আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারাধনের মেলা দর্শন

তোমাদের ঐ বই মেলা দেখে এলুম এবার, বুঝলে? হারুদা খাটে বসে পড়ে আয়েস করে।
হবি দার বরফ কলে রোজই আমাদের আড্ডা বসে সন্ধ্যের পর। রোজকার অতিথিদের মধ্যে থাকে কলেজের কেরানী কাম অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফিরোজ আহমেদ, প্রাইমারী টিচার মুনিম মাষ্টার, লাইব্রেরিয়ান বিভাস চক্রবর্তী, কাঠের ব্যাবসায়ী আখতার, হারুদা এবং আরো কিছু অনিয়মিত আড্ডাপ্রেমী। বর্ষীয়ান হবি দা একটু দূর থেকে আমাদের আলাপ আলোচনা শুনে মজা উপভোগ করেন। আমাদের বসার জন্য একটি দুর্বল তক্তোপোষ পাতা থাকে।

আড্ডা চলে রাত দশটা পর্যন্ত। আজ এ পর্যন্ত আমি আর হবি দা বসে আছি। আর হারু দা যখন এসে পড়েছে তখন খবরের কোন অভাব হবে না।

হঠাৎ বইমেলায় গেলে কি ব্যাপার? আমার বিষয় টা আরো বিশদে জানতে ইচ্ছা করে। ইতিমধ্যে কাঁধের ঝোলান ব্যাগ সশব্দে খাটে ছুঁড়ে দিয়ে ফিরোজ চায়ের অর্ডার দিতে যাবার আগে হাত বাড়িয়ে টাকা চায়।


আমার কাছে কেন? আমার কাল বই মেলায় অনেক টাকা খরচা হয়ে গেছে। বলে হারুদা একটু পিছিয়ে বসে।
অ্যাঁ! বইমেলায় তুমি? ও হবিদা, শোন, শোন, কে বইমেলায় গিয়েছিল শোন। ফিরোজ বলার আগেই হবিদা সব শুনেছে। তার নিজস্ব ধরণে চিবিয়ে চিবিয়ে তিনি বলেন, কাউকে ছোট করা তোমার উচিত নয় ফিরোজ।

উনি যাবেন বৈকি! মেলা তো সবার জন্য। এই শোন বছর পাঁচেক আগে আমিও একবার মেলায় গিয়েছিলুম।

ফিরোজ আমার দিকে চেয়ে বলল, হয়ে গেল এখন রাত আটটা পর্যন্ত ঐ মেলা ডাল পালা ছাড়বে। কিন্তু মানুষের অনুমান সর্বদা সত্য হয় না । ইতিমধ্যে সেই দাড়িওয়ালা কবি এসে উপস্থিত হওয়ায় হবি দা এবার তাকে নিয়ে পড়লেন।

এই কবি এক মাদ্রাসার শিক্ষক। নূতন কবিতা রচনা করলে তিনি সবার আগে হবি দা কে এসে সেটা শুনিয়ে যান। হারু দা উপেক্ষিত হয়ে আবার রিপিট করেন, বুঝলে ফিরোজ কাল বইমেলা ঘুরে এলুম। ফিরোজ অমনি হারুদার পকেটে হাত গলিয়ে কাড়াকাড়ি করে একটা ২০ টাকার নোট নিয়ে পাশের দোকানের দিকে ধাবিত হবার উপক্রম করলে হবি দা স্মরণ করিয়ে দেন যে কবির জন্যও একটা চা বলতে হবে। ফিরোজ কটমট করে কবির দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে চলে যায়।


একটু পরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে হারু দা মেলার বর্ণনা শুরু করে।

লোকে লোকারণ্য বুঝলে। কি নেই সেখানে! সেতার বাজনা, ব্যান্ডের গান, চাউমিন, চপ সব মেলায় পাওয়া যায়। আর ছেলেরা মেয়েরা গায়ে গা ঠেকিয়ে বসে আছে। ভাগ্যিস তোমার বউদি কে নিয়ে যাইনি।

বিদ্যার ভেতর এই গায়ে গায়ে ঢলাঢলি দেখলে আমার উপায় রাখত!

ওসব ছাড়ো, টাকাগুলো কিসে খরচা করলে সেই গল্প বল। ফিরোজ তাড়া লাগায়।
তিনশ টাকা দিয়ে আমার একটা ছবি আঁকালুম। তোমার বউদি কে বাড়ী এনে ছবিটা দেখাতে কি বলল জানো?
কি বলল? আমি জানবার জন্য উদগ্রীব হয়ে বললুম।
বলে ঐ পেঁচুয়া ছবির জন্য তিনশ টাকা খরচ করতে তোমার গায়ে বাঁধল না? আচ্ছা, আমি কি খুব খারাপ দেখতে?
তিনশ না হয় হল, আর কিসে খরচা করলে? ফিরোজ টাকার ব্যাপার জানতে বড়ই উৎসুক।


এক জায়গায় দেখলুম খুব ভিড়। তা সেখানে লাইন দিয়ে দেখি বাংলায় ভাল ভাল সব বই বিক্রী হচ্ছে। সচিত্র প্রাপ্তবয়সের আরব্য রজনী, তুর্কি বন্দিনী তাই কিনলুম শ চারেক টাকার। কেননা আচ্ছা আচ্ছা সব ভদ্রলোক দেখলুম কিনে পাগল হচ্ছে। তা ভেতরে যা ছবি রয়েচে লোক কিনতে বাধ্য।



কেন মেলায় কি খালি ঐসব বিক্রি হয়? বিরক্ত হয়ে আমি না বলে থাকতে পারলুম না।
শালা কলকাতা বইমেলার জগতজোড়া নাম আর এ কি সব শোনাচ্ছে রে ! বলে ফিরোজ নকল ক্রোধ দেখায়।
হারু দা উত্তেজিত হয়ে বলে, তুমি গিয়ে দেখে আসবে হয় কি না। আমার কাছে মিথ্যে পাবে না।
আমি এবার বলি, তুমি তো অন্য বইও কিনতে পারতে, পারতে না?
তা পারতুম।

তবে আমি ধরে রাখার মন করে তো কিনিনি। পড়া হয়ে গেলে আবার কারো কাছে ঝেড়ে দেব। অন্য বই নিলে সে সুযোগ হবে না। ভাল বই ক’জন কেনে আজকাল। কিন্তু এই বই যাকে দেব সে গাপ করে নিয়ে নেবে।



হবি দা এইদিকে কান খাড়া করে ছিল। এখন তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, তুর্কীদের সাম্রাজ্য খুব বড় ছিল। সে সব ছিল জাঁক জমকের দিন। ওদের মত ভোগের কায়দা কানুন ক’জন জানে। তা ঐতিহাসিক বই কিনেছো, বেশ করেছ।

কত পয়সা কতভাবে নষ্ট হয়। এসব বই, ইতিহাস বই না পড়লে মানুষ অজ্ঞ থাকে। তা বইটা আমায় একবার দিও তো হারু পড়ে দেখব।
এদিকে হাসি চাপতে গিয়ে ফিরোজ খাটে গড়াগড়ি খেতে আরম্ভ করেছে। আর হারু দা হাসবে, না গম্ভীর থাকবে কিছুই ঠিক করতে না পেরে বোকা হয়ে বসে আছে।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।