.............। ভারতের নয়াদিল্লীতে ঘটে যাওয়া জঘন্যতম নারকীয় ঘটনায় চরম পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারত কন্যা খ্যাত "আমানত" মৃত্যূর কোলে ঢলে পড়ার সাথে সাথে ভারতের তথাকথিত সভ্যতা আজ সারা বিশ্বে প্রশ্নের সম্মুখীন, নাড়া দিয়েছে বিবেকবান সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে। মানব উন্নয়ন সূচক,অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি বনে যাবার অভিপ্রায় সবকিছই যেন তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায় সে দেশের নারীরা যখন তার নিজ দেশে নূন্যতম নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় । এটা হয়ে চলছে বর্তমান ভারতীয় সমাজে দিনের পর দিন, কিন্তু তাদের মুল্যবোধহীন সিনেমা,স্যাটেলাইট চ্যানেল্গুলোর উদ্ভট কাহিনী সম্বলিত ড্রামা সিরিয়াল,মিসাইল উৎক্ষেপণ ও আইপিএল সংক্রান্ত ব্যস্ততা এতটাই বেশী যে এ সমস্যা নিয়ে নীতিনির্ধারকরা চিন্তার ফুরসতই পায়নি। যে কারনে ভারতের কাছে অন্যদেশে আক্রমনের জন্য অনেক শক্তিশালী বড় বড় মিসাইল থাকলেও ধর্ষন রোধ বা নারীদের রক্ষা করার মত কঠোর কোন আইন নেই।
প্রতিটি রাজ্যে প্রতিনিয়ত ধর্ষনের মত পৈশাচিক ঘটনা অহরহ ঘটে চললেও এর আগে সেখানে তেমন কোনো বড় প্রতিবাদ,বিক্ষোভ বা কঠোর কোনো বিশেষ আইনের কথা শোনা যায়নি। আর তারই ফলশ্রুতিতে ধর্ষন নামক রোগটি ধীরে ধীরে কিনা আজ এক মহামারিতে পরিনত হয়েছে ও তার ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে গনপরিবহন পর্যন্ত। হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে তবে সেই মহামারি রুখতে মরিয়া আজ তাদের সর্বস্তরের মানুষ। পুরো জাতি এক হয়েছে একটা দাবীতে, মানুষকে আচরন করতে হবে মানুষের মত নয়ত কঠোর আইনের আওতায় এনে দ্রুত কঠোর শাস্তি দিতে হবে সেইসব পাশবিক নির্যাতনকারীদের।
আজকাল ব্লগ বা সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে প্রায়শঃ দেখতে পাই আমাদের কতিপয় বন্ধুগন চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত, বাংলাদেশের মানুষ কবে ভারতের জনগনের মত জেগে উঠবে, প্রতিবাদ জানাবে তাদের পথ ধরে (?) ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেইসব বন্ধুদের অবগতির জন্য একটু বলতে চাই যখন বাংলাদেশের দেখানো পথ ভারতীয় বিবেকবান গোষ্ঠী অনুসরন করতে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে, সেখানে আমরা কি কারনে ভারতের পথে উল্টো চলার প্রয়োজন হলো তা আমার বোধগম্য নয়। অনেকের হয়তো মনে আছে ২৪শে আগষ্ট ১৯৯৫ সালের গনজাগরনের কথা, যাকে আমরা “ইয়াসমিন দিবস হিসেবে “ জানি। ১৪ বছরের সেই ইয়াসমিনকে যখন কতিপয় পুলিশ সদস্য পাশবিক নির্যাতনের পর গাড়ি থেকে ফেলে মৃত্যূর দিকে ঠেলে দেয় ,সেই দিন দিনাজপুরের সর্বশ্রেনীর সাধারন মানুষের সাথে সাথে ফুঁসে উঠেছিল বাংলাদেশের না্রী,পুরুষসহ পুরো নাগরিক সমাজ, গড়ে তুলেছিলো তীব্র আন্দোলন, পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিলো, যার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শাস্তি হয়েছিলো দ্রুত এবং পর্যায়ক্রমে ধর্ষন,যৌতুক ও এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন আনা হয়েছিলো বাংলাদেশে। ১৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই সামাজিক আন্দোলন এর সুফলও পাওয়া গেছে, যেমন দিন দিন এসিড নিক্ষেপ ও ধর্ষনের মত ঘটনাগুলো এই দেশে অনেক কমে এসেছে যদিও এখনো সম্পুর্ন নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, আবার “ইভ টিজিং “ নামক নতুন ব্যাধির আত্মপ্রকাশও ঘটেছে তবে এক্ষেত্রে আমাদের আবারো অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে যেমনটি করেছিলাম আমরা পুর্বে।
পরিশেষে বলতে চাই যে আন্দোলন আমরা ১৭ বছর আগে শুরু করেছিলাম তার ছোঁয়া আজ লেগেছে ভারতে।
মাঝে শুনতে পেয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে আলাপ আলোচনা হচ্ছিলো তারা বাংলাদেশের মত একটি কঠোর নারী অধিকার রক্ষা আইন চায় বা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন মাত্র দিন দশেক আগে ওইদেশের একটি বেসরকারি চ্যানেলে বলেছিলেন “নারী্র শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ভারতের চাইতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে”। এসব কিছই প্রমান করে করে আমরা অনেক আগেই শুরু করেছি,সফলতাও আছে তবে এখন প্রয়োজন আরো এগিয়ে যাওয়া এবং পূর্ন সফলতা অর্জন করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।