‘যুদ্ধাপরাধের বিচার বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র করছে জামায়াত'-ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) নামের একটি সংগঠনের একটি বিবৃতি গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সমর্থক দৈনিক ও অনলাইন সংবাদপত্র বিবৃতিটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করা এবং অভিযুক্তদের পক্ষে পুনর্বিচারের আবেদন করার পরই আইসিএসএফ এই বিবৃতি দেয়। অনুসন্ধান করে জানা গেছে আইসিএসএফ আসলে আলোচিত স্কাইপি কেলেঙ্কারির খলনায়ক বেলজিয়াম প্রবাসী ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সংগঠন। তার সহযোগী হিসেবে লন্ডন থেকে জনৈক রায়হান রশিদ আইসিএসএফ'র সঙ্গে জড়িত। তাদের তত্ত্বাবধানে এবং নিয়ন্ত্রণে আইসিএফ পরিচালিত হচ্ছে।
ইন্টারনেটভিত্তিক এই সংগঠনের ওয়েবসাইটে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে তাদের পছন্দমতো বয়ান রয়েছে। স্কাইপি কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং অপপ্রচারে তৎপর রয়েছে এই সংগঠনটি। আইসিএসএফ বার বার বলে আসছে ‘কথিত' স্কাইপি সংলাপ। স্কাইপ সংলাপেও আইসিএসএফর প্রসঙ্গ অবতারণা করেছেন বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম ও আহমেদ জিয়াউদ্দিন।
আর বাংলাদেশে তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে পরিচালিত অনলাইন সংবাদপত্র।
সোমবার তারাই আইসএসএফ'র বিবৃতি প্রথম প্রকাশ করে। বরাবরই আইসিএসএফ মতো বিডিনিউজ স্কাইপ সংলাপকে কথিত বলে প্রচার করছে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত তাদের প্রতিটি প্রতিবেদনে স্কাইপ সংলাপকে ‘কথিত' হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। স্কাইপি কথোপকথন নিয়ে সারা দেশে যখন তোলপাড় চলছে তখন খলনায়ক আহমেদ জিয়াউদ্দিনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ করে দেয় বিডিনিউজি। এরো আগে তারা বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের পক্ষে প্রচারে নামে।
আইসিএসএফ বলছে চার দশক পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে তা পর্যবেক্ষণ, অনুশীলন ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় আইসিএসএফ নামে আন্তর্জাতিক এই সংগঠন, যাকে তারা নিজেরা বলছে নেটওয়ার্ক। আইসিএসএফ বলছে, ট্রাইব্যুনাল এবং এর অঙ্গ সংস্থাগুলোকে দালিলিক ও গবেষণা সহায়তা দেয়া ও পরামর্শ বিনিময় করছে তারা।
আইসিএসএফ'র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। জড়িতরা সকলে স্বাধীন এবং স্বেচ্ছাসেবী। তবে এর সংগঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোন উপায় নেই।
সংগঠক কারা পরিচিতিও দেয়া হয়নি। এখানে তারা চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ই-মেইলে যোগাযোগের অপশন রেখেছে। যাতে করে উৎসুক কেউ সংগঠনের নিয়ন্ত্রকদের বিষয়ে জানতে না পারে। আইসএসএফ'র স্বাগত অংশে বলা হয়েছে, এটা একটি গ্লোবাল কোয়ালিশন। এর সঙ্গে জড়িতরা স্বাধীন এবং ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংগঠনটি সকল প্রকার দায়মুক্তির বিরোধী। অংশীদার সংগঠন ১০টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ রয়েছে। এটি বেলজিয়ামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ এবং এর প্রধান আহমেদ জিয়াউদ্দিন।
বিধিবহিভূর্ত ও বেআইনীভাবে কথোপকথন-স্কাইপি সংলাপ দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য মহাকেলেঙ্কারি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
এই কেলেঙ্কারি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কথোপকথোপনের বিষয়টি নিজামুল হক নাসিম দি ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে রুল জারি করে স্বীকার করেছেন এরপর আমার দেশে পুরো কথোপকথনের অংশ প্রকাশের পর তিনি দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন।
গত ১৯ ডিসেম্বর ‘ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধতা জরুরি, বিভেদ নয়, শিরোনামে মতামত-বিশ্লেষণ বিভাগে আহমেদ জিয়াউদ্দিনের একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের গুণগান সমৃদ্ধ ‘আমার নাসিম মামা' শিরোনামে মোস্তফা শিবলীর লেখা আরো একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। ওই নিবন্ধ দু'টি তখনই প্রকাশ করা হয় যখন সারাদেশে স্কাইপি নিয়ে তোলপাড় চলছে।
অনেকটা ক্ষতে মলম দেয়ার মতো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তারা এই দুটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। আহমেদ জিয়াউদ্দিন তার নিবন্ধে স্কাইপি কথোপকথোনের বিষয়টি স্বীকার করে নেন।
আইসিএসএফ'র বিবৃতি : স্কাইপি বিচারকের কথিত কথোপকথনকে কেন্দ্র করে ‘বিভ্রান্তি' ছড়ানো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার আটকানোর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) নামের একটি সংগঠন। আর এই ষড়যন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও বিবৃতিতে দাবি করে তারা।
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করা এবং অভিযুক্তদের পক্ষে পুনর্বিচারের আবেদন করার পরই আইসিএসএফ এই বিবৃতি দেয়।
বিবৃতিতে আইসিএসএফ জামায়াতকে দায়ী করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চিহ্নিত এই চক্রটি নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। ' আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত কথোপকথনকে কথিত উল্লেখ করে ‘সুপরিকল্পিত সাইবার অপরাধ' হিসেবে আইসিএসএফ এর তদন্ত দাবি করে। প্রকাশিত এ কথোপকথনে এমন কোন কিছু নেই যা বিচার প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। বিচার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার দাবিরও কোন ভিত্তি নেই'। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।