বেসরকারি অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে (পরিচালনা পর্ষদ) অবৈধ বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে নিজেদের পর্ষদকে বৈধ বলেই দাবি করেছেন ইসরাফিল।
প্রায় দুই বছর ধরে এই পর্ষদের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আর কমিশনের কাছে বৈধ পর্ষদ বিশ্ববিদ্যালয়েই যেতে পারছে না।
অনুমোদন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি শাখা ক্যাম্পাস খুলে সনদ-বাণিজ্য চালানোরও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরও চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্র জানায়, ইউজিসি গত ২৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, ইসরাফিল আলমকে চেয়ারম্যান করে গঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি বৈধ নয়। অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজই একমাত্র বৈধ ও আইনসিদ্ধ কর্তৃপক্ষ। এ জন্য এই বোর্ডের মাধ্যমে প্যানেল থেকে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করা আবশ্যক।
ইউজিসি একই দিনে আনোয়ারা বেগমকে আরেকটি চিঠি দিয়ে ওই তিন পদে নিয়োগের জন্য পৃথক প্যানেল প্রস্তাব দিতে অনুরোধ করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সাময়িক অনুমোদন পাওয়া অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়টি সে সময় পরিচালিত হতো অতীশ দীপংকর ফাউন্ডেশনের অধীনে। ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যও।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হয়। ওই আইন অনুযায়ী ওই ফাউন্ডেশনের অধীনে ২০১১ সালের ২৭ জুন আনোয়ারা বেগমকে চেয়ারম্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হয়।
ওই ১১ জনের মধ্যে একজন ছিলেন ইসরাফিল আলম। পরে বোর্ডে আরও তিনজন সদস্য সংযোজন করা হয়।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে বৈধ বিবেচনায় আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন পর্ষদের নিবন্ধন করে। ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর ইসরাফিল আলমকে চেয়ারম্যান করে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা শব্দগুচ্ছ ‘ATISH DIPANKAR BIGGAN O PROJUKTI BISHAWBIDDALAY’ নামে আরেকটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন ও নিবন্ধন করা হয়।
কিন্তু ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়, ইংরেজি অক্ষরে বাংলা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে অন্যভাবে আরেকটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বৈধ বলে গণ্য করা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়টি বনানীতে অবস্থিত। কিন্তু ইউজিসির চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান কর্তৃপক্ষ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অননুমোদিতভাবে ক্যাম্পাস খুলে সনদ-বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠনের পর উপাচার্য ও বোর্ডের চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগমকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একবার প্রবেশের চেষ্টা করে তিনি সফল হননি। সহ-উপাচার্য আবুল হোসেন সিকদারকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছে ইসরাফিল আলমের নেতৃত্বাধীন পর্ষদ।
এদিকে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সূত্রমতে, সহ-উপাচার্য আবুল হোসেন সিকদার জাল সনদ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অপসারণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায়।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।