-আপনার নাম টা কি জানা যাবে?
-কুসুম ।
-কু সু-ম কুমারী.
-কুসুম কুমারী নয়, কুসুম চারুলতা ।
- অদ্ভূত নাম । যাই হোক আপনার ফোন নাম্বার টা কি দিবেন, মিস চারুলতা?
-আপনার সাহস তো কম নয় মিস্টার,
শুনুন আমি অপরিচিত কাউকে নিজের ফোন নাম্বার দেই না ।
-তাহলে পরিচিত হয়েই দেন,
শুরুতে কি নাম বলবো?
-বেয়াদব ।
- বেয়াদব কেন হবে? আমার নাম জামাল । বাবা মা রেখেছিল জামিল । শুরুতে ঠিক ঠাকই চলছিল । তবে ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন করার সময় কেরানী মশাই ভুল কর জামিলের "মিল" টাকে "মাল" করে ফেলেছে ।
আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে কেরানী মশাইয়ের কাছে গেলাম ।
উনি নাম দেখে অট্টহাসি দিয়ে বললেন.
-যা ভাগ এখন আর "মাল কেটে মিল" করা সম্ভব নয় ।
সেই থেকেই জামিল ছেলেটা জামাল হয়ে গেছে ।
জা-জা-জা মাল বলেই খিঁল খিঁল হেসে উঠল কুসুম কুমারি ।
আমার একটা জন্ম রোগ আছে ।
কাউকে হাসতে দেখলে আমার তার চেয়েও দ্বিগুন পরিমান বেশি হাসি পায় ।
তাই কুসুম কুমারির সাথে এখন পাল্লা দিয়ে আমিও হেসে যাচ্ছি ।
কুসুম কুমারী হয়তো জানে না এটা আমার জন্ম রোগ ।
তাই তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে দেখে অনেকটা অপমান বোধ করল ।
মুখ ভার করে আমার দিকে রাগ রাগ চোখে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কাটার কয়েকটা ইমু দিল ।
- আপনাকে একটা গোপন কথা বলি?
-আপনার গোপন কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই,
-ঠিক আছে তাহলে বলবো না ।
-ঠিক আছে তাহলে বলেন?
- আমি আগেই জানতাম ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কৌতুহলী কোষের পরিমান অনেক বেশি। এরা মুখে যতই বলুক শোনবে না, মনে মনে ঠিকই গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনতে চায় ।
-ভূমিকা রেখে যদি বলার ইচ্ছে থাকে তাহলে বলুন?
-বলবো?
-হুম বলেন?
-আপনার চশমা ওয়ালা বড়ো বোনের সাথে আমার চশমা ছাড়া বড়ো ভাইয়ের বিশেষ একটা ইয়ে আছে, জানেন সেটা?
-বিশেষ ইয়ে মানে?
-ইয়ে মানে ইটিশ পিটিশ. ইটিশ পিটিশ মানে গিট্টু,. গিট্টু মানে বাধন. আর বাধন মানে.....
-আর বাধন মানে??
- ভালবাসা ভালবাসা ।
-আপনার ন্যাকামি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে । ইচ্ছে করছে ঘুষি মেরে আপনার আর আপনার ভাইয়ের তোতা নাক ভোতা করে দিতে,
- নাক ভোতা করতে চান!! সম্পর্কে আমি আপনার কি হই জানেন?
-জানার কোনো প্রয়োজন মনে করছি না.
-আপনার বোন তো আমাকে অলরেডি দেবর বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে.
অতএব সম্পর্ক সুত্র বলে আপনি আমার বিয়াইন ।
-উয়াক. ছোটলোকের মতো কি সব নোংরা শব্দ বলছেন ।
-বিয়াইন মানে হচ্ছে যাদের সম্পর্কের আইন হবে "বি_পজিটিভ",
তবে আপনি বিপদ জনক মেয়ে হলে আইনটা "বি_নেগেটিভ" ও হতে পারে ।
কুসুম কুমারী আবারো সুনামি টাইপে রেগে যাচ্ছে । রাগের প্রতিষেধক হচ্ছে প্রশংসা করা ।
রেগে যাওয়া কারো সামনে তার গভীর প্রশংসা করলে অসীম ভোল্টের রাগও শূণ্যের কোটায় চলে আসে ।
তার মাথায় তখন প্রশংসার মাছি ভনভন করে ঘুরতে থাকে ।
রাগ প্রশংসার মাছি দ্বারা সহজেই বিচ্যুত হয় ।
-আপনার নাকের কাছে যে দুইটা কালো তিল আছে লক্ষ্য করেছেন?
যাদের নাকের কাছে একজোড়া তিল থাকে তারা অনেক ভাল মনের মানুষ হয়।
-পাম মারছেন আমাকে? মিস্টার জা-জা-জা মাল ।
-কি আজব পাম মারবো কেনো?
আপনি হাসলে আপনার গালে অসম্ভব সুন্দর একটা টোল পড়ে ।
যে কেউ যেকোনো সময় আপনার টোল পড়া গালের প্রেমে পড়ে যেতে পারে ।
কুসুম কুমারী কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে কি জানি ভাবছে ।
সে হয়তো নিজের টোল পড়া গালটা চোখের আয়নাতে ভাসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
-এভাবে অন্য মনস্ক হয়ে কি ভাবছেন?
-সেটা কি আপনাকে বলতে হবে?
- আমার আই কিউ বলে আপনি নিশ্চয় মনে মনে একজোড়া তিল আর টোল পড়া গালের সত্যতা যাচাই করছিলেন ।
-হুম, আপনার আই কিউ ভালো ।
- এতোক্ষণে বুঝলেন, যাই হোক আই কিউ ভালো ওয়ালা ছেলে টাকে এবার ফোন নাম্বার টা দিয়ে দেন?
-আমি তো আমার বোনের মতো গাধা নই যে ফোনে সারাক্ষণ আপনার সাথে ইটিশ পিটিশ করবো ।
-সারাক্ষণ করার দরকার নেই কিছুক্ষণ করলেই চলবে ।
-ঠিক আছে আপনার মোবাইল টা আমাকে দিন ।
আমি আনন্দে লাফাতে লাফাতে মোবাইল টা কুসুম কুমারীর দিকে বাড়িয়ে দিলাম ।
কুসুম কুমারী মোবাইল নিয়ে একটানা অনেক গুলা বাটন টিপে গেলো ।
তারপর মোবাইল টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
-আপনার আই কিউ ভালো তাই শেষ ছয়টা সংখ্যা দিলাম । কোড নাম্বার টুকু যদি নিজ দায়িত্বে বের করে নিতে পারেন তাহলে.....
-তাহলে?
-তাহলে কিছুক্ষণ না সারাক্ষণই আপনার সাথে ফিসফিস করে ইটিশ পিটিশ করবো ।
আমি বর্ষাকালের আকাশের মতো মুখ কালো করে বললাম,
-এটাও কি সম্ভব?
কুসুম কুমারী যুদ্ধ জয়ী বীরের মতো হাসি দিয়ে উত্তর দিল.
-অসম্ভব কে সম্ভব করার নামই তো ইটিশ পিটিশ. গিট্টু., বাধন অথবা ভালবাসা. জা-জা-জা মাল ভাই!!
আমিও মনে মনে স্কুল জীবনের সেই কেরানী মশাই মতো অট্টহাসি দিয়ে ভাবতে লাগলাম,
-মেডিকেলে পড়ুয়া মেয়ে গুলা এতো বোকা হয় কেনো??
কুসুম কুমারী নিজের ফাঁদে নিজেই পা দিলা ।
আমি তো তোমার নাম্বার টা তোমার গাধা বোনের কাছ থেকে তোমাকে দেখার প্রথম দিনেই নিয়ে ফেলেছিলাম ।
"নিঝুম দ্বীপ থেকে #অবুঝ অরণ্য"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।