ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজার না হলেও তুরস্কে পোশাক রপ্তানি ছিল ইর্ষণীয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসম্বর) বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।
তুরস্কে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে ৭৭ শতাংশই তৈরি পোশাক।
তুরস্ক নিজেরা পোশাক উৎপাদন থেকে সরে আসার পাশাপাশি নিজেদের ক্রমবর্ধমান বাজার বিদেশি পণ্যের জন্য নিজেদের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ায় বাংলাদেশের সামনে সুযোগ বেড়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা।
মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে একমত বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই তুরস্কে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে।
ইতিমধ্যে আমরা এর ফল ভোগ করতে শুরু করেছি।
“কিছুদিন আগেও তারা নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশপাশি তৈরি পোশাক ইউরোপেও রপ্তানি করত। কিন্তু এখন তারা আর পোশাক উৎপদন করে না। সেই সুযোগেই আমরা তাদের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছি। ”
তৈরি পোশাক উৎপাদন থেকে তুরস্কের সরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, “শ্রমের মূল্যসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।
ফলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা টিকতে পারছিল না। এতে আমাদের দুই দিক দিয়ে লাভ হয়েছে- আমরা তাদের বাজারেও প্রবেশ করছি; আবার তারা ইউরোপে যে পোশাক রপ্তানি করত- সেটাও দখল করার সুযোগ এসেছে। ”
“অনেক ক্ষেত্রে তুরস্কের ব্যবসায়ীরা আমাদের এখান থেকে পোশাক কিনে নিয়ে কারখানায় শুধু প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। ”
গত তিন-চার বছর ধরেই বিকেএমইএ নিট পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজতে জাপান, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রোডমার্চ, পণ্য প্রদর্শনীসহ (মেলা) নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হওয়া ৭৭ শতাংশ তৈরি পোশাকের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি নিট পোশাক।
একে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘উল্লেখযোগ্য’ আখ্যায়িত করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিক রপ্তানি যেখানে ১৬ শতাংশ বেড়েছে; সেখানে শুধু তুরস্কেই ৬০ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই একটা বড় উলম্ফন। ”
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে রপ্তানি আরও বাড়বে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, “বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তুরস্কে পণ্য রপ্তানিতে ১৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। এটা না লাগলে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে। ”
তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরে তুরস্কে দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছে। যার কারণে তাদের বাজারও বেড়েছে।
তারা এখন তৈরি পোশাক বাদ দিয়ে অন্য সব খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আমাদের এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে হবে। আমাদের রপ্তানিকারকরা ইতিমধ্যেই সে কাজটি শুরু করে দিয়েছেন। ।
সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ২০১৩ সালে তুরস্কে বাংলাদেশের রপ্তানি এক বিলিয়ন (একশ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
এ সময়ে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ ১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল।
এ হিসাবে বাংলাদেশের অনুকূলে উদ্বৃত্ত বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা (ইয়ার্ন) এবং সিরামিক তুরস্কে রপ্তানি হয়।
অন্যদিক তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ লোহা, স্টিল, মেশিনারিজ এবং ফেব্রিক্স আমদানি করে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ৭৬ কাটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য তুরস্কে রপ্তানি করে। এর বিপরীতে আমদানি হয় ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য। এসময় দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ডলার।
ওই বছরে বাংলাদেশের অনুকূলে উদ্বৃত্ত বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
তুরস্ক সরকারের তথ্য মতে, ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে তুরস্কে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে তুরস্কে ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৭২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য।
২০১১-১২ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ কমে ৫৫ কোটি ১৯ লাখ ডলারে নেমে গেলেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৬৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।