আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় আজ।

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম আদালত ভবন, কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সংলগ্ন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মামলার আলোচিত দুই আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও তত্কালীন শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ জানান, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় উপলক্ষে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালত ভবন প্রাঙ্গণ পর্যন্ত পুরো এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এ সময় এসবি, ডিবি ও আদালত পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া এসবির সুইপিং টিম, ডিবির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম, ক্যামেরা ইউনিটসহ সব মিলিয়ে তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেক পোস্ট বসানো হবে।
এদিকে বহুল আলোচিত এ মামলার রায়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশা করছেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, এটি রাজনৈতিক ও সাজানো মামলা।

আসামিরা সবাই নিরপরাধ। তারা খালাস পাবেন।
প্রায় ১০ বছর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল ভোররাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরের বিপরীত দিকে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে চিটাগাং ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) জেটি থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। গভীর সমুদ্রে থাকা মাদার ভ্যাসেল থেকে ইঞ্জিন চালিত দু'টি বোটে করে অস্ত্রগুলো সিইউএফএল জেটিতে খালাসের জন্য নিয়ে আসা হয়। গভীর রাতে অস্ত্রবাহী বোটগুলো সিইউএফএল জেটিতে পৌঁছায়।

আগে থেকে ওই জেটিতে অস্ত্রগুলো খালাসের জন্য ভ্রাম্যমাণ ক্রেন এবং অস্ত্র বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো ট্রাক অবস্থান করছিল। অত্যাধুনিক এসব অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ সেগুলো আটক করে।
পরবর্তী সময়ে কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ১০টি ট্রাকে ভর্তি করে নগরীর দামপাড়াস্থ পুলিশ লাইন ময়দানে অস্ত্রগুলো নিয়ে আসা হয়। উক্ত স্থানে নগরীর সাধারণ জনগণসহ তত্কালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ প্রত্যক্ষ করেন।
অস্ত্র আটকের পর সে সময় কর্ণফুলী থানার তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুর রহমান অস্ত্র আইনে ও চোরাচালান আইনে দু'টি মামলা দায়ের করেন।

মামলাগুলো তখন থানা পুলিশ থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি পুলিশ ও পরে সিআইডিতে ন্যাস্ত করা হয়। কয়েক দফায় তখন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মামলার তদন্ত কাজ চালান।
এর প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে সিআইডির তত্কালীন এএসপি ইসমাইল হোসেন অস্ত্র ও চোরাচালানের দু'টি মামলায় মোট ৪৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেন। ওই চার্জশিটে অস্ত্র চোরাচালানের মূল হোতা হিসেবে চট্টগ্রামের পশ্চিম পটিয়ার তত্কালীন ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে চিহ্নিত করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে পরিবহন শ্রমিক নেতা, অস্ত্র খালাস ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত লোকজনকে চার্জশিটভুক্ত করা হয়।


পরে মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে ২০০৭ সালের ২০ নভেম্বর (তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর পিপি হুমায়ুন কবির রাসেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলা দু'টির অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ২৬ জুন আগের ৪৪ আসামির সঙ্গে আরো ১১ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার মো. মুনিরুজ্জামান।
সম্পূরক চার্জশিটে যে ১১ জনকে নতুন আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তারা হলেন
তত্কালীন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী,
তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর,
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা (ডিজিএফআই)-এর তত্কালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার,
এনএসআই-এর তত্কালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম,
তত্কালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) শাহাবুদ্দিন,
তত্কালীন উপ-পরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন,
তত্কালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান,
সিইউএফএল'র তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসীন উদ্দিন তালুকদার,
তত্কালীন ম্যানেজার (এডমিন) এনামুল হক,
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন সচিব নুরুল আমিন এবং
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক প্রধান পরেশ বড়ুয়া। নুরুল আমিন ও পরেশ বড়ুয়া পলাতক রয়েছেন। বাকি ৯ জন জেল হাজতে রয়েছেন।


সম্পূরক চার্জশিট দেয়ার পর মোট ৫৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় বর্তমানে ২৯ জন আসামি জামিনে এবং ১০ জন আটক রয়েছেন। অন্য আসামিদের মধ্যে মামলা চলাকালে ৪ জন মারা যান।
টানা দুই বছর চলে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। ওই দিন চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মুজিবুর রহমান ৩০ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করা হবে বলে আদেশ দেন।
এদিকে মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি কামাল উদ্দিন আহমদ ইত্তেফাককে জানান, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারা আসামিদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। তাতে করে তারা আশা করছেন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
মামলার আসামি মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন জানান, রাজনৈতিক কারণে তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে শুধু দু'জনের মাধ্যমে অভিযোগ আনয়নের চেষ্টা করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া যুক্তিতর্কে বলা হয়, বিভিন্ন আসামির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বলা হয়েছে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা হয়েছিল। এতে বলা হয়, এগুলো চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তে পৌঁছার কথা ছিল। সুত্র
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।