আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বিকারের বিকার

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

বাওয়ালটা দেখবে বলে থেমেছিলো তারা তিনজন । অনেকদিন ধরে আগ্রহ নিয়ে দেখবার মতো কিছু তাদের কারো জীবনেই আসেনি ।

এই গলি দিয়েই আজকে পথ চলবে এই আইডিয়াটা রাসেলের ছিলো বলে সে পুলকিতবোধ করলো । রমেশ আর জুয়েলও রাসেলের কৃতিত্বকে মেনে নিতে কার্পণ্য করলোনা ।

তাদের প্রত্যেকের জীবনেই সময়টা এমনই যে তাকে উপভোগ করার নূন্যতম কোন উপলক্ষ্য পেলেই তারা তার মাঝে প্রবেশ করে দেখতে উদ্গ্রীব থাকে । গাঁজা থেকে শুরু করে খানকীপাড়ায় গিয়ে নিত্যনতুন শরীরবৃত্তীয় এক্সপেরিমেন্ট সবকিছুর মধ্য দিয়েই ইতোমধ্যে তারা গেছে । কোনটাতেই বেশী দিন টিকতে পারেনি । ভালো লাগেনি । তাদের প্রত্যেকেরই মনে হয়েছে প্রতিটি এক্সপেরিমেন্টই যেন সিগারেটের ধোঁয়ার মতো ।

যখন সিগারেট টানে তখন ধোঁয়া ছাড়তে বেশ ভালো লাগে কিন্তু পরে আর আলাদা করে তা স্মর্তব্য হয়না । এখন শেষমেষ রাস্তায় কারো গণপিটুনী খাবার দৃশ্য চাক্ষুস করা এখানে তাদের এম্যুজমেন্ট এসে ঠেকেছে ।

পিটুনী খাওয়া মানুষটার দিকে ভালো করে তাকানোর চেষ্টা করলো জুয়েল । দেখে মনে হচ্ছে বয়স তিরিশের বেশী হবেনা । তালি দেওয়া যেই জিন্সের প্যান্ট পরেছে সেটার দশা এই পিটুনীতে আরো করুণ হবে তাতে সন্দেহ সামান্যই ।

এদিকে ঠোঁট কেটে ইতোমধ্যেই রক্ত বের হওয়া আরম্ভ হয়েছে । তারা তিনজন আরেকটু পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পেতো পাঁজরের দিকে বেশ আঘাত বলে এই মুহূর্তে ভিকটিম কুঁজ়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তবে চোখে মুখে কোন অপরাধী ভাব নেই । তাকে ঘিরে উত্তেজিত জনতা এই মুহূর্তে মারধরের প্রথম পর্ব পার করেছে । আপাতত একটা স্তিমিত পর্ব চলছে ।

রাসেল , রমেশ এবং জুয়েল অনুমান করতে পারে এখানেই এই নাটকের শেষ হবেনা । পিকচার আভি বি বাকি হ্যায় ।

“ দেখেছিস শালাকে ? কেমন টেঁটিয়া হয়ে দাঁড়াইছে ? ইন্টারেস্টিং চরিত্র মনে হয় । “ রাসেল আগ্রহ নিয়ে বলে উঠে ।

জুয়েল অত গভীরে গিয়ে কিছু ভাবতে চায়না ।

বরং চারপাশটা ভালো করে দেখতে থাকে । রাগী জনতার দিকেই তার মনোযোগ বেশী । এদের প্রত্যেকেই নিঃসঙ্গ আর অসহায় কোন ভিকটিম পেলে একেকজন ছবির হিরো হয়ে যায় । অথচ এরাই ষোল কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ক্রিমিনাল শাসকদের পক্ষে কাজ করে যায় কোন না কোনভাবে । সেই এস্টিমেশনে অথবা এনালাইসিসে ভুল হবার বিশেষ কোন যুক্তি নেই ।



রমেশের অতো দিকে খেয়াল নেই । এক বড়লোক বন্ধু কি মনে করে তাকে উপহার হিসাবে গোটা চারেক চুরুট দিয়েছিলো । এখন দুই নাম্বারটা আরাম করে টানছে । রমেশ লক্ষ্য করলো গণপিটুনীর ভিকটিম তার চুরুট টানার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দেখে মনে হচ্ছে পারলে তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেই চুরুটটা ধরাতো ।

এমন কোন গুরুতর কারণ নয় কিন্তু নিজে নিজেই ভিকটিমকে নিজের রাইভাল বানিয়ে ফেললো মনে মনে । গজগজ করতে করতে “ শালা “ বলে গাল দিলো । তারপর চুরুট টানা অবস্থাতেই রাসেল আর জুয়েলকে জিজ্ঞেস করলো “ মাঙ্গের পোলায় মাইর খাইতেছে ক্যান ? ঘটনা কি ? কাউরে জিগানো যায় । “

রাসেল কিংবা জুয়েল কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে নড়ে এসে কাউকে জিজ্ঞেস করতে যায়না । অনেকদিন পর মজা দেখতে পারছে সেটাই যথেষ্ট ।

এতো কারণ জেনে কি কাজ ? জুয়েল আর রাসেল ডানে তাকিয়ে দেখতে পায় কিছুদূর থেকে দুইটা ট্রাফিক পুলিশ পান খেতে খেতে ঘটনাস্থলের দিকে আসছে । একজনে সাইডে গিয়ে ফুটপাথে পানের পিক ফেললো । জঘন্য সেই পানের পিক ফেলার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে রাসেল কিংবা জুয়েল কারোরই প্রবৃত্তি হলোনা ।

এদিকে ট্রাফিক দুটো নিজেদের জায়গা ছেড়ে ঘটনাস্থলের দিকে আসবার বেশ আগেই উত্তেজিত জনতাদের একজন কোত্থেকে একটা শাবল যোগাড় করে এনে সেটা মতো চারিদিকে ঘুরিয়ে দেখালো । যেন হেক্টর একিলিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করতে যাচ্ছে ।

জনতার অন্যদের হইহই দেখে তারা তিনজন বুঝতে পারলো যে সামনেই অনিবার্য দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে । রাসেল ভিকটিমের দিকে তাকালো । এখনো ভাবলেশহীন মুখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে । কতক্ষণ ভিকটিমের সেই নির্মোহ চেহারা থাকে তার দেখবার বড্ড ইচ্ছা । জুয়েল আবারো মারমুখী জনতাদের দিকে তাকায় ।

একেকজনের চোখে মুখে পাশবিক আনন্দ খেলা করছে । যেন ইন্টারোগেশন সেলে জেরা করছে কোন আসামীকে । এদিকে দূরের রাস্তায় অনবরত মোটরবাইক , গাড়ী , সিএনজির প্যা পো আওয়াজ চলছে । মানুষজন এক্সিডেন্ট থেকে নিজেদের বাঁচাতে নানাবিধ কৌশলে হাঁটছে । সন্ধ্যা আসি আসি করছে বলে হাঁটবার গতি বেশ দ্রুত ।

যেন বাড়ী ফিরলেই আবদ্ধ কারাগার থেকে নিশ্চিত মুক্তি মিলবে । কোথাও কোন পরিবর্তন কিংবা নতুনের আগমন ঘটেনা , ঘটবেনা । মাঝখান থেকে কেবল একজনের জীবন ছাইদানীর ছাইয়ের চাইতেও মূল্যহীন বলে বিবেচিত হয়ে ক্যাজুয়াল্টি হতে যাচ্ছে ।

রমেশ অন্য দুইজনকে দ্রুত তাগাদা দেয় স্থান ত্যাগ করার জন্য । এম্যুজমেন্টের জন্য খামাখা কোন হুজ্জোতে জড়িয়ে যাবার কোন মানে হয়না ।

তারা স্থান ত্যাগ করতে করতেই শাবলের প্রথম আঘাতে ভিকটিমের কন্ঠ থেকে জান্তব ধ্বনি বেরিয়ে এলো । সেই ধ্বনিতে অনুরোধ ছিলো তার প্যান্টের পকেটে থাকা মানিব্যাগ থেকে যেন ভিকটিমের ঠিকানায় লাশ পৌঁছে দেওয়া হয় ।

আশ্চর্যজনকভাবে রমেশ তাদের মধ্যে সেই জান্তব ধ্বনির কথাগুলো শুনে সবাইকে হতভম্ব করে পাগলের মতো চিৎকার শুরু করে । রাসেল আর জুয়েল সেই পাগলামীর কোন তল খুঁজে পায়না । তাদের কেউই জানেনা রমেশের ডাক্তার বাবা বাইশ বছর আগে অজ্ঞাত শত্রুদের হাতে খুন হবার আগে ঠিক এরকমই কোন অনুরোধ জানিয়েছিলো ।

সেই বেলায় রমেশের বাবার অনুরোধ শোনা হয়নি । এবারো মনে হচ্ছে শোনা হবেনা ।

উত্তেজিত জনতাদের মধ্যে তিনজনে তাদের কাছে এসে রাসেল ও জুয়েলকে বললো “ ভাই আপনারা এইখান থেইকা অহনই সইরা যান । আর এহানে থাকলে আপনাগো বন্ধু পুরা পাগল হইয়া যাইবো । “



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.