আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সতর্কজনের অসতর্ক ভাবনা

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

মসজিদের সামনের টঙে বসে বসে রাতেরবেলায় মানুষ দেখতে দারুণ লাগে সোহরাব আলীর ।

জন্মের ছয় বছর পর থেকে তসবি , টুপি নিয়ে দাদাকে মসজিদে যেতে দেখলেই সেই বাচ্চা বয়সে দারুণ লাগতো তার । সেই মুগ্ধতা দশ বছর পর অর্থাৎ তার যখন ষোল বছর বয়স ততোমধ্যেই কেটে গিয়ে ঘৃণায় পর্যবসিত হয়েছিলো । তার গ্রামের দশটি হিন্দু পরিবারের বাড়ী পুড়িয়ে জমি হাতিয়ে নেওয়া জমিদার দাদার কান্ডকীর্তি যেদিন জেনেছিলো হাতেকলমে শিখেছিলো দুরুদ শরীফ আর হরি বোলের পার্থক্য কোথায় কোথায় ।

সোহরাব আলীর অভিজ্ঞতা বলে সব মারানীর পুতেরা ল্যাওড়ার আগার চামড়া কাটা আছে কি নাই এই দিয়েই মানুষ মাপে । এই দিয়েই শালারা মানুষ মাপে কিন্তু সত্য বলার সাহস নাই দেখে সরস্বতী পূজা , দুর্গা পূজা , কালী পূজায় নিজের হিন্দু ধর্মের বন্ধুবান্ধবদের সাথে গলায় গলায় পিরিত মারায় । মসজিদে যাদের প্রবেশ করতে দেখে আর বের হতে দেখে তাদের প্রায় সবাইকেই সোহরাব আলীর এর থেকে ভিন্ন কিছু বলে মনে হয়না । সোহরাব আলীর প্রায় সব এসাইনমেন্টই আজ পর্যন্ত মসজিদের আশেপাশে । সে নিজেই ইচ্ছা করে চয়েজ করে ।

টার্গেটদের ঠিকানা বের করে সেই জায়গার আশেপাশের মসজিদগুলো ভালো করে খোঁজ করে । কারণ সোহরাব আলী নিশ্চিত জানে মালগুলো মসজিদগুলোতে যাবে , যাবেই । সোহরাব আলী কম তো দেখলোনা । আস্ত আস্ত সব ঘোড়েল মরার আগে ভুলভাল উচ্চারণে দুরুদ শরীফ পড়তে থাকে । সেই অবস্থাতেই প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে তবুও খচ্চরের বাচ্চাগুলা পড়া থামায়না ।



আজকে যেই হারামীটাকে সাইজ করবার জন্য মোহাম্মদিয়া মসজিদের টঙে এই মুহূর্তে বসে আছে সেই এসাইনমেন্ট পেয়েছে হারামীটার বউয়ের কাছ থেকে । শুয়োরের বাচ্চাটা অফিসের বাচ্চা বাচ্চা সব মেয়ের সাথে দিনের পর দিন ফষ্টিনষ্টি করে বেড়াচ্ছে । বউয়ের দিকে ফিরেও চায়না বহুদিন হলো । প্রতিশোধ নিতে বউটা কিভাবে কিভাবে সোহরাব আলীর খোঁজ পেয়েছে সেটা সে নিজেও বলতে পারেনা । সোহরাব আলী প্রতিটা এসাইনমেন্ট হাতে নেওয়ার পর সচরাচর যাই করে সেটাই করেছিলো ।

মালটার যাতায়াতের এ টু জেড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে তারপরেই আজকে নেমেছে । তবে বলতেই হবে এই রকমের কনটাক্ট তার জীবনে এই প্রথম । জীবনে মেয়েমানুষ নিয়ে লাফড়া , বাওয়াল কম দেখেনি কিন্তু নিজে কখনো এই কেস রিলেটেড কাজ পায়নি । সোহরাব আলী নিজের মনে যখনই চিন্তা করে তখনই তার অদ্ভুত লাগে । মদ – মাগী – পয়সা এর বাইরে কোন শালাকেই কোথাও যেতে দেখেনা ।

সোহরাব আলীরা ফ্রয়েড পড়বার সুযোগ পায়না । সুযোগ পেলে সামান্য যাও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে সেটাও ধুয়েমুছে যেতো । তার পরিবর্তে নিজের ছোট্ট টেলিভিশনটায় ন্যাংটা – পুংটা হিন্দী গানের ভিডিও দেখে সারা রাত । সোহরাব আলী প্রায়শই টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে শোনে “ ভিগে হোঁট তেরে , প্যায়াসা ইয়ে দিল মেরা , লাগে আগসা মুঝে তান তেরা । কাভি মেরে সাথ কই রাত গুজার , তুঝে সুভাতাক ম্যায় কারু প্যায়ার ।



এদিকে প্রায় আধাঘন্টার মতো হয়ে গেলো মালটা এখনো মসজিদের ভেতরেই বসে আছে । বাইরে বেরুচ্ছেনা । বিষয়টা সোহরাব আলীকে একটু অবাক করলো । এতো সময় ধরে এই রাত্তিরে মসজিদে কোন মাঙ্গের পোলায় বসে থাকে ? আল্লাবিল্লায় মত্ত মানুষদেরও তো পরিবার – বাচ্চা আছে । তারাও তো সারা হপ্তাহের পাপ পুণ্যি করতে মসজিদে বসে সিজদাহ দিয়ে ভদ্রলোক সেজে গেছে বুঝে নিয়েই বাড়ী ছোটে ।

তাইলে এই মাল এতোক্ষণ মসজিদে কি করে ? এর মধ্যেই গোটা তিনেক চা আর গোটা আষ্টেক পুরি গিলে ফেললো তবুও ব্যাটার ফিরে আসবার নাম নেই । দোকানদার শুরুতেই তাকে দেখে সন্দেহ করেছিলো বলে তখনই কোমরের উপরের অংশে রাখা জিনিস দেখিয়ে ঠান্ডা করে দিয়েছিলো । তবে সোহরাব আলী চায়ের আর পুরির দাম ঠিকই মিটিয়েছে । ফাও ফাও খাবার – খাদ্য গেলাতে তার বেজায় আপত্তি । সামান্যতম একটা ঈমান না থাকলে আর কেমনে হয় ? রাত বাজে পৌনে নয়টার মতো ।

মশাও কামড়ে কামড়ে পা জোড়া ফুলিয়ে ফেললো । আর কাহাতক বসে থাকতে হবে ?

সোহরাব আলী ক্রমশই অধৈর্য্য হয়ে উঠছে । কিন্তু এর মধ্যেও মসজিদের পশ্চীম পার্শ্বে একটা সাদা টয়েটোকে আসতে এবং থমকে যেতে দেখতে ভুললোনা । সোহরাব আলী পুলকিতবোধ করলো । যতোই মন – মেজাজ খারাপ থাকুক তার চোখ – কান খোলাই থাকে সবসময় ।

কিছু এড়ায়না । আসলে সোহরাব আলীদের দোষ দেওয়ার অর্থ হয়না । যার কোন ক্ষমতাই নেই সেও রাস্তার নেড়ি কুকুরকে লাথি দিতে পারলে সেই ক্ষমতা দেখিয়েই নিজের ইগোকে তৃপ্ত করে । সোহরাব আলী যদিও ততোটা অথর্ব নয় তবুও তার চোখ – কান খোলা রাখার প্রমাণ পেয়ে ভালো লাগে । ঠিক এমন সময়ে কিছু দূরে মদে চুর এক দঙ্গল তরুণ বড়লোকের লক্কা ছেলেপেলের দল হইহল্লা করতে করতে সেই দিকে পাড়ি দিতে গিয়েও দেয়না ।

পরমুহূর্তেই অন্য দিকে পা বাড়ায় । সোহরাব আলী বুঝে উঠতে পারেনা সেই ছেলেপেলেগুলো মানুষ নাকি নীম্নস্তরের প্রাণীকূলের অন্তর্ভুক্ত । সাধারণত নীম্নস্তরের প্রাণীরাই নাকি আসন্ন বিপদের স্থান আর সময় আঁচ করতে পারে ।

অবশেষে সোহরাব আলীর প্রতীক্ষার প্রহরের অবসান ঘটে । ধবধবে সাদা চোস্ত পাঞ্জাবী আর পাজামা পরে সেই ব্যাটা মসজিদ থেকে বের হয় ।

কুতকুত চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেও আশ্চর্যজনকভাবে সামনে থাকা টঙটাই মিস করে যায় । নইলে তার দিকে জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে থাকা সোহরাব আলীকে দেখে অবশ্যই সন্দেহজনক মনে করতো । সোহরাব আলীর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো । শালা আস্ত মাগীবাজ লোক কিভাবে চারিদিকে ডিটেকটিভের মতো করে দেখে পথ চলতে আরম্ভ করেছে । দেখলেই বুঝা যায় মদ আর মাগী নিয়েই পড়ে থাকে সারাদিন ।

সোহরাব আলী টঙ থেকে তার বিশাল শরীরটা একবার ঝাঁকি দিয়েই উঠে দাঁড়ায় । কোমর থেকে রিভলবারটা নামিয়ে আনে প্যান্টের ডান সাইডের পকেটে । সে দুই হাতেই নিখুঁতভাবে শ্যুট করতে পারে । মনঃস্থির করলো বাম হাতে শ্যুট করবে । লোকটা যেভাবে আবালের মতো হেলতে দুলতে হাঁটছে তাতে ডান হাতে শ্যুট করলে টার্গেট মিস হবার সম্ভাবনা আছে ।



দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে কৌশলে নিজেকে ধরা না দিয়ে লোকটার সাথে চলার পথের দূরত্ব প্রায় চার গজে কমিয়ে নিয়ে যেই মুহূর্তে বাম হাত দিয়ে সোহরাব আলী শ্যুট করলো ঠিক তার দুই সেকেন্ড আগেই অন্যত্র থেকে পরপর গুলির ঝাঁক বেরিয়ে এসে সেই লোকটার বুক , পীঠ ঝাঁঝরা করে দিলো । সর্বদাই স্থির ও ধূর্ত চোখের সোহরাব আলী মসজিদের পশ্চীম পার্শ্বে এসে দাঁড়ানো সেই সাদা টয়েটোকে আমলে না এনে ভুল করে বসেছিলো । সোহরাব আলী এই হিসাবও করেনি যেখানে লোকটার বউই তাকে মারার জন্য সোহরাব আলীকে নগদে পচাত্তুর হাজার টাকা দিয়েছে সেখানে সেই ব্যাটার তো আরো শত্রু মুখিয়ে থাকবার কথা তাকে ফিনিশ করার জন্য । সে লোকটাকে গুলি যাও একটা করেছিলো সেটাও মিস হয়ে গেছে তারই মাত্র দুই সেকেন্ড আগে পরপর গুলির স্রোতে লোকটা মাটিতে পড়ে যাওয়ায় । সাদা টয়েটোর জন্য নিজেদের বাঁচানোটা আরো সহজ হয়ে গেলো ।

কারণ যতক্ষণে এক ঝাঁক গুলি করেই সেই টোয়োটা ফুস করে বেরিয়ে পড়েছে ততক্ষণে ঘটনার এরুপ মোড় নেওয়ায় আচমকে ভ্যাবলা হয়ে যাওয়া সোহরাব আলীকে চারপাশ থেকে মানুষজন ছুটে এসে ধরে ফেললো । রাতের অন্ধকারে ডান হাতে ধরে থাকা রিভলবারটা নিমেষেই এতোটা অথর্ব হয়ে যেতে পারে ভাবাই যায়না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.