আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাশুল দিতেই হবে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে এর মাশুল তাকে দিতেই হবে। এখন অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা নির্লজ্জভাবে অবলীলায় পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার বলছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, এ নির্বাচনটি শুধু সাংবিধানিক প্রক্রিয়াগত বাধ্যবাধকতা। বিএনপি অতি দ্রুতই সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শাসক গোষ্ঠীর ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে বলেও জানান বিএনপির মুখপাত্র।

রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। ২০১১ সালের মার্চে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে ক্লিন ইমেজের এই নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল কবে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথাসময়ে কাউন্সিল হবে এবং নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্র তখনই কার্যকর হয় যখন সব মত ও পথের মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়; যেখানে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শাসক গোষ্ঠী গণতন্ত্রের ভাষা না বোঝার এবং স্বৈরাচারী মানসিকতার কারণে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

ছলচাতুরী ও শক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। যে কারণেই অর্থবহ সংলাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

সহিংসতা ও জামায়াত ছাড়ার শর্তে আওয়ামী লীগ সংলাপে রাজি- এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কখনই সহিংতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে চরম সহিংসতার মধ্য দিয়ে হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলায় লাখ লাখ মানুষকে আসামি করে বিরোধী হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

সেই লক্ষ্যে গোয়েবলসীয় অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তা ছাড়া জামায়াত সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। আওয়ামী লীগ বহুবার সরকারে ও বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা করে আন্দোলন ও রাজনীতি করেছে। তা ছাড়া বিএনপি কার সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনকালীন সমঝোতা করবে তা বিএনপির নিজস্ব ব্যাপার।

এ বিষয়ে অন্য কোনো দলের পরামর্শ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও নৈতিকতা পরিপন্থী। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিএনপি কোনো সময়সীমা বেঁধে দেবে কি না- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে অতি দ্রুত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচনই হচ্ছে বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ। এটা যত দ্রুত হবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল। বিএনপি অতি দ্রুতই শাসক গোষ্ঠীর ওপর এ চাপ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেবে।

এ ছাড়া গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন করবে। বর্তমান সরকার ও সংসদকে বিএনপি অবৈধ বলছে। তাহলে এ সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি মামলা করছে না কেন- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান বিচারবিভাগীয় পরিস্থিতিতে এ ধরনের মামলা করা অর্থহীন হবে। তা ছাড়া রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় বিশ্বাসী বিএনপি। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বর্তমান সংসদে কোনো বিরোধী দল আছে কি? এটি একটি সংকর-জাতীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় পার্টি একদিকে সরকারে অন্যদিকে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকা- দলটির অতীতের সব কুকর্মকে ছাড়িয়ে গেছে। জনগণের কাছে একটি ধিকৃত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরই বলে আসছে '৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে সেই বিচারিক প্রক্রিয়া হতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। আগামী নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে বিএনপি এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সময় হলেই দেখা যাবে।

মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার ডাকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাড়া দিতে দেখা যায়নি। এর কারণ কী? এর জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কর্মসূচি ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সরকার বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে। তিন দিন আগে শাসক গোষ্ঠী কার্যত ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। নয়াপল্টনে কর্মসূচির জন্য অনুমতিও দেয়নি তারা। উপরন্তু যে কোনো মূল্যে সমাবেশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন পুলিশপ্রধান।

একই সঙ্গে ঘোষণা দেওয়া হয়, দেখামাত্রই গুলি করা হবে। সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, হামলা মামলায় গ্রেফতারের মাধ্যমে কর্মসূচিতে আসতে বাধা দেওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনকে গুলশানের বাসায় তিন দিন আগে থেকেই অন্তরীণ করে রাখা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও গুলশান কার্যালয় আগে থেকেই ছিল অবরুদ্ধ। জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্ট ছাড়া রাজধানীতে কেউ কোথাও দাঁড়াতেই পারেনি।

স্বাভাবিক কারণেই বাইরে থাকা দলের শীর্ষ নেতাদের গণমাধ্যমে দেখা যায়নি। একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সমূলে বলপ্রয়োগ করে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্ট ও প্রেসক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হামলা চালানো সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, যে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে দেশে এসব জনসমর্থনহীন মন্ত্রী জনগণের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করছে। বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করেছে। এই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা।

সে চেতনা ধারণ করে বিএনপি আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে তার ভূমিকা আরও বেগবান করবে। স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ অতীতেও মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না। জনগণের ঐক্যবদ্ধ দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হবে একটি উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী- জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে চায়।

সেই লক্ষ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনে অবৈধভাবে ঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এ স্বৈরাচারী সরকারকে বাধ্য করাই বিএনপির পরিকল্পনা। শহীদ জিয়া থেকে শুরু করে বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত পাঁচবার সরকার পরিচালনা করেছে বিএনপি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে দলটি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে পরিণত করাই বিএনপির মূল কাজ। সে লক্ষ্যে বিএনপি কাজ শুরু করে দিয়েছে।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী উদ্দেশ্যমূলকভাবে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাওয়া ভবন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা বলছেন। কলঙ্কজনক ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনগণের যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর জন্যই এ ধরনের অপপ্রচার। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম জিয়া তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ওই ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তসাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির ফলাফল কেমন হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উপজেলায় বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে অংশগ্রহণ করছে না। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের প্রভাব ও কারচুপিমুক্ত নির্বাচন হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। জাতীয় সংসদের মতো উপজেলায়ও জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করবে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি সফল না হওয়ার পর ভবিষ্যতে বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকে দেশবাসী সাড়া দেবে কি? মির্জা ফখরুল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ভোটের অধিকার রক্ষায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ দুই মাস দেশবাসী অভূতপূর্ব আন্দোলন করেছে; যা এ দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নজিরবিহীন।

বেগম জিয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য ভোটের অধিকার রক্ষায় আগামীতে যে আহ্বান জানাবেন তাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও' আন্দোলনে শরিক হবে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।