টানাপোড়েনের সংসার বলতে যা বোঝায়, স্রেফ তেমন একটি পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। বাবা দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালপত্র ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। সামান্য বেতনে পরিবার নিয়ে এক রুমের একটি ফ্ল্যাটে বিমানবন্দরের পাশেই ভাড়া থাকতেন। নয়াদিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেলের ছাত্রীর শৈশবটা কেটেছে মা-বাবা আর দুই ভাইকে নিয়ে সেই এক রুমেই।
পড়াশোনায় ভালো বলে ছোট থেকেই তাঁর আলাদা নজর ছিল মা-বাবার।
মেয়ের পড়াশোনার জন্য উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে যেটুকু ভিটেমাটি ছিল তা বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রায় প্রতিদিনই কেবল রুটি খেয়ে পয়সা বাঁচিয়েছেন তাঁরা। সেই জমানো পয়সায় খরচ চালিয়েছেন মেয়ের পড়াশোনার। তাঁদের স্বপ্ন—মেয়ে একদিন বড় হয়ে সব দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাবেন। বাবা বলে বেড়াতেন, ‘আমরা যখন বুড়ো হয়ে যাব, মেয়েই তখন আমাদের দেখাশোনা করবে।
’
কিন্তু মানুষরূপী একদল হায়েনার হিংস্র থাবায় সব শেষ হয়ে গেছে। মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়েছে স্বপ্নের শেষ আলোটুকুও। সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা কাঁদছেন। প্রিয় সহপাঠীকে হারিয়ে ফুঁপিয়ে মরছেন তাঁর বন্ধুরা। শোকে বিহ্বল ভারতবর্ষ।
সবার একটাই ক্ষোভ—একটি প্রাণবন্ত স্বপ্নের এভাবে বীভৎস মৃত্যু হতে পারে না।
আসছে ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্রীটির বিয়ের সানাই বেজে ওঠার কথা। চলছিল তারই জোরপ্রস্তুতি। তরুণীর প্রতিবেশী মিনা রায় জানান, একই ঘটনায় যে ছেলেটি আহত হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রীটির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তাঁরা কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছিলেন।
ঘটনার দিনও তাঁরা একটি বিপণিবিতানে কেনাকাটা শেষে সিনেমা দেখেন। উষা রায় নামের আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা জানতাম, ফেব্রুয়ারিতেই তাঁদের বিয়ে। এ নিয়ে আমরা সবাই উত্তেজিত ছিলাম। ’
আর্থিক দৈন্যের মধ্যেও পড়াশোনায় প্রচণ্ড ভালো বলে অনেকের কাছেই হয়ে উঠেছিলেন প্রেরণা। তরুণীর এক কাছের আত্মীয় বলেন, ‘তাঁকে ভালো করতে দেখে আমিও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করি।
’ ক্লাসে বরাবরই ভালো করে এসেছেন। ভালো ছাত্রদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। সব সময় বলে বেড়াতেন, ভালো উপার্জন করবেন, বাবার জমি বিক্রির টাকা ফিরিয়ে দেবেন। তিনি ছিলেন এককথায় বাবার ‘চোখের মণি’। এএফপি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।