স্বাগতম
বিখ্যাত কবি মির্জা গালিব ছিলেন মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ দ্বিতীয় এর ইম্পরিয়াল কোর্টের ইতিহাসবিদ। এক স্মৃতিচারনে গালিব বলেছিলেন; আমার কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ ও ঝোক ছিল শৈশবেই কিন্তু পরিনত বয়সে এটা যে আমাকে বাধ্য হয়ে করতে হবে ভাবিনি।
সম্রাট বাহাদুর শাহ তাকে জোর করে প্রায় তার অমতেই একটি প্রদেশের শাসনকর্তা বানিয়েছিলেন যেন নিশ্চিন্তে সে কবিতা লিখতে পারেন। উপরের ছবিটি মির্জা গালিবের নয়, তিনি কবি আজিজুর রহমান আজিজ।
গালিবকে শিরোনাম করে কবি আজিজুর রহমান আজিজ স্যার এর একটি কবিতা আছে।
"না! এভাবে আর চলে না,
মাথার মধ্যে সাহারা আর গোবির বালু যেভাবে বেঁধেছে বাসা
গালিব দাঁড়িয়ে দুয়ারে হাফিজ এসেছে তার সাথে
অদূরে উমর খৈয়াম
রুমিও এসেছেন তাঁদের সাথে,
তাদের হাতে অনেক পাজাপুথি প্রাচীন অতি
সেখ সাদাও যাননি বাদ, তিনিও এসেছেন
বালাগাল ওলাবে কামালিহি, কাসাবাদদোজাবে জামালেহী,
হাসুনাত জামিও খেছালিহি, সল্লেল্লাহ আলাইহি ওয়ালিহি
দরুদ নিয়ে
আমি তো অবাক
আমার নবী কি তখন করেছিলেন সাফায়াত
আমাকে স্বয়ং
কে জানে?"
-গালিব ও অন্যান্য,
প্রজম্নের পদাবলী, ফ্রেব্রুয়ারী ২০১৪ ইং।
এবারের বই মেলায় আজিজুর রহমান আজিজ স্যারের দুটি কবিতার বই বেরিয়েছে।
প্রজম্নের পদাবলী এবং
মেঘের ঘের বসত বাড়ি।
প্রজম্নের পদাবলী কবিতার বই সম্পর্কে কবি আজিজুর রহমান আজিজ বলেন; "শাহবাগ চত্বরে লক্স তারুন্যের যে মেলা বসেছে তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি কিন্তু প্রকাশ করা কঠিন। তবে প্রতিদিনের কিছু কিছু অনুভুতি আমা প্রকাশ না করলেও বুকের ভিতরে অব্যক্ত যন্ত্রনা থেকে যেত।
"
প্রজম্নের পদাবলী বইতে মোট আশিটি কবিতা স্থান পেয়েছে।
রানা প্লাজা নিয়েও কবিতা আছে এই বইতে;
"মা, অবহেলায় সুর্যটা নিভে গেলো,
সূর্যটা কি এতো ছোট মা,
উদয়াস্ত দরগামসজিদ মন্দির চার্চ ঘিরে
কাঁদবে অনন্তকাল,"
-এরকম আর যেনো না হয়।
"চৌকষ অন্ধকার গিলে খেতে চায় আমার পতাকা, মানচিত্র,
তা তো আর জানবে না সাভারে ধসে পড়া পোশাক কারখানা"
-সভ্যতা গিলে খায়।
"বিধ্বস্ত দালানের ভিতরে যারা ছিল তারা কি মানুষ
বিধ্বস্ত রানা প্লাজার ইটপাথরে....."
-অন্তহীন প্রশ্ন।
প্রজম্নের পদাবলী কবিতার বইয়ে সমাজে, রাষ্ট্র ও মানব ধ্যানের গভীর ভাবনা ও মানুষে মানুষে সম্পর্কগুলির প্রতি কবি গভীরভাবে আলোকপাত করেছন ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রমানুক্রমিক ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও মহাকালের কন্ঠস্বরগুলি এখানে ধ্বনিত হয়েছে।
শাহবাগ প্রজম্ন, বাংলাদেশের ইতিহাস, আগামী প্রজম্নের ভাবনা, দুর্যোগ, বিজ্ঞানময় সমাজ ও রাষ্ট্র- প্রেম-ভালবাসা এইসব উঠে এসেছে প্রজম্নের পদাবলী কাব্যগ্রন্থে। প্রজম্ন থেকে প্রজম্নে উক্ত বিষয়গুলি কিভাবে প্রভাহিত হয় এবং মানুষের মাঝে একটু একটু করে বিস্তার লাভ করে এবং শিক্ষনীয় হয় এইসব হচ্ছে এই কাব্যগ্রন্থের উপজীব্য বিষয়।
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানের ইতিহাস, গল্প, জীবনী - এসব আমরা কিংবা পরবর্তী প্রজম্ন শুধু স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়েও শিখবো না বরঞ্চ মুখে মুখে, গল্পে, ছড়ায়, কবিতায়, মা-বাবার কোলে ঘুমানোর ছলে। এভাবেই তো শিখেছি আমি-আপনী, শিখবে আমার-আপনার সন্তানেরা -- এভাবে তার সন্তান - তাদের সন্তান - তাদের সন্তান - প্রজম্ন থেকে প্রজম্নে - - - - - আর এসব সুত্রাবলী বা ধারাবাহিকতা হচ্ছে; প্রজম্নের পদাবলীঃ প্রজম্নের পদচিহ্ন - প্রজম্নের কাব্য।
"সে সব দেখে হাসছেন জনক স্বর্গে বসে
নাহ তিনি আছেন আমাদের পাশে
চিরঞ্জীব সে তারুন্যের এই মুক্তির আয়োজন, জাগরন।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। "
-পাথর চাপা আগুন।
প্রেমের কবি, ভালবাসার কবি আজিজুর রহমান আজিজ।
প্রেম সত্য, প্রেমই মরন আর প্রেম ছাড়া যে মানুষ অসহায়। এই অনুভুতি উপলব্ধি হয় তার "বজ্রপাতের মত চুম্বন" কবিতার শিরোনামেই।
'যখন তুমি হেসে বলো
এতো শুধু হাসি নয়
এ যে প্রেমপত্র লেখা তোমাকে ভালোবাসি
হাসলে এবার ঝর্নার মতো কলকল করে,
আমি তখন পড়লাম তোমার বুকে ঝরে
জীবন (নামের) শুকনো পাতার পরে। "
-বজ্রপাতের মত চুম্বন।
"তৃষ্ণা" সবচেয় সুন্দর একটিগুলির কবিতা।
এখানে আপনী খুজে পাবেন রাতের একাকিত্ব এর নির্ঘুমের যন্ত্রনা - বিরহ যন্ত্রনা। প্রিয়া বা প্রিয়তমাকে আপনার পড়বে মনে বারবার। এই কবিতা পড়ে রাতে ঘুমালে, হয়েতা স্বপ্নে দেখতেও পারেন আপনী গাঙচিল বা যেকোন পাখি হয়ে দুর আকাশে ভালবাসার মানুষের খোজে উড়ে বেড়াচ্ছেন।
"কাল ভোরে ধরে এনেছি কিছু গাংচিল,
রাতভোর কেঁদেছে তারা সেতারের তারে মুখ ঢেকে,
সুর ছিলো দুর বনে পাখির বাসায়
নাকি সবুজ ধূসর মলিন পাতায়,
গাঙচিল মনে মনে মন থেকে দেয় তাড়া,
তাই তোমাকে নিয়ে লিখছি কত যে গান
সুরবাধা হয়ে গেছে সেতারে,
গাঙচিল যায়নি ছেড়ে আমাকে বনে
ওরা ঘুমায় আমার মনে। "
-তৃষ্ণা, ১৭ এপ্রিল ২০১৩, ঢাকা।
এভাবে আরো সুন্দর সুন্দর অনেক কবিতা আছে প্রজম্নের পদাবলী বইতেঃ প্রথম কবিতা "শোনো", শেষ কবিতা "দানব"। আরো কিছু সুন্দর কবিতা যেমন; মোমের আলো, যাদু, কাল তুমি আসবেই, বাশিওয়ালা, বিভা এসেছিলো প্রজম্ন চত্বরে, মা আমার জননী আমার, পাখি দেব আখি দেব, ললাট নক্ষত্র, মনের ডানা, অন্তহীন প্রশ্ন, প্রতারনা, একদিন এসো।
কবি আজিজুর রহমান আজিজ বইয়ের মুখবন্ধে বলেন; এই অনুভুতি কেবল ধারন করা যায় পুরোপুরি প্রকাম করা যায় না।
যাইহোক, প্রজম্নের পদাবলী বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি আমার কাছে নেই তবে "মেঘের ঘরে বসত বাড়ি" কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদটা পেয়েছি সেটার একটি ছবি আপলোড করে দিলাম। মেঘের ঘরে বসত বাড়ি কাব্যগ্রন্থটা পড়ে এইটা নিয়ে আর একদিন একটা ফিচার লিখবো ইনশাল্লাহ।
আজিজুর রহমান আজিজ স্যারের কর্মজীবনের পরিচয় দিতে গেলে বলতে হয়; তিনি কথাশিল্পি, কবি, সাহিত্যিক; সাবেক সচিব এবং সাবেক চিফ ইনফরমেশন কমিশনার (ডেপুটি মিনিস্টার পদমর্যাদা); প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সময়ের কণ্ঠস্বর; গভর্নর বোর্ড অব গভর্নর, ইসলামী ফাউন্ডেশান বাংলাদেশ; চেয়ারম্যান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর; সভাপতি, রবীন্দ্র একাডেমি; উপদেষ্টা, ত্রিতরঙ্গ।
এ পর্যন্ত তিনি ৬৫ টি উপন্যাস লিখেছেন। লেখক ও কথা সাহিত্যিক আজিজুর রহমান আজিজ এর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসঃ বিনষ্টপ্রেম (১৯৮৭, বইঘর চট্টগ্রাম) সত্যসুন্দর আনন্দ (১৯৯২,অনিন্দ্য প্রকাশন) মাধুরী এবং অন্যান্য (১৯৯৩ নিখিল প্রকাশন), কারাগার কাবাবাস ১৯৯২ অনিন্দ্য প্রকাশনা), অন্য প্রজাপতি (১৯৯৩ অনুপম প্রকাশন) সুদুরের রঙধনু (১৯৮৭ মুক্তধারা) দূর থেকে দূরে (১৯৮৬, সাহিত্য সংসদ) অনিতা (১৯৯৪, নিখিল প্রকাশন), বিপন্ন বাসর (১৯৯৪ অনিন্দ্য প্রাকশন), আহত প্রেম (১৯৯৫ দোলনা প্রকাশন চট্টগ্রাম), কালো যদি মন্দ তবে (১৯৯৫ শিখা প্রকাশন), যখন আন্দামানে (১৯৯৭, হাক্কানি পাবলিকেশন ২য় সংস্করন), মধ্যরাতের সংলাপ (১৯৯৮) পাথরের কান্না (১৯৯৮ নিখিল প্রকাশন) চন্দন কাঠের সিড়ি, (১৯৯৯, শিখা প্রকাশন) অশ্র জলে (১৯৯৮, আগামী), বসন্তকাদে (২০০০), জীবন ও হৃদয় কাব্য (২০০৭ পারিজাত), শহরতলীর কাব্য (২০০৮, নিখিল প্রকাশন), যখন আন্দামানে (১৯৯৬ হাক্কানী পাবলিকেশন), সময় যেভাবে কাটে (২০১২), অপারেশন থিয়েটার চারঘন্টা, নীল গোলাপ, দুটি চিঠি ও অতঃপর,
কাব্যগ্রন্থঃ বিষন্ন সংলাপ (১৯৮২, বইঘর চট্টগ্রাম), তবুও বেচে আছি (১৯৮২ বইঘর চট্টগ্রাম) নিরস্তর, অন্তরে, (১৯৯৬ শিখা প্রকাশন), বিরতিহীন সংলাপ, (১৯৮১ বইঘর চট্টগ্রাম) তোমাকে ঘিরে (১৯৭৬ আলোক পাবলির্সাস), হেড লাইনের সংবাদ (১৯৯০, দোলল পাবলির্সাস চট্টগ্রাম), এখন কারো না কারো কিছু বলা উচিত (১৯৯৬ ফেব্রুয়ারী, শিখা প্রকাশন), তোমাকেতো কিছু বলিনি, ( ১৯৯৮ অনুপম প্রকাশন), অনন্ত নগরে যাবো, (১৯৯৮ তিন খন্ডে বিদ্যাপ্রকাশন) এই প্রেম অনন্ত বিরহ, (১৯৯৮, তিন খন্ড বিদ্যাপ্রকাশ) হৃদয়কে করি খন্ড খন্ড, (১৯৯৮, আগামী), বৃষ্টি জালে হৃদয় সমুদ্দূর (২০০০), তখনো রাত এখনো আঁধার (২০১১ ফেব্রুয়ারী, নিখিল প্রকাশ) গল্পঃ অরন্যে পাপ- ১৯৮৩, দোলন প্রকাশন, চট্টগ্রাম,
শিশুদের জন্যে লেখাঃ দরবেশ পাখি (১৯৯৮, অনন্যা) দ্বিতীয় সংস্করন সময় প্রকাশন, আজো স্বাধীনতার গল্প বলি (১৯৯১, সময়), অচিনদেশের অচিন কথা (১৯৯২, সময়), আকাশ অনন্ত অহনা-র ছড়া, পরীর রাজ্য করলো যারা জয়, মিথ্যে রাজার দেশে।
স্বল্পদৈর্ঘ চলচিত্রঃ জলের মেয়ে- ইউনিভার্সিটি ফ্লিল্মস পূর্ন দৈর্ঘ চলচিত্রঃ প্রেম শুধু প্রেম- লেখকের অন্য প্রজাপতি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মান করেছেন ইউনিভার্সিটি ফিল্মস লিঃ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।