত্রায় বোনা চিত্রকে বলা হয় মহাশূণ্য-সময়(space-time); যখন কোন পদার্থভর এই জালের উপর স্থাপিত হয় তখনই সময়ে টোল পরে বা বেকে যায়।

মহাশূণ্য সময়ের এই টোল পরা বা বক্রতা সেই বস্তকে বক্র পথে যেতে বাধ্য করে। মহাশূণ্যের এই বক্রতাকেই বলা হয় মহাকর্ষ। সেটেলাইট উড্ডয়ন পরীক্ষায় সাধারণ ও বিশেষ আপেক্ষিকতা বাদ  সঠিক প্রমানিত হয়েছে অর্থাত নভোচারীদের পৃথিবীর পর্যবেক্ষনের সময় পৃথিবীর তুলনায় প্রতিদিন ৩৮ মাইক্রো সেকেণ্ড সময় সাশ্রয় হয়, অর্থাত সেই অনুপাতে তাদের বয়স কমে যায়। আর এই ঘটনাকেই বলা হয় সময়ের বিস্তার বা প্রলম্বণ( time dilation)। তাহলে বলা যায় নভোচারীরা সময়ের অভিযাত্রী( time travelers)।

এই সময়অইভযাত্র বিভিন্ন উপায়ে ঘটেত পারে;তন্মধে-
নাসার (NASA)তথ্য অনুযায়ী সাধারণ আপেক্ষিকতা বাদ কোন অভিযাত্রীকে তাত্ত্বিক ভাবে অতীতে ফিরে যেতে সাহায্য করে। তবে সশরীরে তা অর্জণ করা খু্বই জটীল বিষয়; শুধুমাত্র তখনই তা সম্ভব যখন ঐ অভিযাত্রী আলোর চেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়। আইনস্টাইনের সমীকরণ যদিও দেখায় যে, কোন বস্তু আলোর গতিতে অসীম ভর ও শূণ্য দৈর্ঘ প্রাপ্ত হয়; আর এই বিষয়টি বাস্তবে অসম্ভব; যদিও কিছু বিজ্ঞানী বলছেন তা করা অবশ্যই সম্ভব। তদুপরী আইনস্টাইনের সূত্রে এই অভিযাত্রা সুদূর প্রসারী,কারণ বিষয়টি এখনও কাল্পণিক। প্রায় সম্ভবনাহীন।

সূত্র- ওয়েভসাইট Space.com
আইনষ্টাইন-রোজেন ব্রীজ বা ওয়ার্মহোল যাকে মহাজাগতিক সুড়ংও বলা চলে তা হল মহাশূণ্যে সময়ের কাল্পনিক নিঁখুত চিত্র; প্রকৃতপক্ষে যাকে বলা যায় মহাশূণ্যে সময়ের সংক্ষিপ্ততা। ওয়ারমহোল অনেকটা সুড়ং এর মত যার দুই প্রান্ত মহাশূণ্য সময়ের  দুই অবস্থানে, এটি চারের অধিক মাত্রায় অদৃশ্য কাঠামো। সহজ করে বলা চলে ওয়ারমহোল হল দ্বিমাত্রা তলে  মনশ্চক্ষুতে দেখা মহাশূণ্যের সময়। তলটি যদি তৃতীয়মাত্রায় ভাঁজ হয়ে আসে তবে তা ওয়ার্মহোল সেতুর সাদৃশ্য হয়। ওয়ার্মহোলের মুখ দ্বিমাত্রাতলে ছিদ্রর মত হয় ফলে তিনমাত্রায় এটি স্ফিতাকার হতে পারে।


সাধারন রিলেটিভিটি তত্ত্বের আঙ্গিকে পদার্থবিদগণ এমন কোন পদ্ধতি খুঁজে পাননি যে, প্রকৃতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে কোন ওয়ার্মহোল তৈরী হতে পারে। তথাপি কোয়ান্টাম ফোম হাইপোথিসিস (quantum foam hypothesis) মতে বলা হয়ে থাকে যে, কখনো কখনো অতি ক্ষুদ্র মাত্রায় (Planck scale)ওয়ার্মহোল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়ে থাকে। স্থায়ী ওয়ার্মহোল তখনই হতে পারে যখন তা কৃষ্ণপদাথের তৈরী হয়। আরো প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বিগব্যাঙের সময় ঋণাত্বক পাদার্থ তথা মহাজাগতিক তন্তু(cosmic string) থেকে সৃষ্ট ওয়ার্মহোল মহাজাগতিক স্ফিতির ফলে তা মেকরোস্কোপিক আয়তন ধারণ করেছে। আমেরিকান পদার্থবিদ জনআর্কিবাল্ড হুইলার(John Archibald Wheeler) ১৯৫৭ সালে ওয়ার্মহোল শব্দটি উপস্থাপন করেন,কিন্তু তার আগে জার্মান গণিতজ্ঞ হারমান উইল (Hermann Weyl) ১৯২১ সালে তরিৎচুম্বক ক্ষেত্র শক্তির ভর বিশ্লেষণের সময় ওয়ার্মহোল তত্ত্বের প্রস্তাব করেন।


                                  
বিজ্ঞানীরা বলছেন,আন্ত মহবিশ্ব ওয়ার্মহোলকে বর্ণনা করা অনেক কঠিণ, উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে শিশু মহাবিশের সাথে তার মাতৃ মহাবিশ্বের রয়েছে সরু নাড়ির সম্পর্ক; আর তাকেই বলা যেতে পারে ওয়ার্মহোলের সরু গলা। কিন্তু মহাজাগতিক সময় সাধারন ভাবে সমম্পর্কিত। আর এ কারণেই ওয়ার্মহোলকে জ্যামিতিক উপায়ে বর্ণনা করা হয়; যদিও মহাশূণ্য সময় যা বদ্ধ ক্ষেত্রের বর্ধণশীল বিকৃত করণকে বাধ্য করে সে,কারণে লক্ষণবৈশিষ্ট তার বিরূদ্ধাচারণ করে। Enrico Rodrigo তার The Physics of Stargates গ্রন্থে ওয়ার্মহোলকে বর্ণনা করেছেন এই ভাবে যে, মহাজগতিক নালি(world tube) (বদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে সময়ের বিবর্তণ) সমৃদ্ধ মহাশূণ্য সময়ের এক অঞ্চল যে কোন কারণেই হোক সার্বক্ষণিক বিকৃত করতে (কুঞ্চিত)  পারেনা
আলবার্ট আইস্টাইন ও নাথান রোসেন ১৯৬২ সালে তাদের গবেষনা পত্রে লিখেছেন যে,কোন ওয়ার্মহোল যখন একই মহাকাশে গণ্ডিবদ্ধ হয় অর্থাৎ তার দুই প্রান্ত যদি একই আকাশে থাকে তবে তারা ক্ষণস্থায়ী হয় এবং তা কোন দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে গমনকারী আলো বা আলোর চেয়ে কম দ্রুতি সম্পন্ন কনার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। দুই মহাকাশকে সংযুক্তকারী স্করচাইল্ড( Schwarzschild ) ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একমুখী গতি সম্ভব।

আইস্টাইন-রোসেন সেতুর মধ্য দিয়ে অধিক ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু কণার অক্ষকেন্দীক ঘূর্ণন গতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে,কণার সঠিক ‘সময়’ বর্ধিত হতে পারে অসীম পর্যন্ত। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে আইস্টাই-রোসেন সেতু ও লরেঞ্জিয়ান (Lorentzian) ভ্রমনযোগ্য ওয়ার্মহোল দিয়ে একই মহাবিশ্বের দুই প্রান্তে উভয়দিকে খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায়,শুধু তাই নয় এটি দিয়ে অন্য মহাবিশ্বেও যাতায়াত করা সূগম্য। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে ভ্রমনযোগ্য ওয়ার্মহোল পাওয়ার সম্ভবনা প্রথম আবিস্কার করেন কিপ থর্ন (Kip Thorne) এবং তার ছাত্র মাইক মরিস(Mike Morris) ১৯৮৮ সালে। ভ্রমনযোগ্য ওয়ার্মহোল রূপে তারা ঋণাত্মক পদার্থের স্ফীতাকার খোলা মুখের বর্ণনা করেছেন। এই ওয়ার্মহোলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মরিস থর্ন ওয়ার্মহোল’
বিজ্ঞানীদের ধারনা মতে লরেঞ্জিয়ান (Lorentzian) ভ্রমনযোগ্য ওয়ার্মহোল দিয়ে একই মহাবিশ্বের দুই প্রান্তে উভয়দিকে খুব দ্রুত যাতায়াত করা সম্ভব,শুধু তাই নয় এটি দিয়ে অন্য মহাবিশ্বেও যাতায়াত করা সূগম্য হতে পারে।

পরবর্তীতে অন্য প্রকার ভ্রমনযোগ্য ওয়ার্মহোলের ধারণাও এসেছে। ১৯৮৯ সালে প্রচুর গবেষণা করে মথ ভিসার (Matt Visser,) ঘোষনা করেন যে,ওযার্মহোলের মধ্যদিয়ে যাতায়াত তখনই সম্ভব হেব যদি ঋণাত্মক পদার্থ অঞ্চলের মধ্যে সঙঘটিত নাহয়। যাইহোক বিশুদ্ধ গস-বোনেট গ্রাভিটির মধ্যে(বিশিষ মাত্রায় মধ্যাকর্ষণের বিবর্তন (Gauss–Bonnet gravity) (a modification to general relativity involving extra spatial dimensions which is sometimes studied in the context of brane cosmology)। ওয়ার্মহোল কে টিকে থাকতে ঋণাত্মক পদার্থের প্রয়োজন হয়না। তারা কোন পদার্থ বিহীন অবস্থায়ই টিকে থাকতে পারে।

ভিসের ও ক্রেমার (Visser in collaboration with Cramer) মিলিত ভাবে প্রস্তাব করেন যে, ঐ পদার্থ সম্বলিত ওয়ার্মহোল তৈরী হয়েছিল মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর‌্যায়ে যখন মহাজাগতি তন্তুর প্রাবল্য ছিল বেশী।
                                           
ওয়ারমহোল দু’টি ভিন্ন স্থানকে সংযুক্ত করে মহাশূণ্যের সময়ে যার মানে হল যে,তারা নীতিগতভাবে যেমন সময়ের যাত্রাকে সমর্থন করে, তেমনি সমর্থন করে অবস্থানের পরিবর্তন কে। অবস্থাটাকে অনেকটা এমন ধরে নেওয়া যায় যে, আপনি খুব সকালে আপনার বাড়ী থেকে রওনা করে কোন এক পথ দিয়ে খুব দ্রুততার সাথে অল্প সময়ে মহাজগতের অন্য কোন অঞ্চলে চলে গেলেন,সেখানে গিয়ে দেখলেন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘণিয়ে আসছে; তখন আপনার কাছে কি মনে হবে? মনে হবে সারাটা দিনই বুঝি ভ্রমন করে এলেন। আবার ফিরে এসে দেখলেন আপনার বাড়ীর মানুষ কউ নাস্তা করেনি। এই অনুভূতিটাই হল ওয়ারমহোলে যাত্রার বিশেষত্ব।

অর্থাৎ কল্পনার রাজ্যের একটা অনুভুতি। বিজ্ঞানীদের ধারনা মানুষ যেদিন ওয়ারমহোলে ভ্রমন করবে সেদিন এই ধরণের সময় অতিক্রমের অনুভূতিটাই হবে ওয়ারমহোল যাত্রার অভিজ্হতা। এটি হল সময় পরিবর্তনের একটা অনুভব।
                                            
সাধারন আপেক্ষিকতাবাদ মনে করে যে, যদি ভ্রমনযোগ্য ওয়ারমএহাল থাকে তবে তাদের মধ্য দিয়ে সময়ের ভ্রমন(time travel)সম্ভব। আর এরকম সম্ভব হয় তখনই যখন ওয়ারমেহোলের একপ্রান্ত অন্য প্রান্তের তুলনায় দ্রুত বেগের  ত্বরাণ্বিত হয় এবং কিছুক্ষণ পর আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে;এর ফলশ্রুতিতে বাইরের কোন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে ওয়ারমহোলের ত্বরাণ্বিত মুখে কম ত্বরাণ্বিত অপর মুখের তুলনায় সময়ের আপেক্ষিক প্রলম্বণ দেখা যাবে।

যাই হোক বাইরের চেয়ে  ওয়ারমহোলের ভিতরে সময় ভিন্ন ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে। সুতরাং প্রতি মুখে ভ্রমনকারীর সমন্বিত ঘরি ওয়ারমহোলের সাথে সমন্বিত হয়ে যায়,মুখটি কি ভাবে নড়াচড়া করছে তার উপর নির্ভর করেনা। তার মানে হল এই যে, যখন কোন কিছু কোন ওয়ারমহোলের তরান্বিত মুখে প্রবেশ করে তখন স্থির মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় সময়ের এমন এক অবস্থায় যেন তা তার ঢ়ুকার পর্বের সময়।
উদাহরণ স্বরূপ ধরে নেই কোন ওয়ারমহোলের দুই মুখে দু’টি ঘরি রয়েছে উভয়েই ২০০০ সাল দেখাচ্ছে, আপেক্ষিক গতিতে ঘুরে এলে ওয়ারমহোলের ত্বরাণ্বিত মুখ এই অঞ্চলে ফিরে আসবে, স্থির মুখের মত ত্বরাণ্বিত মুখের ঘরির পাঠের সাথে ধরে নেই তা 2004 যখন স্থির মুখের ঘরির পাঠ হবে 2012; একজন ভ্রমনকারী এই সময় ত্বরাণ্বিত মুখে প্রবেশ করলে সে স্থির মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে যখন সেই ঘরিরও পাঠ হবে 2004 একই অঞ্চলে,কিন্ত এখন সে 8আট বছরের অতীতে। এই ধরণের ওয়ারমহোল সুযোগ করে দেয় মহাজাগতিক কোন বস্তুকণাকে  মহাশূণ্য সময়ে চক্রের সৃষ্টি করার।

সূত্র-ওয়ারমহোল উইকিপিডিয়া
সূধী পাঠক আমরা উপরে আলোচনায় বুঝতে পারলাম যে কোন অভিযাত্রীর পক্ষে সময়ের অগ্রে বা পশ্চাতে গমন সম্পূর্ণই কাল্পণিক অনুভূতির বিষয়,আজও যা বিজ্ঞানীদের কাছে প্রকল্প মাত্র। এই প্রকল্পের ভবিষ্যত ভবিষ্যতেই নিমজ্জিত। আমরা আজও জানিনা মানুষের এই অভিযান সময়ের কোন পর্যায়ে শুরু হবে, তবে এই ধারনাটি যে এখন সেই পূরাণিক কাহিনী নয়,বিজ্ঞানেরও গবেষণার বিষয় তা আমরা জেনে গেছি। ফলে রসিকতার ছলেও এ কথা বলা চলেনা যে কিসসা কাহিনীর এ অংশটুকু নিতান্তই গল্প। সূধী পাঠক আমরা দেখতে পেলাম চিন্তভাবনাকারী লোকদের চিন্তা চেতনায় এ ধরনা  গোলাপের মত ফুটতে শুরু করেছে খুব শীঘ্রই তা আপনার দোর গোড়ায় শোভা পাবে, হয়তোবা কোন প্রজন্ম হঠাৎ করেই একদিন জানতে পাবে মানুষ ওয়ারমহোলে করে বিশ্ব ভ্রমন করে এসেছে।

তা এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
আমরা এবার দেখবো এই অভিযাত্রায় পবিত্র কোরআন কি বলেছে,
১৫:১৭ আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি।
উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ কোন দরজার কথা বলেছেন, আবার কেনইবা দিন ভর আরোহনের কথা বলেছেন? সূধী পাঠক এখানে একটু ভাববার বিষয় রয়েছে। মহান আল্লাহ এখানে ঠাট্টার ছলে কিছু বলেননি,এটি পবিত্র কোরআনের বাণী, নিশ্চই এর গ্রুঢ় অর্থ রয়েছে। তাহলে কি হতে পারে সেই দরজা?
আমরা উপরের আলোচনায় দেখেছি যে, আজকের বিজ্ঞানের ধারনা, মহাকাশের স্থানে স্থানে রয়েছে মহাবিশ্বের দূরবর্তী প্রান্তে ভ্রমনের সংক্ষীপ্ত তম রাস্তা,যাকে নাম দিয়েছে ওয়ারমহোল।

এপথ দিয়ে সময়ের ভগ্নাংশ অংশে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে এমনকি এক মহাবিশ্ব থেকে অন্য মহাবিশ্বে গমন করা যায়। যদিও বিষয়টি কাল্পনিক বা অনুমান,তথাপি তা সত্যের খুব নিকটবর্তী কল্পনা,অর্থাত সাধারন মানুষের কল্পনা নয়,বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীদের কল্পনা। যা সঠিক সত্যে রূপান্তরিত হওয়া শুধু মাত্র সময়ের ব্যপার। যাই হোক মহান আল্লাহ যে ইঙ্গিত দিয়েছেন,তাতে কি মনে হয়না ঐ দরজা কোন ওয়ারমহোলের দরজা। তারপর যে কথাটি বলা হয়েছে তা আরও বিষ্ময়কর, অর্থাত আকাশের যে না দেখা রূপ সম্ভবত সে রূপ দেখে স্তম্ভিত হওয়ার কথাই বলা হয়েছে।

১৫:১৫ আয়াতটির দিকে তাকান,‘ দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি’। কি চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত। কেন বললেন দয়াময় এমন কথা? মানুষ কখন যাদুগ্রস্থ হয়ে পড়ে? যখন নিজের চোঁখকে বিশ্বাস করতে পারেনা। অর্থাৎ এমন কোন ঘটনা ঘটে যা অবিশ্বাস্য। আকাশে আরোহন করলে অবিশ্বাষ্য কি হতে পারে।

হয়তোবা আকাশের রূপ বৈচিত্রে অবাক হয়ে বলতে পারে! কিন্তু সেতো অবাক হওয়ার বিষয়, যাদুগ্রস্থ হয়ে পড়ার বিষয় নয়। আরও লক্ষ্য করুন ‘‌দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে’; একবার ভাবুন কখন দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটে? মানুষ যখন দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক কিছু দেখে তখনই মনে করে যে,তার দৃষ্টির বিভ্রাট ঘেটেছ। এবার বিজ্ঞনীদের সাথে মিলিয়ে নিন,তারা বলছেন,সময় অইভযাত্রায় যে টাইম ডায়েলশন তা একটা বিভ্রম বা illusion; আমরা উপের বৈজ্ঞানীক আলোচনায় দেখেছি টাইম ট্রাভেল করে ফিরে এলে তার মনে হবে যে, স ভ্রমণকালে  অনেক সময় ব্যয় করে এসেছে। অথচ তার আদি অবস্থানে সময়ের তেমন কোন পরিবর্তনই ঘটেনি। এমনি অবস্থায় মানুষের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটতে পারে।

হতে পারে এমিন কোন পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। হতে পারে তা সময়ের প্রলম্বণ বা time dialation;এমনি পরিবেশেই মানুষ মনে করে যে সে যাদুগ্রস্থ হয়ে পরেছে। এ ছাড়াও রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত- ‘যদি দিনভর আরোহন করে’ এখানে এই দিনভর শব্দটি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ৭০:৪ আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন যে, ফিরিশতারা একদিনে মহাকাশ ভ্রমন করে আল্লাহর নির্দেশাবলী নিয়ে পৃথিবীতে আসে যা পৃথিবীর হিসেবে পঞ্চাশ হাজার বছর। তাহলে একজন ফিরিশতাকে দ্বিতীয়বার আসেত হলে মোট একলক্ষ বছরের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা জানি জীবরিল ফিরিশতা নবী মোহাম্মদ (সা:) এর কাছে যখন তখন ওহী নিয়ে আসতেন তখন এই আসা যাওয়া কেমন করে সম্ভব হত? আমরা জানি ফিরিশতারা আগুন তথা আলোর তৈরী,তারা চলেও আলোর গতিতে ফলে তাদের আসতে যেতে বেশী সময় লাগার কথা নয়।

আমরা সর্বেশষ বৈজ্ঞাণীক ধারনা থেকে জানি অতি সম্প্রতি সবেচেয়ে দূরবর্তী যে ছায়াপথ আবিস্কৃত হয়েছে তার দূরত্ব ১২.৭ বিলিয়ন আলোক বর্ষ। তাতে বিজ্ঞাণীগন  মনে করছেন যে এটি সম্ভবত প্রথম দিকের ছায়াপথ। এই দূরত্বের অর্থ হল এটি থেকে  আমাদের পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ১২.৭ বিলিয়ন বছর। ধরে নিতে পারি এটি আমাদের প্রথম আকাশের সীমানা,কিন্তু ফিরিশতাদের আবাসস্থল আরো অনেক দূরে। তাহেল এত অল্প সময়ে তারা কি করে আসা যাওয়া করে? জবাব একটিই “আল্লাহর কূদরতে”।


সূধী পাঠক,আলোচনার  এ পর্যায়ে কোরআন বাস্তবতার কাছে আটকে যাচ্ছে, বিজ্ঞান তার ক্ষুরধার যুক্তি দিয়ে বলেছ একারআনের এই হিসেব শুভংকরের ফাঁকি। না! কোরআন পবিত্র,এতে ফাঁকি থাকতে পারেনা! লক্ষ্য করে দেখুন আয়াত ৭০:৪ কি বলছে? বলছে “ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর” মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের গতি, চলার পথ তাদের অবস্থান কোনকিছুরই বর্ণনা দেননি। শুধু বলেছেন এই সময়টুকুতে রুহ্ ও ফিরিশতা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়।   আমরা উপরে বিজ্ঞানের আলোচনায় দেখেছি মহাকাশের কন্দরে কন্দরে রয়েছে সংক্ষিপ্ত পথ বা ওয়ারমেহোল যা দিয়ে মহাশূণের একস্থান থেকে অন্য স্থানে সংক্ষিপ্ত সময়ে যাওয়া আসা করা যায়,অবশ্য বিজ্ঞান বলেছ বিষয়টি কাল্পণিক। আমাদের এ পর্যন্ত আলোচনার পরে কি মনে হয়না যে, বিষয়টি আর কাল্পনিক নেই,ওয়ারমহোলের অবস্থান না থাকলে ফিরিশতারা চলাচল করতে পারতোনা।

ফলে মহান আল্লাহ আয়াত ১৫:১৪ তে আকাশের ’দরজা’ বলতে সম্ভবত এই ওয়ারমহোলের মুখের কথাই বলেছেন(আল্লাহ্ই জানন ভাল)।
এবার আমরা আকাশে ওয়ারমহোল থাকার আরেটি যুক্তি তুলে ধরবো; আমরা জানি ফিরিশতারা আলোর তৈরী,বিজ্ঞান বলছে আলোর উপর মধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব রেয়েছ,শুধু তাই নয় বিজ্ঞান আরো বলছে মধ্যাকর্ষেণর প্রবল টান উপেক্ষা করে  ব্লাকহোল থেকে কোন আলো বেরিয়ে আসতে পারেনা বলে ব্লাকহোল দেখা যায়না। আমরা বিজ্ঞানের কাছে শুনেছি সমগ্র মহাকাশ জুড়ে রয়েছে অগণিত নক্ষত্র,অসংখ্য ছায়াপথ,ব্লাকহোল ইত্যাদি। ফলে তাদের আকর্ষণ ডিঙিয়ে ফিরিশতাদের যাওয়া আসা প্রকৃত পক্ষেই অত্যান্ত কঠিণ। তাই হয়তোবা বিধাতা মহাকাশে সৃষ্টি করেছেন এই অভিনব পথ; যার মধ্য দিয়ে ফিরিশতারা অনায়াশে চলাচল করতে পারে।


সূরা আল কাহফে এর 49 নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন.
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
18:49 আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে।

আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন ।
আমরা আপেক্ষিকতার নীতিতে দেখেছি ,মহাবিশ্বে কোন কিছুই স্থির নয়, সবই আপেক্ষিক,আপাত দৃষ্টিতে আমাদের পৃথিবীকে স্থির মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তার তিনটি গতি রয়েছে, আর এই আপেক্ষিকতার কারণে আমাদের সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বে কোন বস্তুর এই ধেয়ে চলার গতি নিরূপন খুবই কঠিণ। বিজ্ঞান বলছে কোন বস্তুর গতি যখন আলোর গতির সমান হয়েযায় তখন এই গতিশীল বস্তুর গতি আর সাধারন নিয়েমের অধীন থাকেনা তখন তা হয় আপেক্ষিকতার আওতাধীন। যখন কোন নভোযানের গতি আলোর গতির সমান হয়ে যায় তখন তার কাছে সময় হয়ে যায় ধীরগতি সম্পন্ন। তখন দেখা যাবে সাপেক্ষ বস্তুর তুলনায় তার ব্যয়িত সময় হবে খুবই কম।

নভোযান থেকে ফিরে এসে আপনি হয়তো দেখবেন আপনার  জমজ ভাইটি আপনার তুলনায় অনেক কম বয়সী। এই প্রসঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা উপলব্দি করতে পারি,তা হল,কোন ঘটনা ঘটলে আমরা ততক্ষাণাৎ দেখতে পাইনা, তা দেখতে পাই কিছু সময় অতীতে। আর এই কিছু সময় নির্ভর করে ঘটনা থেকে আমাদের দূরত্বের উপর। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় মহাকাশে যখন কোন তারকার বিস্ফোরণ ঘটে,সেই ঘটনাটি আমরা দেখি অনেক পরে অর্থা নক্ষত্রটি আমাদের থেকে যত আলোকবর্ষ দূরে আমরা তা দেখি ঠিক তত বছর পরে অর্থাৎ দীর্ঘ অতীতে;বিস্ফোরনের দৃশ্যটি দেখে কিন্তু মনে হবে এই মাত্র ঘটছে। এবার একটু ভাবুন,ঘটনাটি ঘটার মুহুর্তে আপনি যদি ণক্ষটির দিকে আলোর গতিতে যাত্রা শুরু করেন তবে আপনি যখন বিস্ফোরণটি প্রত্যক্ষ করবেন তখন আপনার যমজ ভাইটিকে ফোন করলে জানতে পাবেন যে তিনি তখনও কিছু দেখেনি, অর্থাৎ তার তুলনায় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন।

এবার উল্টোদিক থেকে ভাবুন, আপনি নক্ষত্রের মধ্যে ছিলেন,ঠিক সেই মুহুর্তে আলোর গতিতে রওনা দিলেন পৃথিবীর দিকে,কি দেখতে পাবেন? দেখতে পাবেন দৃশ্যটি আপনার চোখের সামনে থেকে সরছেনা, যেই মুহুর্তে আপনি পৃথিবীতে এসে থামলেন তখন দৃশ্যটি আপনার চোখের আড়াল হয়ে গেল। এখান থেকে এই বুঝা গেল যে, আপনি যদি কেন দৃশ্যমান ঘটনার সাতে আলোর গতি প্রাপ্ত হন তবে সেটি আপনার কাছে চিরবর্তমান হয়ে থাকবে। আবার কোন ঘটনা ঘটার পূর্ব মুহর্তে আপনি যদি আলোর গতি প্রাপ্ত হোন তাহলে সে ঘটনাটি কোন দিনই আপনি দেখতে পাবেননা। আবার যদি আপনার গতি আলোর গতির চেয়ে কম হয় তবে দৃশ্যটি আপনার চোখে ধরা দিয়ে আপনাকে ফেলে চলে যাবে অর্থাত ঘটনাটি আপনার কাছে অতীত হয়ে যাবে। অর্থাৎ সময় আপনাকে অতীতে ফেলে চলেগেল।

আবার আপনার গতি যদি আলোর গতির চেয়ে বেশী হয় তাললে আপনি দৃশ্যটিকে একবার দেখে তাকে পিছনে ফেলে সামনে চলে যাবন, কোথাও আপনার গতি কমলে দৃশ্যটি আবার দেখতে পাবেন। অর্থাত আপনার দেখা ঘঠনাটি আপনি পুনরায় দেকলেন। প্রথমে আপনার দেখা ঘটনাটি আপনার কাছে অতীত হয়ে গিয়েছিল,আপনি আপনার গতি বাড়িয়ে দৃশ্যটি আবার দেখতে পেলেন। এবার ভাবুন আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি নিয়ে; আপনি যখন কোন ঘটনায়র অংশীদার হলেন,তখন সেই দৃশ্যটি দৃশ্যমান হয়ে আলোর গতিতে মহাশূণ্যে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে যেতে লাগলো আপনার গতি তার চেয়ে অনেক কম বলে পিছনে পড়ে রইলেন,ঘটনাটি অতীত হয়ে গেল আপনার জীবনে। এবার কোন উপায়ে কোনদিন যদি আপনি আলোর চেয়ে দ্রুতগামী হোন তবে অতীতের সেই দৃশ্যমান ঘটনাটি পুনরায় দেখতে পাবেন, কিন্তু সেখানে কোন পরিবর্তণ করতে পারবেননা।

তাহলে দেখা গেল,আপনার গতি যদি আলোর চেয়ে কম হয় তবে আপনার জীবনের কোন ঘটনা অতীত হয়ে যাবে; যদি সমান হয় তবে সবই হয়ে যাবে ববর্তমান। আর যদি বেশী হয় তাহলে আপনি আপনার অতীতের দেখ পাবেন।
এখানে প্রণিধানযোগ্য যে,বাস্তবে এমন পরিবেশ তৈরী করা যদিও প্রায় অসম্ভব তথাপি বিষয়টি যৌক্তিকতায় যেমনটা বিধেয় তেমনি বৈজ্ঞানীক পর্যালোচনাও শুদ্ধ। তবে এ কথাও বলা যায়না যে,যুক্তির পরিমণ্ডলে থাকা কাল্পনিক এই বিষয়টা খুব সহজেই মানুষের করায়ত্ব হয়ে যাবে। এখানে আমাদের আলোচনার মধ্যে একটা ‘যদি’ রয়েছে।

অর্থাৎ যদি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় তবে এমনটা ঘটবে। সূধী পাঠক আমরা বিষয়িটির অবতারণা করেছি মহান আল্লাহর সেই বিষ্ময়কর বানীর (18:49 আয়াত) প্রেক্ষাপটে। আমরা যদি এই ‘যদির’ বিষয়টি সেই বাণীর প্রবক্তার উপর ছেড়ে দেই তা হলে কি প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারেনা?সূদী পাঠক ‘হাঁ’ বলবেন, না ‘না’ বলবেন! যা বলবেন ভেবে চিন্তে বলবেন;কারণ মহান আল্লাহ আপনার উপড় ভাবনা চিন্তা করার দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। আপনার ভাবনার উপর নির্ভর করবে পবিত্র কোরআনের পবিত্রতা। আপনিই এই কোরআনের ধারক ও বাহক ফলে আপনি যদি ভুল বলেন অবিশ্বাসীদের কাছে আল্লাহর কোরআন হয়ে যাবে হেয় মূল্যহীণ।

কি হতাশ হয়ে পড়লেন? হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এই ‘যদি’ পূরণের দ্বায়িত্ব ছেড়ে দিন আমার সৃষ্টিকর্তার উপর। দেখুন কিভাবে তিঁনি আপনার শর্ত পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। একবার চেয়ে দেখুন,
وْمَ تُبَدَّلُ الأَرْضُ غَيْرَ الأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُواْ للّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
14:48 যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে পেশ হবে।
আমাদের উপরুক্ত আলোচনা সম্পূর্ণই প্রকৃতির নিয়মের মধ্যেই রয়েছে,শুধু একটা ‘যদি’ ভিন্ন কোন অলৌকিকতার আশ্রয় নেওয়া হয়িন, এই প্রকৃতিতেই এমনও হতে পারে যে, মানুষ একদিন ওয়ারমহোলের সন্ধান পেয়ে যাবে; তখন প্রাকৃতিক গণ্ডির মধ্যেই শুরু হবে সময়ের অভিযাত্রা।

যদি ধরেও এনই এয,পাকৃতিক গণ্ডির মধ্যে মানুষের পক্ষে সময় অভিগমন সম্ভব নয়,কিন্তু এক্ষেত্র আমরা যদি কোন অতিপ্রাকৃতিক পরিবেশের কথা ভাইব তবে সেখানে প্রকৃতির নিয়মকাণুন যে সবই ঠিক থাকবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। লক্ষ্য করুন মহান আল্লাহ কিন্তু সূরা ইব্রাহিমের 48 নং আয়াতে বিচার দিবসে ভিন্ন প্রকৃতি সৃষ্টিরই আবাশ দিয়েছেন; সেখানে পরিস্কার বলা হয়েছে সেদিন ভিন্ন পৃথিবী,ভিন্ন আকাশ তৈরী করা হবে। আর সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রকৃতির নিয়ম নীতি যদি পাল্টে যায় তবে নিশ্চই নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে যেখানে মানুষের পক্ষে সময়ের অভিগমন খুব কঠিণ নাও হতে পারে।
সূধী পাঠক আমরা এতক্ষণ সসময়ের  অভিগমন নিয়ে যে আলোচনা করলাম এবং তার সাপেক্ষে শেষ বিচার দিনে অতীত দর্শণের সম্ভাবনার যুক্তি দাঁড় করালাম,তা হল  আজকের বিজ্ঞান কর্তৃক চিন্তিত পন্থায় আলোর গতির চেয়ে বেশী গতি প্রাপ্তির মা্ধ্যামে অতীত দর্শনের সুযোগ লাভ। কিন্তু মহান আল্লাহ্ অতীত দর্শণের কোন পদ্ধতি উল্লেখ করেনিন,ফলে জোড় দিয়ে বলার উপায় নেই যে, বৈজ্ঞানীক পদ্ধতিতেই আমরা আমাদের অতীত কার্যকলাপ দেখতে পাবো।

তা হলে কি ভাবে ঘটেত পারে এই চিত্রায়ণ। এ পর্য়ায়ে আরও একটা প্রশ্ন উত্থিত হয়,তাহল কেমন হবে বিচার দিণের কার্য পদ্ধিত? খুব ছোট্ট সহজ প্রশ্ন; কিন্তু জবাটি যে বড়ই কঠিণ। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে সূরা ইব্রাহীমের ৪৮ নং আয়াতেই সেই নির্দেশনা দিয়েছেন,তিঁনি বলছেন,
১৪:৪৮ সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা FhMZgdঅবশ্যইপরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে পেশ হবে।
ভাল করে লক্ষ্য করুন,এখানে মহান আল্লাহ বলছেন,সেইদন তৈরী হেব অন্য এক পৃথিবী’ তাহলে এমনও হতে পারে যে, আমাদের এই পৃথিবী তৈরী হবে ভিন্ন আদলে,ভিন্ন পদার্থে। কোন কিছু অবলোকন করার পদ্ধতি হয়তো যাবে পাল্টে।


সূধী পাঠক,এখানে একটা বিষয় সামান্য আলোচনা দরকার তা হল আমাদের দৃষ্টি লভ্যতা। আমরা কিভাবে দেখি? তার অতি সহজ একটা খসর হতে পারে এই যে,কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোর ফোটন প্যকেজ যখন আমাদের চক্ষু ক্যামেরায় ধরা পরে তখন তা নিউরন পালসের মাধ্যামে আমাদের মগজের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে ঐ দৃশ্য বস্তুর ছবি বা প্রতিবিম্ব তৈরী করে বলেই আমারা দেখতে পাই,তা দেখি যতক্ষ পর্যন্ত বস্তুটি আমাদের দৃষ্টি সীমায় থাকে। আবার কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো যে ফোটন  প্যাকেকেজ তৈরী করে তাই আমাদের চোখে দৃষ্টিলভ্যতা সৃষ্ট করে। এবার আরেকটা কথা ভেবে দেখুন আমরা যখন অন্তর্চক্ষু দিয়ে কোন কিছু  দেখার চেষ্টা করি তখন একটা ঝাঁপসা ছবি দেখতে পাই। এক্ষেত্রে কিন্তু কোন ফোটন প্যাকেজ ক্রিয়া করেনা,তবে কি করে তা তৈরী হয়? যদি বলেন তা আমাদের স্মৃতি কোষে সঞ্চিত ছিল।

তা হলেতো আমাদের সমস্যার সমাধান হয়েই যায়। এবার ভাবুন এই সঞ্চিত স্মৃতি এল কোত্থেকে? হয়েতা বলেবন, দৃশ্যটি দেখার সময় যে ফোটন প্যকেজ ক।

সোর্স: http://www.techtunes.com.bd

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।