আদিনাথের মেলা
বহুকাল ধরে আদিনাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে চলে আসছে আদিনাথের মেলা। ধারণা করা হয় মন্দিরের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ মেলার প্রচলন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে অর্থাৎ শিব চতুর্দশী উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও ভারত, নেপাল, মায়ানমারসহ আরও অনেক দেশ থেকে হিন্দু তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের সমাগম হয় এ মেলায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ আয়োজনে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সার্বজনীন মেলায় পরিণত হয়।
মহেশখালীর মৈনাক পাহাড় চূড়ায় আদিনাথ মন্দির। মহেশখালী বড় বৌদ্ধ কেয়াং স্বর্ণ মন্দির।
আদিনাথ মন্দির
মহেশখালীর গোরখঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পায় ৮৫ মিটার উচ্চতায় মন্দিরটির অবস্থান। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১০.৫০ মিটার, প্রস্থ ৯.৭৫ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ৬ মিটার।
মন্দিরের ভিতরটা তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।
উত্তরের অংশ সবচেয়ে পুরানো। আদিনাথ মন্দিরের পাশেই অষ্টভূজা নামে আরেকটি বিগ্রহের মূর্তি আছে। উত্তরের অংশের প্রথম ভাগে বর্গাকারের দুটি পূজাকক্ষে আদিনাথ বাণলিঙ্গ শিবমূর্তি এবং অষ্টভূজা দুর্গামূর্তি রয়েছে। সামনের দিকের প্রবেশপথটি ধনুকাকৃতির।
আদিনাথ মন্দির নিয়ে লোকমুখে নানান কাহিনী প্রচলিত আছে। এরকম একটি জনশ্রুতি হল— রাম-রাবণের যুদ্ধের সময় রাবণ শিবের কৃপা লাভের জন্য শিবকে লংকায় আনতে কৈলাশ পর্বতে যান। রাবণের অনুরোধে শিব প্রথমে লংকায় আসতে রাজি হননি। পরে দেবতার অনুরোধে শিব শর্ত দেন কৈলাশ পর্বত থেকে কাঁধে করে তাকে বিরতি ছাড়া লংকায় পৌঁছে দিতে হবে। এ শর্তে রাজী হয়ে শিবকে কাঁধে নিয়ে লংকায় যাত্রা করেন রাবণ।
তবে পথে তীব্র প্রকৃতির ডাকে রাবণ শিবকে নিয়ে মৈনাক পাহাড়ে চূড়ায় নামেন। শর্ত ভঙ্গ হওয়ায় শিব রাবণের সঙ্গে আর লংকায় না যেয়ে মৈয়নাক পাহাড়েই থেকে যান। পাহাড় চূড়ায় গড়ে তোলেন একটি মন্দির। শিবের কারণে বিখ্যাত হয়ে পড়ে আদিনাথ মন্দির।
মহেশখালী বড় বৌদ্ধ কেয়াং এ বুদ্ধমূর্তি। দক্ষিণ রাখাইন পাড়ার রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির।
বৌদ্ধ মন্দির
মহেশখালী জেটি থেকে বাজারে প্রবেশের আগেই সড়কের বাঁ পাশে দক্ষিণ রাখাইনপাড়ায় আছে রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির। ভেতরে আছে আরও কয়েকটি মন্দির। বেশ কয়েকটি পিতলের বৌদ্ধ মূর্তির দেখা মিলবে এ কেয়াং এ।
এছাড়া মহেশখালী বাজারের ভেতরে আছে মহেশখালী বড় বৌদ্ধ কেয়াং।
এখানেও আছে বেশ কয়েকটি বুদ্ধমূর্তি। উল্লেখযোগ্য হল— ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ, মাথায় হাতে শায়িত বুদ্ধ, দণ্ডিয়মান বুদ্ধমূর্তি ইত্যাদি।
যেভাবে যাবেন
মহেশখালী যেতে হলে আগে পৌঁছতে হবে কক্সবাজার সদরে। কক্সবাজারের কস্তুরীঘাট কিংবা ৬ নম্বর ঘাট থেকে স্পিড বোটে মহেশখালী যেতে সময় লাগে ২০ মিনিট।
জনপ্রতি ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা।
এছাড়া ইঞ্জিন নৌকায় গেলে সময় লাগে এক ঘন্টার মতো। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। যারা সরাসরি আদিনাথ মন্দিরে যেতে চান কস্তুরীঘাট থেকে তাদের যেতে হবে মন্দিরের ঘাটে। মেলার সময় সরাসরি মন্দিরের জেটিতে স্পিড বোট সার্ভিস থাকে।
সড়ক ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।
এ পথে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, হানিফ, টি আর ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ, ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।
এছাড়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও নভো এয়ারের বিমানে সরাসরি যেতে পারেন কক্সবাজার।
থাকার জায়গা
মহেশখালীতে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই যেদিন কক্সবাজারে পৌঁছবেন সেদিন হোটেলে থেকে পরেরদিন সকাল সকাল মহেশখালী যাওয়াই ভালো। দ্বীপে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে কক্সবাজারে থাকতে পারেন।
থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল রয়েছে। ধরন অনুযায়ী এ সব হোটেলের প্রতি দিনের রুম ভাড়া ৬শ’ থেকে ২০ হাজার টাকা।
ছবি : মুস্তাফিজ মামুন
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।